somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কাদিয়ানিদের প্রতারণামূলক নালিশি নিবেদন ও আমার জবাব

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কাদিয়ানীদের প্রচারিত (প্রতারণামূলক) নালিশি নিবেদন ও আমার জবাব

প্রশ্নগুলো কাদিয়ানীদের আর উত্তরগুলো আমার

প্রশ্ন— কোনো দেশের সরকার তার নাগরিকদের ধর্ম নিরূপণ ও নির্ধারণ করার অধিকার রাখে কি? আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কি কাউকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন?

#জবাবঃ কোনো সরকারও দাবী করেনা যে, তারা তাদের নাগরিকদের ধর্ম নিরূপণ বা নির্ধারণ করার অধিকার রাখেন! তবে হ্যাঁ, দেশের নাগরিকদের ঈমান আকীদা সুরক্ষার জন্য সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার নিশ্চয়ই রাখেন। কাদিয়ানিরা মানুক বা না মানুক—কেউ এটি অস্বীকার করতে পারেনা।

কেননা দেশের নাগরিকগণ সরকারের নিকট নিজেদের জান মালের নিরাপত্তা যদি চাইতে পারে তাহলে ঈমান আকীদার সুরক্ষার বিধান চেয়ে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা কেন চাইতে পারবেন না? অবশ্যই চাইতে পারবেন! যেহেতু এটা প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং আপনাদের প্রশ্ন, কোনো দেশের সরকার তার নাগরিকদের ধর্ম নিরূপণ ও নির্ধারণ করার অধিকার রাখে কি?—এধরণের প্রশ্ন পুরোপুরিই অবান্তর।

প্রশ্ন—কোনো সরকার যদি মুসলমানকে কাফের ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখে তাহলে সেই সরকার নিশ্চয়ই কাফেরকেও মুসলমান ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখে। একটি দেশের সরকার যদি সে দেশের হিন্দুদের মুসলমান বলে ঘোষণা দেয় তবে কি তারা সত্যি সত্যিই মুসলমান হয়ে যাবে? একই ভাবে নিছক একটি সরকারি ঘোষণা কি অমুসলমানকেও মুসলমান বানাতে পারে?

#জবাবঃ একথা সঠিক যে, কোনো সরকার ইচ্ছেমত জোরকরে কোনো মুসলমানকে কাফের কিংবা কোনো কাফেরকে মুসলমান ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখেনা! কারণ, কে মুসলমান আর কে কাফের সেটি নিরূপণ হয় ব্যক্তির আমল আকীদার প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনের মাধ্যমে কিংবা জনসম্মুখে সেগুলো প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হল, কাদিয়ানিদের বইতেও একথা লিখা আছে যে, "কাফেরকে মুমিন (মুসলমান) বলা ব্যক্তিও কাফের হয়ে যাবে।" রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ২২ পৃষ্ঠা নং ১৬৮।

তাই যে কোনো দেশের যে কোনো মুসলিম সরকার তার নাগরিকদের মুসলমান কিবা কাফের চিহ্নিত করার পূর্ণ অধিকার রাখেন। অন্যথা কাদিয়ানিদের বইয়ের ভাষ্যমতে হলেও সরকারগণ কাফেরকে "কাফের" মনে না করার কারণে নিজেরাই কাফের হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকবে।

তবে হ্যাঁ, দেশের কোনো নাগরিক বা গোষ্ঠীকে "অমুসলিম" আইডেন্টিফাই করার আগে সরকারকে অবশ্যই তাদের আমল আকীদা সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকতে হবে! এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সরকার মহোদয় দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ আলেমদের সহযোগিতাও নিতে পারেন। 'কাদিয়ানিয়ত' নিয়ে পূর্ণ স্টাডি আছে—এমন গবেষক আলেমদের সাথে কাদিয়ানিদের বাহাসে বসার আয়োজনও করা যেতে পারে।

আজ থেকে মাত্র ৪৫ বছর আগের কথা। পাকিস্তান গভর্ণমেন্ট ১৯৭৪ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে ইসলামের বাহিরে নতুন একটি সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী হিসেবে আইডেন্টিফাই করে দিয়েছেন। যাতে সাধারণ মুসলমান তাদের দ্বারা প্রতারিত না হয়! কাদিয়ানিদের অমুসলিম হিসেবে আইডেন্টিফাই করার আগে পাক সরকার দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সামনে কওমি এসেম্বলিতে কাদিয়ানিদের মুকাবেলায় ইসলামের পক্ষে শীর্ষস্থানীয় আলেমদের দ্বিপাক্ষিক বাহাসের আয়োজন করেন। প্রায় ১৩দিন ব্যাপী এই বাহাস চলতে থাকে। প্রতিদিন টানা ৮ ঘন্টা।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইপুস্তক থেকে উদ্ধার হয় অসংখ্য কুফুরী আকীদা। তার লেখিত বই 'দাফেউল বালা' এর মধ্যে লিখা আছে, সত্য খোদা তো তিনি-ই যিনি কাদিয়ানে তাঁর রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন'। বইটির বাংলা অনূদিত সংস্করণ পৃষ্ঠা নং ১২ দ্রষ্টব্য। তাছাড়াও 'মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে যারা গ্রহণ করবেনা তারা অমুসলিম এবং তাদের মায়েরা বেশ্যা'—এ সমস্ত অনভিপ্রেত কথাবার্তাও তার বইগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়। (প্রমাণ হিসেবে দেখুন, তাযকিরা পৃষ্ঠা নং ৫১৯; রূহানী খাযায়েন ৫/৫৪৮ দ্রষ্টব্য)। তারপরই সর্বসাধারণের ঈমান আকীদা সুরক্ষার দাবীতে কাদিয়ানিদেরকে ভিন্নধর্মাবলম্বী একটি সংখ্যালঘু হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। সুতরাং কোনো সরকারি ঘোষণা কি অমুসলমানকে মুসলমান বানাতে পারে?—তাদের এধরনের প্রশ্ন পুরোই বালগিল্য টাইপের!

প্রশ্ন—কোনো মুসলিম সম্প্রদায়কে সরকারী ঘোষণায় কাফের বানানোর অর্থই হল, উক্ত ঘোষণার পূর্ব-মূহূর্ত পর্যন্ত তারা মুসলমান ছিল, এই ধরণের ঘোষণার কোনোই অর্থ হয় না। আমাদের প্রশ্ন, বিশ্বাস পরিবর্তন না করে কেবল একটি সরকারি ঘোষণা কি কারো ধর্ম পরিবর্তন করে দিতে পারে?

#জবাবঃ ঠিক বলেছেন, বিশ্বাস পরিবর্তন না করে কেবল একটি সরকারি ঘোষণা কারো ধর্ম পরিবর্তন করে দিতে পারেনা। আর তাই আমাদেরও কথা পরিস্কার যে, 'আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত' এর সুপ্রতিষ্ঠিত আকীদার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো গোষ্ঠী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে 'নবী ও রাসূল' বিশ্বাস করায় কস্মিনকালেও মুসলমান হতে পারেনা!

আপনাদের আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, তবে কি কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণার পূর্ব-মূহূর্ত পর্যন্ত তারা মুসলমান ছিল? আমি বলি, না; কাদিয়ানিরা তার-ও পূর্ব থেকে কাফের। কেননা, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর একটি বইয়ের নাম মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত। বইটি তিন খন্ডে প্রকাশিত। বইটির ১ম খন্ডের ২৩০-৩১ নং পৃষ্ঠায় তিনি নিজেই লিখে গেছেন "মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে যেই নবুওত ও রেসালতের দাবী করবে সে মিথ্যাবাদী এবং কাফের।" তার এই ফতুয়া ১৮৮৭ হতে ১৮৯৩ সালের মধ্যকার। তারপর তিনি নিজেকে 'মালফূজাত' নামক বইয়ের ৫ম খন্ডের ৪৪৭ নং পৃষ্ঠায় নবুওত এবং রেসালতের দাবী করে লিখেছেন "আমার দাবী, আমি নবী ও রাসূল।" (নতুন এডিশন দ্রষ্টব্য)। বইটি ইতিপূর্বে ১০ খন্ডে ছিল। বর্তমানে এটি ৫ খন্ডে প্রকাশিত। বইতে তার এই দাবী, জানুয়ারী ১৯০৬ হতে মে ১৯০৮ সালের মধ্যকার। সে যাইহোক, তাহলে এবার তিনি নিজেই নিজের ফতুয়ায় কী হলেন?

কাদিয়ানিদের জানা থাকা চাই, হাসপাতালে রুগী মৃত্যুবরণ করার পরেই কিন্তু অবিজ্ঞ ডাক্তার তার শিরায় হাত রেখে তাকে মৃত ঘোষণা দেন। এখন কাদিয়ানিদের জিজ্ঞেস করতে চাই, ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা দেয়ার পরেই কি সে মৃত্যুবরণ করল? অবশ্যই না। বরং মৃত ঘোষণার আগ থেকেই সে মৃত ছিল, জীবিত নয়। তদ্রূপ কাদিয়ানিদের এখন সরকারিভাবে কাফের ঘোষণা দেয়া না হলেও তারা কাফের-ই, মুসলমান নয়।

প্রশ্ন— বায়াত্তর (৭২) ফেরকার আলেম উলামা সম্মিলিতভাবে যখন আহমদীদেরকে কাফের ঘোষণা করেই রেখেছেন তখন আবার সরকারি ঘোষণার প্রয়োজনটা কী?

#জবাবঃ কাদিয়ানিরা এখানে '৭২ ফেরকা' উল্লেখ করে যেন বুঝাতে চাচ্ছে যে, তারা এই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ৭৩তম মুক্তিপ্রাপ্ত দল। কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ এই কারণে যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত 'কাদিয়ানিয়ত' তারই স্বীকারোক্তি অনুসারে ৭৩ ফেরকার বাহিরে-ই স্বতন্ত্র একটি দল। ইসলামে যাদের কোনো অংশই নেই। এবার দেখে নিন, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব '৭৩ ফেরকা' সম্পর্কে কীরকম শব্দচয়নে লিখে গেছেন -

تمہارے ہاتھ میں کیا ہے؟ بجز ان حدیثوں کے جو تہتر فرقوں نے بوٹی بوٹی کرکے باہم تقسیم کر رکہی ہیں ۔ رؤيت حق اور یقین کہاں ہے؟ اور دوسرے کے مکذوب ہو

অর্থাৎ তোমাদের হাতে সেসব হাদীস ছাড়া আর কিবা আছে যেগুলো তিয়াত্তর (৭৩) ফেরকার লোকেরা টুকরো টুকরো করে ভাগ ভাটোয়ারা করে রেখেছে!? (এই তিয়াত্তর ফেরকার ভেতর) সত্য-দর্শন আর বিশ্বাস রইল কোথায়? (এরা তো) একে অন্য দ্বারা মিথ্যুক সাব্যস্ত হয়ে গেছে।" (রূহানী খাযায়েন১৭/৪৫৬ দ্রষ্টব্য)।

কাজেই মির্যা সাহেবের এই কথা দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, তার 'আহমদিয়া জামাত' এর উত্থান হওয়ার আগেই তিয়াত্তর ফেরকা পূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং তারটা আর যাইহোক ৭৩তম সংখ্যার বাহিরে।

তথাপি কাদিয়ানিদের ব্যাপারে সরকারি ঘোষণা এ কারণে প্রয়োজন, যাতে কাদিয়ানিদেরকে মুসলমান মনে করে সাধারণ কোনো মুসলমান তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে না যায়। তাদেরকে মুসলমান ভেবে যাকাত ফিতরাসহ শরীয়তের অন্যান্য হুকুম নষ্ট করা থেকে রক্ষা পায়। অপরদিকে মুসলমান সমাজে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ন্যায় তারাও যাতে নিজেস্ব আইডেন্টিটি ব্যবহার করে অবাধে বসবাস করতে পারে ও সামাজিক মর্যাদায় থাকতে পারে—বর্তমানে তাদেরকে ইসলামের বাহিরে নতুন কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে সরকারি ঘোষণার প্রয়োজনটা এজন্যই।

প্রশ্ন—যেসব মৌলভি মৌলানা আহমদিয়া মুসলিম জামাতকে অমুসলিম ঘোষণার দাবী তুলেছেন তারা নিজেদের 'মুসলমানিত্বের' সার্টিফিকেট কোনো সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে লাভ করেছেন কি?

