পয়লা বৈশাখের পরদিন অফিসে বসে আড্ডা মারছি। একজন গায়ক, তার নাম উহ্য থাকুক , তিনি বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বললেন, জীবনে তিনি অনেক পয়লা বৈশাখ দেখেছেন, কিন্তু এবারের মতো আর কোনটি জমেনি। জমজমাট পয়লা বৈশাখের ব্যাপারটি তিনি ব্যাখ্যা করলেন। একদল ছেলে একটা মেয়েকে টার্গেট করে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। তার পর দুইজন দুইদিক থেকে তার জামা ধরে হ্যাঁচকা টান মারে। তাতে জামাটি ছিড়ে দুভাগ হয়ে খুলে পড়ে , মেয়েটির শরীর পুরোটা বের হয়ে যায়। এরপর তিনি যে রগরগে বর্ণনাটি দিয়েছেন, ঘটনার ভয়াবহতা বোঝার জন্য সেই বর্ণনাটি দেয়ার প্রয়োজন হয়তো আছে, কিন্তু আমি সেটা দিতে চাচ্ছি না।
বলাবাহুল্য, তার কথাটি আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি। ঐদিন, ঐসময়ে যেসব সাংবাদিক ঘটনাস্থলে ছিলেন, আমি তাদের কারও কারও সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করি। তারা জানান, ঘটনাটি হুবহু সত্যি। আরও যেটি জেনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই, সেটি হচ্ছে , ওইদিন এইরকম ঘটনা একটা ঘটেনি, প্রায় পঞ্চাশটার মতো ঘটেছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী - তিনজনেই মহিলা। আবার সরকারের দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মতিয়া চৌধুরি এবং সাজেদা চৌধুরি - এরাও মহিলা। কেবলমাত্র এই কারণেই আমার মনে হয়েছিল , ঘটনাটির একটি তদন্ত হবে এবং দোষীদের চরম কোনও শাস্তি দেয়া হবে। মেয়েদের কিছু কিছু বিষয় থাকে, আমরা পুরুষরা যতই গলাবাজি করিনা কেন, সমস্যাটা আমরা পুরোপুরি বুঝি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-তারা দুজন মহিলা হওয়ায় আমি একদম শতভাগ আশাবাদী ছিলাম, কয়েকটি নারীর উপর ইতিহাসের যে ভয়াবহতম ঘটনাটি ঘটে গেছে - তাদের সেই অপরিসীম লজ্জা, তাদের সেই অন্তহীন কষ্ট এইসব ক্ষমতাবান নারীরা বুঝবেন । একজন নারী বলেই তারা বুঝবেন।
পত্রিকা এমনিতেই আমি একটু বেশি খুঁটিয়ে দেখি, ওই ঘটনার পর থেকে আমি প্রায় সব কয়টি পত্রিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। ওইসব অপরাধীরা ধরা পড়েছে দূরে থাক, তাদের ধরার কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে - এমন সংবাদ আমি আজকে অব্দি পাইনি। তবে পত্রিকায় পুলিশদের একটি চমৎকার (?) বিবৃতি পড়েছি। সেখানে তারা বলেছেন, কোনও মেয়ে তাদের কাছে কোনও অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
পুলিশরা একবার মেরে আমার বাম হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর আমি প্রথম পুলিশদের খুব কাছ থেকে কিছুদিন দেখার সুযোগ পাই। তাদেরকে আমার স্বাভাবিক মানুষ বলেই মনে হয়েছে। আমি নিশ্চিত জানি, যে পুলিশরা এ কথা বলেছে যে, কোনও মেয়ে তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি, তারা খুব ভালো করেই জানে কোনও মেয়ে কোনদিন আসবেও না। ওইসব পুলিশদেরও ঘরে মা বোন কন্যা- সবাই আছেন , তারা নিশ্চয়ই জানেন , কোনও মেয়েকে প্রকাশ্য রাস্তায় হাজার মানুষের সামনে বস্ত্রহরণ করলে সে এই চেহারা আর কাউকেই দেখাতে চাইবে না। সম্ভব হলে সে হয়তো তার ঘর থেকে বের হওয়া চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেবে। তবুও পুলিশ কেন এই কথা বললো ? কোনও পুলিশকে হাতের কাছে পেলে আমি ব্যাপারটা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করে দেখবো।
যদি সাহারা খাতুন কিংবা দিপুমনি- এদের কারও সাথে আমার কখনও কোন দৈবদুর্বিপাকে দেখা হয়, তাদেরও জিজ্ঞাসা করবো। হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও একজন নারী হয়েও এই চরম অবমাননাকর একটি ঘটনার ব্যাপারে তারা কেন কোনও ব্যবস্থা নেননি।
ওইদিন নিরাপত্তার খাতিরে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় শত শত সিসিটিভি নামক একটি বস্তু ছিল। এই ঘটনা যেহেতু একাধিক বার ঘটেছে , নিশ্চয়ই এই ঘটনার কোনও না কোনও ফুটেজ ওইসব ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। আমি সাহারা খাতুনকে বলছি, দিপুমনিকে বলছি , হাসিনা আপাকে বলছি , ওইসব ছেলেদের চেহারা দিয়ে পোস্টার বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিন। ওইসব ছেলেদের বাবা মা ভাই বোন বন্ধুরা দেখুক , তাদের চেহারা। জনগণকে বলুন, তাদের ধরিয়ে দিতে। এতো বড় কুৎসিত একটি ঘটনা ঘটে গেল নারীদের বিরুদ্ধে - আপনারা একেক জন নারী হয়েও কি এই সামান্য ব্যবস্থাটি নেবেন না ?
প্লীজ, ব্যবস্থা নিন। এতদিন দেরী করেছেন , সেটি মস্ত অপরাধ হয়েছে। আরও
দেরী করে অপরাধের বোঝাটি আর বাড়াবেন না।
লেখা শেষ করার আগে আপুমনিরা আপনাদেরকে একটা টিপস দিচ্ছি । এই ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা যে নেয়াই দরকার এটা কীভাবে আপনারা উপলব্ধি করবেন। কল্পনা করুন , পয়লা বৈশাখে একটি মেয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে উৎসব উদযাপন করতে। হঠাৎ একদল ছেলে হাজার মানুষের সামনে তাকে নগ্ন করে ফেলল। মেয়েটির অসহায় চেহারার দিকে তাকান। দেখুন মেয়েটাকে আপনার নিজের মেয়ের মতো লাগছে কিনা ?
আপারা একবার চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করুন তো !
ক্লোজ ইয়োর আইজ , এন্ড ট্রাই টু সি।
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************
যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=
০১।
চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন