এই যে ব্যাপারগুলো কেমন একটা এলোমেলো শাসন ব্যাবস্থা বা বিচার ব্যাবস্থার লক্ষণ মনে হচ্ছে আমার। এই ধরনের নির্দেশ বা দাবি নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিক। আমি বলবো এসব দাবি নির্দেশের যথাযথ যৌক্তিকতা আছে তবে উপস্থাপনাটা ভুল। আর সামান্য উপস্থাপনা ভুলের জন্য যৌক্তিক দাবি কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে? জনপ্রতিনিধির মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তিকে কথাও বলতে হবে অনেক দায়িত্ব নিয়ে,তাহলে যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না। একজন সংসদ সদস্যকে অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে সংসদে দাড়িয়ে কথা বলার জন্য। নাহয় একজনের দায়িত্বহীনতার জন্য গোটা সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
সম্প্রতি এক সংসদ অধিবেশনে একজন সংসদ সদস্য দাবি তুলেছেন ধর্ষনের বিচার যেন হয় "ক্রসফায়ার"। ওনার এই দাবিটা হলো এমন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে গুলি করে দেওয়া। তাহলে কি দারালো বিচারবিভাগের প্রতি অনাস্থা,বিচার বহির্ভূত হত্যা ! পাশাপাশি দেশের চলমান সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী অভিযানে ক্রসফায়ারের রহস্যযে সিদ্ধান্তমূলক, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবাধিকার নেতা কর্মীদের সে দাবি সেই দাবির জোড়ালো স্বাক্ষি হিসেবে এ সাংসদের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ধর্ষনের মতো জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ীদের ব্যাপারে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঘৃনা সমান। সবাই কঠোর বিচার চান এ ব্যাপারে। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যা কোন সভ্য সমাজের দাবি হতে পারেনা। বিচার ব্যাবস্তার বাইরে গিয়ে অপরাধ নির্মুল করতে গেলে রাষ্ট্রে ব্যভিচার প্রতিষ্ঠা হবেনা কি?
প্রকৃত ধর্ষনের শিকারের ঘটনা যেমন রয়েছে,অনেক ক্ষেত্রে হীনস্বার্থ হাসিল বা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েও জঘন্য ঘটনাও সাজানো হয়। পেশাদারিত্বের খাতিরে এমন অনেক ঘটনার বাস্তব সাক্ষী আমি নিজেই। অনেক ক্ষেত্রে আবার স্বেচ্ছায় শারীরিক মিলন ঘটিয়ে এক সময় দ্বন্দ তৈরী হলে আনা হয় ধর্ষনের অভিযোগ। পেশাদার পতিতা কিন্তু কারো একজনকে বিয়ের স্বাধ জেগেছে,সেই স্বাধ পূরন করার প্রস্তাব দিয়ে ব্যার্থ হয়ে আনে ধর্ষনের অভিযোগ। প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে দুই জনের সমান ইচ্ছায় হারিয়ে যায় মাসের পর মাস, বছর পার করে যখন একজন অভিযোগ আনে যৌন হয়রানি বা ধর্ষনের সেটা কতটা যৌক্তিক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে এমন ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়।,বিয়ের প্রলোভনে পড়ে যখন নিজের সতিত্ব বিসর্জন দিলো তখনতো তাকে জোর করতে হয়নি। লোকচক্ষুর আড়ালে নিরাপদ জায়গাটিতেতো সে নিজেই হেটে যায় বা ব্যাবস্থা করে দেয়। কিন্তু এটাই আবার পরে কিভাবে ধর্ষন হয় আমার বুঝে ধরেনা।
তাহলে মূল ধর্ষককে না হয় ক্রসফায়ার দিলেন, আর এ ট্রেডিশন যদি অনুমোদিত হয়,তখন এই অজুহাতে ক্রসফায়ার ওয়ালারাকি সুযোগ নবেনা। সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে নিরপরাধ কতো প্রাণ যাবে ক্রসফায়ারে ভেবেছেন কখোনো৷? ক্রসফায়ারের আবেদনকারিকে বলছি, দেশের বিচার ব্যাবস্থার প্রতিও আস্থা উঠে যাওয়ার কোন কারন নেইএই মুহূর্তে। এমন কোন নজির নেই যে ধর্ষকদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঔদাসিন। কথা না বাড়িয়ে বলতে চাই, আমাদের সোচ্চার হতে হবে ধর্ষনের মতো ঘৃন অপরাধের