করোনা সংক্রমনে ভারত ব্রাজিলকে টপকে এখন দ্বীতিয় স্থানে আছে। চলমান করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে ভারত। গনমাধ্যমে সংবাদ আসছে যে, করোনার কারণে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রাণহানি। ফলে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে সেখানকার শ্মশান এবং চুল্লিগুলো। মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি মর্গগুলোর সামনে শত শত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে বেড এর অভাবে হাসপাতালের গেটেই মরছে প্রচুর মানুষ।
আমাদের দেশেও কি আমরা সেরকম পরিস্থিতির অপেক্ষায় আছি? ফেসবুক খুললেই শুধু মৃত্যূসংবাদ আর হাসপাতালে বেড না পাবার আহাজারির সংবাদ। সরকার কেবল মৌখিক লকডাউনের ঘোষনা দিয়েছে কিন্ত তা কার্যকর করার কোন ব্যবস্থাই নেয় নাই। গনমাধ্যমে দেখছি যে রাস্তাঘাটে মানুষের ভীড় এবং মাস্ক ছাড়া মানুষ ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে এমন লকডাউন দিয়ে গরীবের পেটে লাথি মারার কি দরকার?
উন্নত দেশেই সভ্য মানুষেরা করোনার ভয়াবহতা জেনেও স্বাস্থবিধি মেনে চলতে চায় না । নানা ধরনের আইন কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশের মানুষের কাছ থেকে কি আর আশা করা যায়? লকডাউন কার্যকর করতে হলে মাস্ক ছাড়া এবং কারন ছাড়া ঘর থেকে বের হলে ফাইন/ নাইলে বেতের বাড়ির ব্যবস্থা করলে আপনাতেই সবাই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হবে।মুভমেন্ট পাস এর যে কথা বলা হচ্ছে তা কি চেক করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এছাড়া আমাদের দেশে ইদানিং ভন্ড ধার্মিকের সংখ্যা খুব বেড়ে গেছে। এদের শক্ত হাতে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মসজিদে যাওয়ার বাহানা দিয়ে যারা ঘরের বাইরে বের হবে তাদের ক্ষেত্রে বেতের বাড়ি দ্বিগুন করতে হবে। যেখানে ধর্মেই আছে দুর্যোগকালিন সময়ে ঘরে নামাজ পড়তে হবে, সেখানে এই অজুহাত দেখানোর অর্থ কি? ভয়াবহ সংক্রামক আফ্রিকান ভ্যরিয়েন্ট প্রতিহত করার একমাত্র রাস্তাই হচ্ছে এই ভ্যরিয়েন্ট এর চেইন ভাঙ্গা। সেটা করতে হলে যে কোন উপায়ে এই সময়ে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করতে হবে।
বর্তমানে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে ধারন ক্ষমতার উপড়ে করোনা রোগী। এই চাপ কমাতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য আরো বেশ কিছু ফিল্ড হাসপাতাল নির্মান করা প্রয়োজন। শহরের খোলা জায়গায় তাবু টানিয়ে তৈরী করা যায় এই ক্ষনস্থায়ী হাসপাতাল।খুব বেশি কিছুর দরকার নাই। এই হাসপাতাল গুলোতে দরকার খালি জনপ্রতি একটা বিছানা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপ্লাই আর পর্যাপ্ত মেডিসিন। চিকিৎসা না পেয়ে যেন কোন রোগীর মৃত্যূ না হয় তা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব সরকারের।
ইউরোপ আমেরিকা তাদের আবহাওয়ার কারনেও অনেকটা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সুবিধা করতে পারছে না। কিন্ত আমাদের মত গরম আবহাওয়ার দেশগুলো শুধু সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই করোনাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। এশিয়ার অনেক দেশই এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে করোনামুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।সরকারের শুভবোধ জাগ্রত হোক এটাই একমাত্র কামনা। তা নাহলে কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃত্যূর জন্য অপেক্ষায় থাকাকেই নিয়তি বলে মেনে নিতে হবে !!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৩০