somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মডারেট মুসলিম কারা? # আবুকার আরমান

০২ রা অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(মডারেট মুসলিম নিয়ে আলোচনা এখন খানিকটা স্তিমিত। কিছুদিন আগেও এ নিয়ে বাঘা পত্রিকাগুলো এ নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখতো। তখন লেখাটা অনুবাদ করছিলাম। এখন এখানে তুলে দিলাম।)


১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর পর এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করা ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে বলা হচ্ছে, মডারেট মুসলিমরাই চরম ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সবচেয়ে সক্ষম পক্ষ। এমএম ফ্যাক্টর (মডারেট মুসলিম) এখন মনোযোগের কেন্দ্রে। কোনো কোনো মহলে এটা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে।
কিন্তু কারা এই মডারেট মুসলিম? কোন ভাবাদর্শ তাদের পরিচালনা করছে? তাদের যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড কী? আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এ মানদণ্ডগুলোর ব্যাখ্যাই বা কে দেবে?
এই প্রশ্নে নিরপে বিতর্ক শুরুর আগেই ডেনিয়েল পাইপসের মতো নিওকনজারভেটিভ কর্মীরা এমএম ফ্যাক্টর নিয়ে বিতর্কে বাগড়া দিতে শুরু করেছেন। নিজেদের সুবিধা মতো একটা তালিকা তৈরির জন্য বলে বসেছেন ইসলামবিরোধী মুসলমানরাই এমএম। বিস্ময়কর নয় যে, এই তালিকায় আছেন পাইপসের বন্ধু, ভয়াবহ ইসলামবিরোধী, বিতর্কিত চরিত্র খালিদ দুরান ও টরোন্টো সিটির কুইন টেলিভিশনের উদ্যোক্তা ইরশাদ মানজি। আত্মস্বীকৃত নাস্তিক আযান হিরশি আলী। ইনি নিহত চলচ্চিত্র পরিচালক থিও ভ্যান গগ পরিচালিত মুসলমানের প্রতি আক্রমণাত্বক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই ব্যক্তিরা প্রকাশভঙ্গির স্বাধীনতা চর্চা করছেন এবং সমস্যার পরিধিতে অবস্থান করে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠমোতে আঘাত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এই পদ্ধতি মুসলিম চরমপন্থাকে নরম করতে পারবে না। ইসলামকে তার প্রকৃত অবস্থায় অর্থাৎ নবী মোহাম্মদের অনুসৃত মধ্যপন্থী পথে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে সহনীয় ও ন্যায়ভিত্তিক আলাপ-আলোচনার পথ। সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের সমর্থন নিয়ে বা তাদের একত্রিত করলে পুরো এমএম ফ্যাক্টরই গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
গ্রহণযোগ্যতা আর আন্তরিকতাই এই খেলার শর্ত। যিনি সহনীয় কণ্ঠস্বর অবলম্বন করছেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র বা বাইরের বৃহত্তর মুসলমানের কাছে নিজের কথাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে :
১. তার সমাজসেবার অতীত উদাহরণ আছে কি না। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তার কোনো দূরবর্তী আকাক্সক্ষা নেই।
২. তিনি স্বাধীন মন সম্পন্ন একজন স্বাধীন মানুষ। ন্যায়বিচারের গতিপথের মতোই একজন ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে কখনোই একই পক্ষ অবলম্বন করতে পারেন না।
৩. তিনি সহমর্মী সেতুবন্ধ তৈরির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান, যা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইসলামের মৌল উৎস, যথা : কুরান ও সুন্নাহর দ্বারা তার মত সমর্থিত।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইসরাইল-প্যালেস্টাইন ইস্যুতেও নমনীয় মতগুলোর মধ্যে বৈপরিত্যময় অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। ইসরাইলের টিকে থাকার অধিকার আছে কিনা এ অমীমাংসিত প্রশ্নে বিতর্ক হয় না, হয় প্যালেস্টাইনি জনগণের আত্মঅধিকার, বঞ্চনা ও দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করার অধিকার আছে কি না সেটা নিয়ে। আমেরিকার অধিকাংশ অত্যুৎসাহী মুসলমান ক্রমশ এই ধরনের লিটমাস পরীক্ষার সামনে দাঁড়াচ্ছেন।
উদাসীন ও নিরুদ্বেগ মুসলিম চিন্তক ও কর্মীরা অথবা মডারেট পরিচয় বরণে প্রস্তুতরা তকমাটিকে মেনে নিয়েছেন। অন্যরা নিজেরা কতটা মডারেট বা লিবারেল তা বিবেচনা না করেই নিজেদের র‌্যাডিকাল বা সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও একটি চিন্তার বিষয় হলো, ইউসুফ ইসলামের মতো গুরুপূর্ণ মুসলিম অ্যাকটিভিস্টের ধারাবাহিক হয়রানি। শান্তির পক্ষে সঙ্গীত চর্চা ও তৎপরতার জন্য বিখ্যাত এই শিল্পী পূর্বে ক্যাট স্টিভেনস নামে পরিচিত ছিলেন। হয়রানির শিকার হচ্ছেন, ব্যাপকভাবে সন্মানীত মডারেট মুসলিম পণ্ডিত ইউসুফ আল-কারাদওবি। তিনি চরমপন্থা ও র‌্যাডিক্যাল লিটারালিজমের বিরুদ্ধের প্রচারক বলে পরিচিত। হয়রানির শিকার হচ্ছেন, লিবারেল চিন্তাবিদ তারিক রমাদান। তিনি ইসলামিক মূল্যবোধ ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে সেতু তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের জন্য খ্যাত। এই তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ অজুহাতে বাধা পেয়েছেন।
সম্প্রতি কায়রোর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আল আজহার ফতোয়া কমিটির প্রধান আব্দুল হামিদ আল আতরাশকে এন্ট্রিভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। কথা ছিল, রমজান উপলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টারে বক্তৃতা দেবেন। পরিহাস হলো : প্রাচীনতম ও সন্মানীয় আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে সবচেয়ে মডারেট মুসলিম শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিখ্যাত ও প্রকৃত মডারেট মুসলিমদের উপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা উল্লম্ফন, আমেরিকা-বিরোধিতা ও চরমপন্থাকেই বাড়িয়ে তুলবে। আইডিয়ার বাজারে চরমপন্থাকে পরাজিত করতে হলে মুসলমানদের (যাদের ধর্ম চরমপন্থীদের দ্বরা অধীকৃত হয়ে গেছে) ও আমেরিকা (যাদের নীতি কনজারভেটিভদের দ্বারা হাইজ্যাকড হয়েছে) উভয়কেই প্রকৃত মুসলমানদের সমর্থন দিতে হবে।
আর কারা মডারেট মুসলিম তার সংজ্ঞা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত খামখেয়ালি পররাষ্ট্রনীতির জটিলতাই তৈরি করবে।

২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

১৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×