গত বৃহস্পতিবার চলন্ত মাইক্রোবাসে দেড় ঘণ্টা ধরে গণধর্ষণের শিকার করা হয়েছে এক গারো তরুণীকে। তিন দিন ধরে এই খবর ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলাতে ভেসে বেড়াতে দেখছি। তারপরে আর কোন আপডেট পাচ্ছি না কেন?
কেউ বলছে আপনার বোন হলে কী হতো? কেউ বলছে পরিবার থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিৎ ছেলেদের কেমন হতে হবে। কেউ বলছে ধিক্কার ধিক্কার। কি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ছিঃ
গুগল সার্চ করে দেখেছি তিন বছরের (সবনিম্ন বয়স) শিশু থেকে শুরু করে, চিকিৎসারত হিজাবি ডাক্তার, মায়ের বয়সী মহিলা থেকে শুরু করে ক্লাস ওয়ানের মেয়ে, কে ধর্ষিত হচ্ছে না এখন এই দেশে? ১ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিত হলেও এরপর জাতি হবাক হবে না।
স্কুলে, বাসায়, বাসে, কর্মক্ষেত্রে, দোকানে, ক্ষেতখামারে, গ্রামে, শহরে কোন জায়গায় ধর্ষণ হয় নি? বাকি ছিলো মাইক্রোবাস সেটাও হয়ে গেছে। এরপর দেখা যাবে রাস্তাঘাটে খোলা আকাশের নিচে ধর্ষণ হচ্ছে। একদল দেখে ছবি তুলবে, আরেকদল দাঁত কেলাবে, আরেক দল উঁহু আহা করে সুশীল হয়ে চলে যাবে।
স্কুলে এরপর ছেলেরা লিখবে- আমার শখ? বড় হয়ে ধর্ষণ করা।
কারণ চুরি, ডাকাতি করলে যাও কিছুটা পুলিশ ধরে। ধর্ষকদের তো কিছুই হয় না। আর ধর্ষকদের পক্ষে একটা দল সাফাই গাওয়ার জন্য রেডি থাকে, মেয়ের পোষাকে দোষ ছিলো, রাত করে কেন বাসায় ফিরে, মেয়েদের উচিৎ ঘরে থাকা, নাভির নিচে শাড়ি পরেছিলো কেন, হিজাব পড়লে ধর্ষিত হতো না, মেয়ের আচার আচরণ, চাল চলনে সমস্যা ছিলো ব্লা ব্লা ব্লা...... তাই বড় হয়ে শখের বশে ধর্ষণ করা যাবে ভালোই।
টিএসসির ঘটনা, গর্ভবতী পাহাড়ি মেয়েকে ধর্ষন, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের ঘটনা, এরপর মাইক্রবাসে গন ধর্ষণের এই ঘটনা। কিছুদিন পরপর কিছু না কিছু হচ্ছেই। ধর্ষণের ঘটনার সাথে ধর্ষকের শাস্তি পাবার রেশিও বের করলে হাসি পাবে সবার।
জাতি, এবার হটসীটে বসে দেখুন এই ঘটনার কী ফলাফল আসে। ধর্ষকগুলোর উপযুক্ত শাস্তি হয় নাকি।
আর পুরুষরা এবার নিজের ঘরের, মেয়েকে, বোনকে, মাকে, স্ত্রীকে, বান্ধবীকে, প্রেমিকাকে যে কোন দিন যে কোন সময় ধর্ষিত হতে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন...
আমরা এমন এক দেশে জন্ম নিয়েছি যে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন আসনে নারীরা থাকার পরেও এখানে নারীদের কোন নিরাপত্তা নেই। এই নারীদের নিরাপত্তার দায় দিনশেষে নারীরা বাদে আর কেউ না।
লজ্জাজনক হলেও সত্য দিল্লীতে চলন্ত বাসে মেডিক্যাল-ছাত্রীকে ধর্ষণের পর আরও কাহিনী শুনে ভারতকে যারা ধর্ষণের দেশ বলে গালি দিতেন, যাচাই করে দেখুন আমাদের লাল-সবুজের বাংলাদেশও এখন একই কাতারে চলে গেছে......
ভারতকে যারা ধর্ষণের দেশ বলে, তারা জানেনা দিল্লীতে ধর্ষণের পর সারা ভারত এক হয় ভারতে ধর্ষণ বিরোধী আইন পাশ করিয়েছে।
যদি ধর্ষণের দেশ কথাটা বলার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তাহলে সেটা ভারত নয়, বাংলাদেশ। এটা আমি বাংলাদেশী নাগরিক হয়েই বলছি। ভারত সরকার তো ধর্ষণের পর অন্তত রেসপন্স করেছে, বাংলাদেশ সরকার তো দেখি তাও করে না।
আমাদের দেশের সরকার আসলে করছে কি সেটা মনে হয় এখন দেখা দরকার। দেশে একের প এক মুক্ত চিন্তার ব্লগার খুন হচ্ছে, তার কোন বিচার নেই। একের পর এক নারী ধর্ষিত হচ্ছে তার কোন বিচার নেই। আমাদের দেশে না আছে কোন আইন না আছে আইনের শাসন। আমরা কি পারি না আমাদের এই ছোট দেশ বাংলাদেশ এ এমন একটা আইন তৈরী করতে যাতে করে আমাদের দেশে আর একজন ব্লগার কিংবা ধর্ষক এমন কিছু করতে সাহস না পায়।