মানুষের কাজ তার মধ্যে থাকা চিন্তার প্রতিফলন। আর, একটি কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটি কাজের সূচনা। কার্ল মার্ক্স জীবনে অর্থের গুরুত্ব বুঝতেন। জীবনে দারিদ্রতার কষাঘাতে বহু দিন কাটাতে হয়েছে। বন্ধু ফ্রেডেরিক এঙ্গেলসের কাছে একবার ঋণ চাইতে গিয়ে বলেছিলেন- ''এবার দিয়ে দাও। তোমার কাছে আর টাকা চাইতে আসার আগে যেন আমার হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে ফেলি।''
জীবনে অর্থের প্রয়োজন, সেই উপলব্ধি থেকেই হয়তো মার্ক্স বলেছিলেন- 'সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার চালিকা শক্তি হলো অর্থনীতি।' তিনি মনে করতেন- 'যাদের হাতে যত অর্থ সঞ্চিত হবে, তাঁরাই সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাবান, সমাজের প্রভু। তাই, রাজনীতি, বিজ্ঞান কলা, ধর্ম ইত্যাদি চর্চার আগে প্রয়োজন খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, পরিচ্ছদ।'
পূর্বের মতো এখনও আমাদের দেশের অনেকেই মনে করেন, পূঁজিবাদের মোকাবেলা একমাত্র মার্ক্সবাদ দিয়েই সম্ভব। অথচ, মার্ক্স-এঙ্গেলস রচিত কমিউনিস্ট ইশতেহার পড়লে মনে হয়- এ কি! এ যে পুঁজিবাদের অন্য রুপ! একটি পুঁজিবাদী সমাজে অসংখ্য পুঁজিপতির দেখা মেলে, অন্য দিকে মার্ক্সবাদী সমাজে এই অসংখ্য পুঁজিবাদীকে নির্মূল করে একটি পূঁজিপতি সরকার প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য।
লেনিনের 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব' নামক রচনায় উল্লেখ আছে- কমিউনিস্ট সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায় ন্যায় ও সমতা দিতে পারে না। সেখানে ধনের তফাত থাকতে পারে, সেটা অন্যায় হলেও! মার্কস লিখেছেন- ''...কমিউনিস্ট সমাজের প্রথম পর্যায়ে......অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও তন্নির্দিষ্ট সমাজের সাংস্কৃতিক বিকাশের চেয়ে অধিকার কখনো উঁচু হতে পারে না...।'' অর্থাৎ, ব্যক্তি অধিকার ক্ষুন্ন করে কমিউনের সমষ্টিগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এখানে।
উৎপন্ন পদার্থ ও শ্রম বন্টনের সমাজতান্ত্রিক নীতিতে বলা হয়েছে- 'যে কাজ করে না, তার খাওয়াও চলবে না।' 'সম পরিমাণ শ্রমের বদলে সমপরিমাণ উৎপন্ন'। এসব নীতিই এক বিশেষ অধিকার গোষ্ঠীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আর, লেনিনও স্বীকার করেছেন যে- কমিউনিস্ট সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পুরোপুরি পুঁজিবাদের ঐতিহ্য বা চিহ্ন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
এ থেকে বুঝা যায়, কমিউনিজমে, সেটা কিছু সময়ের জন্যে হলেও, পুঁজিবাদীদের অধিকার রক্ষা করা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৪