somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাতামুল মুহাজিরীন & খাতামুল আওলিয়া শীর্ষক একটি বিতর্কের তাত্বিক সমাধান

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'আন্তা খাতামুল মুহাজিরীন' & 'ওয়া আলিয়্যুন খাতামুল আওলিয়া' শীর্ষক উদ্ধৃতিগুলোর তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ও চরম ভ্রান্তি নিরসন

----------লিখক প্রিন্সিপাল নুরুন্নবী

'আন্তা খাতামুল মুহাজিরীন' মানে (হে আব্বাস!) 'তুমি সর্বশেষ মুহাজির বা হিজরতকারী।' এটি পুরো একটি বর্ণনার শেষের দিককার একটি খন্ডিত অংশ। বর্ণনাটির মোটামুটি ভাব অর্থ হচ্ছে, কথিত আছে যে,

"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় চাচাজান হযরত আব্বাসকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেনঃ হে আব্বাস! আপনি খাতামুল মুহাজিরীন আর আমি খাতামুন নাবিয়্যীন।"

প্রিয়পাঠক! প্রথমে কাদিয়ানিদের যুক্তি নির্ভর দাবী দেখুন অতপর তাদের দাবীর অসারতা প্রমাণে সর্বশেষে আমার বক্তব্য থাকবে।

# প্রিয়নবী (সাঃ)-কে 'শেষনবী' অস্বীকার করতে উক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে কাদিয়ানিদের যুক্তি নিম্নরূপঃ-

কাদিয়ানিরা বলে থাকে, "খাতামুল মুহাজিরীন" দ্বারা হযরত আব্বাস (রাঃ) যেমন 'শেষ মুহাজির' সাব্যস্ত হবেনা বরং তাঁর পরেও বহু মুহাজির ছিল, তেমনি 'খাতামুন নাবিয়্যীন' দ্বারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরে আর কোনো নবী নেই - একথা বুঝায় না; বরং তাঁর পরেও আরো বহু নবী থাকবে। (কাদিয়ানিদের বক্তব্য শেষ হল)!

আমার বক্তব্যঃ

(ক) প্রথম কথা হল, যদি তাদের দাবী-ই সঠিক মেনে নিই তাহলে তো একথা পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে "শেষনবী" বিশ্বাস করেনা, যা তাদেরই এসমস্ত যুক্তিতর্ক দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই ওরা যে, কাদিয়ানের কৃষ্ণ ও নতুন নবী দাবীদার গোলাম আহমদের "উম্মত" হিসেবে গন্য হচ্ছে তা তো বলাই বাহুল্য। তদুপরি তারা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে খারিজ ও ভিন্ন আরেক ধর্মাবলম্বী তাতে আর কী সন্দেহ থাকতে পারে! অদ্যাবধি তারা যেখানে ইসলামে-ই নেই সেখানে তারা ইসলামের কত তম ফেরকায় রইল এমন প্রশ্ন পুরোই অবান্তর বৈ আর কী?

(খ) কাদিয়ানিদের বলছি, আপনারা প্রথমে "খাতামুল মুহাজিরীন" সংক্রান্ত বর্ণনাটির প্রাসঙ্গিকতা জেনে নিন! কারণ কোনো বিষয়ে প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে উদ্ধৃতি দেয়া সুস্পষ্ট খেয়ানত। দুঃখের বিষয় হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায় চাপাবাজিতে এতটাই এগিয়ে গেছে যে, তারা চাপার জোরে সত্যকে মিথ্যার চাদরে ঢেকে দিতে বড্ড পারঙ্গম। যারা তাদের ফাঁদে পড়ে ঈমান হারাতে বসেছেন তারা যুগ ইমামগণের ব্যাখ্যামূলক কিতাবগুলো খুলে দেখুন। ইনশাআল্লাহ তাদের তাবৎ বিকৃত ব্যাখ্যার প্রমাণ পেয়ে যাবেন! বিশেষত, সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাতহুল বারী' কিতাবটি দেখুন।

