somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্জ্য- ছোট গল্প

২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনুর বড়ই শখ ঢাকা শহর দেখার।
গ্রামের অনেক মেয়েই ঢাকা শহরে থেকে গার্মেন্টসে চাকরী করে। ঈদে পার্বণে তাদের সবাই গ্রামে ফেরে। নানান রঙ সৌরভের বেশ বাস আর তাদের কাছ থেকে শোনা চাকচিক্যের গল্প, তার মনের ভেতরে শহর ঢাকার এক ঝলমলে স্বপ্ন এঁকে রেখেছিল।
তার বাবা দিনু মিয়া ঢাকা থাকলেও মেয়েকে গার্মেন্টসে চাকরীর জন্য পাঠানোর ঘোর বিরোধী। সে কিসের যেন ব্যবসা করে ঢাকায়, আয় ইনকাম ও মন্দ নয়। তাতেই মিনু আর তার মায়ের বেশ চলে যায়। হপ্তায় হপ্তায় বাড়ি ফেরার সময় চুড়ি, শাড়ি, মনোহারী অনেক কিছুই আনেন তিনি মিনুর জন্যে। কিন্তু সে যেন গ্রামের এই চৌহদ্দির ভেতরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে পড়ছিল। তাই পারিবারিকভাবে যখন তার বিয়ে ঠিক করা হলো, সেটায় সে বিন্দুমাত্র আপত্তি করলো না। ছেলে গন্জের এক দর্জি দোকানে কাজ করে। বেশ চৌকশ; আশা আছে খুব তাড়াতাড়ি নিজের দোকান খুলবে।
দিনু মিয়া মোটামুটি খরচা করেই মেয়ে বিয়ে দিয়েছিল বলতে হবে। ছেলের হাতে নগদ বেশ কিছু টাকাও দিল।
বিয়ের দুদিন পরেই মিনু বুঝতে পেরেছিল, তার বরটা বেশ সৌখিন।
"বউ, চলো তোমারে একটু ঢাকা শহর দেখায়া নিয়া আসি"
সেলিমের কন্ঠে বেশ ফুর্তি ফুর্তি ভাব। হবেই বা না কেন, বউটা তার বেশ ফুটফুটে, আহ্লাদী টাইপ হয়েছে। একমাত্র মেয়ে বলে শ্বশুরের যা কিছু সেটাও তার জন্যই তোলা আছে। নতুন বউ নিয়ে একটু দেশ বিদেশ না ঘুরলে ঠিক জমছে না। খরচের ব্যাপারে সে অবশ্য বেশ সাবধানী। লঞ্চের সারেং দোস্তের খাতিরের কারণে আসা যাওয়ার ভাড়াটা লাগবে না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসলেই হলো। একটু শিশু পার্কে ঘুরাঘুরি আর বিকালের শোতে সিনেমা দেখে পুরানো ঢাকার বিরাণী খেয়ে রাতের লঞ্চ ধরলেই হলো।
যেই ভাবা সেই কাজ।
ঢাকার ঝলমলে আলো আর নানান রঙ বেরঙের মানুষ দেখে দেখে মিনুর যেন স্বাদ মিটতে চায় না। সারাটা দিনই তারা দুজনে ঘোরাঘুরি করলো রিকশায়। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল; কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো সিনেমা দেখে ফিরে যাওয়ার পথে।
দুজনে রিকশায় করে যাচ্ছিল প্রেস ক্লাবের দিক থেকে গুলিস্থানের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা নামি নামি করছে। হলুদ সোডিয়াম বাতিগুলি সবে লাল থেকে হলদে হলো। কাপড়ের রঙও সেইসাথে বিবর্ণ হতে শুরু করেছে; বোধকরি তার সাথে শ্রান্ত, ক্লান্ত ঘরে ফেরা মানুষগুলিও।
রিকশা ট্রাফিক সিগন্যালের লাল বাতিতে থামতেই হুট করে কোত্থেকে এক পাগল উদয় হলো তাদের রিকশার পাশে। প্রায় বস্ত্রবিহীন বলা চলে, কোমড়ে একটা ছালা মতো কাপড় পেঁচিয়ে পড়া; গা থেকে বিকট বোটকা গন্ধ।
মিনু প্রথমে বুঝতে পারেনি গন্ধটা কিসের! পরক্ষনেই লোকটার হাতের দিকে তাকিয়ে সে বুঝে গেলো কিসের গন্ধ পাচ্ছে!
"ওমা!! একি!? বেডার হাতে এইগুলাইন তো দেখি......"
মুখের কথা শেষ করার আগেই লোকটা হাতটা টান টান করে প্রায় তাদের দুজনের গায়ের উপরে এনে তুললো!
"দে, দে , একশো টাকা দে!! নয়তো দিলাম মাখায়া.........."
"হায়!হায়! করেন কী! করেন কী?!"
সেলিমও প্রায় আঁতকে উঠলো। মানুষের বর্জ্যের গন্ধ সে পেয়েছে অনেক আগেই। রিকশা ওয়ালার সাহায্যের জন্য ডাকতে গিয়ে দেখলো সে বদমাইশও দূরে গিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। নিশ্চই এসব সে আগেও দেখেছে। নতুন বউ এর সামনে সেও খুব অসহায় বোধ করতে থাকে।
তীব্র বোটকা গন্ধে মিনুর বমি চেঁপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল। সে একটু খোলা হাওয়ায় দম নেয়ার জন্য এক ঝটকায় রিকশার হুডটা ফেলে দিল। এতে হিতে বিপরীতই হলো। লোকটা আরো কাছে সরে এলো তাদের দুজনের। তার বর্জ্যে মাখামাখি হাত প্রায় মিনুর শাড়ি ছুঁই ছুঁই।
মিনু আঁতকে উঠে অসহায়ের মতো অনুনয় নিয়ে তাকালো লোকটার দিকে। ঠিক তখনি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ীর তীব্র হেডলাইটে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো পাগলটার চেহারা, সেই সাথে রিকশা আরোহীদেরও।
লোকটার মুখের কথা হঠাৎ করেই যেন আটকে গেল.............।
সোডিয়ামের হলুদ আলোতেও সেলিমের চিনতে ভুল হয়না। সারা গায়ে হাতে মানুষের বর্জ্য মেখে চিত্রাপিতের মতো দাড়িয়ে থাকা মানুষটি আর কেউ নয়, তার শ্বশুর দিনু মিয়া।

ছবি সুত্রঃ http://www.woostercollective.com/art/
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৮
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×