somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষনের শাস্তি ক্রসফায়ার বিচার বিভাগের বিপর্যয়; যৌন হয়রানি বিরোধী ও অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি কি অপরাধ দুটির অদৃশ্য অনুমোদন নয়?

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাংসদের দাবি ধর্ষনের শাস্তি হউক "ক্রসফায়ার", সব অফিসে যৌন হয়রানি বিরোধী কমিটি গঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে "অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি" গঠনের নির্দেশ উচ্চ আদালতের। অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে কেমন যেন কতগুলো অপারাধের অদৃশ্য বৈধতা ঘোষনা করা হচ্ছে বা ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে বন্ধ করা সম্ভব নয় স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে । যা হতাশা জনক এবং কোন ভাবেই কাম্য নয়।

এই যে ব্যাপারগুলো কেমন একটা এলোমেলো শাসন ব্যাবস্থা বা বিচার ব্যাবস্থার লক্ষণ মনে হচ্ছে আমার। এই ধরনের নির্দেশ বা দাবি নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিক। আমি বলবো এসব দাবি নির্দেশের যথাযথ যৌক্তিকতা আছে তবে উপস্থাপনাটা ভুল। আর সামান্য উপস্থাপনা ভুলের জন্য যৌক্তিক দাবি কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে? জনপ্রতিনিধির মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তিকে কথাও বলতে হবে অনেক দায়িত্ব নিয়ে,তাহলে যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না। একজন সংসদ সদস্যকে অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে সংসদে দাড়িয়ে কথা বলার জন্য। নাহয় একজনের দায়িত্বহীনতার জন্য গোটা সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যা জাতির জন্য লজ্জাজনক।

সম্প্রতি এক সংসদ অধিবেশনে একজন সংসদ সদস্য দাবি তুলেছেন ধর্ষনের বিচার যেন হয় "ক্রসফায়ার"। ওনার এই দাবিটা হলো এমন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে গুলি করে দেওয়া। তাহলে কি দারালো বিচারবিভাগের প্রতি অনাস্থা,বিচার বহির্ভূত হত্যা ! পাশাপাশি দেশের চলমান সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী অভিযানে ক্রসফায়ারের রহস্যযে সিদ্ধান্তমূলক, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবাধিকার নেতা কর্মীদের সে দাবি সেই দাবির জোড়ালো স্বাক্ষি হিসেবে এ সাংসদের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ধর্ষনের মতো জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ীদের ব্যাপারে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঘৃনা সমান। সবাই কঠোর বিচার চান এ ব্যাপারে। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যা কোন সভ্য সমাজের দাবি হতে পারেনা। বিচার ব্যাবস্তার বাইরে গিয়ে অপরাধ নির্মুল করতে গেলে রাষ্ট্রে ব্যভিচার প্রতিষ্ঠা হবেনা কি?
প্রকৃত ধর্ষনের শিকারের ঘটনা যেমন রয়েছে,অনেক ক্ষেত্রে হীনস্বার্থ হাসিল বা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েও জঘন্য ঘটনাও সাজানো হয়। পেশাদারিত্বের খাতিরে এমন অনেক ঘটনার বাস্তব সাক্ষী আমি নিজেই। অনেক ক্ষেত্রে আবার স্বেচ্ছায় শারীরিক মিলন ঘটিয়ে এক সময় দ্বন্দ তৈরী হলে আনা হয় ধর্ষনের অভিযোগ। পেশাদার পতিতা কিন্তু কারো একজনকে বিয়ের স্বাধ জেগেছে,সেই স্বাধ পূরন করার প্রস্তাব দিয়ে ব্যার্থ হয়ে আনে ধর্ষনের অভিযোগ। প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে দুই জনের সমান ইচ্ছায় হারিয়ে যায় মাসের পর মাস, বছর পার করে যখন একজন অভিযোগ আনে যৌন হয়রানি বা ধর্ষনের সেটা কতটা যৌক্তিক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে এমন ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়।,বিয়ের প্রলোভনে পড়ে যখন নিজের সতিত্ব বিসর্জন দিলো তখনতো তাকে জোর করতে হয়নি। লোকচক্ষুর আড়ালে নিরাপদ জায়গাটিতেতো সে নিজেই হেটে যায় বা ব্যাবস্থা করে দেয়। কিন্তু এটাই আবার পরে কিভাবে ধর্ষন হয় আমার বুঝে ধরেনা।
তাহলে মূল ধর্ষককে না হয় ক্রসফায়ার দিলেন, আর এ ট্রেডিশন যদি অনুমোদিত হয়,তখন এই অজুহাতে ক্রসফায়ার ওয়ালারাকি সুযোগ নবেনা। সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে নিরপরাধ কতো প্রাণ যাবে ক্রসফায়ারে ভেবেছেন কখোনো৷? ক্রসফায়ারের আবেদনকারিকে বলছি, দেশের বিচার ব্যাবস্থার প্রতিও আস্থা উঠে যাওয়ার কোন কারন নেইএই মুহূর্তে। এমন কোন নজির নেই যে ধর্ষকদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঔদাসিন। কথা না বাড়িয়ে বলতে চাই, আমাদের সোচ্চার হতে হবে ধর্ষনের মতো ঘৃন অপরাধের বিচারকার্য্যে কাল ক্ষপন না করা,সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচার কার্য্য শেষ করতে হবে। আদালতে ধর্ষক প্রমানিত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করে এই অপরাধধকে নির্মূলের চুড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে। সংসদে দাড়িয়ে বিচার ব্যাবস্থা তরান্বিত করার এ জোর দাবি তুলে তা আদায় করতে হবে। বিচার বহির্ভূত হত্যা নয়। মূলকথা,হলো একটি জঘন্য অপরাধের বিচার করতে গিয়ে আরেকটি জঘন্য অপরাধের বৈধতা দেয়া যাবেনা। আম জনতার আবেগের সঙ্গে আইন প্রণেতাদের বুদ্ধিমত্তা গুলিয়ে ফেলা হাস্যকর ও হতাশাজনক।

আদালতের নির্দেশ শতভাগ নিরপেক্ষ এবং রাষ্ট্রের বিধানুযায়ী জনস্বার্থে। "যৌন হয়রানি বিরোধী কমিট" এবং "অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি " গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দৃশ্যমান না হলেও- মনে হচ্ছে, যৌন হয়রানি হবেই তাই বিরোধী কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, র‌্যাগিংতো হবেই তাই অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি গঠন করতে হবে। এখানটাতেও যেন কেমন একটা গ্যাব বা ফাঁক ফোকর মনে হচ্ছে। আমি মনে করি যৌন হয়রানি ও র‌্যাগিং বলতে কিছুই থাকবেনা, এমন সমাজ তৈরী করতে আরো কঠোর কোন পদক্ষেপ বা নির্দেশনা প্রয়োজন। যৌন হয়রানি,র‌্যাগিং বা যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই সামাজিক দায়িত্ব। সেখানে বিচার বিভাগের নির্দেশ আরো শক্তি যোগায়। কিন্তু সেই অপরাধ নির্মূলে গঠিত কমিটি গুলোর নামকরণে যেন অপরাধের নামগুলো বেঁচে না থাকে সেই দিকেও নজর দেয়া বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করি।

আমি মনে করি শিশু কিশোরদের না জানা অপরাধগুলোকে আমরা যেন পরিচয় করিয়ে না দেই। তাদের কাছে এমন যেন না মনে হয় যে,আমাদের সমাজে এই এই অপরাধ চালু আছে,এক শ্রেণীর লোকেরা চলিয়েই যাবে,এটাতো আর বন্ধ করার মতো নয়, তাই আর কি করার এর অ্যান্টিতে আমারা সাংগঠনিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলাম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরী করা হউক সাধারণ নিরাপত্তা কমিটি। যেখানে কোন অপরাধের নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে অ্যান্টি কমিটি গঠন হবে না। ওই কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিসগুলোতে যৌন হয়রানি,র‌্যাগিংসহ সব ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধ ও নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ( এ অপরাধের ব্যাপকতা কমাতে প্রয়োজন পর্ণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উৎসাহি করে এমন বিকৃত গ্যামস ভিডিও ও মুভির সহজ লাভ্যতা কমিয়ে আনতে হবে জিরো টলারেন্সে।)
কমিটিগুলো অন্তত চার বা ছয়মাসে একবার স্কুল কলেজসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা মূলক আলোচনা বাধ্যতামূলক করলে অনেকটাই কমে আসতে পারে এদুটি অপরাধ। তবে সে ক্ষেত্রে যেকোন সংস্থ্যাকে দায়িত্ব দিতে হবে কমিটিগুলোর বার্ষরিক কার্য্যকলাপের তদারকি এবং অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা। যে কোন কিছু ঘটার পরই কয়েকদিন সে বিষয়ের ওপর তৎপড় হয়ে নিয়ম কানুন,আইন বা শাস্তির ধরন প্রতিষ্ঠত করলেই হবেনা। সর্বসময় সচেতনতা ধরে রাখতে হবে। ধারাবাহিক তদারকি আর কঠোর শাস্তির বিধান করে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে এনে স্বল্প সময়ের মধ্যে শাস্তি কার্য্যকর করলেই অপরাধীদের মনে শাস্তির ভীতি তৈরী হবে। তাহলেই মূলতো সাফল্য আসাবে বলে মনে করি।#

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×