somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Abdullah Arif Muslim এর তাবলীগের সমালোচনার আড়ালে কী- ১ ??

১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে ব্লগে কিছু ভাই তাবলীগের সমালোচনায় মুখর রয়েছেন। সাধারণত যারা তাবলীগের সমালোচনা করে থাকেন,তারা হয় জামাত করেন অথবা লা-মাযহাবী। তবে এই ব্লগে Abdullah Arif Muslim নামে একজন ব্লগার কিছুদিন ধরে তাবলীগের সমালোচনায় ব্যস্ত। স।তিনি যেসব পয়েন্ট সামনে এনে তাবলীগের সমালোচনা করছেন তার মধ্যে আছে, কাশফ ,ইলহাম,আউলিয়া কিরামের কারামাত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মুবারাকের সামনে গিয়ে সালাম দেওয়া ইত্যাদি। আর তিনি তার পোস্টের সূচনাতেই বলেছেন তাবলীগের পরিচালকরা যেহেতু মাহযাব মানে এবং তাসাওফে বিশ্বাসী তাই তারা বিদায়াতী হবে তাতে আর সন্দেহের কি আছে,তাই এ দুটি বিষয়েও কিছু ইনশাল্লাহ আলোচনা করব।

উনি যেহেতু আউলিয়া কেরামের কারামত এবং কাশফ ,ইলহামের কারণে ফাযায়েলে আমল কিংবা ফাযায়েলে হজ্ব নামের কিতাব দুটি থেকে রেফারেন্স দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন, এ গুলো ভুয়া,এ গুলো বিশ্বাস করা যায় না,তাই আগে এ বিষয়েই আলোচনা করা উচিৎ।

১)কারামাত কাকে বলে তা আমরা প্রায় সকলেই জানি,যখন আম্বিয়াকেরাদের ছাড়া অন্যান্যদের হতে কোন অলৌকিক বিষয় প্রকাশ পায় তখন তাকে কারামত বলে।

আর কাশফ বলা হয় কোন কথা প্রকাশিত হওয়াকে,তবে তা ইচ্ছাধীন কোন বিষয় নয়,কাশফ কখনো সত্যি হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে আর তা সাওয়াবের কোন কাজও নয়। আর ইলহাম হলো কাশফেরই একটি প্রকার বিশেষ। ইলহামের পারিভাষিক অর্থ হলো চিন্তা ও চেষ্টা ছাড়াই কোন কথা অন্তরে উদ্রেক হওয়া। ইলহাম আল্লাহর পক্ষ থেকেও হতে পারে আবার শয়তানের পক্ষ হতেও হতে পারে। এখন যদি কোন ইলহাম শরীয়তের হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত না হয় এবং তার বিষয় বস্তু শরীয়ত পরিপন্থী নয় বা ইসলহামে কোন হুকুম-আহলাম সম্পৃক্ত কিন্তু তার পক্ষে শরীয়তেও দলিল আছে,শুধু এ ধরনের ইলহামকে সহীহ ইলহাম বলা হবে এবং ধরা হবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে,এটি আল্লাহর নিয়ামত বলে পরিগণিত হবে, এ ব্যাপারে তার শোকর আদায় করা দরকার।
(ফতহুল বারীঃ ১২/৪০৫ কিতাবুত্তাবীর,বাব ১০ ; রুহুল মাআনীঃ ১৬/ ১৬-২২, তাবসিরাতুল আদিল্লাঃ ১/২২-২৩, মাওকিফুল ইসলাম মিনাল ইলহাম ওয়া কাশফি ওয়াররুয়াঃ ১১-১১৪,শরীয়ত ও তরীকত কা তালাযুমঃ ১৯১-১৯২)

আরিফ সাহেব যেহেতু লা-মাযহাবী তাই হয়ত উনি উয়ালামায়ে কিরামের মতামত গ্রহণ করবে না এমনকি তারা ইবনে তাইমিয়া (রহ) কিংবা ইবনুল কায়্যিমের(রহ) মত ব্যক্তিত্ব হলেও,যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্র তারা তাদের মতামত গ্রহণ করেন, তাই আমরা দেখি কোরআন এবং হাদিসে কারামাত এবং কাশফ-ইলহাম সম্পর্কে কি আছে-

