গতকাল রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার এনাহেম শহরে এসেছি। উঠেছি একটি মোটেলে। মোটেলে ওঠার শানেনজুল হলো, এটা হোটেলের তুলনায় সস্তা! তাছাড়া আমাদের মোটেলটি ডিজনি থেকে খুব বেশি দূরে নয়, মাত্র ৫-৭ মাইল দূরে। প্রতি রাতের জন্য খরচ পড়ছে প্রায় ৯০-১০০ ডলার, যা অনেকটাই হাতের নাগালের মধ্যে! ডিজনি সাধারণত সকাল থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যেহেতু রাতে থাকব, তাই থাকার জন্য মোটামুটি দামের মধ্যে একটি জায়গা খুঁজছিলাম, যা বাঙালী নারীদের ভাষায় বলে সিম্পলের মধ্যে গোর্জিয়াস!
যাইহোক, ক্যালিফোর্নিয়াতে ডিজনির দুটি থিম পার্ক আছে—একটি ডিজনিল্যান্ড এবং আরেকটি ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাডভেঞ্চার পার্ক। আমি এখানে আসার আগেই অনলাইনে দুটি থিম পার্কের জন্য দুদিনের টিকিট কিনেছি। উদ্দেশ্য হলো, প্রথম দিন ঘুরব ডিজনিল্যান্ড আর পরের দিন ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাডভেঞ্চার পার্ক! দুটি থিম পার্কই পাশাপাশি। আমরা সকালে চলে গেলাম ডিজনিতে। গিয়ে দেখি বিশাল বড় লাইন। আমাদের পার্কিং কেনা ছিল না, সেখানেই গিয়ে দুই দিনের জন্য পার্কিং টিকিট নিলাম প্রায় ৭০ ডলার দিয়ে। সব মিলিয়ে টিকিটসহ খরচ পড়ল প্রায় এক হাজার ডলার!
ডিজনি ঢুকার পরের দৃশ্য।
গাড়ি পার্কিং করে দেখি আরেক কাহিনী, সেখানে চমৎকার চেকিং ব্যবস্থা, একেবারে ইমিগ্রেশন পার করার সময়ের মতো! আমরা সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চেকিং শেষ করলাম। তারপর সেখান থেকে ট্রেনে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ডিজনিল্যান্ডের গেটের সামনে। ডিজনিল্যান্ডের ভিতরে ঢুকে দেখি সেখানে এক অন্য রকম জগত—স্বপ্নের দুনিয়া! ডিজনির বিভিন্ন চরিত্রগুলো বিভিন্ন কস্টিউম পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর মানুষও এসেছে অনেক!
ডিজনির রাইডসমূহ
ডিজনিতে একবার টিকিট কিনলে আর আলাদা করে রাইডের জন্য টিকিট কিনতে হয় না। সবকিছুই টিকিটে ইনক্লুডেড থাকে! এখানে এত এত রাইড আছে যে সবগুলো একদিনে চড়ে শেষ করা যায় না! তাছাড়া ডিজনির পুরো জায়গাটা অনেক বড়, রাইডগুলোও চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে! রাইড ছাড়াও আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো ডিজনি প্যারেড। এখানে ডিজনির প্রায় সব বিখ্যাত চরিত্রের কস্টিউম পরা শিল্পীরা শো করে। দিনে তিনবার হয় এই শোগুলো। যখন শো হয়, মানুষজন দুপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে উপভোগ করে।
এসট্রো-অরবিটর (Astro Orbitor) সিম্পল রাইডগুলোর মধ্যে বেশ আকর্ষণীয় একটি রাইড। আমি আগে কখনো এই রাইডে চড়িনি। আমরা প্রথম এই রাইড দিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। তারপর অন্যান্য রাইডগুলো চড়েছিলাম। তবে প্রতিটি রাইডের সামনেই বিশাল লাইন ছিল। একটি রাইডে উঠতে প্রায় চল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগছিল! আমরা সারাদিনে প্রায় এগারোটি রাইডে চড়তে পেরেছিলাম। এসট্রো-অরবিটরের ঠিক পাশেই ছিল স্টার ট্যুর। এটি কোনো রাইড নয়, তবে এতে একটি থ্রিডি শো ছিল। আমাদের একটি স্টার যান-সদৃশ থিয়েটারে চশমা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়, তারপর মহাকাশের লড়াই দেখায়। সীটগুলো প্রতিটি দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নড়াচড়া করছিল, যা বেশ উপভোগ্য ছিল।
