মূলতঃ এগুলো ১৯৩৭ সালে স্থাপন করা হয়। সে সময় রাজশাহী শহরে পানযোগ্য পানির খুব কষ্ট ছিল। বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব ঘটেছিল তখন। যার ফলশ্রুতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা-আমাশয় সহ নানারকম পেটের পীড়া। বেশ কিছু লোকেরও নাকি মৃত্যুও ঘটেছিল সেই সময় এই অসুখের জন্য। জনশ্রুতি আছে রাজশাহীর জিরো পয়েন্টের "সোনাদীঘী" খনন করা হয় শুধুমাত্র পানযোগ্য পানি পাওয়ার জন্য। এই দীঘির পানি খুবই টলটলে ছিল। তবে এখন সেই দীঘিটি থাকলেও পানির সেই রূপ আর নাই।
ঢোপকল গুলো লম্বায় প্রায় ভুমি থেকে ১২ ফিট উঁচু এবং ব্যাস প্রায় ৪ ফিট। ঢোপকল গুলো তৈরী করা হয়েছিল সিমেন্টের ঢালই করে। এই ঢোপকলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঢেউ খেলানো একটা প্লাষ্টার করা হতো। যে নকশাটা করা হতো টিনের সাহায্যে। চারিদিকে টিনের একটা রাউন্ড বানিয়ে তার মধ্যে সিমেন্ট আর ইটের খোয়ার ঢালাই ঢেলে দেয়া হতো। এর ঢালাই খুবই শক্ত। সহজে কোন কিছুর ধাক্কায় বা আঘাতে এটা ভাঙ্গে না। এগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সাপ্লাই করা হতো এবং সেখান থেকে এলাকাবাসী সেই পানি সংগ্রহ করতো।
এগুলো তৈরীর সময়ে রাজশাহী পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন রায় ডি এন দাশগুপ্ত। তিনি তখন অনুভব করেন অতিসত্বর এলাকাবাসীর জন্য কিছু একটা করার। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমন পানির কল স্থাপন করা হবে। ১৯৩৭ সালের অগাষ্ট মাসের কোন একটি দিনে মিনিষ্ট্রি অব ক্যালকাটার অধীনে রাজশাহী ওয়াটার ওয়াকর্স নামে পানি সরবরাহ ও বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এবং ব্যায় করা হয় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকা। এই কাজে নগরীর নামকরা বড়লোকের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই মহারাণী হেমন্তকুমারী নিজেই দান করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। তার নাম অনুসারেই এই প্রোজেক্টের নাম রাখা হয় "হেমন্তকুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস"। কালক্রমে তার নাম "হেমন্তকুমারী ঢোপকল" নামেই পরিচিত হতে থাকে।
এখানে মহারাণী হেমন্তকুমারীর একটা ছোট্ট পরিচিতি দিচ্ছি, হেমন্তকুমারী দেবী ছিলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়া রাজপরিবারের জমিদারীর সর্বশেষে প্রধান। উনি বিধবা হওয়ার পরে জমিদারী দেখাশুনার দায়িত্ব পান। তারপর তাঁর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে তাঁর রাজশাহী শহর জুড়ে। তিনি প্রথমে "রাণী" এবং পরে "মহারাণী" উপাধিতে ভুষিত হন।
চলবে.............
ছবি কৃতজ্ঞতা: আনিসুজ্জামান উজ্জল
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৫৫