ইরশাদ হয়েছেঃ
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي ۖ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ [٢٨:٧]
আমি মূসা-জননীকে আদেশ(ইলহাম) পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব। (সূরা কাসাসঃ ৭)


إِذْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّكَ مَا يُوحَىٰ [٢٠:٣٨]
যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে।

أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّي وَعَدُوٌّ لَّهُ ۚ وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِي [٢٠:٣٩]
যে, তুমি (মূসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, অতঃপর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেবে। তাকে আমার শক্র ও তার শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতি পালিত হও।
(সূরা তোয়া-হাঃ ৩৮-৩৯)

এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ
كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ
"অর্থাৎ, যখনই যাকারিয়া তার (মারয়াম) কাছে ইবাদতখানায় প্রবেশ করত, তার কাছে পেত আহার্য। সে বলত হে মারয়াম! এটা কোত্থেকে তোমার কাছে এল? সে বলত আল্লাহর কাছ থেকে।" ( সুরাঃ ৩-আল ইমরানঃ ৩৭)

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي
"অর্থাৎ, যার নিকট কিতাবের জ্ঞান ছিল সে (আসিফ ইবনে বারখিয়া ) বলল আপনার চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দিব। অতঃপর যখন সে (সুলাইমান) সেটাকে সম্মুখে অবস্থিত দেখল তখন সে বলল এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ।"(সুরাঃ২৭-নামলঃ ৪০)

হযরত মুসা(আঃ) এর মাতা,মারয়াম ও আসিফ ইবনে বারখিয়ার ঘটনা মুজিযা নয়। কেননা হযরত মুসা(আঃ) এর মাতা ,মারয়াম (আঃ) ও সুলায়মান আঃ এর সহচর আসিফ ইবনে বারখিয়া কেউই নবী ছিলেন না। বরং এ হচ্ছে কারামতের অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়া হাদিসে আছেঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
" ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর মন্দ স্বপ্ন শতানের পক্ষ হতে"।(সহীহ মুসলিমঃ ২/২৪১,হাদিস ৫৮৫৬)

অন্যহাদিসে আছেঃ
"স্বপ্ন তিন প্রকার। এক,ভাল স্বপ্ন- এটি আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ স্বরূপ। দুই শয়তানের পক্ষ হতে পেরেশানকারী।তিন, কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন" । (সহীহ মুসলিমঃ২/২৪১,হাদিস ৫৮৫৯, জামে তিরমিযীঃ ২/৫৩ হাদিস ২২৭০)

অন্যহাদিসে আছেঃ
" নিশ্চয় মানুষের অন্তরে শয়তানের পক্ষ হতেও কথার উদ্রেক হয়,ফেরেশতাদের পক্ষ হতেও উদ্রেক হয়।" ( সুনানে নাসায়ী কুবরাঃ ৬/৩০৫,হাদিস ১১০৫১, জামে তিরমিযীঃ ২/ ১২৮,হাদিস ২৯৮৮,সহীহ হিব্বানঃ ৩/২৭৮ হাদিস ৯৯৮)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর(রা) হতে বর্ণিত..................একদিন হযরত উমর (রা) জুমার মিম্বরে খুৎবা দিচ্ছিলেন,এমন সময় খুৎবার মাঝেই তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন,হে সারিয়া পাহাড়ের দিকে আসো। এভাবে তিনিবার বললেন। কিছুদিন পরে যখন মুসলিম বাহিনীর দূত মদীনায় আগমন করল তখন উমর (রা) তার কাছে যুদ্ধের খোজখবর জিজ্ঞাসা করলেন। দূত আরয করল হে আমিরুল মুমেনিন! একদিন আমাদের পরাজয় আসন্ন হয়ে পড়েছিলো। এমন সময় হঠাত এক আওয়াজ শুনতে পেলাম,যেন কেউ আমাদেরকে লক্ষ্য করে ব্লছে,হে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে সরে আসো। তিনবার আমরা এই আওয়াজ শুনতে পেলাম। অতঃপর আমরা পাহাড়ের পিছন দিয়ে আওবস্থান করলাম,তখন আল্লাহপাক মুশরিকদের শোচনীয় পরাজয় দান করলেন। লোকেরা তখন বললো,এজন্যই বুঝি খুৎবার মাঝে আপনি,"হে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে সরে আসো বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন।
হযরত সারিয়া যে পাহাড়ের পাদদেশে লড়াই করেছিলেন, সেটা আজমের নাহাওয়ান্দ এলাকার পাহাড়। আল ইছাবাহ গ্রন্থে ইবনে হাজার এ বর্ণনাকে নির্ভরযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন।" (তারিখুল খুলাফা-ইমাম জালালুদ্দিন সুয়তী)

