অপরিচিত শহরে আমাকে আমন্ত্রন জানায় নাক উঁচিয়ে কোনো মতে জেগে থাকা এক বহুমুখী প্রকল্প। বাংলাদেশের বর্ষা তার সমস্ত শরীর ডুবিয়ে দিলেও তার প্রাণহরণ করতে পারে নি এখনও। তাই লাল কালিতে লেখা বহুমুখী প্রকল্পের অস্তিত্ব জানায় দেয় আমাকে। ট্রেন হেলেদুলে বাঁক নেয়। বৃষ্টি অনেকটা হাল্কা চালেই আমাদের পিছুপিছু আসছে।
ট্রেন থেকে নেমে আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নতুন শহরে একেবারে অপরিচিত। মানুষের ভাষা বুঝতে পারি না, তোতা পাখীর মতো শেখানো বুলি আউরে যাওয়া যায়। তবে ট্রেনের দুলুনিতে সেই শেখানো বুলিও ভুলে গেছি। মনে আছে বাজার মসজিদ।
অতএব শরণ প্রার্থনা। গন্তব্য আপাতত বড় বাজার মসজিদ। রিকশাওয়ালা চাইলো ২০টাকা। মগা পেয়ে হোগা মেরে দিবে এতটা কাঁচা আমরা না। তোমার রিকশায় চড়লাম না বাল। সামনে একটাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলো। সামনেই বাজার, সেই বাজার পার হওয়ার পরে লালবাজার। কোথায় এসে নামলাম আমরা? এটা কি শহর না কি বাজার?
ঐ যে বড় মসজিদ, উদ্ভ্রান্তের মতো চারপাশ দেখি। এরপরে কোথায় আমাদের জানা নেই। জীবনটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ। কোথায় মানুষ ছুটছে তা জানে না, তবে এই মুহূর্তে জীবন বিষয়ে কোনো কচকচানি ভালো লাগছে না। তবে একটা অনুভব জাগে, আরে এইতো সেই হারিয়ে যাওয়া মফস্বল। একেবারে টিপিক্যাল মফস্বলের ছবি এখানে, রাস্তার অবস্থা ভালো না। অবশ্য ভালো রাস্তা দেখবার আশা করা বৃথা, এখানে রোডস এন্ড হাইওয়ে চলে এমপির হুকুমে। সেখানে রাস্তায় বালি না ফেলেও কাজ শেষ বলে বিল তুলে ফেলা যায়, অন্তত এখানে রাস্তায় এখনো সামান্য পীচ নাছোরবান্দা আপদের মতো লেপ্টে আছে এটাই উন্নয়নের আলামত।
মফস্বলের সব চেয়ারম্যান দৌড়ের উপরে আছে, দেশটা মিলিটারির কব্জায় যাওয়ার পর থেকে অন্তত সাধারণ জীবনযাপন বলে কিছু নেই। কোনো নতুন টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না, অন্তত সেখানে লেফট রাইট করা বড় বাবু, মেজ বাবু সেজ বাবু ন বাবুর কোনো পাওনার হিসেব না থাকলে এলজিআরডি কিংবা স্থানীয় পৌরসভাও নতুন কোনো কাজের নির্দেশ দিচ্ছে না। আলামত সে রকমই, অথচ অন্তত ১ বছর আগেই এ রাস্তার গুরুতর মেরামতির প্রয়োজন।
সেই জংধরা টিনের চাল, নীচে বসে থাকা দোকানী, কোনো সুসজ্জিত শো রুম নেই, একেবারে সাদামাটা আয়োজন। মানুষের আড়ালের প্রয়োজন নেই, বিলাসিতা এখানে থাবা বসায় না, যদিও দোকানে দোকানে আকিজ আর এস আলম হানা দিচ্ছে, তবে এরপাশেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে লাল আটা, টিকে আছে ডাব আর শুকনা মরিচ।
রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্ট জমে আছে। কেনো যেন মনে হলো স্টেশনের উলটা পাশে বাসা হবে। রিকশা হঠাত করেই বামে মোড় নিলো, সামনেই রেল ঘুণটি, সেখানের সিগন্যাল পেরিয়ে একটু আগালেই বামে বড় বাজার মসজিদ।
অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। অনেক অনেক দিন পরে, বলা যায় প্রায় ১৫ মাস পরে দেখা হলো তার সাথে। কিছু কিছু মানুষ তার ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে যায়। কখনও কখনও ছায়াও লজ্জ্বা পায় পাল্লা দিতে। বর্তমানের সময়ে অচল মানুষ, সব কিছু আবেগের মূল্যে মাপে। টোটালি মিসফিট।
আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো, অন্তত শুকনো মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মতো গম্ভীর কোনো বাক্য বলা উচিত ছিলো। নেহায়েত ঠাট্টা করতে গিয়ে যতটা আহত করেছি সেটাতে নির্লজ্জ আমোদ পেয়েছিলাম একদিন। অবশ্য সবার বয়েস বাড়ে, ভুল গুলে বড় হয়ে ধরা পরে।
তবে তার সাথে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই, অনেক আগেই ক্ষমা পেয়ে গেছি আমি। সারা রাত পরিকল্পনা করে গলায় তুলে নিয়ে আসা কোকিলকণ্ঠি সুভাষণের অপ্রয়োজনীয়তার বিমুঢ় বোধ করি। এরপরে আসলে কিছুই বলবার নেই। তার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি।
পুরোনো লেখার সুত্রে জেনেছিলাম তার বাসায় ঢুকবার মুখেই নৌকা আর লাঙল। মসজিদ পার হয়ে সামনে গিয়ে বামে ঘুরেও কোনো নৌকা দেখলাম না, দেখলাম না লাঙল। পুরোনো বাসা। বাসার সামনে বিশাল উঠান, উঠানের দুই পাশে অনেক রকম গাছ। সামনে বড় ঝাউ গাছ। অন্তত সেটা যে ক্রিসমাস ট্রি এই ধারণা আমার ছিলো না। এখানের সব কিছুর পেছনেই একটা না একটা স্মৃতিজড়িত। মূলত আমাদের শুভ ভাই স্মৃতিতাড়িত মানুষ, তার শৈশব তাকে তাড়া করে, তার পরিচিত মানুষের ভালোবাসা তাকে তাড়া করে,
মানুষের নির্মমতাও হাসিমুখে ভুলে যান তিনি অতীতের সুন্দর একটা ক্ষণের কথা ভেবে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি আসলেই অন্য রকম, মানে এই ক্রিস মাস ট্রির পেছনের স্মৃতিটুকু। তার জীবনের প্রথম বই লিখে পাওয়া রয়্যালিটির টাকায় একটা নিজসব স্বপ্নের গাছ কিনে সেটা নিজের উঠানে লাগাতে পারা মানেই একটা স্বপ্ন বুনে দেওয়া। সেই গাছ এতদিনে ডালপালা মেলে বড় হয়েছে, উঠানের প্রতিটা গাছেই তার স্মৃতি আর স্পর্শ্ব লেগে আছে।
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এখানে আসবো। আসি আসি করেও আসা হয় নি অনেক দিন, আর মাঝে আমার পুরোনো মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় হয়তো চাইলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় নি। আমিও আসবো আসবো করে অনেক জায়গায় চলে গেছি, তবে এখানে আসবার মতো সঙ্গ পাই নি।
বসবার ঘর পেরিয়ে একেবার তার লেখার ঘরে পৌঁছে গিয়ে ভালোই লাগলো। পরিপাটি মানুষ, সবকিছু সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। হয়তো কিছুটা পারফেক্টশনিষ্ট। তার প্রতিটা বইয়ের শব্দের ভেতরেও হয়তো সেই পারিপাট্যবোধ আছে। আমরা লেখককে চিনি তার লেখার মাধ্যমে, সেই লেখার পেছনের কষ্ট আর যন্ত্রনার কথা আমাদের কানে পৌঁছায় না।
তার না ঘুমানো দমবদ্ধ অনুভুতির সাথে আমাদের পরিচয় নেই, একটা চরিত্র যখন দরজার চৌকাঠে বসে থাকে সারা রাত, লেখককে পাহাড়া দেয়, সেই সময় লেখক নিজেও অসস্তিতে ঘুমাতে পারে না। তার ঘরদোরবারান্দা জুড়ে লিখিত অলিখিত চরিত্রেরা সার বেধে বসে থাকে, এইসব মানুষকে পাশ কাটিয়ে লেখককে শোবার ঘরে ফিরতে হয়।
