somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসের নামে কাদিয়ানির বইতে দুই ঈসা তথ্যের প্রামাণ্য ও যুক্তিক খণ্ডন

১৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাদীসে কি দুইজন ঈসা'র বৃত্তান্ত রয়েছে?

প্রশ্নঃ- হাদীসে কি দুইজন ঈসা সম্পর্কে বৃত্তান্ত রয়েছে?

জবাবঃ- আপনার প্রশ্নের উত্তরে আরেকটু পরে আসছি। আর এইধরনের কল্পিত-নির্ভর যতসব আজাইরা কথা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতেই পাওয়া যায়। তাই সর্বপ্রথম তার বই থেকে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে আমাদের জেনে নেয়া দরকার। কারণ দ্বিতীয়বার আগমন করার ভবিষ্যৎবাণী যার সম্পর্কে তার জায়গায় অন্য কাউকে আবিস্কার করা শুধু অযুক্তিকই নয়, বরং সুস্থ-বিবেক পরিপন্থীও। এতদ্ব্যতীত পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াত و يكلم الناس في المهد و كهلا সহ বহু আয়াত দ্বারা দ্বিতীয়বার তো শুধু তিনি-ই আসা যুক্তিক যার ইতিপূর্বে আরো একবার আসা প্রমাণিত, তাই নয় কি? অতএব অত্যাসন্ন 'ঈসা' বলতে শুধু একজনই। অন্য আর কেউ নন।

মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৮৪ সালের পূর্বে চার খণ্ডে 'বারাহীনে আহমদিয়া' নামক পুস্তক রচনা করেন। এই বই সম্পর্কে তিনি নিজেই মন্তব্য দিয়ে বলেছেন میں نے اس کتاب کو خدا تعالی کیطرف سے مامور ہوکر لکہا ہے অর্থাৎ আমি এই পুস্তক খোদাতালার পক্ষ হতে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই লিপিবদ্ধ করেছি। (দেখুন মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩-২৫; আরো দেখুন ১/২৭-২৮)। তিনি এই বইয়েরই চতুর্থ খণ্ডে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয় আগমনের সমর্থনে পবিত্র কুরআন থেকে আয়াত পেশ করেছেন। যদিও তিনি ১৮৯১ সালের পর "মাসীহ" হবার দাবী করে নিজের পূর্বেকার আকীদা পরিবর্তন করে ফেলেন!

তিনি "বারাহীনে আহমদিয়া" ৪র্থ খণ্ডের ৪৯৯ নং পৃষ্ঠায় দলিল পেশ করে লিখেছেন, ফোরকানী ইশারা এই আয়াতে রয়েছে যে - هو الذي ارسل رسوله بالهدى و دين الحق ليظهره على الدين كله অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) তাঁর রাসূলকে একটি সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ ও সঠিক জীবনবিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেন তিনি একে দুনিয়ার সব কয়টি জীবন ব্যবস্থার উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন।" (সূরা আস-সাফঃ আয়াত ৯)।

আয়াতটির পরিপ্রেক্ষিতে মির্যা সাহেব লিখেছেন, এই আয়াত শারীরিক এবং রাজনৈতিকভাবে হযরত মাসীহ (ঈসা) আলাইহিস সালামের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী। ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয়ের যেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে বিজয় হযরত মাসীহ (ঈসা) এর মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হবে। (তিনি আরো লিখেছেন) ঈসা জব দোবারা দুনিয়া মে তাশরীফ লায়ে গী তু উন কি হাত চে দীনে ইসলাম জমীয়ে আফাক্ব আওর আক্বতার মে ফহেল জায়ে গা" তথা যখন হযরত ঈসা (আঃ) দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করবেন তখন তাঁর হাতে ইসলাম পৃথিবীর আনাচেকানাচে পৌঁছে যাবে।" (রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩)। সুতরাং বলতে পারি, ঈসা (আঃ) জীবিত থাকা এবং শেষ যামানায় পৃথিবীতে তাঁর দ্বিতীয় আগমনের সমর্থনে পবিত্র কুরআনে দলিল থাকাটা স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকেও প্রমাণিত হল।

# মির্যা গোলাম আহমদের বইতে তথাকথিত দ্বিতীয় মাসীহ'র আবিস্কারের নেপথ্য কাহিনীঃ

মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো পড়ে জানা যায় যে, ১৮৯১ সালের আগে মির্যা সাহেব জীবনে কখনো বলেননি যে, হাদীসে দুইজন ঈসার বৃত্তান্ত আছে। তার কারণ নিশ্চিতভাবে এই ছিল যে, তিনি তখনো নিজেকে "মাছীলে মাসীহ" দাবী করার উদ্যোগ নেননি। কিন্তু যখনি তিনি স্বীয় প্রধান শিষ্য হেকিম নূরুদ্দীনের পক্ষ হতে ফিরতিপত্র হাতে পেলেন, তখনি নিজেকে "মাছীলে মাসীহ" বলে প্রচার করা শুরু করার উদ্দেশ্যে হাদীসের বক্রব্যাখ্যার আলোকে 'দুই ঈসা' এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে লাগলেন!

উল্লেখ্য, হেকিম নূরুদ্দীনের পক্ষ হতে ফিরতিপত্রের প্রতিউত্তরে মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৯১ সালের ২৪-ই জানুয়ারী যেই পত্র লিখেছিলেন তা 'মাকতূবাতে আহমদিয়া' পুস্তকে ছাপানো রয়েছে। ওই পত্রে ঊর্দূ ভাষায় এইরকম 'জু কুছ আঁ-মাখদূম (হেকিম নূরুদ্দীন) নে তাহরীর কিয়া হে কে, আগর দামেস্কি হাদীস কে মেছদাক কো আলাদা ছোড় কর আলগ মাছীলে মাসীহ কা দাওয়া জাহের কিয়া যায়ে তু উস মে কিয়া হরজ হে?' (দেখুন- মাকতূবাতে আহমদিয়া, পত্র নং ৬; খণ্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৮৫; নতুন এডিশন)। সুতরাং প্রমাণিত হল, মির্যা গোলাম আহমদ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ হতে নয়, বরং তার শিষ্য হেকিম নূরুদ্দীনের পক্ষ হতে ও তারই প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়েই 'মাছীলে মাসীহ' দাবী করেছিলেন!

মির্যা সাহেবের ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত 'রূহানী খাযায়েন' এর ৩য় খণ্ডের ৫৯ নং পৃষ্ঠাটি খুলে দেখুন, তিনি হাদীসের ভেতর কিরূপ অপব্যাখ্যার তুফান ঘটালেন আর কথিত মাসীহে আউয়াল এবং মাসীহে ছানী'র কেমন উদ্ভট কেচ্ছার গোড়াপত্তন করলেন!!

অপ্রিয় হলেও সত্য, তিনি তার অনুসারী আহমদী (কাদিয়ানী)দের দুই ঈসার জঘন্য বানোয়াট কেচ্ছা গলাধঃকরণ করাতে সফলও হন। মজার ব্যাপার হল, তিনি তার কেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়ে এও লিখেছেন যে, "মাসীহে ছানী" কোনোরকম আলাদা নবুওতের দাবী করবেনা। মাসীহে ছানীর হুলিয়া (বৃত্তান্ত)'র ভেতর সহীহ হাদীসে পরিষ্কার বর্ণিত রয়েছে!" (স্কিনশট থেকে দেখুন)। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।

প্রাসঙ্গিক জিজ্ঞাসাঃ ওহে আহমদীবন্ধুরা! মির্যা সাহেব আপনা লিখনীর মাধ্যমে নবুওতের দাবী কত শতবার করে গেছেন তা নিশ্চয় আপনাদেরও অজানা নয়। কাজেই এমতাবস্থায় মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব নবুওত আর রেসালতের দাবিদার হওয়ায় তথাকথিত 'মাসীহে ছানী'-ও হতে পারেন কিভাবে? প্রমাণস্বরূপ মির্যা সাহেব স্বীয় "মালফূজাত" গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৪৪৭ নং পৃষ্ঠায় (নতুন এডিশন) পরিস্কার লিখেছেনঃ ہمارا دعویٰ ہے کہ ہم نبی اور رسول ہیں অর্থাৎ আমার দাবী, আমি নবী এবং রাসূল। এবার এর সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন?