"হযরত আবু জাফর হতে বর্ণিত, হযরত আবু বকর(রা),হুজুর (সা) ও জিবরীল আমিনের কথপোকথন শুনতে পেতেন,তবে দেখতে পেতেন না। (কানযুল উম্মাল,খন্ডঃ৬, পৃঃ ৩১১)

আর আউলিয়া কিরামের কারামত সত্য, একথার উপর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত একমত।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহ) এর মতে কারামত সত্য এবং তা প্রকাশ করা হয় সমসাময়িক কালের মানুষের ঈমান বৃদ্ধির জন্য,যাতে তারা অলৌকিক ঘটনা দেখে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার উপর বিশ্বাস পোক্ত হয়। ( মাকামে সাহাবা কামারাতে সাহাবা- ১০৩)

এমনকি ইবন্যুল কায়্যিম(রহ) তার "মাদারিজুস সালেকীন" নামক কিতাবে তার উস্তাদ ইবনে তাইমিয়া (রহ) এর কারামাতগুলো সন্নিবেশিত করেছেন,আর শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া(রহ) কি বলেছেন তাই একটু দেখা যাক,কারণ তাদের নিকট উনার বক্তব্য অনেকটা গ্রহণযোগ্য।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) তার ফতোয়ার কিতাব ১১ খণ্ডের ২০৪ পাতায় কি লিখেছেন- " হযরত উমর (রা) ব্লতেন, তোমরা নেক লোকদের সামনে যখন যাবে,তারা যা কিছু বলেন তা মেনে নিবে। কারণ তাঁদের কাছে সত্য প্রকাশ পায়। হযরত উমর(রা) যে সমস্ত সত্য বিষয়ের কথা বললেন , তা হল ঐ সমস্ত জিনিস যা আল্লাহ পাক তাঁদের কাছে খুলে দেন। কারণ এটা প্রমাণিত যে, ওলীয়াল্লাহগণের কাশফ হয় এবং গায়েবীভাবে তাঁদেরকে সম্বোধন করা হয়।"

তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর মোজেজা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন- " এমনকি উম্মতের নেককার লোকদের কারামতসমূহও তাঁর নবুওয়াতের মু'জিযা বলে গণ্য হবে।" (আল জাওয়াব, খঃ ৪,পৃঃ ৮৬-৯৫)