তবে সেখানেও অলিখিত চরিত্র অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে। এই হাজার চোখের ভীড়ে লেখক আরো বেশী আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারেন আবার অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রনার কামড়ে বিরক্ত হতে পারেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সাক্ষাতকার না বরং নিজের কিছু অনুযোগ জানাতেই মূলত কথাটা সৌজন্যতার বাইরে লেখকচারিতায় পৌঁছায়।
অনেক শৈশবের উপকরণ তার লেখার ঘরে ছড়ানো ছিটানো।
সেই টিনের স্টিমার, সর্ষে তেলের সলতে জ্বালালে ভটভট ভটভট গামলায় খাবি খেতো। বয়েস হয়ে গেলে এক কাত হয়ে পানিতে নিভে যেতো সলতে, আবার মুছে শুকিয়ে একই গল্প প্রতিদিন। ঘোর বর্ষায় উঠানের ছোট সমুদ্রে স্টিমার ভাসিয়ে দেওয়া, আর সলতে নিভে যাওয়ার পরে সেটা তুলে নিয়ে আসা গোরালি ভিজিয়ে।
টমাটম আর সারেঙ্গী, সেই নাচ পুতুল, একবার ঘুরালেই একটা নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকতো। ডাঙ্গুলি আর লাটিম, সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সেই শৈশরে পড়ে থাকা শুভকে অচেনা লাগে না। কিছু কিছু মানুষের শৈশব কাটে না কখন। অবশ্য শৈশব ছাড়া মানুষের একান্ত আপন আর কি আছে?
একেবারে নির্ভাবনার সময়, কোথাও কোনো উদ্বেগ আর অস্থিরতা নেই। শৈশব নিজের নিয়মেই ছুটে, কোথাও একটু স্থির হওয়ার আগেই হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই, আমাদের সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থেকেও অম্লিন থেকে যায়। এখানে ঘুরে ফিরে আসা, এখানেই জীবনযাপন। ঘুড়ি আর লাটাইয়ের শৈশব, ডাঙ্গুলি আর মার্বেলের শৈশব, গাছ দাপিয়ে বেড়ানো শৈশব, থরে থরে সাজানো থাকে শৈশবের মনি-মানিক্য, শুধু একটু ঝুকে কুড়িয়ে নেওয়া।
আমাদের আগে যারা এ পৃথীবিতে কাটিয়ে গেছেন তাদের জটিলতাহীন জীবন এখন আমাকে অবাক করে, হয়তো একটা সময় অনেক পরের কোনো ছেলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে আচ্ছে এককালে মানুষ হাতে লিখতো, তারা হাতে লিখতো কেমন করে, অদের কি কিবোর্ড ছিলো না।
সেখানে একেবারে শ্লেট পেয়ে যাওয়া ভীষণ রকম কিছু।
হুমায়ুন আহমেদ হুমায়ুন আজাদ আর মানুষের গল্পের বাইরে আমাদের নিজসব গল্প আছে। আমরা একটা সময়ে মন্তব্যে পরস্পরকে স্পর্শ্ব করতে পারতাম............... হয়তো আমি জানি না, সেই ছোঁয়াগুলো জমিয়ে রেখেছে শুভ। আমি অনেক আগে একবার নতুন দিনের বাংলা গালির অভিধান শুরু করেছিলাম, সেটা মুছে দিয়েছি সেই দিন তবে সেটার স্মৃতি রযে গেছে শুভর কাছে।
আমাকে অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, পুনরায় একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, আমার চেহারা আমার লেখার সাথে যায় না। আমি ভুল মানুষের চেহারা নিয়ে জন্মেছি। তবে আমার জিগীষা তখনও জাগ্রত। খাচ্ছি, ব্লা যায় খাবি খাচ্ছি আতিথেয়তার চাপে। খাওয়ার ফাঁকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম,
এই যে মফস্বল, এখানের পরিবেশ, সবটা তেমন ভাবে ফুটে উঠলো না কেনো লেখায়?
আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আমি নিজেই।
আমাদের শহুরে লেখকদের উন্নাসিকতার পালটা জবাব কি এই মফস্বল মুছে ফেলা প্রবনতা? লোকে মফু বলবে, এই রে তোর গায়ে এখনও ভ্যাদভ্যাদে মফস্বলের গন্ধ লেগে আছে, তাই মফস্বল থেকে বড় লেখক হতে আসা ছেলেটা শহুরে বন্দনায় মুখরিত হয়। ওহ সিলি টাউনশীপ স্পেসশীপের মতো কোনো দূর মহাশুণ্যে লটকে থাকে, শহরের জমিনে গেড়ে বসবার সাহস পায় না।
কাঞচন গ্রাম গ্রামের পটভূমিতে লেখা হলেও সেটা পড়ে তেমন আনন্দ পাই নি। সেখানের গ্রাম কিংবা মফস্বলে আমার পরিচিত মফস্বলের ছবি নেই। আর পরিচিত যাদের লেখাই পড়ছি শহুরে ফরিয়া চোখে মফস্বল আর গ্রাম দেখার চেষ্টা। আন্তরিক গ্রাম আর মফস্বল অনুপস্থিত, কিংবা আমার পঠনসীমায় যে কয়টা উপন্যাস মনে পড়ছে তার কোনোটাই ঠিক সেই অর্থে মফস্বল্কে ধারণ করতে পারে নি। এখানে চিত্রিত মানুষের শহরের অপভ্রংশ। আমাদের শহুরে সাহিত্যিকদের চিত্রিত গ্রাম আর মফস্বল, বাস্তব চিত্রের মিমিক্রি।
শুভর তৈরি জবাব ছিলো তার অযোগ্যতার বিবরণ। তবে আমার নিজের প্রশ্ন যে কারণে, পত্রিকায় সংবাদ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ ভিজে আসা লেখা লিখবার মতো অনুভব যার আছে সে কেনো নিজের জীবনযাপনের নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জায়গাটাকে সচেওতন ভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে। বরং এটাই সবচেয়ে সহজ সাধ্য বিষয় তার জন্য।
অবশ্য এ প্রশ্নের একটা বিকল্প উত্তরও শুভ দিয়েছে। হয়তো তার নিজের নির্জনতা বজায় রাখবার লোভ, একান্ত নিজের করে পাওয়া এই অনুভবকে বাজারের সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেবার দ্বিধা।
সময় গড়াতে থাকে, ঘড়ি চলে নিজের মাপে, আমাদের মাপে সময়টা আচমকা ফুরিয়ে যায়। তার নিজের হাতে লাগানো কড়ই গাছ আর তার নিজের পরিবারের প্রতি তার মমত্ববোধ, তার দ্বিধা, তার লজ্জা, তার আক্ষেপ সবটুকু মিলিয়ে জীবন্ত একটা শুভ সবসময়ই চোখের সামনে ভেসে উঠে।
তার বনসাই গাছের টবে লেখা আছে এই গাছের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত। একটা গাছকে নিজের চাহিদা পুরণের জন্য নিয়মিত অনাহারে- অর্ধাহারে রাখা, তার নিয়মিত ডাল-পালা ছেঁটে দেওয়া, তার বিকাশ এবং বৃদ্ধি একটা নিজস্ব মাপের টবে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি কিঙ্গা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার একটা আনন্দ আছে।
আমাদের চাহিদা মেটাতে তোমাকে আমাদের তৈরি করা ছাঁচের ভেতরেই বেড়ে উঠতে হবে, এই রকম অনায্য আবদার অস্বীকার করলেও আদতে মানুষ আধিপত্যবাদী। মানুষ নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। বনসাই আমাদের এই কতৃত্বপরায়ন্তার প্রতীক।
কথা না বললেও এক একটা স্মৃতিচিহ্ন দেখে আমি বুঝতে পারি এর পেছনের অনুভবটুকু। হয়তো পরিবেশ কিংবা এমনটা ভাববার সাযুজ্যতা। ঘড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে আগায়। আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে যায়। উঠে আসতেই হবে, আর থাকবার উপায় নেই কোনো।
