শেখ সাহেব নেই, যারা উনার আশপাশে ছিলেন, তাদের অনেকেই নেই; উনার সাথীদের মাঝে যারা আজো আছেন, তাদের মাঝে সুক্ষ্ম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোন মানুষ নেই, যিনি শেখ সাহেবের বিশ্বাস, ভাবনা নিয়ে কথা বলতে পারবেন। সম্প্রতি অনেকেই উনার উপর বই লিখছেন; কিন্তু ওসব বই কি শেখ হাসিনাকে খুশী করার জন্য, নাকি শেখ সাহেবের ভাবনাচিন্তা, বিশ্বাস জাতির কাছে উপস্হাপনের প্রচেষ্টা, বলা কঠিন হবে। বিখ্যাত মানুষ জীবিত না থাকলেও, তাদের উপর কথা হয়; মানুষ আজও সক্রেটিসের উপর বই লেখেন, আজো বারট্রান্ড রাসেলের উপর বই লেখেন; তবে, এরা বাংগালী লেখক নন।
শেখ সাহেবের অনেকগুলো ভাষণ রেকর্ড-করা আছে, সেগুলো থেকে উনাকে কিছুটা বুঝা যায়; তবে, ততকালীন সময় ও রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ভাষণ ইত্যাদি সঠিকভাবে এনালাইসিস করা কঠিন; কারণ, ভাষণের বিবিধ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
শেখ সাহেবের ৭ই মার্চের ভাষণের শ্রোতা শুধু বাংগালীরা ছিলেন না; উনি পাকিস্তানের সামরিক সরকারকেও শ্রোতা হিসেবে ধরে নিয়ে কথা বলছিলেন। সেদিন তিনি যে শুধু বাংগালীদের কাছে সমকালীন পরিস্হিতি নিয়ে কথা বলেছেন তা নয়, তিনি পাকীদেরও ম্যাসেজ দিয়েছেন যে, উনি ও বাংগালীরা কি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন। তিনি জানতেন যে, মানুষ পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চান; উনার মতে, উনি মানুষকে আগত দিনগুলো সম্পর্কে কিছুটা আভাস দিয়েছেন, সাথে সাথে পাকীদেরও চয়েস দিয়েছেন।
উনার ৭ই মার্চের ভাষণের পরই, বাংগালীরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন; এতে পুর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার মোটামুটি অকেজো হয়ে যায়; পাকিস্তান সরকার ততকালীন বাংলার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে; এর পরবর্তী ইতিহাস হলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শেখ সাহেবের কোন প্ল্যান ছিলো বলে মনে হয় না।
শেখ সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের সারমর্ম হচ্ছ: ৬ দফা ও বাকশাল; উনাকে ও উনার রাজনৈতিক বিশ্বাস, আদর্শ বুঝতে হলে এই ২টিকে বুঝতে হবে। কে কতটুক বুঝতেছেন, সেটা তারা জানেন; আমার ধারণা, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব শেখ সাহেবের এই ২টি বড় রাজনৈতিক ভাবনাকে অনুসরণ করে না, কোনভাবে মুল্যায়ন করে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:০৪