জীবাত্মার যে আতীব্র আকূতি -রাধার প্রনয় যন্ত্রণা যেন তারই প্রতীক হয়ে উঠেছে। মানবিক কল্পনার মহত্ব এখানেই। জগৎ এখানেই অর্থময়, সার্থক ও ব্যাঞ্জনাময় ...
প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষে মথুরা-বৃন্দাবনের কৃষ্ণের কল্পনা চলে আসছে। কারও কারও মতে অবশ্য কৃষ্ণ ছিলেন ঐতিহাসিক ব্যাক্তি । তেমন সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, কৃষ্ণের যুগল রাধা অবশ্যই কাল্পনিক। আর সে কল্পনা করেছিলেন বাংলারই এক কবি। জয়দেব।
পৌরাণিক জগতে কৃষ্ণ অবশ্য একজন নন; বেশ কজন কৃষ্ণকেই আমরা পাই। তবে রাধার উপাস্য কৃষ্ণই যুগে যুগে ভারতবর্ষজুড়ে একাধারে প্রেমিক ও উপাসকের কৌতূহলের বস্তু হয়ে রয়েছে। বাংলাও এর ব্যাতিক্রম নয়।
কৃষ্ণ দীর্ঘকাল একা ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণর পাশে শ্রীরাধা কে গড়ে দিল বাংলা! কবে? দ্বাদশ শতকে। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন, “রাধাকৃষ্ণের ধ্যান-কল্পনাও বোধ হয় এই পর্বের বাঙলাদেশেরই সৃষ্টি এবং কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ- গ্রন্থেই বোধ হয় প্রথম এই ধ্যান-কল্পনার সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রচলিত রুপ আমরা দেখিতেছি।”(বাঙালীর ইতিহাস। পৃষ্ঠা; ৫৪৮) তার মানে দ্বাদশ শতকের কবি জয়দেবের লেখাতেই প্রথম রুপ পেলেন শ্রীরাধিকা। উড়িষ্যা অবশ্য বরাবরই দাবী করে আসছে যে জয়দেবের জন্ম নাকি হয়েছিল উড়িষ্যায়। আমরা উড়িষ্যার এ দাবি সহজেই নাকচ করে দিতে পারি। কেননা, পরেশ চন্দ্র মন্ডল লিখেছেন-পশ্চিমবঙ্গের অজয়নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে তাঁর (জয়দেবের) জন্ম। (দ্র: বাংলাপিডিয়া) অতএব, কবি জয়দেব অনিবার্য ভাবেই বাঙালি ছিলেন। অতএব, রাধার কল্পনা বাংলারই কল্পনা। বাংলা তার অন্তরের গভীরে রাধাকে গ্রহন করেছে অনেক আগেই। রাধার বিরহী মনের আবেগ ফুটে উঠেছে রাধারমনের একটি বহুলশ্রুত আবেগী গানে-
ভোমর কইও গিয়া ...
কিংবা
বনমালী তুমি পর জনমে হইও রাধা ...
এভাবেই বাঙালি মনের সৃষ্টি রাধা বাংলার প্রেমময় মানসে নিবিড় এক আবেগে মিশে একাকার হয়ে রয়েছে।
দুটি লক্ষণীয় বিষয়:
১/ রাধার পুরুষালি উপাধি। শ্রীরাধা। একজন নারীর জন্য পুরুষালি উপাধি-ভাবারই বিষয়। এর কী ব্যাখ্যা?
২/ বলা হয়, রাধাকৃষ্ণ। কখনও কৃষ্ণরাধা বলা হয় না। অর্থাৎ, রাধার নাম আগে উচ্চারণ করা হয়। এটিও ভাববার মতন একটি বিষয়।
তথ্যসূত্র:
১/ নীহাররঞ্জন রায় রচিত 'বাঙালীর ইতিহাস'। ( পৃষ্ঠা; ৫৪৮)
২/ বাংলাপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