বিচারকার্য্যে কাল ক্ষপন না করা,সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচার কার্য্য শেষ করতে হবে। আদালতে ধর্ষক প্রমানিত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করে এই অপরাধধকে নির্মূলের চুড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে। সংসদে দাড়িয়ে বিচার ব্যাবস্থা তরান্বিত করার এ জোর দাবি তুলে তা আদায় করতে হবে। বিচার বহির্ভূত হত্যা নয়। মূলকথা,হলো একটি জঘন্য অপরাধের বিচার করতে গিয়ে আরেকটি জঘন্য অপরাধের বৈধতা দেয়া যাবেনা। আম জনতার আবেগের সঙ্গে আইন প্রণেতাদের বুদ্ধিমত্তা গুলিয়ে ফেলা হাস্যকর ও হতাশাজনক।
আদালতের নির্দেশ শতভাগ নিরপেক্ষ এবং রাষ্ট্রের বিধানুযায়ী জনস্বার্থে। "যৌন হয়রানি বিরোধী কমিট" এবং "অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি " গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দৃশ্যমান না হলেও- মনে হচ্ছে, যৌন হয়রানি হবেই তাই বিরোধী কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, র্যাগিংতো হবেই তাই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি গঠন করতে হবে। এখানটাতেও যেন কেমন একটা গ্যাব বা ফাঁক ফোকর মনে হচ্ছে। আমি মনে করি যৌন হয়রানি ও র্যাগিং বলতে কিছুই থাকবেনা, এমন সমাজ তৈরী করতে আরো কঠোর কোন পদক্ষেপ বা নির্দেশনা প্রয়োজন। যৌন হয়রানি,র্যাগিং বা যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই সামাজিক দায়িত্ব। সেখানে বিচার বিভাগের নির্দেশ আরো শক্তি যোগায়। কিন্তু সেই অপরাধ নির্মূলে গঠিত কমিটি গুলোর নামকরণে যেন অপরাধের নামগুলো বেঁচে না থাকে সেই দিকেও নজর দেয়া বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করি। আমি মনে করি শিশু কিশোরদের না জানা অপরাধগুলোকে আমরা যেন পরিচয় করিয়ে না দেই। তাদের কাছে এমন যেন না মনে হয় যে,আমাদের সমাজে এই এই অপরাধ চালু আছে,এক শ্রেণীর লোকেরা চলিয়েই যাবে,এটাতো আর বন্ধ করার মতো নয়, তাই আর কি করার এর অ্যান্টিতে আমারা সাংগঠনিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলাম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরী করা হউক সাধারণ নিরাপত্তা কমিটি। যেখানে কোন অপরাধের নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে অ্যান্টি কমিটি গঠন হবে না। ওই কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিসগুলোতে যৌন হয়রানি,র্যাগিংসহ সব ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধ ও নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ( এ অপরাধের ব্যাপকতা কমাতে প্রয়োজন পর্ণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উৎসাহি করে এমন বিকৃত গ্যামস ভিডিও ও মুভির সহজ লাভ্যতা কমিয়ে আনতে হবে জিরো টলারেন্সে।)
কমিটিগুলো অন্তত চার বা ছয়মাসে একবার স্কুল কলেজসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা মূলক আলোচনা বাধ্যতামূলক করলে অনেকটাই কমে আসতে পারে এদুটি অপরাধ। তবে সে ক্ষেত্রে যেকোন সংস্থ্যাকে দায়িত্ব দিতে হবে কমিটিগুলোর বার্ষরিক কার্য্যকলাপের তদারকি এবং অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা। যে কোন কিছু ঘটার পরই কয়েকদিন সে বিষয়ের ওপর তৎপড় হয়ে নিয়ম কানুন,আইন বা শাস্তির ধরন প্রতিষ্ঠত করলেই হবেনা। সর্বসময় সচেতনতা ধরে রাখতে হবে। ধারাবাহিক তদারকি আর কঠোর শাস্তির বিধান করে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে এনে স্বল্প সময়ের মধ্যে শাস্তি কার্য্যকর করলেই অপরাধীদের মনে শাস্তির ভীতি তৈরী হবে। তাহলেই মূলতো সাফল্য আসাবে বলে মনে করি।#
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৩৭