# আব্বাস (রাঃ)-কে 'খাতামুল মুহাজিরীন' বলার প্রাসঙ্গিকতাঃ

সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাতহুল বারী' দেখুন! অষ্টম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেন, أن العباس بن عبد المطلب هاجر قبيل فتح مكة إلى المدينة فصار خاتم المهاجرين الذين هاجروا من مكة إلى المدينة لأنه لا هجرة بعد فتح مكة من مكة , كما ورد في الحديث الصحيح الذي أخرجه البخاري : " لا هجرة بعد الفتح " أي بعد فتح مكة

অর্থাৎ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বক্ষণে মদীনায় (সপরিবারে) হিজরত করেন। যার ফলে তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারীদের মধ্যে 'খাতামুল মুহাজিরীন' সাব্যস্ত হন। তার কারণ, মক্কা বিজয়ের পর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের (ফরজ) হুকুম আর বহাল থাকেনি। সহীহ বুখারীতেও এ মর্মে হাদীস উল্লেখ আছে যে, লা হিজরাতা বা'দাল ফাতহে আই বা'দা ফাতহি মাক্কা।' (অনুবাদ শেষ হল)। প্রমাণ হিসেবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত 'আল ইছাবাহ' গ্রন্থের ২য় খন্ডের ২৬৩ নং পৃষ্ঠা এবং 'ফাতহুল বারী' গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

# মোট কথাঃ মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মদীনায় হিজরত করা সকল মুসলমানের উপর যেহেতু ওয়াজিব ছিল সেহেতু রাসূল (সাঃ) এর চাচা আব্বাসের উপরেও ওয়াজিব ছিল। তিনি বদর যুদ্ধে গ্রেপ্তার হয়ে অতপর মুক্তি পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তিনি রাসূল (সাঃ) এর নিকট মক্কায় ফিরে গিয়ে সেখান থেকে মদীনায় হিজরতের অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মক্কায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাসূল (সাঃ) বিশেষ কারণে তাঁকে তৎক্ষনাৎ হিজরতকরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেনঃ- يا عم اقم مكانك فان الله يختم بك الهجرة كما ختم بي النبوة অর্থাৎ "হে আমার চাচা! আপনি আপনার জায়গাতেই থাকুন। কারণ আল্লাহতায়ালা আমার মাধ্যমে যেরূপ ভাবে নবুওতেরধারা শেষ করবেন তেমনি আপনার মাধ্যমে (আবশ্যকীয়) হিজরতের ক্রমধারাও শেষ করে দেবেন।" (ইমাম যাহাবী (রহঃ) রচিত 'মীযানুল ইতিদাল' এর ১ম খন্ডের ২৪৫ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
____
তবে মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে হযরত আব্বাস হিজরতের অনুমতি লাভ করে মক্কা অভিমুখে সপরিবারে যাত্রা করে রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে পৌঁছেন। ইমাম বাগাবী (রহঃ) তার 'শরহে সুন্নাহ' কিতাবের দশম খন্ডের ৩৭৩-৭৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, "মক্কা বিজয়ের পর আর কোনো হিজরত নেই। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মক্কা হতে মদীনায় আর কোনো (অত্যাবশ্যকীয়) হিজরত নেই।"
সে হিসেবে রাসূল (সাঃ) আপন চাচা আব্বাসকে কাছে পেয়ে পূর্বের ভবিষ্যৎবাণীর ভিত্তিতে বললেন, "হে আমার চাচা আব্বাস! আপনি খাতামুল মুহাজিরীন তথা শেষ হিজরতকারী। রাসূল (সাঃ) তাঁকে 'খাতামুল মুহাজিরীন' বলে যেন বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত যেই হিজরত মুসলমানদের উপর আবশ্যক (ওয়াজিব) ছিল আপনি-ই হলেন সেই অত্যাবশ্যকীয় হিজরতের সমাপ্তকারী।" (এই ছিল 'খাতামুল মুহাজিরীন' এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট)।

উল্লেখ্য, সেই বছরই তথা ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে রাসূল (সাঃ) ১০,০০০ মুসলিম বাহিনীর এক বিরাট কাফেলা নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কোনোরূপ রক্তপাত ছাড়াই মক্কা নগরী জয় করেছেন।

# মক্কায় বিজয়ের পূর্বে দারুল ইসলাম তথা মদীনায় হিজরত করা ওয়াজিব ছিল মর্মে দলিল কোথায়?

উত্তরে বলা হবে, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাতহুল বারী' এর ৬ নং খন্ডের ১৯০ নং পৃষ্ঠাটি দেখুন। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেন قادر على الهجرة منها لا يمكنه إظهار دينه ولا أداء واجباته، فالهجرة منه واجبة. অর্থাৎ 'মক্কায় বসবাসরত যেসব মুসলমান হিজরত করতে সক্ষম, তবে তাদের পক্ষে দ্বীনি পরিচয় প্রকাশকরা কিবা দ্বীনী অনুশাসন পালনকরা সম্ভব হচ্ছেনা, এক্ষেত্রে হিজরতকরা ওয়াজিব।'

(গ) কাদিয়ানিদের জন্য দুঃসংবাদ যে, ওরা যতভাবেই কাসুন্দি করেনা কেন, উল্লিখিত হাদীসটি আদতে তাদেরই বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

খুব সূক্ষভাবে চিন্তা করলে বুঝতে কষ্ট হবেনা, উল্লিখিত হাদীসে "খাতাম" শব্দের অনুবাদে ওরা নিজেরাও 'শেষ বা সমাপ্ত' করেছেন। এটা যদিও তাদের বে-খেয়ালে হয়ে গেছে কিন্তু এতে তারা অন্তত এটা তো ক্লিয়ারেন্স দিল যে, "খাতাম" এর আরেক অর্থ - শেষ, এটা ওরা মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে হলেও বিশ্বাস করে ।

এবার কাদিয়ানিদের জিজ্ঞাস করতে চাই, এমতাবস্থায় সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াত 'ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন' মানে কী দাঁড়াচ্ছে বলুন!

এখানে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে। তাহল, উল্লিখিত বর্ণনাটি খতমে নবুওতের দলিল হিসেবে আলোচ্য বিষয় হওয়ার উপযোগী কিনা?

জবাবে বলব, খতমে নবুওতের আকীদা একটি অকাট্য ঈমানী আকিদা। যাকে জুরুরিয়াতে দ্বীন বলে। এর পক্ষে পবিত্র কুরআন ছাড়াও শত শত সহীহ হাদীস রয়েছে। যার ফলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীসহ আরো যত নবুওতের দাবিদার ছিল তাদের সবাই মিথ্যাবাদী, দাজ্জাল এবং মুরতাদ ছিল বলেই বিশ্বাস করতে হবে। অন্যথা ঈমান শেষ।

আমরা উল্লিখিত বর্ণনাগুলো খতমে নবুওতের দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী নই। কারণ খতমে নবুওতের মাসয়ালাটি যেহেতু আকিদা সংক্রান্ত বিষয়, সেহেতু তার পক্ষে দলিল হতে হবে পবিত্র কুরআন হতে দ্ব্যর্থবোধক আয়াত এবং সহীহ হাদীস।

এবার চলুন কাদিয়ানিদের পেশকৃত বর্ণনাটির সনদের বিশুদ্ধতা নিয়ে কথা বলি। 'খাতামুল মুহাজিরীন' (সর্বশেষ মুহাজির) শীর্ষক বর্ণনাটির একজন রাবী হলেন, ইসমাঈল ইবনে কাঈস আর অপর জন হলেন, হারেছ ইবনে যোবায়ের। এদের সম্পর্কে হাদীস বিশারদদের মতামত নিম্নরূপ।

