২০০৫ এর কোন এক বিকেলে.......
খাটিয়া ধরে বসে আছে শামিমা। একটু পরেই নিয়ে যাওয়া হবে প্রানপ্রিয় স্বামীকে চির নিদ্রায় শায়িত করার জন্য।
মাত্র এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তিন বছরের চেনা জানা একে অপরের সাথে। ভালো-ই চলছিলো দু'জনের। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়। শাহীন ছোট খাটো একটা চাকরি করে আর প্রাইভেটে এম এ পড়ছে । সংসারের ভার শাহীনের উপর দায়বদ্ধ । বাবা বেঁচে নেই , বড় বোন থাকে স্বামীর বাড়িতে আর মা, ছোট ভাই , বোন এ-ই শাহীনের পরিবার। শাহীন ও শামিমার দু'জনেরই ম্বফস্বলে বেড়ে উঠা।
শামিমার বাবার আথিক স্বছলতা শাহীনের পরিবারের ঊর্ধ্বে, তাই এ কারণেই শামিমার বাবার এই বিয়েতে আপওি ছিলো। সব বাধা জয় করে অবশেষে এই বিয়ে।আর বিয়ের ঠিক তের মাসের মধ্যে শাহীন স্ট্রোক করে একেবারে মারা গেলো।
শামিমা দু'মাসের অন্তঃস্বওা ছিলো, সেটা শুধু জানত শামিমার আম্মা । শাহীনের অনুরোধে শামিমা কাউকে বলেনি কারণ নতুন চাকরি তার উপরে পড়া শেষ হয়নি, থাক না কিছুদিন গোপন। এদিকে শামিমার কান্নাতো বন্ধ হচ্ছে না, খাওয়া দাওয়া স্পর্শ করছে না। শামিমার আম্মা ও আব্বার বিশেষ জোড়াজুড়ি কারণে শামিমা সাত দিনের মাথায় বাবার বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয়। শামিমাকে তড়িঘড়ি করে এনে বাচ্চা নষ্ট করাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য শামিমার পরিবারের। কোন উপায় না দেখে পরিবারের চাপের মুখে শামিমা মেনে নেয়। যার ফলস্রুতিতে শামিমা কিছুটা মানসিক ভাবে অসুস্থ ও ভেঙে পড়ে।প্রায় বছর খানিকটা পরে শামিমার নিকট আত্বীয় ফয়সালের সাথে বিয়ে হয়। ফয়সাল ও শামিমা মানিকগঞ্জ থেকে সোজা ঢাকায় এসে সংসারে সুখেই দিন কাটাতে লাগলো । এবার বাধ সাধলো বাচ্চা। দু'জনেই চাইছে কিন্তু উপরওয়ালা হয়তো ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ডাক্তারের চেষ্টার কমতি ছিলো না, চিকিৎসার সবশেষ পযার্য়ে এসে টেস্টটিউব ফেল।
পরিশেষে বারো বছর পর পনের দিনের এক নবজাতককে দওক নিলো। শামিমা ও ফয়সাল উভয়ই মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের অহঙ্কার পেলো ওই নবজাতকের মাঝে । কিন্তু শামিমার মনের ভিতর আজীবনের এক অপরাধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় শাহীনের শেষ স্মৃতি ও নিজের বাচ্চাকে নষ্ট করেছে বলেই আজ দওক নিতে হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫০