কিছুদিন আগে, খুব সম্ভবত ডিসকোভারি চ্যানেলে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, পৃথিবী সেরা একদল ট্রাক ড্রাইভারদেরকে পৃথিবীর কিছু দূর্গম এবং ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ন রাস্তায় ড্রাইভিং করতে দেয়া হয়েছিল। সমগ্র ব্যাপারটা ছিল একটা রেসের মত। অনুষ্ঠানে যে সকল রাস্তা দেখানো হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে লোমর্হষক এবং ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ন। আমি টিভিতে দেখেই আতংকিত হয়েছিলাম। নিজেকে মনে হচ্ছিল আমি বুঝি নিজেই সেই পথগুলোতে গাড়ি চালাচ্ছি। এই বিষয়ে আগ্রহের কারনে সেদিন ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলাম। আর পেয়ে গেলাম পৃথিবীর কিছু দূর্গম এবং ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ন রাস্তার খোঁজ। বিষয়টি যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং মনে হওয়ায় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। সকল তথ্য এবং ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই ভয়ংকর রাস্তার তালিকায় প্রথমেই আছে, উত্তর বলিভিয়ার একটি রাস্তা যা ‘রোড অব ডেথ’ নামে কুখ্যাত। অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের সাথে যে কয়টি রাস্তা দিয়ে চলাচল করা হয়, তার মধ্যে এটা অন্যতম। এই রাস্তাটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৫,২৬০ ফিট উঁচু থেকে শুরু হয়ে সর্বনিম্ন প্রায় ৩,৯০০ ফিট পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা ভাবে এই রাস্তা এগিয়েছে। এর প্রতি পদে পদে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। সিংগেল লেনের এই রাস্তা মাত্র দশ ফিট চওড়া, চিরুনীর দাতের মত তীক্ষ্ণ বাক। আতংকের বিষয়, এই রাস্তায় কোন রেলিং নেই। এবং পাশেই গড়পড়তা প্রায় ১,৮০০ ফিটের গভীর খাদ। মড়ার উপর খাঁড়া ঘা হিসেবে কিছুক্ষন পর পর, ঘন মেঘ, কুয়াশা এবং ধুলা রাস্তার ভিজিবিলিটি প্রায় শুণ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে। ভেবে দেখুন এমন একটি রাস্তায় আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, আপনার অনুভুতি কেমন হবে?
তবে যারা এ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, তারা এই স্থানটিকে আদর্শ মানেন। ফলে বিশ্বজুড়ে এ্যাডভেঞ্চার প্রেমিদের কাছে একটা অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার ভ্রমন কারী এই পথ দেখতে আসেন।
কি যাবেন নাকি এমন একটা পথে লং ড্রাইভে??
এরপর বলা যেতে পারে দ্যা সাইবেরিয়ান রোডের কথা। স্থানীয় পর্যায়ে এই রোডটিকে , 'হাইওয়ে ফ্রম হেল' বলা হয়ে থাকে। এই রোডটি মূলত সাইবেরিয়ান একটি শহর Yakutsk এর সাথে রাশিয়ার যোগাযোগের একটি মাত্র রাস্তা। এই প্রসংগে বলা যেতে পারে, Yakutsk পৃথিবীর অন্যতম ঠান্ডা শহর। শীতকালে খানের গড় তাপমাত্রা -৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এই রাস্তাটির পাশেই আছে, লেনা নদী। এই লেনা নদীর নাম অনুসারে এই হাইওয়ের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে লেনা হাইওয়ে। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর উপর বরফের কঠিন আস্তরন থাকে। অনেক গাড়ী তখন ঝুঁকি নিয়ে নদীর উপর দিয়েই যাতায়াত করে। কিন্তু যখন গরমের সময় আসতে থাকে তখন শুরু হয় বিপদ। তখন পুরো পথটি ২/৩ ফুট গভীর কাদার নিচে চলে যায়। হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ে গেলে, খাবার, পানি এবং তেল ইত্যাদি শেষ হয়ে যায়। অনেক মানুষ মারা যায়। এইখানে উদ্ধার কার্য অনেক কঠিন একটি ব্যাপার। অনেক সময় ৫ দিন /৭ দিন লেগে যায় এই পথটি পার হতে। আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, এই পথ দিয়ে ঐ শহরে যাওয়ার দরকার কি? তাদের কি টাকা কম আছে?? কয়েকটি ছবি দেখেন।
এরপর যে রোডটির কথা উল্লেখ্য করতে হয় তা হলো, পাকিস্থানের ফেয়রী মিডোস রোড (Fairy Meadows Road)। পৃথিবীর নবম উচ্চ পর্বত নানগা পর্বতে অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ২৬,৬৬০ ফুট। এই পর্বতমালাটি এর সৌন্দর্যের জন্য নানা ভাবে বিখ্যাত। যদিও এটা বিখ্যাত একটা ভ্রমন স্থান, কিন্তু ফেয়রী মিডোস রোডে ভ্রমন মোটেই আনন্দজনক কিছু নয়। প্রতি পদে পদে রয়েছে বিপদের হাতছানি। তবে সৌন্দর্য আর এ্যাডভেঞ্চার প্রেমিরা এই সবের থোড়াই কেয়ার করেন। এই রাস্তাটি খুবই সরু এবং মোড়গুলো খুবই তীক্ষ্ণ। পাশের খাদগুলোর গড় গভীরতা প্রায় ২৫০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পর্যন্ত। এখানে সাধারন কোন গাড়ী চলে না। বিশেষ কিছু চাঁদের গাড়ী মার্কা জীপ পর্যটকদের পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত বিভিন্ন রিজোর্টে নিয়ে যায়। অনেক যায়গায় পথ এতটাই সরু যে আপনাকে হেঁটে পার হতে হবে। আপনি যদি মানুষ হন তাহলে আপনার পক্ষে গাড়ীতে বসে থাকা সম্ভব নয়। কিছু ছবিঃ
এখন যে রোডটির কথা বলব, এটার কথা হয়ত অনেকেই শুনেছেন আপনারা। এর নাম, দ্যা কারাকোরাম হাইওয়ে। (The Karakoram Highway)। এটা পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচুতে অবস্থিত চীন এবং পাকিস্থানের মধ্যকার একটি আন্তর্জাতিক হাইওয়ে। এই হাইওয়ের উড় উচ্চতা প্রায় ১৫,৩৯৭ ফুট উচু। প্রচন্ড দূর্গম পথ, খাঁড়া এবং সরু ইত্যাদির দিক দিয়ে বিবেচনা করে অনেকেই একে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ১৩০০ কিলোমিটার এই হাইওয়ের প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পড়েছে পাকিস্থান অংশে আর ৫০০ কিলোমিটার পড়েছে চায়নাতে।
যদিও এই পথের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আপনি ইন্টারনেটে চাইলেই দেখতে পাবেন, তবে যেহেতু ভয়ংকর রুপ নিয়ে বলছি, তাই আর সুন্দর কিছু দেখালাম না।
আরো অনেক অনেক রাস্তা আছে যে গুলো হয়ত আরো অনেক বেশি ভয়ংকর। সেগুলো নিয়ে না হয় পরে লিখব। এখন বাংলাদেশে নিয়ে কিছু লিখি। ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে গিয়ে যা ধারনা হয়েছে, তাতে বিদেশী যে কেউ মনে করবেন বাংলাদেশের সব রাস্তাই অতি ভয়ংকর বিপদজনক। কথা যে একে বারে মিথ্যা তা বলা যাবে না। তবে উপরে যা দেখে আসলাম এত ভয়ংকর কিছু নেই। তবে বেশ কয়েক বছর আগে আমি দুইটা জায়গায় গিয়েছিলাম, এক রাঙামাটির দিঘীনালা হয়ে মারিশ্যা। আর একটা হচ্ছে আগে রুমা থেকে কেওকারাডং। তখন রাস্তা ঘাট এত উন্নত ছিল না। রাস্তা অনেক সরু ছিল। আমি বসেছিলাম ছাদে। হঠাৎ নিচে খেয়াল করে দেখি, রাস্তা দেখি না, গভীর খাদ। অবস্থাটা বুঝে দেখেন। আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল যে আমার কলিজা যে কোন মূহূর্তে বুক ফেটে বের হয় আসবে। আমাদের সাথে একজন ছিল, তিনি মোটামুটি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন, যে তাকে নামিয়ে দেয়া হোক, তিনি হেঁটে যাবেন। আফসোস, সেই ছবি গুলো তুলতে পারিনি। যদি পারতাম তাহলে আমার মনে হয়, সেই ছবি গুলো কোনভাবেই উপরের ছবি গুলো থেকে পিছিয়ে থাকত না।
আপনাদের যদি ভালো লাগে তাহলে হয়ত আরো কয়েকটি পর্ব লিখব। এই পোষ্টটা অনেক তাড়াহুড়া করে লিখেছি। ইচ্ছা ছিল আরো ছবি দেয়ার। কিন্তু ছবি আপলোড করতে সমস্যা হওয়ার আর বেশি ছবি দিলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৮