somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“দুর্নীতি”র প্রতিশব্দ – “মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়”

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না, মনিপুর স্কুলের সাথে আমার কোন দ্বন্দ্ব নাই, এমনকি এর সাথে কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক দুস্পর্ক ও নাই। তবে একটা সম্পর্ক আছে, দু বছর এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম। আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল বান্দরবানের একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রায় প্রতি বছরেই আমি নতুন ধাপের নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখেছি। সেই পাহাড়ী অঞ্চলের এক বিদ্যালয় থেকে ঢাকার সবচেয়ে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। সে জায়গা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়।

আমি যখন মনিপুরে ভর্তি হই তখন ছিল এম পি এস এ খালেকের অধীনে, চারদিকে খালি জামাত আর শিবির পন্থী শিক্ষক। মজার ব্যাপার হল এই জামাত পন্থী শিক্ষকদের কেউ কেউ শ্রেনী কক্ষে নিজেদের লুলামির সর্বোচ্চ পরিচয় দিত। কেন জানি না, এই সব জামাত পন্থী শিক্ষকেরা প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে সব ধরনের দুর্নীতি অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে করতেন। দুর্নীতির কিছুটা আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি।ঐ সময় আমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের শিক্ষক ছিলেন ফরহাদ হোসেন, আজকে তিনিই অধ্যক্ষ!!!

ঢাকার এই স্কুল বাংলাদেশের প্রথম সারির একটা স্কুল। এই একটা সীল দিয়ে দুর্নীতিকে হালাল করে নিয়েছে। দুর্নীতির নমুনা কতটা ভয়াবহ, একটা শিক্ষার্থীকে যতভাবে পারা যায় দুর্নীতির শিকার করা যায় তা যেন এই প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্র।

টিভিতে তো দেখছেনই, ভর্তি ফী পাঁচগুন করে নিচ্ছে তারা। এইটা তো শুরুর নমুনা। এর পরে আপনি যতদিন এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকবেন ততদিনই আপনাকে এইরকম নানারকম ফী দিতে হবে, আপনার বৃত্তির টাকা থেকে শুরু করে এমনকি বের হয়ে যাবার পর সার্টিফিকেট তোলার জন্যেও আপনাকে টাকা ঢালতেই হবে। এর উপর আছে দুই/তিনদিন দিন উপস্থিত না থাকলে ১০০০ টাকার জরিমানা, এইবার আপনি অসুস্থ হন আর যাই হন না কেন, কোনভাবে তিনদিন অনুপস্থিত থাকলেই জরিমানা। একটা শিক্ষার্থীকে কতভাবে শোষন করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই স্কুল।

এটা তো শুধু একাডেমিক শোষন, মানে রিসিট দিয়ে দুর্নীতির নমুনা। এই স্কুলে ভর্তি হলে আপনাকে ক্লাসে নিয়মিত গেলেন আসলেন কিচ্ছু যায় আসে না, আপনাকে নিয়ম করে প্রাইভেট পড়তে হবে। এইটা এমনই এক জ্বালা যে প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থী হয়ে দিবা শাখার কারো কাছে প্রাইভেট পড়লে হবে না, আবার দিবা শাখার হয়ে প্রভাতী শাখার কারো কাছে পড়লে সেটাও হবে না । এখানেও শেষ না, প্রশ্ন কে করছে, খাতা কে দেখছে এই সকল ইস্যু দেখেও আপনাকে প্রাইভেট পড়তেই হবে। সাবজেক্ট কোন সাবজেক্ট না, বাংলা হোক ধর্ম হোক আপনাকে প্রাইভেট পড়তেই হবে।

আল মাসুদ, মাতুব্বর নামক বাংলার কিছু শিক্ষক ছিলেন, এদের ব্যস্ততা দেখলে মানে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যস্ততা দেখলে আপনিও টাশকি খাবেন। ধর্মের শিক্ষকরা তো আরো এক কাঠি সরেস, করোলা জি গাড়ি ছাড়া চলতেই পারেন না। সামাজিক বিজ্ঞানের ইয়াদ নামে এক শিক্ষক ছিলেন নিজের নোটের লেখা না হলে ফেইল করিয়ে দিতেন খাতা পেলে। জাহাঙ্গীর ( পোলাপাইন জাইঙ্গা বলে ডাকত) একটা মোল্লা টাইপ শিক্ষক ছিল, যার কাজই ছিল শিক্ষার্থীদের আল্টানো, মানসিক টর্চার করার জন্য এই শিক্ষক বেশ বিখ্যাত ছিল।