#জবাবঃ আমার জানা মতে, কোনো মুসলমান একথা বিশ্বাস করেনা যে, সে কোনো সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে 'মুসলমানিত্ব' লাভ করেছে! কাজেই আমাদের মুসলিম উম্মাহার বিরুদ্ধে কাদিয়ানিদের এ সমস্ত প্রশ্ন সর্বতোভাবে প্রত্যাখ্যাত।

মজার ব্যাপার হল, আমরা বরাবরের মত কাদিয়ানিদেরই দেখতে পাই, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়াতে তারা-ই নিজেদের মুসলমানিত্ব প্রমাণ করতে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই প্রশ্ন আসে, কাদিয়ানিদের এ সমস্ত আচার-আচরণ আদৌ কারো কাছ থেকে মুসলমানিত্বের সারর্টিফিকেট পেতে নয় তো?

প্রশ্ন—আমরা অর্থাৎ আহমদিরা পবিত্র কলেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ'-তে সর্বন্তকরণে বিশ্বাসী। এ ছাড়া নামায রোজা হজ্ব ও যাকাত আমরা যথারীতি পালন করি। তা সত্ত্বেও যদি আমাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হয়, তাহলে কুরআন হাদীস প্রদত্ত মুসলমানের সংজ্ঞা বদলাতে হবে। সহীহ হাদীসে লিখা আছে, হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেছেন "যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের জবাই করা মাংস খায়, সে এমন মুসলমান যার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলগ্রহণ করে নিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করো না।" (বুখারী, কিতাবুস সালাত)।... আমাদের প্রশ্ন হল, কোনো মুসলমান কি মহানবী (সাঃ) প্রদত্ত মুসলমানের এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে? যারা এর বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যকে কাফের ফতুয়া দিচ্ছে তারা কি আল্লাহর রাসূলের অবাধ্যতা করছে না?

#জবাবঃ সত্য বলতে, কাদিয়ানিদের বেশিরভাগ লোকই জানে না যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার বইতে কিসব স্ববিরোধী কথাবার্তার তুফান করে গেছেন! প্রথমকথা হল, আহমদিরা পবিত্র কলেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ'-তে বিশ্বাসী—একথা পুরোপুরি মিথ্যা। হয়ত শুনে কেউ কেউ অবাক হচ্ছেন! একটু অপেক্ষা করুন, আমি তাদের বই থেকেই প্রমাণ করে দিচ্ছি! মির্যা সাহেবের পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ তার 'কালিমাতুল ফছল' এর ভেতর পরিস্কার লিখে গেছেন-

"মাসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)'র আগমনের পর মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ'র মর্মার্থে আরেকজন রাসূল বৃদ্ধি করা হবে। সুতরাং মাসীহে মওঊদ এর আগমন দ্বারা নাউযুবিল্লাহ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ' কলেমা বাতিল হবেনা।" (কালিমাতুল ফছল ১৪/১৫৮)।

এবার কাদিয়ানিদের প্রশ্ন করতে চাই যে, দুনিয়াতে এমন কোনো মুসলমান পাওয়া যাবে কি যে কলেমার 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ' এর ভেতর "রাসূল" দ্বারা আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণকারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া অন্য কাউকে উদ্দেশ্য নেয়!? নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখুন!

তারপর আপনি একটি হাদীসকে তুলে ধরে সেটিকে মুসলমানের সংজ্ঞা দাবী করেছেন। অথচ একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষও বুঝতে পারে যে, রাসূল (সাঃ) মুসলমানের সংজ্ঞা ধরেই এই হাদীস বলেননি। বড়জোর মুসলমানের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য স্বরূপ এই হাদীস বলা উদ্দেশ্য। এধরণের হাদীস কিন্তু বহু। যেমন একটিতে উল্লেখ আছে, 'যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে সে একজন মুসলমান।' কী ব্যাখ্যা দেবেন?

