সাম্প্রতিক কালে একটি পত্রিকায়, মোস্তফা জব্বার সাহেব অভ্রকে নির্বাচন কমিশনের কাজে ব্যবহারের কারণে একে হ্যাকিং করা সফটওয়্যার বলে আখ্যায়িত করে সরকারকে সচেতন হতে অনুরোধ করেন এবং এর নির্মাতা অর্থাৎ মেহদীকে বলেছেন হ্যাকার।
মূলতঃ একটি ব্যপার পরিস্কার, সেদিন থেকেই মোস্তফা জব্বার সাহেবের মাথায় হাত যেদিন থেকে সরকার নির্বাচন কমিশনের জন্য 5000 টাকা দিয়ে প্রতিটি কম্পিউটারে বিজয় ব্যাবহার না করে অভ্র ব্যাবহার শুরু করে; সেদিনই তার যে লস হয়েছিল সেই লসের টাকা এখনো উঠাচ্ছেন নানারকম কটূক্তি করে।
অথচ, ইংরেজীতে লেখার জন্য QWERTY কিবোর্ড ব্যবহার করে লিখতে তো এর জনক ক্রিস্টোফার সোলস্ (১৮৭০) কে কোন টাকা দিতে হয়না। তাহলে বাংলায় কেন টাইপ করতে চাইলে, প্রেসের কাজ করতে চাইলে টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কেন কিনতে হবে?
কিন্তু ম্যাকের জন্য (অভ্র) এর কোন ভার্সন নেই। একুশের কথাও বলা যেতে পারে। কিন্তু ম্যাকের জন্য মুনীর লে-আউট এখনও একুশে তৈরী করেনি।
এছাড়া প্রিন্ট মিডিয়ায় এসব সফটওয়্যার এখনও মূল্যহীন। তাই শেষ ভরসা বিজয় নামের একটি প্রোপাইটারি সফটওয়্যার। সরকারী অফিসগুলোতেও (এমনকি স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও) বাংলা লেখা চলে বিজয়ের পাইরেডেট কপি দিয়ে।
মাইক্রোসফটও বাংলা লেখার কিবোর্ড ছেড়েছে। কিন্তু সেটাও যে খুব কার্য্যকরভাবে মানুষ ব্যবহার করছে তা নয়। তাছাড়া এক দেশে নানান কিবোর্ডের ব্যবহার- বিজয়, মুনীর,ফোনেটিক, ন্যাশনাল। সবাই নিজের নাম (আবার কেউ ব্যবসার ধান্দায়, কেউ জনগনের স্বার্থে) নয়া নয়া কিবোর্ডের লেআউট আমদানি ও আবিস্কার করেছেন। একটা প্রমিত মানের কীবোর্ড আজ অবধি হলো না।
বাংলা পৃথিবীর অন্যতম একটি পুরাতন এবং বহুল কথ্য ভাষা। আমরা ইংরেজী বর্নমালায় লিখি না। এটি আমাদের গর্ব। কিন্তু বাংলা বর্নমালায় লিখতে হলে,প্রেসের কাজ করতে গেলে প্রথমে জনৈক আইটি ব্যক্তিত্বের (বাংলা ডিগ্রীধারী!)একুশে বিজয় (নামটা লক্ষ্য করুন!) নামের কোম্পানীকে টাকা দিয়ে শুরু করতে হবে এটা মানতে মন চায় না।
মোঃজাঃ সাহেবকে অপছন্দ করি বলে বিজয় লে-আউট পর্যন্ত ব্যবহার করি না। লিখি মুনীর দিয়ে। কিন্তু দুঃখ লাগে যখন দেখি লিনাক্সে মুনীর লেআউটটি নেই। ১৯৯৮/৯৯ এর দিকে মাইক্রসফট বাংলাদেশে এসেছিল , উইন্ডোজে আর এম এম অফিসে বাংলা কী বোর্ড ও ফন্ট যোগ করার জন্য।
সরকারী অফিসে লেখনী/মুনির চলতো তখন , সেই লেখনী কিংবা মুনির হয়তো বাংলা কী বোর্ড হিসাবে যুক্ত হয়ে যেত তখন কিন্তু এই মোঃজাঃ সাহেব দৌড়া দৌড়ি করে , চিঠি পাঠিয়ে সেটা বন্ধ করেছে, কারন বিজয় লস খেতে পারে। মাইক্রোসফট এর লোক জন শেষে বলে যে – তোমরা ঠিক কর কোন কী বোর্ড ইউজ করবে, তারপর জানিয়ো।
তারপরও, শ্রদ্ধা জানাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র মেহদী হাসান খান এবং অভ্র টিমের প্রতিটি কর্মীকে। কোনো লাভের বা খ্যাতির আশা ছাড়া শুধু আমাদের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
ছবির কৃতজ্ঞতাঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩৩