পবিত্র জুমাবারের স্ট্যাটাসঃ
খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলিম বিশ্বের এক অপরাজিত সেনাপতি। ১০০ এর উপরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও কোনো যুদ্ধে পরাজিত হননি। উপাধি লাভ করেন" আল্লাহর তরবারী" হিসাবে।
হযরত ওমর রাঃ খলীফা হয়ে এই মহান মুসলিম প্রধান সেনাপতিকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন। কারণ হিসাবে ওমর রাঃ বলেন- মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা জন্মাচ্ছিলো যে- খালেদের অসাধারণ সমর কৌশল, মেধা, তেজস্বীতা, সিংহের মতো অদম্য সাহস, বাঘের মতো হুংকার, নির্ভিকতা ইত্যাদীর জন্যই খালিদ প্রতিটি যুদ্ধেই অপরাজিত। মানুষের মন থেকে এ ভুল ধারণা মুছে দেয়ার জন্য আমি খালিদকে প্রধান সামরিক শাসকের পদ থেকে অপসারণ করলাম।
খালিদ বিন ওয়ালিদ খলীফার আদেশ মাথা পেতে নিয়ে সুপ্রীম মিলিটারি কমান্ডারের পদ থেকে একেবারে সাধারণ এক সৈন্যে পরিণত হলেন। মুসলিম কমান্ডারের এতো বড় পদ মুহুর্তেই ছেড়ে দেয়ার তাঁর মাঝে কোন ক্ষোভ নাই, কোনো আক্ষেপ নাই, কোনো দুঃখ নাই।
একবার চিন্তা করতে পারেন! কেমন ছিলো উনাদের মন, কেমন ছিলো উনাদের ত্যাগ।
প্রধান সেনাপতি হলেন আবু উবাইদা রাঃ।
৬৩৬ সালের আগস্ট মাস। বায়জান্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস আর মুসলিম বাহিনী বর্তমান সিরিয়া আর জর্ডানের সীমান্ত ইয়ারমুক প্রান্তরে মুখোমুখি।
সম্রাট হিরাক্লিয়াসের বিশাল সেনাবাহিনী। মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা একেবার হাতে গোনা। খুবই নগন্য। পুরো ঘটনাটি বুঝতে হলে- থ্রী হান্ড্রেড ছবিটি দেখতে পারেন- যেখানে মাত্র ৩০০ স্পার্টান লক্ষাধিক পারসিকদের রুখে দিয়েছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ৪৮০ সালে। নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে একেকজন স্পার্টান প্রায় হাজারেরও বেশী পারসিক যোদ্ধার সাথে যুদ্ধ করে হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলো।
নতুন মুসলিম সেনা প্রধান আবু ওবাইদা ফজরের নামাজ শেষ করলেন।যিনি সেনাপ্রধান, তিনিই ইমাম। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে সাহায্য চেয়ে সবাই সিজদায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। এরপর বললেন- পরাক্রমশালী বায়জান্টাইন সেনাবাহিনী ঘুর্ণিঝড়ের চেয়েও দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে। সন্ধিপত্র নিয়ে আমাদের যে ভাইটি হিরাক্লিয়াসের দরবারে গিয়েছিলো- ওকে হাত পা বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় শকুনের পালের মাঝে ছেড়ে দেয়। শকুন জীবন্ত ভাইটিকে টুকরে টুকরে রক্তাক্ত করলে -সেই ভাইটির রক্তমাখা কলিজা চর্মের সন্দিপত্রে মোড়ে পাঠিয়ে লিখা হয়- মুসলিমকে পৃথিবী থেকে শুধু নিশ্চিহ্ন করা হবেনা। ওদের সব উপাসনালয় পুড়িয়ে চারখার করা হবে। যে গুহা থেকে ওদের ধর্ম এসেছিলো সেই গুহায় ওদের কবর চিরদিনের জন্য রচিত করা হবে। আমি হিরাক্লিয়াস -সারা দুনিয়ার অধিপতি। ভূখন্ড আমার, কর্তৃত্ব আমার। আমিই রাজা।আর পৃথিবীর বাকি সব আমার প্রজা। এখানে আর কোনো আল্লাহ নেই, স্রষ্টা নেই। আমি আল্লাহ, আমি স্রষ্টা, আমিই ঈশ্বর, আমিই ভগবান।
এক ঝাঁক শকুন একজন জীবন্ত মানুষকে কেমন করে টুকরে টুকরে খায়-সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি কল্পনা করতে চাইলে- আইসিসরা এই সভ্য পৃথিবীতে কীভাবে জীবন্ত মানুষকে খাঁচার ভিতর পুড়িয়ে মারে তার সাথে মিল খুঁজে দেখতে পারেন। বর্বর হিরাক্লিয়াসের অত্যাচার থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান শিশু, কন্যা, মহিলা, বৃদ্ধা, সহায়হীন, সম্বলহীন, অসহায়, পীড়িত, কেউ রক্ষা পাচ্ছেনা।ইয়ারমুক দরিয়া মুসলমানদের রক্তে লাল হয়ে গেছে। আজকেই সিরিয়ার রাস্তার একটা ছবি দেখলাম। কেউ দেখেছে, কেউ দেখেনি। এ আর এমন কি? মনে হলো এক কষাইঘর। কিছুক্ষণ আগেই যেন পশু জবাই করা হয়েছে। মানুষের তাজা রক্তে লাল হয়ে গেছে পুরো পথ। সেই ৬৩৬ সাল আর ২০১৬ সাল। একই জায়গা। মাঝখানে বয়ে গেছে কতদিন, কত মাস,কত বছর। কিন্তু সেই রক্তস্রোত যেন আজো থামেনি।
আবু উবাইদা বললেন- তারপরও আমরা আবারো সন্ধি করার জন্য আহ্বান জানাবো।জীবনের ভয়ে নয়, মরণের ভয়ে নয় -শুধু নবী সাঃ এর সুন্নাত পালনে। তোমাদের ধর্ম তোমরা পালন করো। আমাদের ধর্ম আমাদের শান্তিতে পালন করতে দাও- আর কিছু চাইনা। শুধু এটুকুই হবে সন্ধির শর্ত। দয়াকরে জোর করে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়োনা। যুদ্ধ শান্তি নিয়ে আসতে পারেনা। সন্ধি শান্তি নিয়ে আসতে পারে। আমরা যুদ্ধ চাইনা।
হিরাক্লিয়াস গর্বে আর অহঙ্কারে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সন্ধি পত্র ছিঁড়ে সেই সন্ধিদূতকে ঘোড়ায় সাথে বেঁধে উবাইদার শিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হলো। ঘোড়া জীবন্ত মানুষটিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে এলো মুসলিম শিবিরে।
পরদিন ভোরে ফজরের নামাজের পর- আবু উবাইদা বললেন- যুদ্ধ করা ছাড়া এখন যে আর কোনো উপায় নেই। কে হবে মুসলিম দলের সেনাপতি?
প্রথম একজন মুসলিম ওঠে দাঁড়ালো।
আবু ওবাইদা বললেন, আপনি বসুন।
এবার ২য় জন ওঠে দাঁড়ালেন।
আবু ওবাইদা বললেন, আপনিও বসুন।
এবার ৩য় জন ওঠে দাঁড়ালে , আবু ওবাইদা উনাকেও বসিয়ে দিলেন।
এরপর ওঠে দাঁড়ালেন মহান সিপাহশালার খালিদ বিন ওয়ালিদ।
আবু ওবাইদা এবার খুব খুশী হয়ে বললেন, আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম ,আপনি এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিন। কিন্তু গত পরশু ছিলেন আপনি মুসলিম বাহিনীর প্রধান কমান্ডার আর আমি ছিলাম আপনার অধীন। তাই আমি চাইছিলাম না আপনাকে কোনো আদেশ করতে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ বললেন- হে নবনিযুক্ত মুসলিম বিশ্বের প্রধান সেনাপতি, আমি আপনার আদেশ মাথা পেতে নেবো । আপনি যা বলবেন , তাই হবে। আপনি প্রধান সেনাপতি, আর আমি শুধু ইসলামের শান্তির ছায়ায় আশ্রিত এক আগ্গাবহ সৈনিক। প্রকৃত আল্লাহভীতু, পরহেজগার মুসলিম এক মুহুর্তের জন্যও ক্ষমতার লোভী, পদের লোভী, অর্থের লোভী, দুনিয়ার কোনো কিছুর মোহে আকৃষ্ট হতে পারেনা। খলীফা ওমর রাঃ যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। আমি একজন সাধারণ সৈন্য হিসাবেই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবো। আমার সাথেও কাউকে দিতে হবেনা। প্রজাদের ওপর জুলুমকারী,নির্যাতন কারি, লম্পট হিরাক্লিয়াসের মোকাবিলায় মহান আল্লাহর মেহেরবাণী তে আমি একাই যথেষ্ট। কেউ আমার সামনে না আসলে খালিদের এই তরবারীতে কারো গায়ে একটু সুঁচের আচড়ও লাগবেনা । আমি সরাসরি হিরাক্লিয়াসেের মুখোমুখি হবো।
খালিদ বিন ওয়ালিদের জবাবে মুসলিম শিবিরে শুরু হলো চরম উৎকণ্ঠা।
ইয়ারমুকের নদীর তীরে হিরাক্লিয়াসের প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য । আর খালিদ একাই তাদের মোকাবিলা করবেন। এ কেমন কথা। খালিদের কি নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই। জীবন কি এতোই তুচ্ছ। এতো একেবারে অবুঝের মতো নিজের জীবন স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দেয়া। এতো শাহাদাতের তামান্না না। এতো এক ধরণের আত্মহত্যা।
আবু ওবাইদা বললেন, আপনি একাই যাবেন? এর মানে কি?
খালিদ বললেন- হে মহান সেনাপতি। ত্রুটি মার্জনা করবেন? কোনোদিন কি আপনি কোনো কবরস্থানে গিয়েছেন?
আবু ওবাইদ বললেন, হ্যাঁ। অবশ্যই গিয়েছি।
একা গিয়েছেন কি ,কখনো?
আবু ওবায়দা বললেন, হ্যাঁ অনেকবার গিয়েছি।
শত, হাজারো মৃত মানুষের কবরস্থানে একা যেতে কি কখনো আপনি ভয় পেয়েছেন?
আবু ওবায়দা বলেন, না । ভয় পাবো কেন? মৃত মানুষকে আবার কীসের ভয়?
খালিদ এবার হেসে বলেন, একজন নগন্য মুসলিম হিসাবে আমি বিশ্বাস করি, যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, যারা শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে-তারা হলো জিন্দা। আর যারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করেনা, তারা হলো মুর্দা। তাই হিরাক্লিয়াসের সেনা ৬ জন হলেও যা, ৬০০ হলেও তা , ৬০০০ হলেও একই ব্যাপার। ৬০ হাজার হলেও আমার কাছে এর কোনো পার্থক্য নেই। সবাই মুর্দা। একজন জিন্দা মানুষ হয়ে ৬০ হাজার মুর্দার মোকাবিলা আমি করতে পারবোনা?
আমাকে আদেশ দিন সেনাপতি । আমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এক মুহুর্ত আগেও যদি আমি যু্দ্ধের ময়দানে যাই, তবে এক মুহুর্ত আগেই প্রজাদের উপর হিরাক্লিয়াসের জুলুম বন্ধ হবে। একজন নির্যাতিত বোনের ইজ্জতের হেফাজত হবে। একজন নিরাপরাধ শিশুর রক্তে দরিয়া আর লাল হবেনা।
আবু ওবাইদা বললেন, আমাদের জান, মাল, ইজ্জতের হেফাজতকারী মহান রাব্বুল আলামীন। কার মৃত্যু কীভাবে লিখা, কোথায় হবে তা কেউ জানিনা। কিন্তু মুসলিম সেনাপতি হিসাবে আমারও দায়িত্ববোধ আছে। আমি চাই, আপনি ৫৯ জন সৈন্য নিয়ে যত দ্রুত পারেন ইয়ারমুকের যুদ্ধের ময়দানে হাজির হোন।
যুহর গড়িয়ে আসর হয়েছে। আসরের ওয়াক্তও প্রায় শেষ হয়ে আসছে।
আবু ওবাইদা খুবই বিচলিত। আল্লাহই জানেন, যুদ্ধের ফলাফল কী হলো! ৬০ হাজার প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ৬০ জন সৈন্য। কেউ কি বেঁচে আছে না সবাই শহীদ হয়ে গেছে। আসরের নামাজের পর তিনি দুরাকায়াত নফল নামাজ আদায় করলেন। চোখের অশ্রুতে জায়নামাজ ভিজে যাচ্ছে। এরপর আবু ওবাইদা ঘোড়ার পিঠে ওঠে কয়েকজন সাথী নিয়ে ইয়ারমুকের যুদ্ধের ময়দানের দিকে রওয়ানা হলেন।
গিয়ে দেখেন যু্দ্ধ শেষ হয়েছে। আবু ওবাইয়দা লাশের মাঝখান দিয়ে হাঁটেন আর নিজে একটি একটি করে লাশ উল্টিয়ে দেখেন। এই বুঝি পাওয়া গেলে খালিদের মৃত দেহ। এই বুঝি পাওয়া গেলো কোনো শহীদের মৃত শরীর।
হঠাৎ দেখেন দূরে নদীর তীরে, আসমানের দিকে দু হাত ওঠিয়ে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন।
আবু ওবাইদা যা মনে করেছিলেন তাই। গিয়ে দেখেন, এরা সবাই খালিদের সৈন্যদল।
আবু ওবাইদা মুসলমানদের প্রধান সেনাপতি হয়ে প্রথমেই সালাম করলেন- আসসালামু আলাইকুম।
খালিদ বললেন- ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আবু ওবাইয়াদা বলেন, খালিদ যুদ্ধের খবরাখবর পরে নিবো। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। আপনারা যুহর আর আসরের নামাজ পড়ে নিন।
খালিদ বলেন, হে সেনাপতি। কোনো যুদ্ধের জন্যতো নামাজা কাযা করতে পারিনা। কাফির আর মুসলমানের মূল পার্থক্যই তো হলো নামাজ। সেই নামাজই যদি কাযা করে ফেললাম, তবে কীসের জন্য আজ এতো যুদ্ধ করলাম।
আর শুধু নামাজ যে পড়েছি তাই নয়। যুদ্ধের ময়দানে আযান দিয়ে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়েছি এবং সেই নামাজে ইমামতিও করেছি। আর আপনার সাথে ফজরের নামাজ শেষ করে যে বের হয়েছিলাম সেই অযুও এখনো আছে। ইনশাল্লাহ এই অযু নিয়ে মাগরিবের নামাজও আদায় করবো।
আবু ওবাইয়দা বলেন-আমি বুঝতে পারছিনা। হিরাক্লিয়াসের সেনাবাহিনী আপনাদের নামাজ পড়ার সুযোগ দিলো?
খালিদ বলেন, ইয়ারমুকের নব মুসলিমকে সিজদারত অবস্থায় যে হিরাক্লিয়াসের সেনা তলোয়ার দিয়ে মাথা কেটে ফেলেছে। সেই মাথাকে তলোয়ারে গেঁথে উল্লাস করেছে। যার সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক সন্তানকে ইয়ারমুকের নদীতে জীবন্ত ভাসিয়ে দিয়েছে। আপনি কি মনে করেন সেই অত্যাচারী জালিম শাসক আমাদের আযান দিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ দিবে?
তাহলে , কীভাবে আপনারা নামাজ আদায় করলেন?