# প্রথমে ইসমাঈল ইবনে কাঈস সম্পর্কেঃ

১। ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রহঃ) তিনি বর্ণনাটি “আল-ইলাল” (العلل) কিতাবে ক্রমিক নং ২৬১৯ -তে এনে উল্লেখ পূর্বক মন্তব্য করে লিখেছেন, আমার পিতা (সূত্রের অন্যতম রাবী ইমাম আবি হাতিম) বলেছেনঃ هذا حديث موضوع وإِسماعيل منكر الحديث অর্থাৎ এটি একটি মাওদ্বূ (জাল) হাদিস এবং সূত্রে ইসমাইল ইবনে কাঈস নামক রাবী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য।”

২। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, منكر الحديث তথা সে হাদীসের জগতে 'মুনকার'।

৩। ইমাম দার আল কুতনী (রহঃ) তিনিও অভিন্ন মত ব্যক্ত করে বলেছেন, منكر الحديث তথা সে হাদীসের জগতে 'মুনকার'।

উল্লেখ্য, বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসকে "মুনকার" বলে।

৪। ছিয়াহ ছিত্তার অন্যতম ইমাম নাসায়ী (রহঃ) এবং আরো অন্যান্য মুহাদ্দিসীন বলেছে, ضعيف তথা সে দুর্বল পর্যায়ের রাবী।

৫। ইমাম ইবনে আবী আদী (ابن عَدِي) বলেছেন, وعامة ما يرويه منكر অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীস সাধারণত মুনকার তথা অগ্রহনযোগ্য। (উপরের সব কয়টি উদ্ধৃতির জন্য দেখুন ইমাম যাহাবী রহঃ রচিত 'মীযানুল ইতিদাল' ১/২৪৫)

# স্কিনশট দ্রষ্টব্য



৬। ইমাম আবু হাতিম (রহঃ) বলেছেন, إسماعيل ضعيف الحديث منكر الحديث يحدث بالمناكير لا أعلم له حديثًا قائمًا অর্থাৎ ইসমাঈল একজন দুর্বল বর্ণনাকারী এবং হাদীসের জগতে মুনকার। সে এমন বহু মুনকার কথাবার্তা বলে যেগুলো প্রতিষ্ঠিত হাদিস কিনা আমি জানিনা। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রচিত লিসানুল মীযান, রাবী নং ৯২৭)।

৭। ইমাম আবু আহমদ আল হাকিম (রহঃ) বলেছেন, ليس حديثه بالقائم অর্থাৎ তার কোনো হাদীস প্রতিষ্ঠিত নয়। (লিসানুল মীযান)

৮। ইমাম ইবনে হাব্বান (রহঃ) বলেছেন, في حديثه من المناكير والمقلوبات অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীসে বহু মুনকার এবং বহু উলোটপালোট কথাবার্তা রয়েছে। (লিসানুল মীযান)।

# অপর বর্ণনাকারী হারেছ ইবনে যোবায়ের সম্পর্কেঃ

ইমাম আবুল ফাতহ আল আযদী (রহঃ) এর উক্তি উল্লেখ পূর্বক ইমাম যাহাবী লিখেছেন, তিনি বলেন, ذهب علمه অর্থাৎ তার (হারেছ ইবনে যোবায়ের) জ্ঞান লোপ পেয়েছে। (রাবী নং ১৬১৬; মীযানুল ইতিদাল খন্ড নং ১)।