# কথিত দুই ঈসা'র গায়ের রঙ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর পর্যালোচনাঃ

(১) সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর দৈহিক আকৃতি বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেছেন (হাদীসের ভাষায়) ربعة احمر অর্থাৎ তিনি (ঈসা) হলেন মাঝারি গঠনের লাল বর্ণ বিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মাম খানা হতে বেরিয়ে এসেছেন।" (দীর্ঘ হাদীসের খন্ডাংশ)। সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া; হা/৩১৯৬, হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে।

লক্ষণীয়, এই হাদীস দ্বারা মির্যা কাদিয়ানী সাহেব বলতে চাইলেন যে, এখানে বর্ণিত ঈসা ইবনে মরিয়ম বলতে ইতিপূর্বে বনী ইসরাইলের নিকট প্রেরিত সেই ঈসা (আঃ)-কে বুঝানো উদ্দেশ্য।

(২) আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, "আমি এক রাত্রে স্বপ্নে নিজেকে কাবার কাছে দেখলাম। (হাদীসের ভাষায়) فاذا رجل آدم سبط الشعر তথা হঠাৎ সেখানে বাদামী রঙ্গের এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। তার মাথার চুল তাঁর দু'কাঁধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তাঁর মাথা থেকে পানি ফোটা ফোটা করে পড়ছিল। তিনি দু'জন লোকের কাঁধে হাত রেখে কাবা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন।" (দীর্ঘ হাদীসের খন্ডাংশ) দেখুন সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া ; হা/৩১৯৭, ইবনে উমর (রাঃ) হতে।

লক্ষণীয়, কাদিয়ানীর মতে এই হাদীসে ঈসা (আঃ) এর গায়ের রঙ "বাদামী" বর্ণের উল্লেখ থাকায় এতে দ্বিতীয় প্রকারের ঈসাকে বুঝিয়েছে। আর সেই দ্বিতীয় প্রকারের ঈসা-ই কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ নিজে! নাউযুবিল্লাহ।

# মির্যা কাদিয়ানীর গাঁজাখুরি কেচ্ছার কারণ ও তার খন্ডনঃ

প্রথম কথা হল, হাদীস শরীফে দুই ঈসার বৃত্তান্ত থাকার এই দাবী ঠিক না। মির্যা সাহেবের পূর্বে গত ১৩শত বছরেও কোনো যুগ ইমাম ও মুজতাহিদ থেকে এইরূপ কোনো কথা কেউ শুনেছেন বলে প্রমাণ নেই। তদুপরি তার এইরূপ বাগাড়ম্বর করার পেছনে কোনো কোনো হাদীসে "আহমারু" (أَحْمَرُ) শব্দ উল্লেখ থাকা। ফলে দুইজন ঈসার অস্তিত্ব আবিস্কার করার মত তিনি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে রসদ পেয়ে বসেন!

অথচ ঈসা (আঃ) এর গায়ের রঙ কেমন ছিল তা বেশ কয়টি হাদীসের সমষ্টিগত তথ্যানুসারে একদম সুস্পষ্ট। যথা ঈসা (আঃ) দৈহিক বর্ণের দিক থেকে না পুরোপুরি লাল ছিলেন আর না সাদা ছিলেন; বরং তিনি সাদা আর লাল উভয় বর্ণে মিশ্রিত ছিলেন। তিনি যেমন নাকি বাদামী বর্ণের এক ব্যক্তি। এইকথার সমর্থনে মজবুত দলিলও পাওয়া যায়। কেননা সুনানে আবুদাউদ শরীফের 'কিতাবুল মালাহিম' অধ্যায়ের ভেতর আরেকটি হাদীসে ঈসা (আঃ)-এর শরীরের আকৃতি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, فإذا رأيتموه فاعرفوه رجل مربوع إلي الحمرة والبياض بين ممصرتين অর্থাৎ "তোমরা যখন তাঁকে (আকাশ থেকে নাযিল হতে) দেখবে তখন এভাবে চিনবে যে, তিনি হবেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ। তাঁর শরীরের রঙ হবে লালচে এবং সাদা (তথা উভয় বর্ণে মিশ্রিত যেন বাদামী রঙ্গের)। তাঁর পরিধানের কাপড় হবে হালকা হলুদ রঙ বিশিষ্ট দুইখানা চাদর...।" (হাদীস নং ৪৩২৪)। নিচের হাদীসটি প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আরো বেশি শক্তিশালী প্রমাণ যোগ্য।

সহীহ বুখারীর অপর এই হাদিসে একদম সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, রাসূল (সাঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-কে "লাল বর্ণ" বলে বুঝাননি। এই সম্পর্কে সনদসহ নিচের হাদীসটি দেখুন!

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْمَكِّيُّ، قَالَ سَمِعْتُ إِبْرَاهِيمَ بْنَ سَعْدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي الزُّهْرِيُّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ،، قَالَ لاَ وَاللَّهِ مَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِعِيسَى أَحْمَرُ، وَلَكِنْ قَالَ ‏ "‏ بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ، يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ، فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ، جَعْدُ الرَّأْسِ، أَعْوَرُ عَيْنِهِ الْيُمْنَى، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ‏.‏ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ‏.‏ وَأَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ ‏"‏‏.‏ قَالَ الزُّهْرِيُّ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ هَلَكَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ‏.‏

অর্থাৎ... সালিম (রহঃ) তিনি স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে ‘ঈসা (‘আঃ) লাল বর্ণের ছিলেন; বরং তিনি বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কা’বা ঘর তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ (দু'কাঁধ পর্যন্ত) ঝুলন্ত চুল ও বাদামী রঙের জনৈক ব্যক্তিকে দেখলাম। তিনি দু’জন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরছে অথবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, তার মাথা হতে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মরিয়মের পুত্র। তখন আমি এদিক ওদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক লোক তার গায়ের রঙ লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোঁকড়ানো এবং তার ডান চোখ কানা, যেন ফুলা আঙ্গুরের মত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল, দাজ্জাল। মানুষের মধ্যে ইবনু কাতানের সঙ্গে তার বেশি সাদৃশ্য রয়েছে। ইমাম যুহরী (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, ইবনু কাতান খুযা'আ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি। সে জাহেলিয়াতের যুগেই মারা যায়।" (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৪১; হাদীসের মান: সহিহ হাদিস)।

সুতরাং এই সহীহ হাদীস দ্বারাও একদম পরিষ্কার হয়ে গেল, ঈসা (আঃ)-এর শরীরের রঙ "লাল" ছিলনা; বরং লালচে এবং সাদা উভয় বর্ণে মিশ্রিত যেন বাদামী বর্ণের ছিল।

# যুগ ইমামের ব্যাখ্যায় ঈসা (আঃ)-এর গায়ের রঙ কেমন ছিলঃ

উপরিউক্ত হাদীস দুইটির সমাধান হিসেবে বুখারীর ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) থেকে নিম্নরূপ পাওয়া যায়। তিনি ইমাম তিবরানী (রহঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে 'ফাতহুল বারী' কিতাবে লিখেছেনঃ

أنه آدم جعد فيمكن أن تكون ادمته صافية و لا ينافي أن يوصف مع ذلك بالحمرة لأن كثيرا من الأدم. فتح الباري كتاب الفتن

অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি (ঈসা) বাদামী বর্ণের কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। ফলে তাঁর ত্বক অতিব পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে আর তাঁর অত্যধিক বাদামী রঙের হওয়াতে তা লালবর্ণ হওয়াকে নিষেধ করবেনা। (দেখুন, ফতহুল বারী ফী শরহে বুখারী, কিতাবুল ফিতান দ্রষ্টব্য)। সুতরাং বুঝা গেল, হাদীসে দুই ঈসা নয়, বরং একজন ঈসার শারীরিক বৃত্তান্তই এসেছে।

# হাদীসে দুই ঈসার বৃত্তান্ত থাকার উদ্ভট আকীদা যাদের এবং যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, মির্যা কাদিয়ানী ছিল দ্বিতীয় প্রকারের ঈসা; তারা যেন নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দেন!

১- মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঈসা হতেন তাহলে তিনি কথিত দুইজন ঈসার দ্বিতীয় জন দাবী না করে বরং ইসরায়েলি ঈসার রূপক (মাছীল) হবার দাবী কিজন্য করলেন?

