কাদামাটি কত প্রিয় ছিল তখন। কাঁচা নর্দমায় বানানো সেতুতে ছিলাম, আমের আঁটি থেকে আমার মতো এক শিশু বেরিয়ে আসত তার মেরুন পাতা নিয়ে। আমি ছিলাম নদীর পাড় বরাবর দৌড়গুলোতে সবার পেছনে পড়ে। ফলত কাটা ঘুড়ি পড়ত নদীর জলে। জাম আর বকফুলের নরম ডাল বরাবরই ভেঙ্গে পড়ত, আমি নীচ থেকে দেখি, জামরুলের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। পড়তে বসলেই লোডশেডিং, একমাত্র গল্পের বই পড়ার মতো মিটমিটে আলো। আর তারজালি ভেঙ্গে পড়ল, মাকড়সারা কোথায় গেল? বর্ষার পিপড়ে মতো সজনের গাছে শুঁয়োপোকা, কাচপোকার টিপ,পতঙ্গজগতে রবিন্দ্রনাথ লিখে দিচ্ছেন 'সে', কাগজের নৌকারা চলে গেল শিলাইদহে।
আমি শৈশবেই আটকে রইলাম। সাঁতার কাটতে কাটতে হাঁফ ধরে, গঙ্গায় জল এত কম মাটিতে পা ঠেকে কিম্বা আমি লম্বায় একটু বড় হয়েছি। আশোকাদের বাড়ির জানালায় এসে একটু থমকাই, রাত দশটায় কি করে ও? সাইকেলে মাটিতে পা দিয়ে দাঁড়াতে পারি। কতদুর দেখা যায় ওই জানালায়, কেবল অশোকাকে নয়। নেপু পটাদের বাড়ি ফুলে ফুলে ডেকে গেছে অশোকাকে একবার নিয়ে যেতে চাই, চিত্তবাবুর কাছে পড়তে গিয়ে আর কতটুকু সময় পাওয়া যায়? না, এবার লাভের খাতায় সব থেকে বেশি পেতে হবে।
কলকাতা আস্তে আস্তে গিলে খেল আমায়। নদীতে সত্যি সত্যি জল কমে গেল।সেখানে জেলা স্তরে ভলিবল খেলা হলেও আমার আগ্রহ ছিল, চুপচাপ কেটে যেত বিকেল। লঞ্চঘাটে সন্ধ্যা নামলে একে একে ফিরে আসে ইলিশের নৌকো, সুমন এলেন আর পাল্টে গেল মেঘমালার রং, দশ ফুট বাই দশ ফুটে রাত্রি কাটে নিমেশে। আমি ছবি আঁকি, লিখি আর সকাল হলে মিশে যাই কলকাতার ভিড়ে। কার্তিকের ভাসানে কফিতে মুখ পোড়ে শৈশব প্রিয়ার সিথির সিঁদুরে। আমার মফস্সল আমার থাকে আর সব পর হয়ে যায়।
পিনাকীর লেখা পড়তে গিয়েই বিপত্তি, পুনর্লিখিত হয়ে যায় আমার অন্যজীবন, নদীতে ততদিনে চর পড়তে শুরু করেছে, প্রেমের জ্বরে পলি, আমি দোল খেলি হাজরাতে, উঠে বসি মাঝরাতে, চন্দ্রবিন্দুর গান শুনে ভাবি স্কন্ধকাটার ভীড়ে আমি এক টুনটুনি পাখি। সাদা কাগজ শুকনো চামড়ার মতো পড়ে থাকে আর পুকুর ভর্তি কচুরি পানা, আমি ঢিল ছুড়িনি কত দিন, টের পাই!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:২৮