somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক নেংটার মাঝে প্যান্ট পরে থাকার লজ্জাও অনেক অনেক বেশি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগ্নতাবাদ বা নগ্নাচার কেউ মনে আর কেউবা দেহে চর্চা করে। আজ দেহ আর মনের নগ্নতা নিয়ে দুইটি কথা বলতে চাই। গোষল করতে যেহেতু শারীরিক নগ্ন হতে হয়। আসুন গোষল থেকেই শুরু করি।
অনেক ছোট ছোট বিভিন্ন তাপমাত্রার চৌবাচ্চা ও বাষ্প ঘরের সমষ্টি হল সাউনা বা বাষ্পস্নান বা স্নানঘর যেখানে একসঙ্গে অনেক পুরুষ অথবা আলাদা ভাবে একসঙ্গে অনেক নারী পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে অনেক সময় নিয়ে গোষল করেন। ধরে নিতে পারেন আমাদের পুর্বপুরুষদের একসঙ্গে পুকুরে অর্ধউলঙ্গ হয়ে গোষল করার আধুনিক রুপ হল সা্উনা। তবে বেশির ভাগ দেশ যেমন জাপান, কোরিয়া, পুরো ইউরোপ আর পশ্চিমের দেশগুলিতে এটা পুরো পুরি উলঙ্গ ভাবে করাটাই জায়েজ।
জাপানে একবার এই কাজটি আমাকে করতে হয়েছিল তবে লজ্জা যেহেতু আমার আছে তাই ছোট খাট একটা প্যান্ট পরেই ওদের গরম চৌবাচ্চায় নেমেছিলাম। সবাই আমাকে চিড়িয়া ভেবে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিল শুধু মাত্র ঐ ছোট্ট প্যান্ট পরার অপরাধে। এত নেংটার ভিড়ে আমার কিন্তু খুব লজ্জা লাগছিল, মনে হচ্চিল নেংটা হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেই আমি চিড়িয়া নই -তোমাদেরই একজন। যাই হোক পারলাম না।

গত সপ্তাহের কথা। কোরিয়াতে আবার সেই সাউনাতেই যেতে হয়েছিল, কোন উপায় ছিল না, কেবল মাউন্টেন হাইকিং শেষ করে প্রফেসর আর এলুমনি সহ যেতে হল। এবার ইচ্ছে করে আরেকটু বড় সাইজের প্যান্ট পরলাম (আন্ডার গার্মেনটস এর চেয়ে দুই ইঞ্চি বড়)। নেংটার অপূর্ব সমাহার আর এর মাঝে আমি হলাম এক কিম্ভুতকিমাকার। এক কোরিয়ান কলিগ বলিল তুমি প্যান্টস পরেছ কেন। আমি লজ্জায় মাথা নত করিয়া সরি বলিয়া, চৌবাচ্চা থেকে উঠিয়া ষ্টীম রুম এ চলে গেলাম। এবারও আমি পারলাম না। লজ্জায় আমার কালো মুখ লাল হয়ে গেল কারন একটাই আমি বাংলাদেশি আর এ সংস্কৃতি আমার জন্য না।
সাউনাতে উলঙ্গ হতে পারিনি কি হয়েছে।
সুযোগ পেলেই পৃথিবীর সব উলঙ্গ জিনিসগুলিই আমার বা আমাদের অনেক ভাল লাগে, কাছে টানে। যেমন, উলঙ্গ নারী, উলঙ্গ নৃত্য, উলঙ্গ আধুনিক বাতাস, উলঙ্গ পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, উলঙ্গ ব্যাবহার, উলঙ্গ মানসিক লেনদেন (এখানে উলঙ্গ শব্দটি অপরিমিত বা উদ্ধ্যত ও অনিয়ন্ত্রিত বোঝানো হয়েছে)।

এবার আসুন মানসিক নগ্নতার কথা বলি।

আমার একটা গরিবী হালের ল্যাপটপ আছে যদিও নতুন ও চুরির উপযুক্ত, ওটা সেদিন ভুল করে পাবলিক প্লেস এ রেখে এসেছিলাম, কয়েক ঘন্টা পর যেয়ে সেখানেই পেলাম। অবাক হয়ে গেলাম আসলেই তো এই জাতিকে যতটা উলঙ্গ ভেবেছিলাম ততটা না। খুব প্রশান্তি পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এখনি সাউনাতে যেয়ে একটা উলঙ্গ গোষল দিয়ে আসি। ঘটনাটিকে এক বা দেড় বছর আগে আমার প্রিয় দেশের এক প্রিয় ক্যম্পাসের ঘটনার সাথে মিলাতে লজ্জা লাগছে। মন্ত্রি পর্যায় পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যন্টিন থেকে এক জাপানি প্রফেসরের খুব গুরুত্বপুর্ন তথ্য সহ একটা ল্যপটপ খোয়া গিয়েছিল। পরে কি হয়েছে জানি না তবে আমার মত কোন এক শিক্ষিত চোর যে কাজটি করেছে তা আমি গ্যরান্টি দিচ্ছি। আসুন আমাদের মনটাকে একটু সত্যিকারের শালীনতার কাপড় পরাই।