আর বিখ্যাত হাদিস বিসারদ ইবনুল কায়্যিম তাঁর কিতাবে যে কাহিনীগুলো লিখেছেন তা একটু দেখুন-
১)আবুত তাইয়াহ(রহ) বর্ণনা করেন,মুতাররাফ (রহ) প্রতিদিন প্রত্যুষে কবর যিয়ারাত করতেন। কিন্তু শুক্রবার রজনীর একাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর অন্ধকারে কবর যিয়ারাত করতেন। বলা হয় যে, তাঁর চাবুকটি রাতের আঁধারে জ্বল-জ্বল করত। একরাতে তিনি ঘোড়ায় আরোহণ করে গোরস্তানে পৌঁছে দেখতে পেলেন,প্রত্যেক কবরবাসী স্ব স্ব কবরে উপবিষ্ট। তাঁকে দেখে সবাই সমস্বরে বলে উঠল,ইনি মুতররাফ যিনি প্রতি শুক্রবার আমাদের কাছে আসেন। আমি (বর্ণনাকারী) জিজ্ঞেস করলাম,তোমরাও কি শুক্রবার সম্পর্কে জানতে পার? তারা বলল,হ্যাঁ, ঐ দিন পাখিরা যাকিছু বলে,তাও শুনতে পাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, পাখিরা কি বলে? তারা বলল, পাখিরা বলেঃ সালাম,সালাম। (কিতাবুর রূহ, পৃঃ ৩)

২)শাবীব ইবনে শাইবা বলেন, মৃত্যুর সময় আমার মাতা অসিয়ত করে গিয়েছিলেন যে, দাফন করার পর আমার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বল্বেঃ হে উম্মে শাবীব! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়। তিনি বলেন,অতএব দাফন করার পর আমি তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার অন্তিম ওসিয়ত পূর্ণ করলাম। রাতে তাঁকে স্বপ্নে দেখলাম- তিনি বলছেন, বতস! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যদি আমাকে রক্ষা না করত, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। শাবাশ বেটা! তুমি অসিয়ত স্মরণ রেখছ। (কিতাবুর রূহ, পৃঃ ১৫)


৩)রাজা ইবনে হায়াতের মৃত্যুর পর এক পুণ্যবতী মহিলা তাকে স্বপ্নে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার প্রত্যাবর্তন কিসের দিকে হয়েছে? তিনি জবাব দিলেন,মঙ্গলের দিকে। কিন্তু মরণের পর আমি হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম এবং ধারণা করেছিলাম যে, কিয়ামত এসে গেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কেন? রাজা জবাব দিলেন,জাররাহ এবং তার সাথী সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন। ফলে জান্নাতের দরজায় ভীড় হয়ে গিয়েছিল। ((কিতাবুর রূহ, পৃঃ ২৯)


৪)আলী ইবনে আবি তালিব কাইরুয়ানী বলেনঃ ওমায়েরের স্বপ্নের ঘটনা ততটুকু বিস্ময়কর নয়,যতটুকু বিস্ময়কর আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহর ঘটনা। যা আমরা শহরে স্বচক্ষে দেখেছি। আবদুল্লাহ একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি স্বপনের মাধ্যমে মৃতব্যাক্তির গোপনীয় কথা জেনে ফেওলতেন এবং আত্মীয়স্বজনদের বলে দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি কামালিয়াত বা পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন,ফলে অল্প দিনেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করলেন।((কিতাবুর রূহ, পৃঃ ৪৯)

কাশফ ও এলহাম সম্মন্ধে আকিদাঃ

১। অলীগণের কাশফ ও এলহাম দলিল নয় অর্থাৎ তার দ্বারা কোন আমল প্রমাণিত হয় না।

২। বুজুর্গ এবং ওলীগণ গায়েব জানেন না, তবে কখনও কোন বিষয়ে কাশফ ও এলহাম হতে পারে তাও আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

৩। আল্লাহওয়ালাদের কারামত শুনলে তা বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই, কিন্তু কেউ যদি তা বর্ণনা করে তাহলে তাকে মিথ্যাবাদী বলাও ঠিক হবে না।

এ আকিদার উপর ভিত্তি করেই শাইখুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়া (রহ ) তার কিতাবে অনেকগুলো কাহিনী লিখেছেন, কিন্তু তাবলীগ বিরোধী জামাতী আর লা-মাযহাবী ভাইয়েরা এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মাওলানা যাকারিয়া(রহ) কে বিদায়াতী,কুফর এবং শিরক প্রচারকারী বলে দাবী করছেন।

