"কথা বলার সময় এখন না"
ফেলানীকে মেরে কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়েছে ভারতীয় সেনা,
আমি চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে চেয়েছি,
তুমি বলেছ, এটা চেঁচামিচির সময় না,
প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বের আন্তরিক চেষ্টা চলছে।
সাগর রুনীকে খুন করেছে ওরা
সাতটি বছর কেটে গেল! ৬০ বার তারিখ পেছালো,
কোন করুণার মেঘ আজো বৃষ্টি হয়ে স্নাত করেনি, "মেঘ" নামের ছোট্র মানবজমিনে!
আমি আর্তনাদ করিনি সেদিন, তুমি বলেছ
ওরা বাক স্বাধীনতার তরেই কাজ করছে।
তনুকে ধর্ষণ করে পরে মরেছে ওরা,
তুমি বলেছ জলপাই রঙ্গা বাহীনীর বিরুদ্ধে কথা বলো না,
বিডিয়ার হত্যাকান্ডে প্রাণ দিয়েছে ওরা অকাতরে,
তারা ৭১'রে যুদ্ধ করেছে, দেশ প্রেমিক সেনার দল।
ছাত্রলীগ আবু বকরকে ছাদ থেকে ফেলেছে,
তুমি বলেছ তারা ৭১'রের মুক্তি চেতনার ঝাণ্ডা উড়িয়ে
রাজারকারদের ডান্ডা মারছে,
এখন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মোক্ষম সময় না।
ইলিয়াস গুম হয়েছে, পরে আরো অনেকে,
মেয়ে তার মাতাকে বলে বাবাকে ফিরিয়ে দাও!
তুমি বলেছ সে বিম্পি'র লোক,
তাকে নিয়ে আবার কিসের কথা?
ব্লগার মরেছে, তুমি বলেছ থাক! ওরা তো নাস্তিক!
শাপলায় মরেছে, সাদা পোশাকী কওমি ছেলেরা,
তুমি বলেছ, জঙ্গীবাদ থামানো বেশি জরুরি।
আমি তখন সমাজ রাজনীতির শিক্ষানবীস!
ত্বকীর খুনে লাল হয়েছে শীতলক্ষ্যা, তুমি বলেছে
এই কালো বাহিনী দেশে শান্তি রক্ষায় দুর্বার।
আমি তখনও নির্বাক ভাষাহীন ছিলাম।
তুমি বলেছিলে, আন্দোলন দমাতে
ঢাকার প্রবেশ মূখ বন্ধে বড় মস্তানের বড় দরকার!
গুলি করে গাড়ি সমেত আগুণে পুড়িয়ে ছাই করেছে,
ফেনীর চেয়ারম্যান একরামুলকে, কেউ কিছু বলেনি, আমিও না!
সে না চাঁদাবাজ ছিল!
টেকনাফের কাউন্সিলর একরাম,
স্বয়ং স্ত্রী ও সন্তানকে মোবাইল কলে সংযুক্ত রেখেই গুলি খেয়েছে,
'আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে...''
আমার ভীতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে,
তুমি বলছে প্রতিবাদের সেটা সঠিক সময় না,
সর্বগ্রাসী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান খুব দরকার!
ওরা ব্যাংক সব লুটেছে, পাচার করেছে সব,
লুটের টাকায় দিকে দিকে গড়েছে খুনের বাহিনী,
খুনের চাপাতিতে চলছে নিয়ত শান,
তুমি বলেছ, কটা টাকা বল, কি হবে বলে আর!
আবরার মরেছে রাস্তার বাস চাপায়,
পায়েল বাস চাকায় মাথা থেঁতলে পরে নদীতে,
মা'কে বলেছে ঢাকা ফিরেও ফোনে জানাবে ফিরেই।
কাউসার মরেছে চকবাজারের, সোহেল বনানীতে।
কেউ ফিরেনি, ততদিনে আমি প্রতিবাদের ভাষা ভুলে গেছি,
তুমি বলেছ, মাত্র তো এগারো বছর!
দ্রুতই রাস্তা হবে নিরাপদ!
নুশারাতকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে খোদ জ্ঞানালয়ে,
তুমি বলছ, থাক ওরা ধর্মের কারিগর! কলংকিত করোনা,
আজও কি হয়নি সেই মোক্ষম সময়ে আমার!
নির্বাক আমাকে নিয়ত তিরস্কার তাচ্ছিল্য করে প্রাণের দাবি,
নির্বোধ অক্ষমতার সে কবর তৈরি হচ্ছে আমরাই সন্নিকটে।
আর তুমি!
খুনের দরিয়ায় বসে, কবিতা লিখছো ভালবাসার!
কি রঙিন আবেদন্ময়ী সে কবিতার কথামালা!
হিরন্ময়ী চাঁদোয়া রাতের মুর্ছনা বাজে তোমার প্রেমে!
ওদিকে খুনিরা দেয়াল গেড়েছে ডিজিটাল আইনে,
প্রতিবাদের সময় আজো হয়নি তোমার,
সংকোচ পেরিয়ে দুরন্ত কথা বলার,
পাপিষ্ঠ সমাজের শিকল ভাঙার,
খুনের কারবালা থামানোর,
কোন পংক্তি নেই তোমার ভাষায়, তোমার কাব্যে,
প্রতিবাদ ও মিছিলের বোধ হারিয়েছে তোমার কবিতা, তোমার জীবন।
শুধু স্বীয় স্বার্থচিন্তায়।
তবে বলি,
ধ্বংসের কেয়ামতে আগুনই হবে শেষ পরিণতি,
তোমার আমার আর তোমাদের সব কবিতার!!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০০