somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইফ নাদির
এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সেকেলে প্রমিক

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি নেভি ব্লু কালারের হিজাব পরে এসেছে। ঠিক দুই সীটের মাঝে সামান্য একটু জায়গায়-ই চেপে বসেছে কষ্ট করে। স্যারের লেকচার খুব মনোযোগ দিয়ে গিলছে। সে আর অন্য কেউ নয় ‘লামিয়া’ই হবে, ভাবে সবাই। এদিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে একটুও ভুল করলো না নাফিস। তবে পোড়া কপাল, স্যার দেখে ফেললেন নাফিসের কাণ্ড, কড়া গলায় ধমক দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন ক্লাসে। ছেলেটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো, লজ্জায় তাকাতেও পারছে না কারো দিকে। ওদিকে হিজাবের ভিতরে মুচকি মুচকি হাসছে লামিয়া, শব্দ শোনা না গেলেও দেখেই বোঝা যাচ্ছে নাফিসের এ বেহাল দশা দেখে সে-ই হাসছে।

পাশে বসা নোবেলকেও দাঁড় করিয়ে দিলেন স্যার। যাক তবুও তো একজন সঙ্গী পাওয়া গেলো, ভাবে নাফিস। কিন্তু আফসোস, দাঁড়িয়ে থেকেও মন স্থীর রাখতে পারলো না। কথায় আছে; অমনোযোগী যেখানেই থাক না কেন মনোযোগ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। নাফিসকেও মনোযোগ স্পর্শ করতে পারলো না। তাই স্যারের করা প্রশ্নের কোন উত্তরও দিতে পারলো না। আবারো একটা কড়া ধমক খেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

এটা যদি এক দিনের চিত্র হতো তাহলে হয়ত ভালোই হতো। কিন্তু না, এটা ছিলো প্রতিদিনের চিত্র। স্যার আসবে, নাফিসকে দাঁড় করিয়ে দেবে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার অপরাধে। আর লামিয়া হিজাবের ভিতর মুখ লুকিয়ে মুচকি মুচকি হাসবে।

ক্লাসের সবাই এই করুণ দৃশ্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একটুও লজ্জা নেই ছেলেটার, ভয়ও নেই কারো কটু কথার। নিজের মত করে ভেবে যায় ভালোবাসার মানুষটিকে। সুযোগ না পেলেও তাকিয়ে থাকে প্রিয়তমার দিকে।

বন্ধুরা নাফিসকে রিয়েল প্রেমিক বলে ডাকে। এর অবশ্য একটি যৌক্তিক কারণও আছে। সেটা হচ্ছে; লামিয়াকে না দেখেই ভালোবেসে ফেলা। সেই প্রথম দিন থেকেই মেয়েটি বোরকা-হিজাব পরে ক্যাম্পাসে আসে। কেউ-ই কখনো দেখেনি তাকে। তবে মিষ্টি কণ্ঠ শ্রবনে মুগ্ধ হয়েছে সবাই। তবে যাই হোক না কেন, আজকাল না দেখে প্রেমে পড়াটা সপ্তম আশ্চর্যের মতই একটা ব্যপার। যে সময় সব ছেলেরা রূপ লাবন্যের নেশায় বিভোর হয়ে থাকে সেই সময় এরকম না দেখে ভালোবেসে ফেলাটা সত্যিই বিরল নজিরের সাক্ষ বহন করে। তাই রিয়েল প্রেমিক উপাধি পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যপার।

তবে আরো বড় আশ্চর্যের ব্যপার হলো, এখনো নাফিস লামিয়াকে প্রোপোজ-ই করেনি। এক্সেপ্ট করা না করা তো পরের স্টেপ, ফার্স্ট স্টেপ-ই তো স্পর্শ করতে পারেনি নাফিস। তাহলে কি এটি এক তরফা ভালোবাসা নাকি লামিয়াও মনে মনে নাফিসকে নিজের রাজকুমার মনে করে? কেউই তা জানে না। বুঝতেও পারে না।

এভাবেই তিনটি বছর পেরিয়ে যায়। ক্লাসে দাঁড়িয়ে থেকেও ছেলেটি ভালোই সিজিপিএ পায়। আর মাত্র দু’টো বছর। অনার্সের লাস্ট এক বছর আর মাস্টার্সের এক বছর। এই দু’টি বছর শেষ হয়ে গেলেই কে কোন দিকে চলে যাবে তার কোন আতাপাতা নেই। তাই বন্ধুদের পিড়াপিড়িতে লামিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এই প্রথম লামিয়ার সামনে নাফিস। এর আগে কখনো দু’জন সামনা সামনিও হয়নি। তবে কিছু না বলে লাজুক ছেলের মত একপ্রকার পালিয়ে-ই চলে আসলো নাফিস। লামিয়াও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে কিন্তু পিছন থেকে আলতো করে একটি ডাকও দিলো না।

কেটে গেলো দু’টি বছর। সমাবর্তন অনুষ্ঠান চলছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। একটু পরেই গ্রাজুয়েটদের মাথায় পরিয়ে দেয়া হবে সম্মানের কালো মুকুট। সবার চোখে মুখে আনন্দের ছাঁপ থাকলেও নাফিসের চোখে মুখে তীব্র কষ্টের ছাঁপ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটে উঠেছে। এতদিন তো প্রিয় মানুষটির দিকে আড়চোখে হলেও তাকাতে পেরেছে কিন্তু আজকের পর থেকে সেই সুযোগ আর থাকবে না। অনেক অনেক দূরে চলে যাবে লামিয়া। ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে নাফিসের। কিভাবে থাকবে ওকে না দেখে! কী করে থাকবে ওর মিষ্টি কণ্ঠটা না শুনে! ভাবে নাফিস।

অবশেষে পরিয়ে দেয়া হলো সম্মানের সেই কালো মুকুট। সবাই আনন্দে আত্ম হারা হয়ে গেলো, পা মাটিতে রেখেও আকাশে উড়তে লাগলো সবাই। সর্বশক্তি দিয়ে কালো মুকুটটি আকাশের দিকে ছুড়ে মেরে লাফিয়ে উঠতে লাগলো। এত সবের পরেও সবার মনের কোনে লুকিয়ে ছিলো বিদায়ী চাপা কষ্ট। সবাই যে যার মত বিদায় নিচ্ছে, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে বন্ধুদের থেকে।

নাফিসের এসব কিছু একদমই ভালো লাগছিলো না। তাই নিজেকে আড়াল করতে দূরে গিয়ে মাথা নিচু করে একা একা বসে আছে। কিন্তু হুট করে মাথা উঠাতেই দেখে কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফুপিয়ে ফুফিয়ে বাচ্চাদের মত কাঁদছে। নাফিস দাঁড়িয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবে, ওমনি জড়িয়ে ধরে আরো বেশি করে কাঁদতে শুরু করে লামিয়া। নাফিসও খুশিতে কেঁদে ফেলে।

‘‘ভালোবাসা মুখে নয়, হৃদয়ে।’’
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×