৫০ জন যুদ্ধের মাঠে ছিলাম বাকি ১০ জন নামাজ পড়েছে। ১০ জন নামাজ শেষ করে যুদ্ধে ফিরে গেছে বাকী ১০ জন নামাজ আদায় করেছে। এভাবে ঠিক সময়েই সবাই যুহর আর আসরের ফরজ নামাজ আদায় করেছি ইনশাল্লাহ।
আবু ওবাইয়দা খালিদের কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
এবার যুদ্ধের কথা বলুন।
আমরা ৪০ জন এখানে আছি। বায়জান্টাইন সেনাদের ৬০ হাজারের মধ্যে অনেকেই মারা পড়েছে। অনেকেই পালিয়ে গেছে।
আবু ওবায়দা বলেন, আর আমাদের বাকী ২০ জন । ওরা কি শহীদ হয়েছে?
খালিদ বলেন- দশ জন শহীদ হয়েছে , নয় জন যুদ্ধবন্দী হয়েছে।
আবু ওবায়দা বলেন, আর বাকি একজন।
খালিদ বলেন, যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই যে কাপুরুষ যুদ্ধবন্দী নারীর সম্ভ্রম হানির চেষ্টা করে সে মুসলিম হোক, আর কাফির হোক খালিদের তলোয়ার হতে তার নিস্তার নেই। তার জন্য কীসের কোর্ট? খালিদের তলোয়ারেই তার বিচারের ফায়সালা।এরপর খালিদ এমন একটা মহামূল্যবান কথা বলেন- যা প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে বাঁধাই করে রাখা দরকার।
"মুসলমানেরা ধর্মের জন্য যু্দ্ধ করে, ধর্মের জন্য মরে কিন্তু বড় দূর্ভাগ্য সে তার ধর্মটাকে ভালো করে অনুসরণ করেনা"।
এরপর, যুদ্ধবন্ধী হিরাক্লিয়াসের মেয়েকে খালিদ সসম্মানে ফিরিয়ে দেন। নিজে সেবা দিয়ে যুদ্ধাহত মানুষগুলো সুস্থ করে তোলেন।
সূর্য পশ্চিমা আকাশে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। খালিদ মাগরিবের আযান দেন। আর আবু ওবায়দার ইমামতিতে সবাই আল্লাহর দরবারে সিজদায় একসাথে মাটি স্পর্শ করেন। মহান রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়ায় চোখের পানিতে ভিজে ওঠে ইয়ারমুকের রক্তভেজা বালুকাময় প্রান্তর।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর থেকেই খালিদের ইচ্ছে ছিলো- তিনি শহীদি মৃত্যু বরণ করবেন। কিন্তু তাঁর গায়ে একটি তরবারির আচড় ও লাগেনি। সাধারণ মানুষের মতো তিনি মারা যান। তিনি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে বড় আফসোস করে বলেন- একটা বুড়ো উটের মতো মৃত্যু ভাগ্যই আমার ললাটে জুটলো।
বিপ্লবী চে'র জীবনী পড়ে আমি আপ্লুত হই। কিউবা, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া হয়ে পুরো ল্যাটিন আমেরিকা চষে বেড়ানো এক মহান বিপ্লবী চে। উনার দূর্দান্ত জীবন কাহিনী শুনে রোমে, রোমে , শিরায় শিরায় প্রতি কোষে যেন বিপ্লবের আগুন দানা বাঁধা। ভারতীয় উপমহাদেশের কনিষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর আত্মত্যাগ শুণে আলোড়িত হই। ঠিক তেমনি ৩০০ স্পার্টানদের অসীম সাহিসকতার গল্প শুনে চমকিত হই। বন্ধু মহলে এসব গল্প যখন করি-তখন আমি এক দারুন প্রগতিবাদী মানুষ। আবার খালিদ বিন ওয়ালিদের এসব বীরগাঁথা গল্প, ঐতিহাসকি ঘটনা যখন কারো সাথে বলি- তখন ওদের চোখে কেন যেন আর প্রগতিবাদি হতে পারিনা। নিমিষেই হয়ে যাই আমি এক অতি মুর্খ কাঠমোল্লা। হে আল্লাহ, তুমি এ মূর্খ কাঠমোল্লাকে কবুল করো।
আসসালামু আলাইকুম।/
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৯