somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদের প্রানশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে তাঁর নশ্বর দেহ। বিনম্র শ্রদ্ধা রইল অসম্ভব গুনী মানুষটির প্রতি।

২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা প্রথম পত্র ক্লাসে একবার এক বিতর্কে খুব বড় গলায় বিতর্ক করছিলাম। প্রসঙ্গ ছিল হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর কীর্তি। ক্লাসের অনেক ছাত্র/ছাত্রীই জোর গলায় বলে যাচ্ছিল হুমায়ূন আহমেদ একটা প্রচলিত স্রোতে নিজের সৃষ্টিকর্মকে ভাসিয়ে দিয়েছেন, স্রোতের ধাক্কায় জনপ্রিয় হয়েছেন, উনি যখন মারা যাবেন বা তিনি যখন থাকবেন না তখন তার সাহিত্যকর্মের মর্যাদা দিন দিনই কমতে থাকবে। তারা বারবারই উদাহরন দিচ্ছিল শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিম প্রমুখের । তখন একবার জোর গলায় বলতে গিয়েঅ থেমে গিয়েছিলাম। একটা কথাই বলেছিলাম যাকে নিয়ে বিরোধিতা করে যাচ্ছ একবার ভেবে দেখ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে কাদের উদাহরন টেনে এনেছ ।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এমনই এক ব্যক্তি যাঁকে নিয়ে বিরোধিতা করতে গেলেও প্রজ্ঞা লাগে, যাকে অপছন্দ করলেও তাকে একটা সুনির্দিষ্ট মর্যাদার আসন দিতেই হয় আর একই সাথে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে এমন এক ব্যক্তি যাঁকে পরিচয় করানোর জন্য কোন বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। সেই হুমায়ূন আহমেদের জীবনাবসান হল আজ।

অসম্ভব প্রাণশক্তির অধিকারী এই মানুষটির কথা লিখতে গিয়ে বার বারই চোখে পানি চলে আসছে। আজকে রাতে গোটা বাংলাদেশের তথা গোটা বাঙালি সমাজের কত হাজারো প্রান যে ডুকরে কেঁদে উঠবে তার হয়ত কোন হিসেব থাকবে না । তবে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু নেই – এই হিসেবটাও আজ রাতেই হবে, হতেই হবে । অসংখ্য হৃদয় নাড়া দেয়া সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তার যে মৃত্যু নেই তা প্রমান হতেই হবে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর এক বিস্মরকর পরিবারে জন্ম তার। সেই বিস্ময়কর পরিবারে এক বিস্ময়কর প্রতিভা বাংলা কথা সাহিত্যে সংলাপধর্মী নতুন ধারার জন্ম দেন। আর এই ধারা যে একটা প্রমত্তা পদ্মার চেয়ে কোন অংশে কম না তার প্রমান হল হিমু কিংবা মিসির আলী সিরিজগুলো । তার লেখা যতজন পড়েছে তার চেয়েও বোধহয় বেশি মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় হিমু হবার চেস্টা করেছে। জ্যোৎস্না নিয়ে বিলাসিতা করা কিংবা বৃষ্টিবিলাস এই আবেগস্পর্শী চর্চাগুলো মানুষের মাঝে মিশিয়ে দেয়ার জন্য হুমায়ূন আহমেদের অবদান সর্বাগ্রেই থাকবে।

অনেককেই বলতে শুনতাম বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যে হুমায়ূন আহমেদ তো সস্তা বই লিখেন বা সস্তা সাহিত্য চর্চা করেন। আমিও মাথা নাড়তাম – হ্যাঁ খুব সস্তা সাহিত্য ; যে সাহিত্য রাস্তার পাশে ভাসমান পতিতার গল্প থেকে শুরু করে ভয়ংকর রকমের ধনী পরিবারের অসুখী মানুষগুলোর খুব সস্তা কাহিনী আর সে সস্তা কাহিনীগুলোই শেষে চোখের কোণে জল এনে দিত কিংবা আবেগের চূড়ান্ত এক ত্বরণের অনুভূতি দিত। এই সস্তা বই গুলোই এই সস্তা সাহিত্যগুলোই বার বার মানুষের ভেতরের আবেগকে মানুষের ভেতরের মানুষকে টেনে এনেছে খুব সাবলীল ভাবে। বড় কষ্ট লাগে শুধু এই কথাটা ভেবে যে সেই সস্তা সাহিত্যগুলো আর সৃষ্টি হবে না। এই সস্তা সাহিত্যগুলোর জন্য কত হাজারো প্রান যে বুভূক্ষের মত হা করে চেয়ে থাকবে সেটা আগামী বইমেলাতে গেলেই বোঝা যাবে। অন্য প্রকাশের রাজকীয় স্টলের সামনে আর হয়ত ভিড় থাকবে না । চুপিসারে গিয়ে তার ভক্তরা পুরান বইগুলোই নতুন করে কিনে নিয়ে আসবে। সেই স্টলেও আর অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য আর কোন হুমায়ূন আহমেদ থাকবে না। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের বই মেলার আমেজ অর্ধেকেরও বেশি ম্লান হয়ে গেল আজ থেকে।

ফেইসবুক আর ব্লগে ঝড় উঠেছে। ভক্তকূলের মাঝে রব উঠেছে ‘হুমায়ূন আহমেদ’ মারা গেছেন। আমি মনে মনে বলি – ‘ হুমায়ূন আহমেদ’ এর নশ্বর দেহটা বেঁচে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে। আজ থেকে শুধু হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকবেন – যেই হুমায়ূনের শেষ জীবনের প্রশ্নবোধকগুলো আর নতুন করে আসবে না। যেই হুমায়ূনের সাহিত্যকর্মগুলো বেঁচে থাকবে সাহিত্যাঙ্গনে নতুন করে প্রবেশ করা নব প্রাণের মাঝে চির সজীব হয়ে।

আর একটু কথা না বলে শান্তি পাচ্ছি না, বাংলা সাহিত্যের এতটুকুও ক্ষতি হবে না হুমায়ূন আহমেদের অভাবে। তিনি যতটুকু দিয়ে গেছেন ততটুকুতেই সমৃদ্ধ করে গেছেন । ততটুকুই নতুন প্রান সৃষ্টি করবেন, ততটুকুই বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ততটুকুই প্রতিনিয়ত এক অকৃত্রিম ভালবাসার আবেশ ছড়াবে।

হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে ছিলেন এবং বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। শুধু শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষণটি উপস্থিত – বিনম্র শ্রদ্ধা এই গুনী মানুষটির প্রতি।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৪৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×