বাবাকে একা রাখিয়া আসিয়াছি বেশ কিছুকাল। একা একা থাকেন, খোঁজ-খবর রাখিতে পারি না। তাই ভাবিলাম, সুযোগ যখন পাইয়াছি , দেখিয়া আসি। নিজের সাহেবজাদাকে লইয়া দিলাম ছুট !
পথে পথে .........
পথে পথেইএএএএএএ , দিলাম ছড়াইয়ারে সেই দুঃখে চোখেরও পানি..................
হে সূর্য! শীতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ
ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু !!!
মর্নিং ওয়াক !!!
ও নদীরেএএএএএএএ .....................
গ্রাম দেখা শেষ হইলো। অনেকদিন পরে ভাবিতে বসিলাম, গ্রামেতো বহুকাল হইতেই আসি। শৈশবের লক্ষ্-কোটি স্মৃতি মনে জাগরুক। গ্রামের কি কি বিবর্তন হইয়াছে তাহার উপরে আলোকপাত করা যাইতে পারে।
১. গ্রামের অভাব দূর হইয়াছে। কর্মক্ষম কোন মানুষ বেকার নাই শিক্ষিত ছাড়া।
২. কামলা/রাখাল পাওয়া যায় না, কাজের লোকও পাওয়া যায় না। শ্রমের উচ্চমূল্যের কারণে গৃহস্তের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি।
৩. বহু কৃষক বর্গাদার হইয়া গিয়াছে। চাষাবাদের উপায় নাই। লোক নাই। ফসল ফলাইয়া লাভ হয় না।
৪. কর্মক্ষম প্রজন্মের বেশিরভাগ পুরুষই দেশের বাহিরে কামলা দিতেছে। দুয়েকজন , বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাড়ি পাহারায়। জামাই বাহিরে বিধায় বাড়ির বৌ বাবার বাড়িতে থাকে।
৫. অর্থের সমাগমের সাথে সাথে গৃহবিবাদ বাড়িতেছে। পৃথক বাড়ি করার প্রবণতাও বাড়িতেছে। ফসলের জমি আশংকাজনকহারে কমিতেছে !
৬. সকলের হাতেই অর্থ আছে , খরচও করে। "ঋনং কৃত্যা , ঘৃতং পিবেৎ" ঋণ কইরা হইলেও ঘি খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
৭. গ্রূপিং , দলাদলি , গলাগলির অবস্থা ভয়াবহ। এক গ্রূপের লোকজনের অন্য গ্রূপের কাহারো জানাজায়, বিবাহ-শাদীতে যাওয়াটাও বুঝি বারণ।
৮. গ্রামের রাজনীতি গ্রূপ কেন্দ্রিক, এখানে জাতীয় রাজনীতির বিভক্তিও গ্রূপিং এর কারণে।
৯. জালেম আর জুলুমের পোয়াবারো। নিরাপত্তাহীনতা নিত্যদিনের। যন্ত্রনায় ভিটা-বাড়ি বিক্রয় করিয়া অন্যত্র হিজরত খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
১০. ভয়াবহ সুদের কারবার ! দরিদ্র মানুষও টাকা গুছাইয়া সুদে টাকা খাটাইতেছে ! ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এখন ঘরে ঘরে !!
১১. আত্মীয়তা, প্রতিবেশীর হকের ভয়াবহ অবস্থা। একান্নবর্তী পরিবারে ব্যাপক ভাঙ্গন। বৃদ্ধ, অক্ষম মানুষগুলোর খুব কষ্ট ! ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্দ্ব !
১২. উগ্রতা লক্ষ্যণীয় , শালীনতাবোধ , নম্রতা বিদায়ের পথে।
১৩. ভালো , সাধাসিধা মানুষ এখনও অনেক , তবে অনেক চাপে।
১৪. দ্বীনদারীর অবস্থা ভয়াবহ। তবে মসজিদে মুসুল্লি বাড়িয়াছে।
১৫. সংস্কৃতির পরিবর্তন আসিয়াছে। শহরের মতন হইবার প্রানান্তকর চেষ্টা !
১৬. জমি লইয়া মারামারি, ঝগড়াঝাটি নিত্যদিনের ! বোনদের সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করা এবং ইহার পক্ষে সমর্থন ব্যাপক !!
১৭. নোংরা, কুটিল, পয়সাওয়ালারা সমাজের মুরুব্বি বনিয়া গিয়াছে !!
১৮. পরিবেশে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎচালিত যানবাহন, শয়তানের বাক্সর কারণে গ্রাম এখন ঘুমায় না !
১৮. রাস্তা-ঘাটের আধুনিকায়নে মেঠোপথ আর নাই বলিলেই চলে !
১৯. তবুও সবুজের ছোঁয়া, চোখে-মুখে লেগে থাকে, পাখিদের ডাক কানে মধু বর্ষণ করে।
২০. সবচেয়ে কষ্ট লাগে নদীর দিকে তাকাইলে। কবে যেন দেখিলাম , বাংলাদেশ নদী -মৃত্যুর দেশ ! গ্রামে গিয়া তাহাই মনে হইলো। যেসব নদীতে আগে বড় লঞ্চ দেখিতাম এখন কচুরিপানায় ভরা !
২১. তবুও শহরের চেয়ে গ্রাম ভালো লাগে, অন্ততঃ দম ফেলানোর ফুসরত আছে।
গ্রাম দেখিয়া মন ভরে নাই , হাহাকার নিয়াই ফিরিয়া আসিয়াছি ! মনে শান্তি পাই নাই ! বাবাকে একা রাখিয়া আসিয়াছি। আবারো যাবো। একেবারেই হয়তো !!
(ছবি আপলোড হইতেছে না। সকাল হইতে চেষ্টা করিয়া মাত্র এই কয়খানা লোডাইতে পারিয়াছি !)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