৮০/৯০ দশকের অন্যতম একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হচ্ছেন আসাদুজ্জামান নুর। অভিনেতা হিসাবে তাকে পছন্দ করে না , বাংলাদেশে এমন মানুষ নাই। হুমায়ুন আহমদের নাটক মানেই সেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আসাদুজ্জামান নুরের উপস্থিতি থাকবেই। ধারাবাহিক নাটক অয়োময়ের মির্জা, কোথাও কেউ নাই এ বাকের ভাই , নক্ষত্রের রাতে হাসান ইত্যাদি আরো কালজয়ী চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করে তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন আসাদুজ্জামান নুর। এরকম একজন মানুষ কোটি কোটি মানুষের ভালবাসাকে তুচ্ছ করে কোন মোহে পড়ে অসৎ পথে পা বাড়ায় , বুঝি না। নাটকগুলোতে তিনি বরাবরই অত্যন্ত ইতিবাচক ও ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করতেন। সেই চরিত্রগুলোর অভিনয় দেখে আরো দশটা মানুষ অনুপ্রানিত হয়ে সেরকম মানুষ হবার চেষ্টা করত। অথচ বাস্তবে আসাদুজ্জামান নুর একজন খলনায়ক ছাড়া আর কিছুই না। আপাদমস্তক মিথ্যাবাদী একজন আওয়ামী রাজিনীতিবিদ।
আসাদুজ্জামান নুর ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিন তিনটা বিনা ভোটের ইলেকশনে নির্বাচিত প্রতিনিধি তিনি। মিডনাইট ইলেকশনের টার্মে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী হয়েছিলেন। দেখুন বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি আমাদের সবার প্রিয় বাকের ভাই ইলেকশন নিয়ে কি বক্তব্য রেখেছেন!
শফিকুল আলম, এএফপির সাবেক ব্যুরো চিফ এক ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেন -
আমি আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ের বিশাল ভক্ত ছিলাম। তাঁর অভিনয়ে একধরনের নির্লিপ্ততা ছিল। কিন্তু এএফপির সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় আমি তার উপর বিশ্বাস হারাই। তিন মেয়ের বিধবা মা জানিয়েছিলেন, তার স্বামীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার পেছনে নূরের হাত ছিল। গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী শাহনাজ মায়ের ডাকের সাথে একাধিক প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। রাব্বানী বিএনপি কর্মী ছিলেন, এবং আরও কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াত কর্মীকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নূরের গাড়ি বহরের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। গ্রামের বাজারে সংঘর্ষও হয়েছিল।
সংঘর্ষে চারজন - সকলেই আওয়ামী লীগ সমর্থক - নিহত হয়েছিল। এর কয়েকদিন বা সপ্তাহ পরে অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন - যারা বিএনপি’র কর্মী - নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হন। আরেকজন শিবির কর্মী তখন থেকে গুম বলে শাহনাজ জানান। আরও একজন জামায়াত সদস্য নূরের গাড়ি বহরের দ্বারা চাপা পড়ে নিহত হন বলে জানান তিনি। অভিযুক্তদের সহজেই গ্রেপ্তার করা এবং তাদের বিচার করা সম্ভব ছিল গাড়ি বহরের ওপর হামলার জন্য। কিন্তু তাদের সবচেয়ে নির্মমভাবে ধরে ধরে হত্যা করা হয়। নূর ছিলেন নীলফামারীর বহুবারের এমপি।
আমি জানি, অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেন না যে এমন একজন অভিনেতা, যার এত উচ্চমার্গীয় রুচি এবং যিনি একজন মহান কবিতা আবৃত্তিকার, তিনি এমন ক্রসফায়ার হত্যার আদেশ দেবেন। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, নূর এবং অন্যান্য কিছু সাংস্কৃতিক আইকন শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের শীর্ষস্থানীয় সহায়ক ছিলেন এবং তার ভিত্তির অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত হয়েছিলেন। তারা ঐ ফ্যাসিস্ট শাসন দ্বারা সংঘটিত লুণ্ঠন ও সহিংসতার একধরনের সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক বৈধতা প্রদান করেছিলেন।
আমি নিশ্চিত, নূর সুবিচার পাবেন, সঠিক তদন্ত এবং সঠিক বিচার পাবেন -- যা থেকে শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্র তার ১৫ বছরের শাসনামলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বঞ্চিত করেছিল।
আজকের পত্রিকায় এসেছে ১১ বছর পর বিএনপি নেতা গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম আসাদুজ্জামান নুর এর বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেছেন। বিএনপি নেতাকে হত্যা: ১১ বছর পর সাবেক মন্ত্রী নূরের বিরুদ্ধে মামলা
এইসব ভাল মানুষের ছদ্মবেশ ধরা প্রতারকদের কঠোর বিচার হোক এটাই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