somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আবার কোথাকার বিল গেইটস?

২৫ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই ঘটনাটা ঘটেছিলো বেশ আগে, এক দোকানী আমার সাথে গন্ডগোল করেছিলো, আমিও সামান্য চেষ্টা করেছিলাম, সেই কাহিনী।

এক ছুটির দিনে এক বন্ধুমানুষ আমাকে ও আরো ৪ জনকে নিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য কিছুটা দুরে একটি ইটালিয়ান রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন; আমি ট্রেনে রওয়ানা হলাম; দেখি, প্রায় ২০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেছি! ঠিক আছে, আশেপাশে হেঁটে দেখি: ইটালিয়ান-গ্রীক এলাকা, পরিস্কার, উঁচু দালান মালান নেই, ভালো; সামনে একটা কফিশপ পড়লো, বেশ সুন্দর; ঢুকলাম, একজন কাষ্টমার কফির পয়সা দিচ্ছে, আমার সামনে আরেকজন লাইনে, আফ্রিকান আমেরিকান মহিলা; কাপড় চোপড়ে দারিদ্রতার চাপ। তিনি মাখনসহ একটা টোষ্ট-করা ব্যাগল ( ১জনে খাবার মতো গোলাকার রুটি বিশেষ) অর্ডার করলেন। কাষ্টমার কম, একজন মাঝ বয়সী লোক ক্যাশে, সে'ই অর্ডার তৈরি করে দিচ্ছে, পয়সা নিচ্ছে; ২২/২৩ বছরের একটা মেয়ে পেষ্ট্রি মেষ্ট্রি সাজিয়ে রাখছে তাকে।

মহিলাটি খুচরা পয়সা দিলো, আগের থেকেই হিসেবে করে মুঠায় ধরে রেখেছিলো; ক্যাশিয়ারের মুখে সামান্য বিরক্তি, সে পয়সাগুলো গণনার শুরু করেছে, ৫/১০ পয়সার কয়েন সব; আমার পছন্দ হলো না, সামান্য ব্যাগলের মুল্য গণনা করে নিতে হবে? গণনা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন মহিলা; ক্যাশিয়ার হ্যাঁ-সুচক মাথা নাড়লো; মহিলার সরে যাবার কথা, তিনি সরলেন না; বেশ নম্রভাবে ক্যাশিয়ারকে বললেন,
-আমি কি একটি ফ্রি কফি পেতে পারি?
-না, আমি ফ্রি'তে কিছু দিই না।

মহিলা সরে দাঁড়ালেন, আমি মহিলাকে ইশারা করলাম অপেক্ষা করতে; ক্যাশিয়ারকে বললাম,
-মহিলাকে একটা ছোট কফি দাও, পয়সা আমি দেবো!
-তুমি আবার কোথাকার বিল গেইটস? তোমার কাছে কি আমার চেয়ে বেশী টাকা? ক্যাশিয়ার রেগে বললো।
-টাকার কথা কেন আসছে, আমি মহিলাকে কফি কিনে দিচ্ছি!
-আমি কফি দিইনি, তুমি কফি কিনে দিয়ে বড়লোকি দেখাচ্ছ?
-আমি বড়লোকী দেখাচ্ছি না, আমি চাই মহিলাটি একটা কফি পাক।
-তোমার কোন অর্ডার নেবো না, যাও!

পেষ্ট্রির মেয়েটা এগিয়ে এসে, লোকটাকে বললো,
-আংকেল, তুমি পেছনে যাও, ব্রেক নাও, আমি দেখছি।
লোকটা ক্যাশ থেকে সরে গেলো, যাবার আগে আমাকে বললো,
-আমার দোকানে তোমাকে যেন আর না দেখি।
-আমি আসবো না, আমার বন্ধুরা আসবে।

মেয়েটা আমাকে ইশারা করলো চুপ করতে; সে প্রথমে ছোট ১ কাপ কফি দিলো মহিলার জন্য; মহিলটা আমাকে ও মেয়েটাকে ধন্যবাদ দিয়ে কফি নিয়ে চলে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম, ঠান্ডায় এখানে বসে কফি খাবো, তা হলো না, আমি কফি নিয়ে বের হয়ে এলাম; দোকানের ঠিকানটা টুকে নিলাম।

পরের সপ্তাহে লেবার-ডে ছুটির দিন ছিলো, সেই দিনটাকে সামনে রেখে, আমি সেই কফির দোকানের নামে ছোট একটা হ্যান্ড-আউট তৈরি করলাম ইংরেজীতে; বাংলায় অনেকটা এই রকম:

"লেবার-ডে'এর সন্মানে ফ্রি কফি
বেলা ১০ টা থেকে ১২ অবধি ফ্রি কফি, জনপ্রতি ১ কাপ মাত্র

হ্যাপী লেবার-ডে।
কফিশপের ঠিকানা"

আমি সকাল ১০টার একটু আগেই কফিশপের ট্রেন ষ্টেশনে পৌঁছলাম, হ্যান্ডআউট বিলি করার জন্য লোক খুঁজতে লাগলাম। ষ্টেশনের সামনে ৩/৪ জন স্পেনিশ কাজের খোঁজে দাঁড়িয়ে আছে, নিজেদের মাঝে আলাপ করছে। আমি ১ জনকে বললাম, এই হ্যান্ডআউটগুলো বিলি করতে পারবে কিনা, আমি ১ ঘন্টার জন্য ১০ ডলার দেবো। সে হাতে চাঁদ পেলো। তার হাতে ২০০ হ্যান্ডআউট দিয়ে, তাকে বুঝিয়ে দিলাম: ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসা, শুধুমাত্র বয়স্কদের দিতে, আর ছাত্রছাত্রী ধরণের ছেলে মেয়েদের দিতে; ভালো কাপড়ছোপড়-পরা মাঝারী বয়সীদের না দিতে।

আমি রাস্তার উল্টোপাশে একটি সেলফ-সার্ভিস লন্ড্রীতে গিয়ে বসলাম, কফিশপ ও স্পেনিশ ছেলেটার উপর নজর রাখছি; প্রথম ১০/১২ মিনিটের মাঝে হ্যান্ডআউট হাতে ৬/৭ জন মানুষ কফিশপে প্রবেশ করলেন, ২/৩ জন কফি হাতে বেরিয়ে গেলেন; এরপর, ৫/৭ মিনিটের মাঝে আরো ৭/৮ জন মানুষ ভেতরে গেলেন। একটু পরে দেখি সেই পুরুষ ক্যাশিয়ারটা একটা হ্যান্ডআউটসহ বেরিয়ে এসে, এক মিনিট এদিক ওদিক দেখে ট্রেন ষ্টেশনের দিকে গেলো; সে স্পেনিশ ছেলেটার হাত থেকে হ্যান্ডআউটগুলো কেড়ে নিয়ে পাশের গার্বেজে ফেলে দিলো, এরপরে ছেলেটাকে ধাক্কা মারলো; লোকজন তাকে থামাচ্ছে, সে চীৎকার দিচ্ছে; বেচারা স্পেনিশ হেঁটে রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকে চলে গেলো। ক্যাশিয়ার রেগেমেগে দোকানে এসে ঢুকলো, একটু পরে সব কাষ্টমারকে বের করে দিয়ে, দোকানের সাটারটা অর্ধেক নামিয়ে দিয়ে, বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো।

আমি চুপ করে বসে দেখছি; একটু পর সে সেলফোনে কার সাথে কথা বলার শুরু করলো, রেগেমেগে একাকার। অতপর হেঁটে আবার ট্রেনের দিকে গেলো। আগেরদিনের পেষ্ট্রির মেয়েটা মাথা নীচু করে দোকানের ভেতর থেকে বাইরে এসে সাটারটা তুলে দিলো; কয়েকজন কাষ্টমার ভেতরে যাবার পর, আমি লন্ড্রী থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে খেয়াল রাখলাম; পুরুষ ক্যাশিয়ার ট্রেন ষ্টেশন থেকে ফিরছে না অনেকক্ষণ। আমি ভাল মতে চারিদিকে খেয়াল রেখে ট্রেন ষ্টেশনে গেলাম, সে নেই! আমি কফিশপের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভেতরে গেলাম; পেষ্ট্রির মেয়েটা কফি বানাচ্ছে, ক্যাশে অন্য একটা মহিলা; আমি লাইনে দাঁড়ালাম।

পেষ্ট্রির মেয়েটা একজন কাষ্টমারকে একটা কফি দেয়ার সময় আমার দিকে তাকালো; মনে হয়, সে খেয়াল করেনি, অভ্যাসবশত তাকায়েছে; আমি লাইনে আছি, দরজা থেকে বাহিরে অনেক দুর অবধি খেয়াল রাখছি, পুরুষ ক্যাশিয়ারকে দেখলে কৌশলে কেটে পড়বো; মেয়েটা আরেকটা কফি বানায়ে আমাকে ইশারায় ডাকলো, আমি তখনো লাইনের শেষজন, সামনে ৩/৪ জন। সে কফিটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এটা ফ্রি, তুমি চলে যাও।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৫২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×