২- যদি তিনি ইসরায়েলি ঈসার একজন রূপক সত্তা হন তাহলে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক স্বপ্নে দেখতে পাওয়া দ্বিতীয় ঈসার কী হবে? যেখানে আলাদা দুই ঈসা সেখানে তিনি (মির্যা) ইসরায়েলি ঈসার রূপক হতে গেলেন কেন?

৩- মির্যায়ীদের ধারণামতে দুইজন ঈসার অস্তিত্ব সঠিক হলে এবং মির্যা সাহেব দ্বিতীয় ঈসা হলে; তখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, মির্যা গোলাম আহমদ জীবনে কখনো বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে সক্ষম হলেন না কিজন্য? তাহলে কি বাদামী বর্ণের দ্বিতীয় ঈসাকে স্বপ্নে কা'বার তাওয়াফ করতে দেখাটা রাসূল (সাঃ)-এর ভুল ছিল বলবেন? নাউযুবিল্লাহ। কাসুন্দি ছেড়ে জবাব দেবেন!

৪- রাসূল (সাঃ) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন, لا والله ما قال النبي صلى الله عليه وسلم لعيسى أحمر অর্থঃ আল্লাহর শপথ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ঈসাকে "লাল" বর্ণের বলে বুঝাননি। (দেখুন, সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং ৩৪৪১)। বিপরীতে মির্যা গোলাম আহমদ এর দাবী হচ্ছে, ঈসা দুইজনই। যাদের একজন লালবর্ণের আরেকজন বাদামী বর্ণের! যাইহোক, এমতাবস্থায় কার দাবী সত্য? রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীর দাবী সত্য নাকি নবুওতের দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দাবী সত্য? কবি এখানে নিরব!

৫- আবু দাউদ শরীফের "কিতাবুল মালাহিম" অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন ليس بينى و بينه نبى يعنى عيسى و انه نازل অর্থঃ "আমার আর ঈসার মধ্যখানে আর কোনো নবী নেই। নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) নাযিল হবেন" (হাদীস নং ৪৩২৪)। আর এদিকে মির্যা গোলাম আহমদের মতে, হাদীসটিতে বর্ণিত অত্যাসন্ন এই ঈসা নাকি তিনি (মির্যা) নিজে। তাই আমার প্রশ্ন হল, এই ঈসা যদি মির্যা সাহেব-ই হন, তাহলে তিনি একই সাথে কথিত দ্বিতীয় ঈসা-ও কিভাবে হলেন? সমীকরণ তো মিলেনা!

৬- মির্যা সাহেবের বই 'কিশতিয়ে নূহ'তে লিখা আছে, আল্লাহতায়ালা নাকি মির্যার নাম মরিয়ম রেখেছিলেন। দুইবছর পর্যন্ত তিনি মরিয়ম হিসেবেই প্রতিপালিত হন আর নারীসূলভ গোপনীয়তায় বেড়ে উঠেন। তিনি এর মধ্যে বেশ কয়েক মাস পর যা দশ মাসের বেশি নয়, তিনি নাকি রূপকভাবে গর্ভবতী হন আর নিজেই নিজের গর্ভে মরিয়ম থেকে ঈসাতে রূপান্তরিত হয়ে যান। এভাবেই তিনি " ইবনে মরিয়ম" তথা মরিয়মের পুত্রে পরিণত হন। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৯/৫০)।

এখন জানার বিষয় হল, হাদীসে দুই ঈসা থাকলে আবার এদিকে মির্যা সাহেব দুই ঈসার দ্বিতীয় জন হলে; তখন তিনি মরিয়ম থেকে ইবনে মরিয়ম তথা ইসরায়েলি ঈসা-তে রূপান্তরিত হতে গেলেন কেন? তিনি কিজন্য দ্বিতীয় ঈসাকে বাদ দিয়ে ইসরায়েলি ঈসাতে রূপান্তরিত হতে গেলেন? কাসুন্দি ছেড়ে জবাব দেন!