# আরেকটি ধোকা "ওয়া আলিয়্যুন খাতামুল আওলিয়া" ও তার সংক্ষিপ্ত জবাবঃ-

হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে কাদিয়ানিদের প্রচারিত আরেকটি বর্ণনা হচ্ছে و علي خاتم الأولياء অর্থাৎ "আলী ওলীগণের শেষ ওলী।" কাদিয়ানী সম্প্রদায় এটিকে হাদীস বলিয়া চালিয়ে দেয় এবং অজ্ঞ অশিক্ষিত মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করে। তারা এসব বলে কয়ে 'খতমে নবুওত' এর প্রকৃত মর্মার্থ পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করে। যাতে কাদিয়ানের কাজ্জাব মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৮-১৯০৮) এর নবুওত দাবীর বদনাম ঘোচানো যায়। অথচ উল্লিখিত বর্ণনা কোনো হাদিস নয়। ফলে এর সনদ থাকারও কথা না। যতটুকু জানা যায়, 'খতমুল বেলাদত' গ্রন্থের রচিতা বিশিষ্ট সাধক আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী-ই প্রথম এই বাক্যাংশের প্রবর্তক ছিল। সংক্ষেপে তাঁকে হাকিম তিরমিযী বলে। শায়খ ইবনে তাইমিয়া'র কিতাব থেকে জানা যায়, সাধক আবু আব্দুল্লাহ (রহঃ) নিজেকে 'খাতামুল আওলিয়া' মনে করত। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি এজন্য ভুল স্বীকার করেছেন এবং ভীষণ অনুতপ্তও হয়েছেন।

হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর যুগ ইমাম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এ সম্পর্কে তাঁর 'মাজমু' ফাতাওয়া' গ্রন্থের ১১তম খন্ডের ৪৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন وكذا خاتم الأولياء لفظ باطل لا أصل له. وأول من ذكره محمد بن علي الحكيم الترمذي. وقد انتحله طائفة كل منهم يدعي أنه خاتم الأولياء: كابن حموي، وابن عربي، وبعض الشيوخ الضالين بدمشق وغيرها

অর্থাৎ অনুরূপভাবে 'খাতামুল আওলিয়া' এটি এমন একটি শব্দ যার কোনো ভিত্তি নেই। এটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন, মুহাম্মদ ইবনে আলী আল হাকিম তিরমিযী। একটি দল এটিকে অবলম্বন করেই তাদের প্রত্যেকে নিজেকে 'খাতামুল আওলিয়া' দাবি করত। এদের মধ্যে ইবনে হামাভী, মুহী উদ্দিন ইবনে আরাবীসহ দামেস্ক ইত্যাদি শহরের কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট ছূফীও রয়েছে।"

অতএব প্রমাণ পাওয়া গেল যে, 'খাতামুল আওলিয়া' শীর্ষক শব্দটি মূলত কোনো হাদীসের অংশ নয়। বরং শায়খ ইবনে তাইমিয়া'র প্রদত্ত তথ্য মতে এটি 'খতমুল বেলাদত' গ্রন্থের রচিতা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলীর-ই প্রবর্তিত মাত্র। (রেফারেন্স, প্রাগুক্ত)

তাই অসংখ্য সহীহ হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মতের মুকাবেলায় কে কী লিখল তা নিয়ে ভাবার দরকার কী? খতমে নবুওতের মত এমন একটি চির মীমাংসিত বিষয়ের খেলাফ কারো ব্যক্তিগত কোনো কথার গুরুত্বটাই বা কী?

আরেকটা কথা হল, মনে করুন কারো না কারো বইতে হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে خاتم الأولياء মর্মে শব্দটি উল্লেখ আছে। আর তাই এটি আপনাদের নিকট দলিল যোগ্য হয়ে গেছে!

এখন আমার প্রশ্ন হল, সাধারণ কারো কথা যদি দলিল যোগ্য হতে পারে তাহলে মহানবী (সাঃ) যে হযরত উমর (রাঃ) সম্পর্কে বললেন "আমার পরে যদি কেউ নবী হত তাহলে উমর-ই নবী হত"। (রেফারেন্স, বিশিষ্ট সাহাবী উক্ববাহ ইবনে আমের হতে বর্ণিত, সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ৩৬৮৬; মসনাদে আহমদ ৪/১৫৪; হাদীসের মানঃ হাসান)। কাদিয়ানিদের কাছে এটা কেন দলিল যোগ্য হয় না?

বিজ্ঞপাঠক! আশাকরি তাদের অহর্নিশি চাপাবাজি আর তালগোল পাকানো কথাবার্তার দৌড় কতদূর তা সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

লেখাটি কপি /শেয়ার করে প্রচার করুন। অবশেষে লিখাটির একদম উপরে লাইক অপশনে লাইক দিতে ভুলবেন না!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×