'' গ্লোবাল ওয়ার্মিং '' শব্দটি র সাথে আমাদের কমবেশী সবারই পরিচয় আছে। বর্তমান বিশ্বে এটি একটি হট টপিক।উন্নত বিশ্বে স্কুল থেকেই বাচ্চাদের '' গ্লোবাল ওয়ার্মিং '' কি, এর কারন ও প্রতিরোধ সম্পর্কে শেখানো শুরু হয় যাতে বাচ্চা বয়স থেকেই প্রতিটি ছাত্রছাত্রী পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে সমর্থ হয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য মুলত যে গ্যাসটি দায়ী তার নাম কার্বন ডাই অক্সাইড। এই গ্যাসটি তাপ ধারন করতে পারে বিধায় এটি চারপাশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।মুলত এই গ্রীন হাউজ গ্যাসটির পরিমান বৃদ্ধির কারনেই জলবায়ু উষ্ণ হয়ে উঠছে, হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। '' গ্লোবাল ওয়ার্মিং ' এর ফলে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষনা সংস্থা নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাবার কথা বলে আসছে।
কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসটি আবার গাছের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।গাছ সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়া্য কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষন করে থাকে। এই কারনে গাছাপালার পরিমান বেশি থাকলে সে অঞ্চলের বাতাশে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান কম থাকে এবং পারাপার্শিক তাপমাত্রাও কম থাকে। বর্তমানে কার্বন ডাই অক্সাইড এর অন্যতম উৎস হচ্ছে কয়লা, ফসিল ফুয়েল জাতীয় জ্বালানি তেল পুড়িয়ে বিদূৎ উৎপাদন। এই ধরনের জ্বালানি কমবার্শন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে থাকে। উন্নত দেশগুলো এখন তাই পরিবেশবান্ধব জ্বালানী ব্যবহারের ওপড় জোড় দিচ্ছে এবং ফসিল ফুয়েল থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি এক গবেষনায় প্রকাশিত হয়েছে যে চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং জাপানের পৃষ্ঠপোষকতায় ২৯টি মেগা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ কার্বন বোমায় পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে চলছে। গত বুধবার বিশ্বব্যাপী এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থা মার্কেট ফোর্সেস এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থ্রিফিফটি ডট অর্গ (350.org) যৌথভাবে এই গবেষণায় অংশ নেয়।এতে বলা হয়, বাংলাদেশে যে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা থেকে ২০৩১ সালের মধ্যেই ১১৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সবগুলোই নদী কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দক্ষিণ উপকূলের পায়রা, মাতারবাড়ি এবং মহেশখালিকে কেন্দ্র করে পাওয়ার হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের।
পরিবেশ দূষণকারী এই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এই গবেষণা প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) এবং ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে প্রকাশ করে। গত বুধবার ( ৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এটি প্রকাশ করা হয়। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, চীন, ভারত, জাপান এবং যুক্তরাজ্য কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশে আগ্রাসী বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করছে। এসব দেশের চাপের কাছে বাংলাদেশও নতি স্বীকার করছে।
এই ইস্যূতে এখন প্রয়োজন ব্যপক জনমত সৃষ্টি ও মিডিয়া কভেরেজ।জনবান্ধব সরকার গঠন না হলে আসলে সামনে আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ এর চাইতে হাজারগুন বেশি জরুরী আমাদের আবসস্থল রক্ষা করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৭