সম্প্রদি নবী মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে তৈরি কার্টুন শিক্ষার্থীদের সামনে প্রদর্শন করে খুন হন ফরাসী এক শিক্ষক। ফরাসি পুলিশ বলছে, স্কুলশিক্ষককে হত্যা করেছে ওই চেচেন যুবক। চেচেন যুবককে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ (স.) এর সে কার্টুন দেশজুড়ে প্রদর্শন শুরু করে ফরাসী সরকার এবং '' ফ্রান্স ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন বন্ধ করবে না" মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ম্যক্রো । ইসলামের নবীর কার্টুন প্রদর্শনীর ব্যাপারে মন্তব্য করে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্র।
সারা বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টদের ক্ষমতা ধরে রাখার অন্যতম একটা কৌশল হয়ে দাড়িয়েছে ইসলাম বিদ্বেশ। এটা ঘটছে মুলত সংখ্যালঘু মুসলিম দেশগুলোতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম জনগনের মাঝে মুসলিম বিদ্বেশী মনোভাব তৈরী করে মুলত তাদের পক্ষে্ টানার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের কর্মকান্ডের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁর ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা
গত সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রান্সের একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান—আইপিএসওএস, জাতীয়ভাবে চালানো একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে। নষ্টের গোড়া ওই জরিপের ফল। তাতে দেখা যায়, ৭৮ ভাগ ফরাসি মনে করে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর আমলে ফ্রান্স পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ২৭ ভাগ এতই হতাশ, তারা মনে করে, এই অধঃপতন আর ঠেকানো যাবে না। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বেশি দিন নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তিনটি গুরুতর জায়গায় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। করোনা মহামারি মোকাবিলা, (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতোই তাঁর সরকার মাস্ক পরা জরুরি নয় বলে অপরাধমূলক অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত), মাখোঁর ভুল অর্থনৈতিক নীতির জন্য ফরাসি অর্থনীতির ঐতিহাসিক মন্দা এবং ট্রাম্পের মতোই ফরাসি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা। এসবের পুরস্কার হলো ফ্রান্সের ইতিহাসের সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টের খেতাব।আগামী নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কায় মাখোঁর দরকার ছিল জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানো। এ লক্ষ্যে পয়লা অক্টোবরে তিনি ফরাসি মুসলিমদের নিশানা করে বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী বিল আনলেন।সুত্র ঃ প্রথম আলো
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে মধ্যপ্রাচ্যেজুড়ে ফরাসি পণ্য বয়কট শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও তাদের দোকান থেকে পণ্য স’রিয়ে ফেলেছে।উপসাগরীয় দেশ কুয়েত, কাতার, ফিলিস্তিন, মিসর, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব ও তুরস্কে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট করা হচ্ছে। আরব বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবে হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ফ্রান্সের ফরাসি বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্যারফুর বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
ধনী মুসলিম দেশগুলোর সাথে আমাদের মত দরিদ্র দেশের বাস্তবতার আকাশ পাতাল ফারাক। ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ফ্রান্সে গার্মেন্টস, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ এগুলো রফতানি করে আসছে। বিপরীতে ফ্রান্স এদেশে রফতানি করে রাসায়নিক, সুগন্ধি, প্রসাধনসামগ্রী, ফার্মাসিটিক্যালস ও কৃষিভিত্তিক পণ্য।
]বাংলাদেশে ফরাসী ব্র্যান্ডের খুব জনপ্রিয় ৬টি পণ্য হলো লাফার্জ সিমেন্ট, টোটাল গ্যাস সিলিন্ডার, বিক রেজর, কসমেটিকস সৌন্দর্যবর্ধক প্রতিষ্ঠান গার্নিয়ার ও লরিয়েল এবং মেডিসিন প্রোডাক্ট সানোফি। ফেসবুকে গার্নিয়ার, লরিয়েল এবং সানোফির মেডিসিন বয়কট করার প্রচারনা চালানো হচ্ছে। হুজুগে বাঙ্গালী দেদারসে তা শেয়ার করছে ফেসবুকে। এসব প্রচারনার কিছুটা প্রভাবতো থাকেই। কিন্ত আবেগের বশে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু নয়। ফরাসী পন্য আমদানীতে হ্রাস ঘটলে, রপ্তানিও হ্রাস পাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে , এই আমদানী/ রপ্তানী বেচা বিক্রির সাথে জড়িত প্রচর মানুষের রুটি রুজি। কারো ঘরে খাবারের অভাব পরলে আমরা তাদের ঘরে খাবার পৌছে দিয়ে আসব না। তবে কেন আমরা নিজেদের মানুষের পেটে লাথি মারবো?
মুসলিম হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে শক্ত প্রতিবাদ জানানো। ফেসবুকে অনেকেই #we_love_mohammad_ﷺ_challenge প্রোফাইল পিকচার আপ্লোড করছে। অনেক জায়গায় বিভিন্ন সংগঠন প্ল্যকার্ডে প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপুর্ন সমাবেশ করছে। এই ধরনের প্রতিবাদ্গুলো সহজেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:১৫