তারা যদি এসব ঘটনার জন্য শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রহ) কে বিভিন্ন অপবাদ দেয় তাহলে যেসব ইমাম এবং মুহাদ্দিসরা যারা এইসব ঘটনা নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন,তাদের কেন সমালোচনা করে না,যেমন ধরুন,-সাইয়েদ আহমাদ কবীর রেফায়ী(রহ) এর কবিতা শুনে যে,রাসূলুল্লাহ (সা) রওজা মুবারাক হতে হাত বের করেছিলেন,তা ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তী(রহ) তার শায়েখ কামাল উদ্দিন থেকে,তিনি শায়েখ শামসুদ্দিন জাযিরী থেকে,তিনি শায়েখ য্যনুদ্দিন থেকে,তিনি শায়খ ইযুদ্দিন আহমদ ফারূকী থেকে,তিনি তাঁর পিতা শায়েখ আবু ইসহাক ইবরাহীম থেকে ও তিনি তাঁর শায়েখ ইযুদ্দিন ওমর (রহ) এর সনদে তাঁর কিতাব "শরফে মুখতেম" নামক কিতাবে উল্লখে করেছেন। সাইয়েদ আহমাদ কবীর রেফায়ী(রহ) এর "আল-বুরহানুল মুয়াইয়াদ" নামক কিতাবের ভূমিকায় এই কাহিনী আছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ভাইয়েরা ফাযায়েলের কিতাবের উপর কি রূপ খড়গহস্ত হয়েছে,তা মুটামুটি সকলেই দেখেছে,কিন্তু কেন তারা জালালুদ্দিন সূয়তী(রহ) এর বিরুদ্ধে আগে বলল না,কিন্তু তা কি আগে প্রয়োজন ছিল না।

এছাড়া ইমাম আবু বকর বিন আবিদ্দুনিয়া (রহ) এর কিতাব " মান আ'শা বা'দাল মাউত" , ইবনে কাসীর(রহ) এর 'আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া", হাফেজ আবু নয়ীম ইস্পাহানী(রহ্‌) এর "হুলিয়াতুল আওলিয়া", ইমাম ইয়াসেফী এবং তাজুদ্দীন সুবকী(রহ) এর "তবাক্কাতুল কোবরা"- , শাহ আব্দুল আজীজ (রহ)"বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন",আবু বকর বাগদাদী(রহ)"তারীখে বাগদাদী" ,শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসী দেহলভী(রহ)"আরবাঈন",ইবনুল কায়্যিম(রহ) এর "কিতাবুর রূহ" সহ অন্যান্য ইমাম এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের সমালোচনা কি আগে করা উচিৎ না,কারণ তাদের বইগুলোই তো কাহিনীহুলো মূল সূত্র। উনারা কোরআন-হাদিস জানতেন না, নাকি জানার পরেও ইচ্ছে করে শিরক আর কুফরী প্রচার করেছেন(নাউযুবিল্লাহ)। কিন্তু আরিফ সাহেবের কথা মানলে তো মনে করতে হবে তারা ইচ্ছে করেই তা করেছেন।

আর যদি উনে মেনে নেন তারা জানতেন হাদিস আর ঘটনার প্রয়োগক্ষেত্র এক নয়,তাহলে কেন ফাযায়েলের কিতাবের বিরুদ্ধে উনার অভিযোগ?
আর যদি উনি মনে করেন এ সব ঘটনা বর্ণনা করা অন্যায়,তাহলে কেন যেসব ইমাম এবং মুহাদ্দিসগণ এসব ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাদের সমালোচনা আগে না করে কেন ফাযায়েলের লেখকের সমালোচনা করা হচ্ছে?

আসলেই কি তার উদ্দেশ্য তাবলীগের সমালোচনা করে তাদের ঠিক করা ,নাকি এ সমালোচনার পিছনে অন্য কোন কারণ আছে।

(বাকি বিষয়গুলো পরের পোস্টে তুলে ধরা হবে ইনশাল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
২০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×