৭- মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে, মির্যা গোলাম আহমদ নিজেও নাকি ইসরায়েলি বংশধর ছিলেন (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৮/২১৬)। অথচ উনার দাবী ছিল, ইসরায়েলি ঈসা (আঃ)-এর গায়ের রঙ লাল বর্ণের আর কথিত দ্বিতীয় ঈসার গায়ের রঙ বাদামী! তাই প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, এই বাদামী বর্ণের কথিত দ্বিতীয় ঈসা গোলাম আহমদ কিজন্য ইসরায়েলি বংশধর হতে গেলেন? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?

# একটি প্রশ্ন ও তার জবাবঃ-

এবার প্রশ্ন করতে পারেন যে, ইবনে উমর (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাঃ) কিজন্য ঈসা (আঃ)-কে দেখামাত্র চিনতে পারলেন না, যদি আবু হোরায়রা হতে বর্ণিত হাদীসের সেই ঈসা আর এই ঈসা দুইজন ভিন্ন ভিন্ন না হন?

জবাব হল, ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুওত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রজনীতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) 'বোরাক' নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমণ করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহ'র সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। কুরআন শরিফের 'সূরা বনী ইসরাঈল' এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে।

মেরাজের এই হাদীস হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে সপ্তম হিজরীর পরেই বর্ণিত হয়েছিল আর ইবনে উমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় ঈসাকে কা'বা শরীফ তাওয়াফ করতে দেখার স্বপ্নটি মেরাজের পূর্বের কোনো ঘটনা ছিল। তাই ইবনে উমর (রাঃ) এর বর্ণনাতে "ফা-কুলতু মান হাযা" তথা অত:পর আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে - মর্মে উল্লেখ থাকলেও মেরাজের ঘটনা সংশ্লিষ্ট আবু হোরায়রা'র হাদীসে অনুরূপ উল্লেখ নেই। সেহেতু ঈসা (আঃ)-কে স্বপ্নে প্রথমবার দেখামাত্র চিনতে না পারার কারণ এটাই। সুতরাং আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, উভয় হাদীসে একজন ঈসারই বৃত্তান্ত এসেছে, দুজনের নয়।

উল্লেখ্য, হযরত আবূ হোরায়রা (রাঃ) সপ্তম হিজরিতে দাওস গোত্রে তুফাইল বিন আমরের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি খয়বার বিজয়ের সময় ৭ম হিজরির মুহাররম মাসে মদিনায় হিজরত করেন। আর অপর দিকে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) এর জন্ম হয়েছিল ৬১৪ সালে। তিনি খুব অল্প বয়সে ইসলাম কবুল করেন। অর্থাৎ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) অপেক্ষা তিনি ২৫ বছর আগে ইসলাম কবুল করেন।

#শেষকথাঃ এই যে, যেই হাদীসে "বাদামী" (আরবি : رجل آدم ) রঙের ব্যক্তি বলে উল্লেখ রয়েছে সেই হাদীসে রাসূল (সাঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-কে বায়তুল্লাহ তওয়াফ করতেও দেখার উল্লেখ আছে। কাজেই তদ্দ্বারা মির্যাকে বুঝানো হলে তখন প্রশ্ন আসবে যে, মির্যা সাহেব কবে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন? আমরা কাদিয়ানিদের বই থেকেই প্রমাণ পাই যে, কাদিয়ানের কথিত মাসীহ মির্যা গোলাম আহমদ জীবনে কখনো হজ্ব, ইতিকাফ কিছুই করেননি। (দেখুন, মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত 'সীরাতে মাহদী' ১ম খন্ডের ৬২৩ নং পৃষ্ঠার ৬৭২ নং রেওয়ায়ত)। কিংবা দীর্ঘ হাদিসটির অপরাপর বর্ণনার সাথে মির্যাকে খাপ খাবাবেন কিভাবে? নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে বলতে পারবেন এমন কি কেউ আছেন??

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

লিখকের দুইটি বই - (১) আহমদীবন্ধু ইসলামে ফিরে এসো (২) কাদিয়ানী থেকে ইসলামে (সিরিজ ১-৫*)। ঘরে বসে অর্ডার করতে - ০১৮১২-৫৬১৮২৪

* ১ নং সিরিজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×