আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় আসলাম। ব্যাপারটা যে খুব শখে হয়েছে তা না। কিছু পাচ্ছি না। এক উবার ভাই দয়া করে বললেন, চলেন নিয়া যাই, ২০০ টাকার এক পয়সা কম হবে না।
আমি প্রচন্ড দ্বিধা নিয়ে ভাবলাম, আমি ইতিমধ্যে কোন দামাদামি করে ফেলেছি নাকি?কিন্তু দামাদামি যে করলাম, সেটা মনে পড়ছে না কেন? আমি কি সাময়িক স্মৃতিভ্রমে ভুগছি?
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উবার বাইক কিঞ্চিত ঝাড়ি দিয়ে বললেন, মিয়া আপনারা মানুষ না! এই বৃষ্টির মধ্যে পুরানো ঢাকা যাইতে রাঝি হইছি এই বেশি।
কেন যেন প্রচন্ড হাসি আসলো। কথা না বাড়িয়ে বাইকে চেপে বসলাম। হেলমেট এগিয়ে দিলো। দেখলাম, হেলমেট ভেজা। বললাম, এই বারোয়ারী হেলমেট মাথায় দিবো না। মামলা খেলে জরিমানার টাকা দিবো। বৃষ্টিতে ভিজব, আপনি চালান।
বাইকওয়ালা বললেন, আমাকে ২০০ টাকা দিতে পরান কান্দে, আবার হে দিবো জরিমানা! বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছেন, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
যাইহোক, বাইক চলছে, হঠাৎ বৃষ্টি বেড়ে গেলো। বাইকের তীব্র গতির সাথে ভেবেছিলাম বৃষ্টির সমীকরন খুব আহ্লাদি বা রোমান্টিক টাইপ কিছু হবে। কিন্তু হলো সম্পূর্ন উল্টো।
কয়েক বছর আগে আমাদের লাফাঙ্গা গ্রুপের এক আড্ডায় বলেছিলাম - আহা! বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন এক একটি চুমু। তখন অবিবাহিত ছিলাম, তার উপর ছিলো কবি কবি ভাব। ফলে বৃষ্টিকে নিয়ে এই সব আদিখ্যেতার দাম ছিলো।
কিন্তু আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে মনে হলো, বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন এক একটি মৌমাছির হুল। বাইকার ভাইরে বললাম, ভাই একটু আস্তে যান, বৃষ্টির ফোটায় ব্যাথা পাই। আমার কথায় ভাইয়ের মনে হয় পিনিক বেড়ে গেলো। পুরা হাতিরঝিলে তুফান গতিতে চালিয়ে আমাকে কয়েক লক্ষ হুল বিদ্ধ করে তিনি মগবাজার এসে কিছুটা শান্ত হলেন। ধন্যবাদ দিতে গিয়ে দেখি, আমি তো আসলে ফ্লাই ওভারের নিচে দাঁড়িয়ে। আরো কয়েক হাজার হুল খেয়ে যখন বাসায় পৌঁছালাম, ততক্ষনে আমি সম্পূর্ন ভেজা। দরজার বেল দিতে গিয়ে সামান্য ঝিরঝির অনুভুতিতে বুঝলাম, সুইচে আর্থিন এর সমস্যা আছে। আমার ভেজা হাতে তা আরো প্রকট হয়েছে।
দরজা খুলে গেলো। স্ত্রী কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর রণ হুংকারে শুনলাম - আমারে ছাড়া বৃষ্টিতে ভিজছ? খালি জ্বর উইঠা নেক! সামান্য একটু গরম হোক না খালি! তারপর তোমাকে দেখাইতেছি। দাঁড়াও, এক্ষুনি আম্মারে ফোন দিচ্ছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝলাম, বর্তমানে বৃষ্টিকে নিয়ে এই সব আদিখ্যেতার চার পয়সার দামও নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২২ রাত ১২:১৪