somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা দিবসে একটা স্যালুট অভ্রর রুপকারেরও প্রাপ্য

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বছর ঘুরে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী এসে আমাদের মনে করিয়ে দিয়ে যায় যে আমাদের প্রানের ভাষা বাংলা ভাষাকে রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে ৫২ সালে রক্ত দিয়েছিল একদল তরতাজা তরুন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম বীজ রোপিত হয়েছিল বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলায়। আজকের তরুন প্রজন্মের অনেকেই হয়ত জানে না সেই রক্তিম ইতিহাস।

ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ:

১৯৪৮ সালের মার্চে রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন “উর্দু, শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”। সেদিন থেকে পূর্ব বাংলার ছাত্র-শিক্ষকসহ আপামর জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেই চাপা ক্ষোভ ১৯৫২ সালে আন্দোলনে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ৪ জানুয়ারি সফল ছাত্র ধর্মটের পর শাসক গোষ্ঠী একুশে ফেব্রুয়ারি সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙার বিপক্ষে থাকলেও ছাত্রনেতারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঐতিহাসিক আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে, যেখানে নতুন অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে) প্রতিবাদী ছাত্রদের সভার পর ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল শুরু হয়। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও গ্রেপ্তারের ফলে শান্তিপূর্ণ মিছিল কিছুক্ষণের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপুরের পর পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে ব্যারাক চত্বর ও তার আশপাশে গুলির আঘাতে শহীদ হন রফিক, বরকত ও জব্বার। বরকতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা লাশগুলো বর্তমান ডিসেকশন হলের পেছনে লুকিয়ে রেখেছিলেন পরদিন জানাজার জন্য, কিন্তু রাতে পুলিশ তা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আজিমপুর কবরস্থানে গোপনে দাফন করে।

ইতোমধ্যে পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল ও ব্যারাক চত্বরে মানুষের ঢল নামে। একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে তখনকার ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ব্যারাকে অবস্থানরত ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করে কন্ট্রোল রুম স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এই কন্ট্রোল রুম স্থাপন মেডিকেল কলেজের তৎকালীন ছাত্রদের একটি বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে এই কন্ট্রোল রুমেই রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনতার সংহতি প্রকাশের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া কন্ট্রোল রুমের মাইক থেকেই নেতারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ , রোববার, সরকারি ছুটির দিন। নবনির্মিত শহীদ মিনারটি প্রথমে উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউরের পিতা। কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ছুটির আরাম হারাম হয়ে যায়, যখন তিনি শুনতে পান স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং দলে দলে লোকের তা দর্শন ও মুখ্যমন্ত্রীকে ধিক্কার দেওয়ার কথা। শহীদ মিনার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। ছাত্র-জনতার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার নতুন উদ্ভাস তৈরি করে।( সুত্র ঃপ্রথমআলো)

এরপর কেটে গেছে ৭০ বছর। ২১শে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সুপরিচিত। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পরপর এদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি যেটার অভাব অনুভব করেছে সেটা হচ্ছে নিজ ভাষায় টাইপ করতে পারা। নিজের মনের ভাব প্রকাশ কোন অবস্থাতেই বিদেশী কোন ভাষায় সম্ভব নয়। আর তাইতো বাংলা কিবোর্ড আবিষ্কারের আগে মানুষ ইংলিশ এলফাবেট ব্যবহার করে বাংলা কথা টাইপ করত । এরপরে যখন বিভিন্ন অনালাইন বাংলা কিছু কিবোর্ড বাজারে এল, সেগুলো কোনটারই ব্যবহার সুবিধাজনক ছিল না। অভ্রর আগমন ছিল অনেকটাই ''ভেনি, ভিসি , ভিডি''। ল্যটিন এই তিন শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় ''এলাম, দেখলাম, জয় করলাম"।বাংলা টাইপিং অত্যন্ত সহজ করে দেয়ার এই দুঃসাধ্য কাজটি যে করেছে সেই মেহেদি হাসানও একজন ডাক্তার। ময়ময়সিংহ মেডিকেল কলেজের হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল তরুন স্বপ্ন দেখেছিল বাংলা ভাষাকে সারা পৃথিবীর কাছে খুব সহজে পৌঁছে দেওয়ার।

বর্তমানে অভ্র ব্যবহার না করে বাংলা টাইপ করে এমন বাঙ্গালী মনে হয় খুজে পাওয়া যাবে না। সমস্ত সরকারি দপ্তরগুলোতেও এখন ব্যবহৃত হয় ‘অভ্র’। অভ্রর অবদান আসলে লিখে শেষ করা যাবে না। অভ্রর রুপকার ডাক্তার মেহেদি হাসান খান কেন কোন রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি, তা যথেষ্ঠই রহস্যময়। প্রতি বছর কত মানুষ একুশের পদক পাচ্ছে। একটা পদক কি অভ্রর রুপকারের প্রাপ্য নয়?

অভ্র না থাকলে এত সহজে বাংলা লিখতে পারতাম না। ভাষা দিসবে একটা স্যালুট অভ্রর রুপকারেরও প্রাপ্য।




সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:২৩
১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×