আসবো না আসবো না করে শেষ পর্যন্ত স্টেশনে এসে আমাদের ট্রেনে পর্যন্ত তুলে দিয়ে নিশ্চিত চলে যাওয়ার আনন্দ পেতে চাইল হয়তো। জানি না, ট্রেনের জানালায় হাত ধরবার মুহূর্তে আমি জানতাম এটা শেষ না, আমাদের অনেক কথাই বলা হয় নি, অনেক আলোচনাই করা হয় নি, আমাদের বিনিময় অসম্পুর্ণ রযে গেলো।
এই সময়ের মানুষের নিয়মিত হিসেবের বাইরে কিছু কিছু ভুল মানুষ এখনও বেঁচে আছে যারা অর্থ আর প্রতিষ্ঠার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে সত্যি ভেবে জীবনযাপন করে। ইহলৌকিক নিয়মে তাদের প্রতিষ্ঠার হিসেব মেলানো দুস্কর। তারা হৃদয়ের ঐশ্বর্যে ধনী, জাগতিক প্রতিষ্ঠার মোহ তাদের নেই।
এমন ভুল্ভাল মানুষের কাছে গিয়ে নিজেরও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে ইচ্ছা করে, এই সব অচল মানুষেরাই হয়তো সভ্যতা সচল করে রাখে আবেগে ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
এমন এক পরিবেশে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে যেখানে সবার জন্য একটা চাটাই পাতা আছে, থাকবেন থাকেন না ভাই। একটা দিন থেকে যান। এই লোভনীয় আহবান রেখে ফিরে আসবার সময়টা স্তব্ধ হয়ে থাকি।
আমার হাতে দারুচিনির ডাল, আমি অল্প অল্প ভাঙি আর মুখে দেই। ভাবতে থাকি মানুষ কতটা অশালীন রকমের প্রতিষ্ঠাকামী লোভী বর্বর, শালারা গাছের ছাল খুলে, তাকে উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রী করে গাছের পোশাক। সে পোশাক মানুষ পয়সা দিয়ে কিনে আর উলঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সাজানো বাগানে।
আর যার সাথে পরিচয় হলো, তাকে বলবার মতো কিছু নেই, আতিথেয়তার উত্তরে সামাজিক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তার জন্য এতটুকু বলা যায়।
কোনো কোনো স্পর্শ্ব অনাবিল আনন্দের অনুভুতি দেয়। কোনো কোনো প্রথম পরিচয়ে অপরিচয়ের সংশয় থাকে না। বরং পরিচিত মানুষটাকে অনেক দিনের চেনা মনে হয়। এইসব মনে হওয়া সম্পর্কের কোনো নাম হয় না। আমিও সম্পর্ককে কোনো নাম দিতে পারি নি, সামাজিক পরিচয়ে ঠিক কি সম্বোধন উপযুক্ত হবে ভেবে পাই নি।
যতদুরেই যাই, কিছু কিছু মানুষ একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে যায়। অন্য রকম কষ্টবোধে গলা আটকে আসে, ভেতরে কান্না থাকে না, অনিবার্য বিচ্ছেদের বেদনা থাকে। মুখ ফুটে বলা যায় না আসি কিংবা যাই, সমস্ত পথ ফিরে ফিরে তাকাই, যতদুর দেখা যায়।
আদর আর আপ্যায়নের ছাপ মেখে চলে আসতে ইচ্ছা করে না। এখানে এসে মনে হলো, আর কোথাও যাওয়ার নেই, এটাই নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়। তবুও ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে। আমাদের সবার গন্তব্য থাকে, কিংবা আপাত গন্তব্য কিংবা ঘরে ফিরে আসবার দায়।
তবু মুছে ফেলা যায় না সেই ছাপ।
ভালো থাকুক তারা সবাই , সাময়িক আঁধার কেটে আবার সূর্য্যের আলোতে উদ্ভাসিত হোক তাদের জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৪:৫৮