মেটারহোর্ন ববস্লেড (Matternhorn Bobsleds) রাইড
টি-রাইডটিও ভাল লেগেছিল।
আমাদের সামনে ছিল চোখ ধাঁধানো অনেক শো এবং রাইড, কোনটা রেখে কোনটাতে চড়ব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না! বোর্ড রাইড থেকে শুরু করে রোলার কোস্টার—কী না ছিল সেখানে! মাল-পানি অনেক খরচ হলেও পুষিয়ে যায় আরকি! ডিজনি শুধু ছোটদের জন্যই নয়, সবারই যাতে ভাল লাগে সেভাবেই সাজানো হয়েছে! এই মুহূর্তে মেটারহোর্ন ববস্লেড (Matternhorn Bobsleds) রাইডের কথা মনে পড়ছে। এটি একটি রোলার কোস্টার, একটি কৃত্রিম সাদা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে চক্রাকারে ঘুরিয়ে একবার উপরে তুলে আবার নিচে নামিয়ে আনে। আমরা ভাবছিলাম এটা মামুলী এক রাইড, তবে এটাতে উঠে দেখলাম হালুয়া টাইট হয়ে যাবার যোগার তবে এটাই সবচেয়ে ভাল লাগছিল আমাদের! এবারের ডিজনি ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমি আমার চোখে সেরা দশটি রাইড ভিডিও আকারে ধরে রেখেছি (ভিডিও লিংক)।
ডিজনি প্যারেড শো এর একটি দৃশ্য। একের পর এক ডিজনি চরিত্রগুলো এই রাস্তা ধরে আসছিল।
সাধাদিন ঘোরাঘুরি করতে করতে রাত প্রায় নয়টা বেজে গেল, আমরা ডিজনি থেকে বের হলাম। সময় কিভাবে এত তাড়াতাড়ি চলে গেল বুঝতেই পারলাম না! যাবার সময়ও ট্রেনে চড়ে পার্কিংয়ে গেলাম আমাদের গাড়ি নিতে। গাড়ি পার্কিং করেছিলাম চার বা পাঁচ তলায়, গিয়ে দেখি আরেক মুশকিল—গাড়ি কোথায় রেখেছি ভুলে গেছি! এত গাড়ির ভিড়ে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম একটি থাই রেস্টুরেন্টে। বাইরে খেলে আমি সাধারণত মেডিটেরেনিয়ান বা তুর্কি কাবাব টাইপের খাবার অথবা থাই খাবার পছন্দ করি। রেস্টুরেন্ট থেকে থাই স্যুপ এবং রাইস নিয়ে চলে এলাম মোটেলে। তারপর খেয়ে আজকের মতো ভ্রমণ শেষ করলাম। কালকে আবার সকালে উঠতে হবে, দ্বিতীয় থিম পার্কটি ঘুরার জন্য, তাই আর দেরি না করে শুয়ে পড়লাম!
ভিডিও লিংক। আমার দেখা সেরা ১০টি রাইড।
আগের পর্বঃ
আমেরিকার ডিজনিল্যান্ড ভ্রমণ (পর্ব এক): যাত্রার শুরুর দিন, রোড ট্রিপ
আমার ভ্রমণ পোষ্ট-সমূহঃ
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
আমার থাই এবং লাউস ভ্রমনের গল্প
ঘুরে এলাম আমেরিকার সানফ্রানসিসকো
আমেরিকার আলাবামা থেকে ওয়াশিংটন রোড ট্রিপ
অরিগনের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট-হুড
সিলভার ফলস পার্ক যেন আমেরিকার বুকে এক টুকরো স্বর্গ
আমেরিকার গ্রামে বেরী-পিকআপে একদিন
আমেরিকার ৯০০০ ফুট উচু পাহাড় মাউন্ট লেমনে একদিন
ঘুরে এলাম আমেরিকার ইন্ডিয়ানা থেকে
অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপঃ
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব পাচ এবং শেষ): পৌছে গেলাম মরুভূমি রাজ্য এরিজোনাতে
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব চার): লস-এঞ্জেলেসে একদিন
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব তিন): পৌছে গেলাম ক্যালিফোর্নিয়ার সান-ফ্রানসিসকো
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব দুই): যাত্রা শুরুর দিন
আমেরিকার অরিগণ থেকে এরিজোনায় রোড ট্রিপ (পর্ব এক): ভ্রমনের ইতিকথা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৩২