somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'লিভ টুগেদার' কড়চা

২৪ শে মে, ২০১১ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেটা পড়ে অনেকের ধর্মানুনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে (ধর্ম+নুনু+অনুভূতি = ধর্মানুনুভূতি)। সুতরাং যাদের নুনু এবং ধর্মানুভূতি দুটিই খুব তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হয়ে যায় তারা এই লেখাটি পড়া থেকে বিরত থাকুন। :P

(এই লেখাটি আগে ফেসবুকে নোট আকারে প্রকাশ করেছি। আমি নতুন ব্লগার। মানুষজন আমাকে ফেসবুকেই একটু-আধটু চেনে। সেখানকার লেখাটি পড়তে এবং কমেন্টগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।)

প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয় 'লিভ টুগেদার' নামক শব্দযুগলের সাথে পরিচিত? এটা এমন একটা কালচার যেখানে দুইজন নারী-পুরুষ (হতে পারে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড বা অন্য কিছু) গভীর বন্ধুত্ব এবং বোঝাপাড়ার ভিত্তিতে একসঙ্গে একবাড়ীতে বসবাস করে কোনোরকম বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই। তারা চাইলে সন্তানও নিতে পারে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। হলিউডের তারকা যুগল টম ক্রুজ এবং কেটি হোমস লিভ টুগেদার করেই জীবনের বড় একটা অংশ পার করে দিলেন। 'সুরি' নামে তাদের ছোট্ট একটি মেয়েও আছে। এরকম আরেকটা তারকা যুগল ব্রাড পিট এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলি (ইসলাম গ্রহণের পর যিনি নাম নিয়েছেন আঞ্জুমান আরা জলি)। তাদের সবার জীবন কিন্তু সুখেই অতিবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে আরব সহ আমাদের দেশগুলোতে, যেখানে ধর্মের প্রকোপ বেশী সেখানে লিভ টুগেদার মোটামুটি নিষিদ্ধ একটা জিনিস। আমাদের দেশে কাঠমোল্লারা 'লিভ টুগেদার' শব্দটা শুনলেই মুখে 'আসতাগফিরুল্লা' আর 'নাউযুবিল্লা'র তুবড়ি ছোটান। যদিও ইসলামে দাসী বা রক্ষিতার সাথে যৌনসম্পর্ক করার অনুমতি দেয়া হয়েছে; আমাদের হলি প্রোফেটের পুত্র সন্তান ইব্রাহিম (যিনি জন্মের ছয় মাসের মাথায় মারা যান) মারিয়া নামক যে মহিলার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তিনি যে আসলে প্রোফেটের বউ ছিলেন না বরং দাসী ছিলেন একথা অনেকেই হয়তো জানেন।

এবার আমার নিজের মতামতটা বলি। আমি লিভ টুগেদারকে সাপোর্ট করি, ধর্ম সেটাকে নিষিদ্ধ করেছে জেনেও। ধর্মে তো অনেক কিছুই নিষিদ্ধ। ইসলামে কোনো বেগানা নারীর মুখের দিকে একবারের বেশী দুইবার তাকানো হারাম! চিন্তা করেছেন?! অথচ আজকে আমরা কী করছি? আমি এরকম অনেককেই চিনি, কাউকে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমাতে দেখলে যাদের ধর্মানুনুভূতিতে আঘাত লাগে আর 'ইচলাম গেলো ইচলাম গেলো' বলে চিল্লায়ে মরে কিন্তু দেখা যাবে তারাই নিয়মিত বেশ্যালয়ে যায় কিংবা ডার্লিং সাথে নিয়ে কোনো আবাসিক হোটেলে 'স্বামী-স্ত্রী' পরিচয় দিয়ে রাত কাটায়! এইভাবে যৌনক্ষুধা মেটানো অপেক্ষা লিভ টুগেদার করা অনেক ভালো এবং পরিচ্ছন্ন একটা প্রক্রিয়া। দেখুন, আমি যদি আমার বান্ধবির সাথে লিভ টুগেদার করতে চাই (suppose), তার বয়স যদি ষোলোর কম না হয় আর যদি এতে তার সমর্থন থাকে তাহলে এই দেশে সেটাকে বাঁধা দেয়ার কোনো আইন নেই, কারণ বাংলাদেশ ধর্মের আইনে চলেনা। আমিনীর মতো বালছালরা যতই চিল্লা-পাল্লা করুক আর দশ মিনিটে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দেখাক, কোনো ফায়দা নেই! তবুও এতে সমাজ যদি আমাকে নিগৃহিত করতে চায় কিংবা কাঠমোল্লারা ইচলামী আইনে দোররা মারার ভয় দেখায় তাহলে আমার অধিকার আছে আইনের আশ্রয় নেবার।

এখন এখানে প্রশ্ন হলো যদি একসাথে থাকতেই হয় তাহলে বিয়ে করলেই তো সব ঝামেলা চুকে যায়! সমাজের গঞ্জনা সহ্য করে লিভ টুগেদার করার প্রয়োজন কী? কী সুবিধা আছে এতে? কিছু সুবিধা তো আছে অবশ্যই। আজকে আমার এক আপুর সাথে ফোনে কথা বললাম। আপুর নামটা সঙ্গত কারণেই প্রকাশ করা হবেনা। তাঁর সাথে কথা প্রসঙ্গে লিভ টুগেদার বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো। তিনি বললেন যে লিভ টুগেদারকে তিনি আগে সমর্থন না করলেও এখন করেন! এর পক্ষে তিনি যেসব যুক্তি দেখালেন আমি অবাক হয়ে দেখলাম সেগুলোর সাথে আমার চিন্তা-ভাবনাও হুবহু মিলে যাচ্ছে। আসুন সেগুলো একবার দেখে নেয়া যাক।

