এক দাঁতাল কুকুর ছিল । কুকুরটি পথে ঘাটে যাকে তাকে কামতে দিতো । কুকুর দ্রুত ও নিঃশব্দে চলাচল করতে পারে তাই কেউ কিছু বোঝার আগে মানুষের পায়ে কামড় দিতে পারতো । মানুষজন এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ । বারবার কুকুরের মালিকের কাছে অভিযোগ জানাতো । এই রকম অভিযোগ শুনতে শুনতে কুকুরের মালিকও অতিষ্ঠ । এই অবস্থা দেখে মালিক সেই কুকুরের গলায় একটা ঘন্টা বেঁধে দিল । যাতে করে কুকুর যখন পথে ঘাটে বের হবে, মানুষজন ঠিকই বুঝতে পারে যে কুকুরটা আসছে । অন্য দিকে গলায় একটা শিকল বেঁধে, সেই শিকলের অন্য মাথা আটকে দিলো একটা খড়মের সাথে । যাতে করে কুকুরটি দ্রুত কোথাও না যেতে পারে আর কারো পায়ে সহজে কামড় দিতে না পারে ।
কুকুর তার এই নতুন সাজে খুব খুশি । গলায় ঘন্টা শিকল আর খড়ম নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই । সবাইকে সে সেটা দেখাতে লাগলো । এমন একটা ভাব যেন এটা একটা প্রদর্শনের বস্তু । সবাইকে অবজ্ঞা করতে লাগলো । তার গলায় ঘন্টা আছে, খড়ম আছে অন্য কারো গলায় নেই । তখন এক জ্ঞানী কুকুর তাকে বলল, ''নিজেকে নিয়ে এতো গৌরব কেন তোমার শুনি ? তোমার এই ঘন্টা আর শিকল তোমার কোন গৌরবের বিষয় না । এটা একটা অপমানের প্রতীক আর মানুষের কাছে এটা চিৎকার করে বলছে যে তুমি একটা অভদ্র আর অসভ্য কুকুর এবং তোমার কাছ থেকে যেন সবাই দুরে দুরে থাকে, তোমাকে যেন এড়িয়ে চলে ।
গল্পের মোরাল হচ্ছেঃ কিছু মানুষ কুখ্যাতি আর অসম্মানকে প্রায়ই গৌরব ভেবে ভুল করে !
গল্পটা ইশপের গল্প । মাঝে মাঝে আমি ইশপের এই রূপকথা পড়ি । আর অবাক হয়ে ভাবি সেই কয়েক হাজার বছর আগে ইশপ গল্পের মাধ্যমে মানুষের ভেতরকার আসল চিত্র গুলো ফুটিয়ে তুলে গেছে । মানুষজনকে কত ভাল করে চিনেছে সে। এই গল্পটা প্রায় দশ বছর আগে ব্লগার ম্যাভরিক সামুতে পোস্ট করেছিলো । আজকে গল্পটা চোখে পড়ায় ভাবলাম আমিও একটু পোস্ট করি । মানুষ যদি নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারে !
ইশপের গল্পের উৎস
ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৭