somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ: পর্ব ৫

২২ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাকিস্তানের নির্বাচন মি. ভুট্টোকে পশ্চিমে নেতৃত্ব আনছে এবং পূর্বে শেখ মুজিবুরকে বিজয়ী করছে

দি টাইমস্, ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭০

একটি বিস্ময়কর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয়ের মাধ্যমে পকিস্তানের প্রথম অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো পশ্চিমের একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হয়েছেন। পশ্চিমাংশে নতুন সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে যেখানে ধরা হয়েছিল মি. ভুট্টোর সোশ্যালিস্ট পিপলস পার্টি ৩০টি আসন পাবে, সেখানে তারা পশ্চিমের ১৩৮টি আসনের মধ্যে ৮১টি আসন লাভ করেছে। মি. ভুট্টো ১১৯টি আসনে তার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন এবং তার দল আশা করছে সবগুলো আসনের ফলাফল প্রকাশ হলে আরো ২০টি আসন লাভ করে শীর্ষে অবস্থান করবে।

পূর্ব প্রদেশে জাতীয়তাবাদী দল আওয়ামী লীগ, যেমন আশা করা হয়েছিল, বাংলার জন্য নির্ধারিত ১৬২টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৪৫ আসন লাভ করেছে। এভাবে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যদিও পশ্চিমের কোনো সমর্থনই তারা পাবে না। একইভাবে ভুট্টোর অনুসারীরা পশ্চিম পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ, পূর্বে সমর্থনের কোনো আশা বা চেষ্টা তারা করেনি।

এই দু'জন আঞ্চলিক নেতা পকিস্তানের সব ইস্যুতে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন এবং নির্বাচনের এই ফলাফল পকিস্তানকে সম্পূর্ণ দু'টি পৃথক রাজ্যে বিভক্ত করে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। মি. ভুট্টো 'ইসলামী সমাজতন্ত্র'র ব্যানারে তার নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে এক হাজার বছরের যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে বেশিরভাগ আসন পেয়েছেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও তিনি সমর্থন অর্জন করতে পেরেছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চূড়ান্ত ফলাফল আসছে এবং এটা পরিস্কার যে ভুট্টো পাঞ্জাবের ৮২টি আসনের মধ্যে অন্তঃত ৬২টি আসন পাবেন এবং নিজ প্রদেশ সিন্ধুতে ২৭টি আসনের মধ্যে ১৯টি আসন পাবেন। এছাড়া তিনি নিজে যে-ছয়টি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন তার পাঁচটিতেই তিনি জিতছেন। যে কাউন্সিল মুসলিম লীগকে ভাবা হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, মিয়া মুমতাজ দৌলতানার সেই দলটির ভরাডুবি হয়েছে। যে ৫০টি আসনে তারা প্রতিযোগিতা করেছিল তার মধ্যে তারা মাত্র ৭টি আসন পাচ্ছে। বিস্ময়করভাবে ডানপন্থী কট্টর দল জামাত-ই-ইসলামী খুবই খারাপ ফলাফল করেছে এবং বাম ধারার ধার্মিকের দল হাজারভি জামাত উলামা ইতোমধ্যেই পাঁচটি আসন লাভ করেছে।

নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য ২৩টি দলের প্রার্থীরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। কিছু বিখ্যাত নেতা তাদের নিজস্ব নেতৃইমেজের কারণে নিজ নিজ এলাকায় জয়লাভ করেছেন। এদের মধ্যে আছেন পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের বিখ্যাত নেতা নূরুল আমিন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মিয়া মুমতাজ দৌলতানা ও আব্দুল ওয়ালি খান। তবে বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান, যিনি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পিপলস পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাওয়ালাপিন্ডিতে পরাজিত হন।

এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ক্ষমতাবান আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। দলটির জনপ্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে প্রধানত তার পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী অবস্থান এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসনের প্রতিজ্ঞা থেকে। তবে এখানে একটি ব্যাপার ছিল যে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিকিংপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এভাবে শেখ মুজিবের মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। দলটি এখন গত সপ্তাহে বাতিল হয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড়-দূর্গত বাকি নয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

রাওয়ালাপিন্ডি, করাচি, পেশওয়ার ও পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘাতের ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন এক অর্থে পাকিস্তানে উত্তেজনা কমিয়ে দিয়েছে কিন্তু অন্য অর্থে দেশটিতে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের নতুন রাজনৈতিক প্রতিনিধিবর্গকে জাতীয় পরিষদে প্রথম দিন বসার পর থেকে ১২০ দিন সময় দেয়া হবে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ও সাংবিধানিক সংসদের চেহারা যা দাঁড়াচ্ছে তা থেকে মনে হচ্ছে সে-প্রক্রিয়া থেমে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ জন প্রতিনিধি এরকম একটি সংবিধানের জন্য লড়াই করবেন যা প্রদেশগুলোর সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দেবে। শেখ মুজিব যদি সংসদে তার দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার প্রতিরা ও পররাষ্ট্র ছাড়া সব ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

তিনি এরকম একটি সংবিধান চাচ্ছেন যা বাঙালিদের তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য নিজস্ব পছন্দকে যাচাই করার সুযোগ নিশ্চিত করবে। এর ফলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। অন্যদিকে ভুট্টো ক্ষমতাধর কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থন করেন এবং তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ দাবিরই বিরোধিতা করবেন। তাই দুই নেতা সমঝোতায় আসতে পারবেন কিনা সেব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:৩৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×