প্রথমত, বিয়ে একটি অতি ঝামেলাকর প্রক্রিয়া এবং নিঃসন্দেহে অনেক খরচসাপেক্ষ। পাত্র-পাত্রী দেখা, তাদের পারিবারিক অবস্থা পর্যবক্ষণ, তারা আবার পরস্পরকে পছন্দ করবে কিনা এইসব হাবিজাবি। তারপর এলাহী কারবার করে বিয়ের আয়জন করা, কাবিননামা রেজিস্ট্রেশন, নগদ যৌতুক, দেনমোহর, পণ এইসবে রয়েছে বিশাল অর্থের ধাক্কা। অনেক দরিদ্র মেয়ের পরিবার শুধু বিয়ের খরচ জোগাড় করতে গিয়েই সর্বশান্ত হয়ে যায়।

বিয়ের পর কয়েক বছর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল মহব্বত বেশ ভালো থাকে। তারপর ধীরে ধীরে সেটা কমে আসতে বাধ্য। কারণ বিয়ে হলো সারাজীবনের ব্যপার। বছরের পর বছর একই সঙ্গীর সাথে থাকতে থাকতে জীবন একঘেয়ে হয়ে যায়। স্বভাবতই তখন ডিভোর্স বা তালাকের বিষয়টা চলে আসে। কিন্তু বিয়ে যেমন ঝামেলার, ডিভোর্সও কম ঝামেলার নয়। অনেক আইনি জটিলতা আছে (স্বামী মুখে তিনবার 'তালাক' উচ্চারণ করলেই বউ তালাক হয়ে যায়, এই ধর্মীয় নিয়ম বাংলাদেশে চলেনা)।

মানুষের জীবন তো একটাই। বিয়ে নামক এরকম জটিল একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গিয়ে সেটাকে টেস্টলেস করার প্রয়োজন কী? লিভ টুগেদার সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দর সমাধান। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বোঝাপাড়ার মাধ্যমে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরী হবে, তারা পরস্পরকে বিশ্বাস করবে, একসাথে বসবাস করবে, শারীরিক সম্পর্ক করবে তারপর যদি কিছুকাল পরে যদি পরস্পরকে আর ভালো না লাগে কিংবা নতুন সঙ্গী পেয়ে যায় তখন তারা জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভাবার এবং সাজাবার সুযোগ পাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই। অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাই দাবি করে থাকে যে তারা পরস্পরকে জীবন দিয়ে ভালোবাসে, সারাজীবন বাসবে, এর বেশী ভালোবাসা যায়না, ব্লা ব্লা... এগুলো আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে ফালতুতম কথা! আমার হাসি পায় এরকম কথা শুনলে! :P

আমার আপুর যে কথাটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, লিভ টুগেদার করার প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই শারীরিক সুখভোগ হবেনা; বরং সেটা হতে হবে পরস্পরকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসার মাধ্যমে মানসিক সুখ লাভ করা। সেই ভালোবাসাতে কোনো ন্যাকামো থাকবেনা; থাকবেনা সারা জীবন ভালোবেসে যাওয়ার মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আশ্বাস।

যারা বহুগামিতায় বিশ্বাস করেন তারা হয়তো বলতে পারেন যে ইসলামে পুরুষকে একসাথে চারটা বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা একাধিক বিয়ে করে সুখভোগ করতে পারবে। আরে মশাই, পুরুষটা না হয় চাইর বউ নিয়া রং-তামাশা করলো কিন্তু তার বউদের মধ্যেকার সম্পর্ক ভুলে গেলেন? জীবনে কোনোদিন দেখেছেন যে সতিনদের মধ্যে কোনোরকম সুখ-শান্তি থাকে। আর তাছাড়া পুরুষকে একসাথে চার বউ রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিন্তু নারীদের? তাদের তো এক স্বামী নিয়েই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়, তা নাহলে গর্ভের সন্তান কোন স্বামীর এইটা বোঝা যাবেনা যে! পৃথিবীতে মানব প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে হয়তো নারী-পুরুষ দুইজনেরই সমান অবদান আছে কিন্তু এক্ষেত্রে নারীরা যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করে একজন পুরুষ কি তার সিকিভাগও করে? তারা তো নারীর ডিম্বাশয়ে শুক্রাণু ছেড়ে দিয়েই খালাস। সেই ভ্রুণকে দশমাস গর্ভে ধারণ করা, অসহনীয় কষ্ট বরণ করে সন্তান জন্ম দেয়ার কাজ তো শুধু নারীজাতিকেই ঘাড়ে নিতে হয়। কিন্তু সেই প্রতিদানের মূল্য তারা কতটুকু পাচ্ছে? একজন পুরুষ একাধিক বউ রাখতে পারবে অথচ নারীকে এক স্বামী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে; বেহেস্তে একজন পুরুষ ৭২টা হুরের সাথে আনলিমিটেড 'সেক্স' করতে পারবে, সেখানেও নারীকে একজন স্বামী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ক্যান? নারীদের কি কোনো সখ-আহ্লাদ নাই? পুরুষজাতি কী এমন চ্যাটের বাল হয়ে গেছে যে ইহকাল-পরকালের যাবতীয় সুখভোগ শুধু তারাই করে যাবে?! ধর্মে যে নারীজাতিকে প্রতি পদে পদে বঞ্চিত করা হয়েছে সেই কথা কেউ ভেবে দেখেছেন?! X(
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১১ বিকাল ৫:০৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×