somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত,সহিংসতা,গুজব ,বদলে যাচ্ছে শিশুদের মনোজগত

১৯ শে মে, ২০১০ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত,সহিংসতা,গুজব
বদলে যাচ্ছে পার্বত্য শিশুদের মনোজগত
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংকট পাহাড়ে জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন আরো নানা সামাজিক সংকট। কোন কারণ ছাড়াই একদল শিক্ষিত পাহাড়ী এবং বাঙালী প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে রাঙামাটি শহরকে আতংকের জনপদে পরিণত করেছে। বাঘাইহাটের ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই গুজব ছড়ানোর কারণে পার্বত্য শহর যেনো এখন গুজবের নগরী। দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাতের বেলায় রাঙামাটি শহর পরিনত হয় গুজবের শহরে। এইসব গুজবের কারণে পাশাপাশি অবস্থিত আদিবাসী এবং বাঙ্গালী এলাকাগুলোতে পরস্পরবিরোধী হামলার আশংকায় লোকজন জেগে থাকে।
এইভাবে হামলা,জিঘাংসা,আগুন আর প্রতিনিয়ত গুজব ছড়ানোর কারণে সবচে বেশি প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিশুদের উপর। তাদের মনোজগতে ভিন্ন স¤প্রদায়ের প্রতিবেশিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। পরস্পরের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস আর সন্দেহের চোখ এখণ শিশু কিশোরদেরও। এই প্রসঙ্গে রাঙামাটির বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজ্ঞুলিকা চাকমা বলেন-এটা বাচ্চাদের উপর কি যে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে,কেউই বুঝতে পারছেনা। এর কারণে বাচ্চারা এখন থেকেই পরস্পরের প্রতি ঘৃণা এবং সন্দেহ নিয়ে বড় হবে,এবং এই মানসিকতা তাদের ভেতর থেকে কখনই তাড়ানো যাবেনা।
তিনি আরো বলেন-আমাদের শৈশবে এই বিষয়গুলো একেবারেই ছিলোনা,মাঝখানে ছিলো,এরপর একেবারে কমে গিয়েছিলো। এখন আবার এইসব জাতিগত সংঘাত,আলোচনা,গুজব শিশুদের মনস্বত্বকে নষ্ট করে দেবে। তিনি এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন-এইসব ঘটনার পর দেখা যায় স্কুলে বাচ্চারা পাশাপাশি বসেনা,বন্ধু বন্ধুর সাথে কথা বলেনা,জাতিগত বা স¤প্রদায়ভিত্তিক গ্র“প তৈরি হয়। তিনি আশংকা প্রকাশ করেন,এর ফলে শিক্ষার্থীরা ছেলেবেলা থেকেই এইসব খারাপ জিনিস শিখবে,চর্চা করবে।
এই প্রসঙ্গে রাঙামাটির শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সাহিত্যিক শ.ম মইনউদ্দিন মিন্টু বলেন- আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে নানা অপকর্ম করি,কিন্তু এইসব অপকর্মের প্রভাব যে শিশুদের মনে কতটা দাগ কাটে,তা নিয়ে কেউই ভাবেনা। তিনি সবার প্রতি শিশুদের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান। তিনি পরামর্শ দেন শিশুদের উপর যেনো এর প্রভাব না পড়ে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে গত কয়েকদিনের হানাহানি,সংঘাত সহিংসতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজে উপস্থিতিও অনেক কমে গেছে। পাড়ায় পাড়ায় যেইসব খেলার মাঠ আছে সেগুলোতে এখন উপস্থিতি অনেক কম। শিশু কিশোরদের মধ্যে স্বতঃস্ফুর্ততা কমে গেছে অনেক। এছাড়া সা¤প্রতিক সময়ে পাহাড়ী বাঙালী সহিংসতার ঘটনায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং বাঙালী ছাত্র পরিষদের মিছিলে স্কুল ইউনিফর্ম পড়া বেশ কিছু শিক্ষার্র্থীকেও দেখা গেছে। ফলে স্কুলে এবং শ্রেণী কক্ষেও এর প্রভাব পড়ছে। স্কুলগুলোতেও সা¤প্রদায়িকতার চর্চা বাড়ছে।
রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং জেলা র্গালস গাউড এর সম্পাদক নিরুপা দেওয়ান বলেন- এটা আমাকে পীড়া দেয়,স্কুলে পাহাড়ী-বাঙালী বাচ্চারা পাশাপাশি বসেনা,এমনকি ধর্ম ক্লাসেও ওরা পাশাপাশি বসেনা। ওরা সবকিছুতেই জাতিগত বিষয় নিয়ে আসে। যারা ওদের মাথায় এইসব ঢোকাচ্ছে তারা কি করছে এইসব ? তিনি বলেন-আমি রাঙামাটির সেরা দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি,যেখানে মোটামুটি মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি,তারা যে মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে,অন্য স্কুলগুলোর অবস্থাতো আরো বেশি খারাপ হবে স্বাভাবিক। প্রবীন এই শিক্ষক বলেন-সামান্য স্বার্থে আমরা যারা সংঘাত বা সহিংসতা তৈরি করছি,তারা আমাদের ভবিষ্যতকেই বিনষ্ট করছি।
এদিকে গতকাল রাঙামাটির বেশ কয়েকটি স্কুল পরির্দশন করে দেখা গেছে সেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ অনেক কম,যারা আছে তাদের চোখে মুখেও এক ধরণের ভীতি,অবিশ্বাস। কথা বলতে চাইলে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি কেউই। তবে রাঙামাটির স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি সরকারী বালিকা উ্চ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী উম্মে নাসরিন (নাম পরিবর্তিত) বলেন-আমাদের স্কুলে পাহাড়ী এবং বাঙালী মেয়েরা আলাদা আলাদা বসে আগে থেকেই,সা¤প্রতিক ঘটনার কারণে আমাদের ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে কথা বলাবলিও কমে গেছে। তিনি কোমলমতি ছাত্রীটিও অভিযোগ করে,আমাদের পাহাড়ী শিক্ষকরা আমাদের কম দেখতে পারে ! একই অভিযোগ করেন শহরের রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী বিদিতা চাকমার(নাম পরিবর্তিত)। অভিমানী সুরে সে বলে- বাঙালী ছেলে মেয়েরা আমাদের দেখতে পারেনা,এমনকি বাঙালী স্যারেরাও !
পাহাড়ী বাঙালী শিশু কিশোরদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজ। তারা ‘স্কুলবেলা’ নামক একটি মাসিক প্রকাশনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পাহাড়ী এবং বাঙালী শিশুদেরকে একই প্লাটফরমে এনে ‘বন্ধু ফোরাম’ গঠন করে কার্যক্রম চালায়। সংগঠনটির কর্মসূচী পরিচালক হেফাজত উল বারি সবুজ বলেন-শিশুরাও স্থানীয় রাজনতির বাইরে নয়। বড়রা যা করছে,তার প্রভাবতো তাদের উপর পড়বেই। তিনি বলেন-বড়রা আলাদা আলাদা ক্লাব করবে,সংগঠন করবে,দলাদলি করবে এর প্রভাবতো শিশুদের মনস্তত্বে পড়বেই। এ থেকে পরিত্রানের উপায় এই হানাহানি,সা¤প্রদায়িকতার চর্চা বন্ধ করা। বড়রা যা করবে শিশুরা সেটাই অনুসরন করবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,কেবল স্কুলগুলোতেই নয় এমনকি কলেজ পর্যায়ে সা¤প্রদায়িক বিভাজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখট তৈরি করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচে বড় এবং প্রাচীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি সরকারী কলেজেও যেকোন সাং®কৃতিক বা সামাজিক কাজও পাহাড়ী বাঙালী শিক্ষার্থীরা এক হয়ে করতে পারেনা ! আশ্চর্য্য এই চর্চা অবাক করে অনেককেই। অনেকের বুকেই তৈরি করে দগদগে ক্ষত। তাইতো সাবেক শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদ অঞ্জুলিকা চাকমা এবং নিরুপা দেওয়ান বলেন-আমাদের ছেলেবেলাটা যদি আবার ফিরিয়ে এনে ওদের দেখাতে পারতাম !
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×