somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়াশা, শীতের রাত ও অনিশ্চিত স্মৃতি

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখন অনেক রাত। মধ্যরাত যদি রাত বারোটাকে বলা হয়, তাহলে মধ্যরাত পেরিয়েছে ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট আগে। অবশ্য দূরের মাজারের মাইকের আওয়াজ এখনও দিনের মতোই স্পষ্ট। বলা যায়, দিনের চেয়ে বেশি স্পষ্ট। বাউলরা মিলে গান ধরেছে। গতকাল উরস ছিল বলে সেই রেশ এখনও কাটেনি। আগে প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত বাউলদের গান শোনা যেত। আজ অনেকদিন পর সেই অনুভূতিটা ফিরে এলো।

এসব বাউলদের গানে বেশিরভাগ কথাই আমি বুঝি না। কিন্তু তাদের যন্ত্র সঙ্গীতে কেমন যেন একটা উদাস করা ভাব আছে। যেই জিনিসটা আগে কোনোদিন করেছে কি না জানিনা, এখন আমার উপর বেশ ভালোই প্রতিক্রিয়া ফেলছে। কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে বসে আছি হেলান দিয়ে। গান শুনছি না। গানে কোনো মনোযোগ নেই। কিন্তু তবুও কেমন যেন শূন্য একটা অনুভূতি হচ্ছে।

‘শূন্য অনুভূতি।’ শব্দটা একেবারে পারফেক্ট। এখনকার অনুভূতিটা বোঝানোর জন্য এরচেয়ে ভালো কোনো শব্দ হয় না। কিন্তু গত কয়েক মিনিট ধরে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি এই শূন্য অনুভূতির কারণ খুঁজে বের করতে। গত ঘণ্টাখানেকে মন খারাপ করে দেয়ার মতো যথেষ্ট কথাবার্তাই হয়েছে। কিন্তু সেসময় তো মন খারাপ লাগেনি। এখন কেন লাগছে? আবার বুঝতেও পারছি না ঠিক কেন এই শূন্য অনুভূতি। ব্যাপারটা কি অনেকটা বাস্তবিক ব্যথা পাওয়ার মতো? যে ব্যথা পাওয়ার সময় টের পাওয়া যায় না, কিন্তু পরে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়?

জানি না। জানতে ইচ্ছে করছে না। সেদিন রাত দশটায় বেরিয়েছিলাম। দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। খেয়াল করলাম কুয়াশা। কুয়াশা অনেক অনেকদিন পর দেখলাম। গত বছরও বোধহয় কিছুটা শীত পড়েছিলো। সোয়েটার পড়ে কলেজে যাওয়ার কথা মনে আছে। এবার তো প্রায় শীতকাল চলেই গেল। কিন্তু তবুও কুয়াশার দেখা পেয়ে ভালোই লাগলো। ভুলেই গিয়েছিলাম স্মৃতি কেবল বৃষ্টির সঙ্গেই মিশে থাকে না, কুয়াশারও স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। যেমন তেমন ক্ষমতা নয়, বেশ ভালো ক্ষমতাই।

কুয়াশার সঙ্গে আমার যেসব স্মৃতি আছে তার বেশিরভাগই গ্রামকে ঘিরে। আমি গ্রামে তেমন একটা যাই না। কিন্তু আগে বছরে একবার যাওয়া পড়তো। নানীর বাড়ি। তখন ভোরে উঠে কুয়াশা দেখতাম। এমন কুরবানীর ঈদের সময়ই যেতাম। দুপুরের পর পর বাজারে যেতাম খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে। খাওয়া-দাওয়া, চা-নাস্তা শেষে পড়ন্ত বিকেলে শত শত মাইল ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা খুব মনে পড়ছে। আর সন্ধ্যার আগে আগেই কুয়াশার চাদর নেমে আসতো। মনে হতো, এই সামনে একটি পোর্টাল। এর অপর পাশে রয়েছে অন্য কোনো দুনিয়া। এক দিকে দুর্বল হয়ে আসা সূর্যের তেজ, অন্যদিকে গাঢ় হতে থাকা কুয়াশার পর্দা। দৃশ্যটা সত্যিই খুব মিস করছি এই মূহুর্তে।

শীতকালের সঙ্গে ঢাকারও কিছু স্মৃতি আছে। স্মৃতিগুলো বিশেষ কাউকে ঘিরে নয় মোটেই। একটু কেমন যেন। কুয়াশার চাদরের মতোই ঘোলাটে, সাদা, অনিশ্চিত। তখন পাশের বাসার চার তলায় ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতাম। নিজের বাড়ি ফেলে ফ্ল্যাটে কেন গিয়েছিলাম সেই রহস্য এখনও উদ্ঘাটন না হলেও সেই বাসায় জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। আপুর বিয়ে সেসব স্মৃতির মধ্যে একটা।

কিন্তু শীতকালের সঙ্গেও কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। খুব আবছাভাবে মনে পড়ে। বারান্দায় বসে কুয়াশা দেখার কথা। উপর থেকে নিচে কিছুই দেখা যেত না। যেন মেঘ ভেদ করে চলে এসেছি পরীদের দেশে। সেই পরীদের দেখা কখনও যদিও পাইনি, কিছু একটা স্মৃতি আছে সেই বিল্ডিং আর কুয়াশাকে ঘিরে। কোনোভাবেই আমি আজ অবধি সেই স্মৃতিগুলো হাতড়ে পাইনি। স্মৃতিটা অনিশ্চিত, একটু অবয়ব মাত্র।

বছর ঘুরে আবারও রাতের ল্যাম্পপোস্টের সামনে কুয়াশার অস্তিত্ব অনুভব করে এই সব কথা মনে পড়ে গিয়েছিল মূহুর্তেই। কিন্তু এখন বসে আছি আমার ঘরে। শীতের রেশমাত্র নেই। বাইরে হয়তো কুয়াশা আছে, গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না। কোনো স্মৃতি নেই। তবু কেমন যেন শূন্য একটা অনুভূতি।

কে জানে, হয়তো মাইক্রোফোনের সামনে থাকা বাউলগুলোই সবকিছুর জন্য দায়ী।




পোস্টটি ২০ তারিখ মধ্যরাতে লেখা
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×