somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আঁধার কূপে, তুমি দ্বীপজ্বেলে বরণের আশায় বেঁধেছ'রে বুক।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ চিঠি
----------------

আমার রক্ত বছর খানেক আগেই শুকিয়ে গেছে,
বিসৃত হয়েছে রক্তের কালো দাগ রাজপথের চামড়া থেকে,
শুকিয়ে গেছে ফুসফুস বেওয়ারিস লাশঘরে।
ভুলেগেছে শহুরে অমানুষ
ইট-পাটকেল আর বুলেটের কর্মর্দন।

শুধু ভুলোনি তুমি --
পুতুলের মত বউটি আমার - কত অভিমান জমেছে ও বুকে !
আশা ছিল- এবার ঢাকা থেকে ফিরেই বউয়ের সাথে----
আকাশের নীল দেখব,
হাত ধরাধরি করে নদীর পাড় ছুঁয়ে কাশফুলের সুখ নিব,
গ্রামের হাওড়টিতে নৌকায় দোল দিয়ে ভয় পাইয়ে দেব,
আকাশে তখন তারার মেলা --
ভূবন ভোলানো চাঁদের আলো
তুমি এলোকেশী ডাগর আঁখির স্নিগ্ধা,
কপোলে তোমার তারার টিপ।
আমি তখন তোমার দেহে কুয়াশার চাদর,
অবনত ঐ নিঃস্বার্থ চোখজোড়ায় খেলা করে কুমারী প্রেম।
অথবা---
আমি শ্যামা মেঘ হয়ে তোমার উপর ভর করেছি
তুমি খিলখিল করে হাসছো-
তখন আমি অধৈর্য্য - বৃষ্টি হয়ে নামছি তোমার দেহে
তুমি ভিতু ললনা,
আমি তার আধার,
সজোরে সেকি মাতাল চিৎকার
তোমার কণ্ঠে মিলিয়েছি কণ্ঠ
ভালবাসি তোমায়।

তা আর হল কোথায়!
আমি ঘুমচ্ছি রাজপথে,
তুমি অপেক্ষায় আমার!
আমি আঁধার কূপে,
তুমি দ্বীপজ্বেলে বরণের আশায় বেঁধেছ'রে বুক।
আমি স্বজন হারা লাশ,
তুমি স্বজনী আমার।
আমার নিথর দেহ মিছিলের জ্বালানী,
তুমি তৃষ্ণার্ত অবুঝ বধু আমার।
গতবার ছিল তিনদিনের ছুটি--
এবার চিরদিনের।

বিশ্বাস কর বউ-- আমি রাজনীতির কিছুই বুঝিনা,
তোমার কথামত সোজা অফিস থেকে মেস্।
প্রোমশনটা হবেহবে মনে হয়েছিল,
তারপরই তুমি ঢাকায় আসবে।
গত চিঠিতে লিখেছিলে--
মার হাতে সব শিখে নিয়েছ,
শুটকি ভর্তা থেকে ডালভর্তা
পায়েস ও পুলিপিঠা।
তুমি এবার সময় করে এস বললাম।
এবার সময় করে আসছি---------------
প্রত্যেকবারের মত এবারও নীলক্ষেত থেকে গল্পের বই কিনেছি,
আমি আসছি বউ অনেক লম্বা ছুটি পেয়েছি এবার,
আসছি আমি।

এ দানবের যুগ
কন্টকাকীর্ণ অস্পষ্ট স্বাদ,
সর্বভূক জন্তুর দিন,
ফুলের পাপড়িতে রক্তের দাগ,
জৈবিকতার নস্যাত,
জীবনের হাহাকার,
শুকনো মরুর বুক,
দোজখের আগুন,
শয়তানের পৃথিবী।
পুঁজ আর প্রানীর মলে বাসকরা কুৎসিত
মিছিলের মাল্যদান আমি চাইনা,
আমি চাইনা, আমি চাইনা।

ভেবেছিলাম মাইনে বাড়লে -
আগামী মাসেই একটা নীল আকাশ কিনব,
তাতে কিছু তারা আর একটা বড় চাঁদ লাগিয়ে নিব।
দুটি বেনী করে , টিপ পরে তুমি দুষ্টমির ছলে মুখচেপে হাসবে।
আমি অপলক তাকিয়ে থাকব।
----------------------
মনে পড়ে কি তোমার--
বিয়ের মাসখানেক পরও সেকি লজ্জা তোমার,
কারও সামনেই আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে না,
কেউ কিছু বললে সোজা একদৌড়ে ঘরে।
আমি দাড়ি না কামালে তুমি সেকি মুখ গোমড়া করে থাকতে,
আমি বলতাম দুটি সন্তানের বেশি নয়,
কিন্তু তুমি তৃতীয় সন্তানের মুখ দেখতে চাও।
আবার ঘুরেফিরে আমার হাত চেপেধরে সেকি কান্না
যেন তোমাকে ছেড়ে একেবারে চলে আসছি।
সারাটি রাত তোমার কথা ভেবে ভেবে কখন ঢাকায় চলে আসতাম টেরই পেতাম না।

আমার রক্তমাখা দেহ তুমি আর পাবে না,
তোমার অপেক্ষা আমায় জীবিত রাখবে যুগের পর যুগ,
তোমার অশ্রু আমায় সিক্ত রাখবে সবার চোখে চোখে,
তোমার প্রিয় সন্তান যারা আর কখনও আসবে না
তারা বাঁচিয়ে রাখবে চিরদিন।
আমার শেষ চিৎকার তোমার কানে পৌছবে না কোন দিন।


অমর একুশে হল, খুলনা-
০৬.০৩.০৭ ইং

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:৩১
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×