এবার আপনাদের কথায় ফিরে আসা যাক। আপনাদের উল্লিখিত উক্ত হাদীসটি যদি মুসলমানের সংজ্ঞা হয় তাহলে এই সেখানে রোজা, হজ্ব এবং যাকাতের কথা নেই কেন? সে যাইহোক, অন্ততপক্ষে নিচের প্রশ্নটির কী জবাব? মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী অ-কাদিয়ানিদের 'অমুসলিম' আখ্যা দিয়ে লিখেছেন–

خدائے تعالیٰ نے میرے پر ظاہر کیا ہے کہ ہر ایک وہ شخص جس کو میری دعوت پہنچی ہے اور اس نے مجھے قبول نہیں کیاہے، وہ مسلمان نہیں ہے۔

অর্থাৎ খোদাতায়ালা আমার প্রতি প্রকাশ করেছেন যে, প্রত্যেক ওই ব্যক্তি যার নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে তবে সে আমাকে গ্রহণ করল না; এমন ব্যক্তি মুসলমান নয়। (মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ইলহামি গ্রন্থ 'তাযকিরাহ' পৃষ্ঠা নং ৫১৯; মার্চ ১৯০৬ ইং)। মির্যার লেখিত 'হাকিকাতুল ওহী' (বাংলা অনুদিত) ১৩০ নং পৃষ্ঠাতেও দেখুন।

এবার আমার প্রশ্ন হল, উল্লিখিত হাদীসের কোথায় লিখা আছে যে, মুসলমান হওয়ার জন্য মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মানতে হবে!? অথচ মির্যার ফতুয়ায় এমন ব্যক্তিরাও কাফের সাব্যস্ত হচ্ছেন যারা—আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের জবাই করা মাংসও খায়! কী জবাব দেবেন?

আপনারা অর্থাৎ কাদিয়ানিরা কেন জঘন্যতম কাফের তা জানতে ডকুমেন্টারি লিখাটিতে ক্লিক করুন Click This Link

প্রশ্ন— আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই পৃথিবীতে যে কোনো ধর্ম গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা দান করেছেন। তাই ধর্ম বিষয়ে বিচার করার অধিকার একমাত্র তিনিই রাখেন। মানুষ কি আল্লাহর এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে?

#জবাবঃ আপনাদের এই কথার সাথে আমরা পুরোপুরি একমত। সেজন্যই আমরা আপনাদের প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, আপনারা আপনাদের ধর্ম যেভাবেই খুশি পালন করুন। আমাদের আপত্তি নেই। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতই নিজেস্ব আইডেন্টিটি নিয়ে পালন করুন। নিজের কোম্পানির পণ্য অন্য কোম্পানির নামে চালাবেন না! কিন্তু সব ধরণের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে একদিকে আপনারা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখেন অপরদিকে কাদিয়ানিয়তকে প্রচার করতে ইসলামের কার্ড ব্যবহার করছেন! যা কোনো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানির 'লগো' নকল করে ওই কোম্পানির নামে নিজের দুই নাম্বার মাল বাজারজাত করার মতই দণ্ডণীয় অপরাধ!

এবার আমার প্রশ্ন হল, আপনাদের এই ধরণের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড ইসলাম তো দুরের কথা, দুনিয়ার কোনো আদালতও কি অনুমোদন দেবে? তাহলে যাদের বইপুস্তকে লিখা থাকে, কলেমার 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' এর মর্মার্থে নতুন একজনকে অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানিকে নতুন একজন রাসূল হিসেবে বৃদ্ধি করতে হবে —এদের ইসলাম আর বিগত চৌদ্দশত বছর পূর্বের মক্কা ও মদীনা থেকে সারা বিশ্বে প্রচারিত ইসলাম কখনো কি একই রকম হতে পারে?

পরিশেষঃ আমার তো দৃঢ় বিশ্বাস যে, সাধারণ ধর্মপ্রান মুসলমান তো বটে, সচেতন অমুসলিমরা-ও যদি কাদিয়ানিদের পর্দার ওপারের চেপে রাখা বীভৎস কুফুরী আর ভণ্ডামীগুলো ভালমত জানতে পারতো তাহলে কিন্তু কোনো বর্ণচোরা কাদিয়ানির পক্ষে বাংলা'র মাটিতে এক মুহূর্তও বহালতবিয়তে টিকে থাকা সম্ভব হত না।

লিখকের ফেইসবুক পেইজ থেকে

বিস্তারিত জানুন www.markajomar.com

লিখক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

তাং ২২/০৪/২০১৯ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×