বিজ্ঞানের কোন শিক্ষক হলে তো কথাই নাই! শওকত কবীর নামক এক শিক্ষক ছিলেন, ক্লাসেও ভাল পড়ান বাসাতেও ভাল পড়ান। শিক্ষাকে কিভাবে একটা ব্যবসায়িক পন্য বানানো যায় সেটা উনাকে দেখে মুগ্ধ হতে হয়। মাশাল্লা স্কুলের কাছেই আলিসান একটা বাড়ি বানাইছেন। ও ভাল কথা, উনি পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়ে আমাদেরকে একাধারে রসায়ন, পদার্থ আর জীব বিজ্ঞানের দারুন দারুন নোট দিতেন, মানে শিক্ষাকে সুন্দর করে পন্য বানিয়ে আমাদের মুগ্ধ করতেন। তবে উনি না, পাশা পাশি আরো কয়েকজন এই ব্যবসায় মারাত্মক দক্ষতা দেখিয়েছিলেন এবং দেখাচ্ছেন অদ্যবদি।

“চশমখোর” নামে একটা শব্দ আছে। আমার মনে হয় গণিতের শিক্ষক রইস উদ্দিনের সাথে এক্কেবারে খাপে খাপ মিলে যাবে শব্দটা। প্রাইভেটের টাকার জন্য আপনাকে অপমান করতে উনার আবার বিশেষ পারদর্শিতা আছে।

এই শিক্ষকগুলোর এইসব দুর্নীতির থুক্কু ব্যবসার মার্কেটিং অফিসার হল ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্ররা। শিক্ষকেরা এই ছাত্রদের তোয়াজ করত। তাদেরকে নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা দিত। বক দিয়ে বক ধরার কায়দাটা কেন জানি এই শিক্ষকেরা খুব পছন্দ করে।

এইবার একটু দেখি সেরা এই প্রতিষ্ঠানের নমুনা। এইখানে পড়লে আপনাকে শুধুই মুখ ডুবিয়ে পড়তে হবে, প্রাইভেট, ক্লাস সবজায়গায় ছাত্রদের একটা বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় সবসময়। বাচ্চারা কিভাবে সামলায় আশ্চর্য হই মাঝে মাঝে। এই স্কুলে কবিতা আবৃত্তি হয় না, এই স্কুলে বিতর্ক হয় না, এই স্কুলে কদাচিত কোন অনুষ্ঠান হয়। ছাত্রদের এতটা শোষন করার পরেও ছাত্রদের উতকর্ষ সাধনের কোন পরিকল্পনা নাই। বার্ষিক ক্রীড়ার সময় ঐ শিক্ষকদের বকগুলাই এই উতকর্ষ সাধন এ অংশ নেয়।

জঘন্য একটা স্কুল, এই স্কুলে কোন একটা শিক্ষককে আমি আলাদা করে শ্রদ্ধা করার মত কিছু পাই না, না মানুষ হিসেবে না তাঁদের মেধার জন্য না তাদের শিক্ষার জন্য।

সেই শিক্ষকদের শুধু একটা কথাই বলতে ইচ্ছা করে-
“একজন শিক্ষক শুধু একজন ব্যক্তি নন, একজন শিক্ষক একটা প্রতিষ্ঠান”
খুব দুঃখ হয়, এই বিশা(!!! অনেকগুলা ক্যাম্পাস!!!)ল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একটা অমানুষিক শিক্ষা জীবন পার করে। অবুঝ এই ছেলে মেয়েগুলোর না আছে অনুধাবন করার পরিপক্ক্বতা না আছে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আর তাদের একটা “ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান” “একটা ভাল রেজাল্ট” এই দুইটা কথার জন্য নিজের ছেলে মেয়ের জীবন,নিজের কষ্টার্জিত অর্থ শ্রমের এক নির্মম বলি দেন!

১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×