পরসমাচার এই যে---------
আমাদের ল্যাব থেকে একটা আন্ডারগ্রেড এর টিম জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে শিক্ষা সফরে যাবে। ওরা আমার কাছে বাংলাদেশ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে চায়।

যেমন:
১। ওখানে জিনিসের দাম এত কম কেন?
২। ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতে কতক্ষণ লাগবে?
৩। তোমাদের দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার কি কি?
৪। বাংলাদেশের মানুষরা নাকি অনেক সুখি! তোমরা এত সুখি কেন? ইত্যাদি.........

কি করে আমি ওদের বোঝাব যে..........আমাদের তো সম্পদ কম, ঘামের দামে আমরা রক্ত বেচি, শ্রমের কোন মূল্য নাই............যা দাম তাই তো বেশি ......কম আবার কোথায় পেলে। যে দেশে যাচ্ছ সে দেশের শ্রেষ্ঠ ইন্টারন্যশনাল বিমান বন্দরে মশার চোটে লাউনজ এ বসে থাকাই দায় (উল্লেক্ষ্য কোরিয়ার ইনচিয়ন,বিমান বন্দর পৃথিবীর সবসেরা বিমান বন্দরের একটি)। যায়গা মত যাও যে কেউ খাসি করে দিবে, বুঝবে বেটা কত ধানে কত চাল।

ঢাকা থেকে চিটাগাং কতক্ষণ লাগবে এটা আমি কি করে বলি বলেন। আমাদের দেশে তো সময়ের কোন অভাব নাই, আমাদের অঢেল সময়। যাত্রাবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে সময় লাগে, গাবতলি থেকে যাত্রাবাড়ি যেতেও সেই সময় লাগে (এই ইকুয়েশন তো ওকে বোঝাতে পারি না), রাস্তারও তো কোন ঠিক নাই (সব কিছু আবুল আবুল গন্ধ করে)। তুই বেটা যাচ্ছিস, তোর লাশ ফিরে আসবে নাকি তুই ফিরে আসবি সেটারও কোন নিশ্চয়তা নাই। আমি কিভাবে বলি কতক্ষণ লাগবে।

আবার জিগায় খাবার (ভাল কথা জিগাইছ বাছাধন)। ৩-৪ বছর আগে একবার শুনলাম গলদা চিংড়ির পেট থেকে পিন বের করা হয়েছে, ওজন বাড়ানোর জন্য নাকি আরও কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ইদানিং সুস্বাদু সব রংচংয়ের ফল খেয়ে কিছু শিশু ও বড় মানুষ অসুস্থ্য হচ্ছে। সেদিন কি যেন এক জুস খেয়ে নাটরে এক পরিবারে তিনজন মারা গেল। কি করে বলি মাছ, মাংস, সি-ফুড, ফলমুল যা খাবি তাতেই বিষ।

এর ভেতর একটা সুখবর আছে------আমরা এবার এই মায়াময় পৃথিবীর এগারো তম সুখি জাতি হিসেবে চিন্হিত হয়েছি।

আমরা লাউনজ এ বসে মশার কামড় খেয়েই সুখি। আমরা নিজের ভাইকে রাস্তায় লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেই সুখি। আমরা এসব বিষাক্ত খাবার খেয়েই সবচেয়ে সুখি। পত্রিকার একপাতায় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পড়ে দু-ফোটা চোখের জল ফেলি আর ঠিক ২ পাতা পরই আনন্দ ফিচার দেখে পুলকিত হই। অথবা উলঙ্গ কোন খবর পড়ে কেউ কেউ মানসিক মৈথুন করি আর অন্যকে বলি ছি ছি ছি। আমাদের অনুভুতিগুলি খুবই ক্ষনস্থায়ী ও ভঙ্গুর।

পরিশেষে----আসুন সরকারি ব্যাংক কে নিজের পকেট মনে না করি, দুর্নীতি কে বাসর রাতের কুমারি বধূ মনে না করি, কোটি কোটি টাকার ঋনখেলাপি হয়ে নিতম্বের ফাঁকে সম্পত্তি না জমাই। সরকারের সকল মন্ত্রি মহাদয়দের দুর্নীতির সাউনায় ডুবে উলঙ্গ গোষল দিতে মানা করি। বাংলার আলো বাতাসকে সকল উলঙ্গ সংস্কৃতি থেকে মুক্ত রাখি।

পুনশ্চ: আমি এসব কাকে বলছি! আমরা যেহেতু দুর্নীতির সাউনায় সাবাই নেংটা, তাই অনেক নেংটার মাঝে প্যান্ট পরে বেড়ানোর লজ্জাও যে অনেক অনেক বেশি।


দক্ষিণ কোরিয়া
১৭/১০/২০১২ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৮
৪৬টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×