আমি দীর্ঘদিন থেকে এক গায়েনীজ মহিলার দোকান থেকে ফলমুল, শাকসবজী কিনি; মহিলা ক্যাশে থাকেন; বিকেলে ভীড় হলে, উনার স্বামী আরেকটা ক্যাশ খোলেন। সেদিন বিকেলে দোকানে গিয়ে দেখি তাদের কলেজে-পড়া মেয়েটি বাবার ক্যাশে কাজ করছে; আমি এটা সেটা কিনে মায়ের লাইনে দাঁড়ালাম; তিনি ইশারায় মেয়ের লাইনে যেতে বললেন; মেয়েকে লক্ষ্য করে বললেন,
-ইনি আমাদের বন্ধু মানুষ, আমাদের অনেকদিনের কাষ্টমার।
-ওমা, তোমাদের পাকিস্তানী বন্ধুও আছে? এরা তো জাল নোট দেয়!
-চুপ কর, বেকুব মেয়ে! প্রথমত: উনি পাকিস্তানী নন, বাংলাদেশী; উনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে; পারিবারিক বন্ধু তো আমারও বন্ধূ।
ক্যাশ মেশিনে মুল্য চাপতে গিয়ে মেয়ে বারবার ভুল করছে, মাকে সবকিছুর দাম জিজ্ঞাসা করছে; আমি বিপদেই পড়লাম মনে হয়, দাম কম রাখলে তো অসুবিধা নেই, বেশী নিলে আমার মনটা খারাপ হবে শেষে। আমি নীচু গলায় বললাম,
-মেমোরি কম নাকি, কোন কিছুর মুল্য মনে থাকে না?
-মেমোরি আছে, মেমোরি আছে, এখন বড় হয়ে গেছি, মেমোরিও অনেক বড় হয়ে গেছে! তবে, ওখানে শাক লতাপাতার মুল্য লেখা নেই, আছে ফুল, ফল, মৌমাছি, মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়ের কবিতা!
-আমিও কবিতা ভালোবাসি!
-তাই নাকি? তা'হলে আমাদের রাস্তা একদিন হয়তো কোথায়ও পরস্পরকে কাটবে।
আমি চুপ, বেশী কথা বলতে চাইলাম না; শেষে মা কি মনে করে। বাসায় এসে দেখি, স্পারাগাস এক প্যাকের স্হানে ২ প্যাকের মুল্য নিয়েছে; মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো! তার সৌন্দয্য তার, টাকা নষ্ট হয়েছে আমার। ঠিক আছে, তা'কে একটু ধরতে হয়; ঘরে ১০ ডলারের ২টি জাল নোট অনেকদিন থেকে পড়েছিলো। ৩/৪ দিন পরে বিকেলে দোকানে গেলাম, ২১ ডলারের মত বাজার করলাম; টাকা দেয়ার সময়, ২ ডলারের একটা নোট দিলাম উপরে, তারপরে ১ ডলারের অনেকগুলো নোট, প্রায় শেষের দিকে ১০ ডলারের জাল নোট! সে ২ ডলারের নোট পেয়ে এমনভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠলো যে, বাকী টাকা গুণেও দেখেনি। ২ ডলারের নোটটা নিজের পকেটে রেখে দিলো; আমাকে বারবার ধন্যবাদ দিলো।
সপ্তাহ'খানেক পর, কাজের দিনে দোকানে গেলাম, লোকজন নেই, মা বাইরে বসে বাতাস খাচ্ছে, মেয়ে ক্যাশে। মেয়ের মা বললো,
-ফ্লোরিডার ছোট কমলা এসেছে, এই সিজনে আজকে প্রথমবার, খেয়ে দেখবেন।
আমি এটা সেটা কেনার পর, ১ কমলা খেয়ে দেখলাম, বেশ ভালো; আমি আরো ২/১টা খেলাম; দেখি মেয়ে তাকিয়ে আছে! মেয়ে তাকিয়ে থাকায় আমি আরো ২টি খেলাম। শেষে ৩/৪ পাউন্ড কমলা নিলাম। ক্যাশে আসার পর মেয়ে আমাকে বলে,
-তোমার ওজম কত?
-১৮০ পাউন্ড।
-বরাবর?
-বরাবর অবধি জানার কি দরকার?
-এখন আমি তোমাকে পাল্লায় তুলে মাপবো, তার থেকে ১৮০ পাউন্ড বাদ দিলে বুঝতে পারবো কি পরিমাণ কমলা তুমি খেয়েছো!
-মাপার এই পুরানো পদ্ধতিই তুমি শুধু জান? মেয়েরা বিনা পাল্লায়ও মানুষের ওজন মাপতে পারে!
-তুমি বলছ, মেয়েরা বিনা পাল্লায়ও মানুষের ওজন মাপতে পারে?
-হ্যাঁ, পারে!
-পারিবারিক বন্ধু, তুমি খুবই আকর্ষনীয় কথা বলেছ; আমার খুব ভালো লেগেছে! আমি আমার মাকে এটা শোনাতে চাই; তুমি কি বল!
-না, মাকে বলার দরকার নেই!
-আমার মনে হয়, বলাই ঠিক হবে!
-না, না বলাই ঠিক হবে!
-আমার মনে হয়, তুমি ছোটখাট একটা ধরা খেয়েছ!
সে হাসছে, আমাকে কৌশলে ধরেছে, এমন একটা ভাব। পয়সা দিয়ে বের হওয়ার আগে তার হাতে ১০ ডলারের একটা নোট দিলেম।
-এটা কিসের জন্য?
-গতদিন তোমাকে জাল ডলার দিয়েছিলাম, টের পাওনি?
-ঐ কাজ তুমি করেছিলা? আমাকে অনেক বকুনী খাওয়ায়েছো তুমি! এটাকে বলে পারিবারিক বন্ধু?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৪