somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে যত ছোটই হোক, সম্মান তার অধিকার

৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেক অনেক আগের কথা। এক দেশে একজন রাজপুত্র ছিলো যে দেখতে যেমন ছিলো কুৎসিত, ঠিক তেমনি দৈর্ঘেও ছিলো খাটো। কিন্তু, তার ভাইয়েরা ছিলো একেকজন লম্বা এবং সুদর্শন।

একদিন সেই রাজপুত্রটি দেখতে পেলো তার বাবা তার দিকে বিতৃষ্ণা আর অবজ্ঞার দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। রাজপুত্রটি ঠিকই বাবার চাহনির অর্থ বুঝে ফেললো। সে বললো-

‘’বাবা, আপনি কি জানেন, পুঁচকে জ্ঞানী ব্যক্তি একজন লম্বা অজ্ঞ মানুষ থেকে ঢের ভালো? শুধু বড় বলেই কোন জিনিসের দাম বেড়ে যায় না। একটা ভেড়ার মাংস খেতে অনেক ভালো, কিন্তু, হাতিরটা? সেটা পচে যাওয়া মাংসের স্বাদের মতো নয় কি? একটি বুড়ো আরবী ঘোড়া হয়তো দূর্বল হতে পারে। কিন্তু, তা আস্তাবল ভরা গাধার চেয়ে বেশি মূল্যবান।’’

বাবা ছেলের কথা শুনে উচ্ছসিত হলেন। কিন্তু, অন্যান্য রাজপুত্রেরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারলো না।

একজন মানুষ যখন কথা বলা বন্ধ করে দেয় । তখন, তার দোষ ও গুণ – দুটোই ঢাকা পড়ে যায়।
এটা ভেবো না যে, প্রত্যেকটি মরুভূমিই শূণ্য। কোন কোনটিতে তো ঘুমন্ত বাঘও থাকতে পারে।


কিছু দিন পরেই, এই দেশটির উপর এক শক্তিশালী রাজ্যের নজর পড়লো। দেশটিকে দখল করতে সেই রাজ্যটি বিশাল এক সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেশটিকে দখল করতে চাইলো। দুই রাজ্যের সেনাবাহিনী যখন পরস্পরের মুখোমুখি, সবাই দেখতে পেলো সেই খাটো রাজপুত্রটিই সবার আগে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছে।

''আমি তো সেই মানুষ নই যে যুদ্ধক্ষেত্রে পিঠ দেখাবে, বরং, আমি তো সেই ব্যক্তি যে মাটি কামড়ে সেখানেই পড়ে থাকবে।
যে জীবন বাজি রেখে লড়ে যায়, সে-ই তো বীর।
আর, যে যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে, সে তো সেই ব্যক্তি যে নিজের সেনাবাহিনী'র রক্তের উপর দিয়ে দৌড়ে পালায়।''

এই কথাগুলো বলে সে শত্রুবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ ধরে যুদ্ধ করে, অনেক শত্রুকে ধরাশায়ী করলো। এরপর, বাবার সামনে গিয়ে সালাম ঠুকে বললো-

''তার উদ্দেশ্যে বলছি, যিনি আমাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেছিলেন-
যিনি আমার বীরত্বের গভীরতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন-
যুদ্ধের দিনে, একটি সরু পেটওয়ালা ঘোড়াই কাজে লাগে,
মোটা ষাঁড়ের কি কাজ সেইখানে!''

রাজার সেনাদের তুলনায় শত্রুবাহিনীর সংখ্যা আসলেই অনেক বেশি ছিলো। শত্রুবাহিনী'র প্রচন্ড আক্রমনে রাজার বাহিনী পিছু হটতে থাকলো। তা দেখে সেই পুঁচকে রাজপুত্র আবারো বলে উঠলোঃ ''তোমরা মেয়েদের কাপড় পড়তে দ্বিধা বোধ করছো কেন!''

এই কথা শুনে, সেই রাজার সেনারা খুব লজ্জা পেলো। তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে শত্রুর সাথে প্রাণপন যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এলো।

এই যুদ্ধের পর রাজা সেই ক্ষুদে রাজপুত্রের মাথায় ও চোখে চুমু খেয়ে তাঁকে নিজের পরে রাজা হবার ঘোষণা দিলেন। কিন্তু, সেই রাজপুত্রের অন্য ভাইয়েরা এতে হিংসায় জ্বলতে লাগলো। তারা করলো কি, একদিন রাজপুত্রের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিলো। বিষ মিশালে কি হবে, সেই অকাজ তাদের বোন হাতে-নাতে ধরে ফেলে সেই রাজপুত্রকে ইশারায় জানিয়ে দিলেন।

খাবারে বিষ মিশানো আছে তা বুঝে ফেলে, রাজপুত্রটি বললো- ''এটা কিভাবে হয় যে একজন সম্মানীয় ব্যক্তি এই ভাবে মৃত্যু লাভ করবে! বরং, যারা এটা করেছে, তারা নিজেদের জায়গায় থাকার যোগ্য নয়।''

পেঁচার ছায়ার নিচে কেউই যাবে না,
এমনকি সম্মান বলতে কোন কিছু এই পৃথিবী থেকে প্রস্থান করে।


বাবা যখন এই ঘটনা শুনতে পেলেন, তখন সেই রাজপুত্রের ভাইদের তীব্র ভাবে তীরস্কার করে প্রত্যেককে একেকটি প্রদেশের দায়িত্ব দিয়ে সে সব জায়গায় নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলেন যতদিন না নিজেদের মাঝের ঝগড়া তারা নিজেরাই মিটিয়ে না ফেললো।

কিন্তু, কথায় আছে- ''একটি কম্বলের নিচে ১০ জন দরবেশ থাকতে পারলেও, একই রাজ্য দুইজন রাজাকে রাখতে পারে না।''

একজন ধার্মিক মানুষ একটি রুটিকে দুই টুকরো করে একটি নিজের জন্যে রাখে, অপরটি দরবেশকে দিয়ে দেয়।
অথচ, একজন রাজা সাতটি রাজ্য জয় করার পরও, আরো একটি জয় করার ধান্ধায় থাকে।


============
শেখ সাদী, গুলিস্তান
============















সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:২৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×