"ক্বদ খালাত মিন ক্ববলিহির রসুল" সম্পর্কিত কাদিয়ানিদের কিছু প্রশ্ন ও আমার উত্তর (দ্বিতীয় ভাগ)
- সূরা মায়েদা আয়াত নং ৭৫; এখানে পরিস্কার করে উল্লেখ আছে "ঈসা (আঃ) এর পূর্বে সকল রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন"। এর দ্বারা বুঝাবে যে, সকল রাসূল মারা গেছেন!
- তো তাহলে?
- কিন্তু আপনারা (মুসলমানরা) এখানে 'সকল রাসূল' (All Messenger) এর জায়গায় 'অনেক রাসূল' (Many Messenger) অর্থ নেন কেন?
- কারণ ঈসা (আঃ) এর পূর্বে সব রাসূলের আগমনীধারা শেষ হয়নি, বরং তখনও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন করার বাকি ছিল। তাই!
- হুম! তাহলে সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতেও এই একই শব্দের অর্থ 'সকল রাসূল' নেন না কেন?
কারণ, সেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্বেকার একজন রাসূল এমন রয়েছেন যাঁকে আল্লাহ তায়ালা দ্বিতীয় আসমানে জিবরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন। তাই 'সকল রাসূল' এর জায়গায় 'অনেক রাসূল' অর্থ নিতে হবে। কারণ এটাই! (ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনূদিত আল 'কুরআনুল করীম' এর বঙ্গানুবাদ দ্রষ্টব্য)।
- কুরআনে কি 'রাসূল' শব্দের বহুবচন 'রসুল' আসেনি?
- হ্যাঁ, এসেছে। তো!
- তাহলে 'রসুল' শব্দের অর্থের মধ্যে সব রাসূলের মত ঈসা (আঃ)ও অন্তর্ভুক্ত নন কেন? কেন তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সবাইকে বুঝতে হবে?
- কারণ, পবিত্র কুরআনের সঠিক মর্মার্থ সব চেয়ে বেশি বুঝতেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। এখন তিনি-ই যেখানে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয়বার আগমনের ভবিষ্যৎবাণী করে গেলেন সেখানে আমরা (মুসলমানরা) তাঁর (সাঃ) উক্ত ভবিষ্যৎবাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো অর্থ কিভাবে নিতে পারি? রাসূলেপাক (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণীর বিরুদ্ধে যায় এমন যে কোনো নতুন অর্থই কি পরিত্যাজ্য নয়? অবশ্যই পরিত্যাজ্য!
- ঈসা (আঃ) এর আগমন হবে এটা কোথায় লিখা আছে?
- বহু সহীহ হাদীসে। যার সংখ্যা কমবেশি ৩০০ প্রায়। সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া হাদীস নং ৩২৬৪ দ্রষ্টব্য।
(পবিত্র কুরআনে ঈসা আঃ এর দ্বিতীয়বার আগমন করার প্রতি ইংগিত Click )
(প্রায় কমবেশি ১০টি হাদীসে এসেছে ঈসা আঃ আকাশ থেকে নাযিল হবেন Click )
- ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন, এইরূপ শব্দচয়নে কোনো হাদীসও কি আছে?
- জ্বী হ্যাঁ আছে। আমার দেখা প্রায় ১০টি হাদীস আছে। সব কয়টিতে 'মিনাছ ছামায়ি' (আকাশ থেকে) শব্দ সুস্পষ্ট ভাবে আছে।
- সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৭৫; এখানে ঈসা (আঃ) এর পূর্বেকার রাসূলগণ অতিবাহিত হয়ে গেছেন, বলতে আপনি কেমন মর্মার্থ নেন?
- প্রথমত, আয়াতে শব্দটি 'ক্বদ খালাত' এসেছে। অভিধানে যার অর্থ অন্য আর যাই থাকুক - মৃত্যু অর্থ নেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, 'অতিবাহিত হয়ে গেছে' বলতে মৃত্যুবরণ করেছেন এমন অর্থও নেয়া যেতে পারে।
- কিন্তু এই আয়াতে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে হুবহু এমন শব্দ কেন চয়িত হল যা সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ক্ষেত্রেও চয়িত হয়েছে? যেমন -
"ঈসা একজন রাসূল-ই ছিলেন। তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন।" এর অন্তর্নিহিত রহস্য কী?
- খুব গঠনমূলক প্রশ্ন করলেন! তার জবাব হচ্ছে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আর হযরত ঈসা (আঃ) উভয়ের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটও অভিন্ন ছিল। তাই অভিন্ন শব্দচয়নে আয়াত নাযিল হয়!
- বুঝিয়ে দিন!
- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকাল হয়ে গেলে অনেকে উনার ইন্তেকাল মেনে নিতে পারছিল না। তাদের দাবী ছিল, মুহাম্মদ (সাঃ) যদি সত্যিকারে আল্লাহ'রই প্রেরিত পুরুষ হন তাহলে তাঁর মৃত্যু কেন হবে?
আর হযরত ঈসা (আঃ)-কে ত্রিত্ববাদের ধ্বজাধারী খ্রিস্টান-দুনিয়া "ইলাহ" (উপাস্য)-ই বিশ্বাস করে বসেছিল। সেজন্য মুহাম্মদ (সাঃ) এর ক্ষেত্রে যেভাবে আয়াত নাযিল হল ঠিক সেভাবেই ঈসা (আঃ)-এর ক্ষেত্রেও নাযিল হল। যাতে খ্রিস্টান-দুনিয়ার বিশ্বাসের মূলোৎপাটন হয়ে যায় যে, না না; ঈসা কোনো "ইলাহ" ছিল না। বরং "তিনি একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন। তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। ঈসা তিনিও তাঁদের মত কেয়ামতের পূর্বে দ্বিতীয়বার আগমন করার পর অতিবাহিত হবেন।"
খ্রিস্টান-দুনিয়ার বাতিল বিশ্বাসের খন্ডন করতেই মূলত সূরা মায়েদার ৭৫ নং আয়াতটি নাযিল হয়; ঈসাকে মৃত প্রমাণ করার জন্য নয়।
- কোনো যুগ ইমাম থেকেও কি এই কথাগুলো প্রমাণিত?
- সর্বজন বরেণ্য যুগ ইমামগণ থেকে তো বটে। আপনি সূরা মায়েদা আয়াত নং ৭৫ এর আগের আয়াতগুলো অর্থসহ পড়ে দেখুন। নিজেই বুঝবেন। আর মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত সর্বজন বরেণ্য হিজরী নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) থেকেও একই কথার প্রমাণ পাওয়া যায়। এইজন্য এই সূরার ৭৫ নং আয়াতের তাফসীর দেখা যেতে পারে। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
- সংক্ষেপে একটু অনুবাদ করে দিন! দেখি...!
- ইমাম সুয়ূতি (রহঃ) তিনি "মিন ক্বাবলিহির রসুল" এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন فهو يمضى مثلهم অর্থাৎ "অতএব তিনি (ঈসা)ও তাঁদের অনুরূপ অতিবাহিত হবেন।" খেয়াল করুন, ঈসা (আঃ) এর ক্ষেত্রে ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) ভবিষ্যৎবাচক ক্রিয়াপদ يمضى (ইয়ামদ্বী) এনেছেন। এর চেয়ে আর কিভাবে সহজ করে বুঝালে বুঝবেন!
(তাফসিরে জালালাইন - ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতি রহঃ)।
- হুম। জাজাকাল্লাহ।
- ওয়াসসালাম।
লিখক, প্রিন্সিপাল নুরুন্নবী।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:০৪