"ফুল হল যোনি আর শিশ্ন এর সমন্বয়"- হুমায়ূন আজাদ
উপরের লাইন টি হুমায়ূন আজাদের "পাক সার জমিন সাদ বাদ" থেকে নেওয়া।
এই উপন্যাসটির জন্যই হুমায়ূন আজাদ কে বইমেলায় কোপানো হয়।
অনেক আগেই বই টি পড়ার ইচ্ছা ছিল। মনে করেছিলাম বইটিতে মৌলবাদ এর বিরুদ্ধে হুমায়ূন আজাদ তর্ক দিয়ে লড়বেন। এই আশাতেই বইটি পরা শুরু করি। কিন্তু পুরো বইটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনে হল চটি পরছি।
যদিও শেষ টা উনি করেছেন একটা শুভ ইঙ্গিত দিয়ে।
চটি তেও এত নগ্ন ভাবে নগ্নতাকে উপস্থাপন করা হয় না। আমি বইটা পড়ার সময় ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না উনি আসলে কি বুজাতে চাচ্ছেন। আর বুজা সম্ভব না । কারন কিছুক্ষন পরপর যদি গনিমতের মাল ভক্ষন করার কাম- সমৃদ্ধ বর্ণনা করা হয় আর যদি বলা হয়
"হুজুর আপনার হুজুর ত সোনার খনিতে ঢুকনের আগেই খাড়ায়া তাল গাছ হয়া রইছে" তাহলে..................।।
থাক আর না বলি।
এইবার আসি বইটার কাহিনি নিয়ে। আর উনি যে দিক টাকে ইঙ্গিত করেছেন সেই দিকটা নিয়ে।
উপন্যাসের মুল কাহিনির পটভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ কে পাক স্তান এ পরিনত করার অভিপ্রায়ে এক জিহাদির কাহিনি। সে এই দেশে সোনার বাংলা এর বদলে পাক সার জমিন সাদ বাদ কে আনতে চায়। সে চায় এই দেশে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই সে নির্বাচনের আগে মালউনদের ঘর বাড়িতে "শান্তির ঠাণ্ডা আগুন জ্বালিয়ে" ক্ষমতায় যেতে চায়। এইখানে উনি মেইন পার্টি বলতে খুব সম্ভবত ২০০১ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত দল কে বুজিয়েছেন। এই মেইন পার্টি এর একটি খিলজি বাহিনি হচ্ছে জামাই ইসলামি জিহাদি। খুব সম্ভব উনি মেইন পার্টির প্রধান শরিক দলকে বুজিয়েছেন। এই মেইন পার্টি আর খিলজি বাহিনি মিলে বাংলাদেশ কে পাক স্তান এ পরিনত করতে চায়। তাই তারা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা ধখল করার জন্য মালাউন্দের আর তাদের দালাল দের বাড়িতে "শান্তির ঠাণ্ডা আগুন জ্বালায়"। তারা এই সব মুনাফিকদের থেকে জিজিয়া কর আদায় করে। সেই সাথে গনিমতের মাল যা জায়েজ।
এই গনিমতের মাল গুলো ভোগ করার পর দেখা যায় আমগাছে ঝুলে থাকে। নয়ত শহিদ হয়। নয়ত তাদের খনিতে তাল গাছ ঢুকানোর পর এক বিন্দু ধাতু রেখে আসা হয়। যা নব মুমিন বান্দা উৎপন্ন হওয়ার প্রোডাকশন। মুমিন এক বিন্দু ধাতু ও বৃথা যেতে পারে না।
নির্বাচনে জিতার পর "শান্তির ঠাণ্ডা আগুন" আরও বেশি বয়। দুইটি পৌত্তলিক গ্রামের নাম বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পর পর দুই দিন। এই দুইদিন শান্তির ঠাণ্ডা আগুন আরও জোরে বয়। ভেঙ্গে ফেলা হয় একটি মঠ। কিন্তু মঠ টি ভাঙ্গার পর থেকেই জিহাদি কিছুটা উদ্ভ্রান্তের মতন আছরন করে। সে টার রক্ষিতা বিবি কনক লতা কে নিয়ে চলে যায়। আর সে তখন দেখতে পায় সবুজের সৌন্দর্য। সে যাওয়ার পথে নদীতে ফেলে দেয় "পাক সার জমিন সাদ বাদ" এর ৫০০ কপি যা পরিপূর্ণ ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের পর সারা পাক স্তান জুড়ে বাজানোর কথা ছিল।
এককথায় যদি বলি তাহলে উনি হয়ত বলতে চেয়েছেন
বাংলাদেশ কে কখনই কেউ আর পাক স্তান এ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। যতই অরাজকতার রাজত্ব কায়েম করা হোক এই দেশ এর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেই অরাজকতার রাজত্ব কে কখনই প্রস্রয় দিবে না।
এখন কথা হচ্ছে উপন্যাস এর ভাষা কি আরও সুন্দর করা সম্ভব ছিল না?
আবু ইসহাক এর লিখা" বন মানুষ' সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে লিখা। কিন্তু কত সুন্দর টার উপস্থাপন।
সৈয়দ মুস্তফা জব্বার এর যে উপন্যাস নকল করে মুরাদ পারভেজ "ব্রিহন্নলা" ছবিটি বানিয়েছেন। সেইখানে তেও ত সাম্প্রদায়িকতা ছিল। কিন্তু ভাষা শৈলী ত চটি বই এর মত ছিল না।
আর উনি একটি বিশেষ সময়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অরাজকতা তুলে ধরেছেন। সন্দেহ নেই বইটির পটভূমি অন্য প্রেক্ষাপটে তৈরি করলে হয়ত আরও আকর্ষণীয় হত। পড়ার সময় মনে হয়েছে উনি উনার ব্যক্তিগত আক্রোশ নিয়ে লিখেছেন। লিখকদের আক্রোশ থাক্তেই পারে কিন্তু টার উপস্থাপন যদি হয় নগ্ন তাহলে সেই লিখক কে বসে বসে চটি লিখাই উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৩৮