''সবুজ স্মৃতি'' পর্ব-৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শেষ যে বার কাজিনদের সাথে নানু বাড়ি যাই। যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে পড়ি। কারন চারপাশ ঘুরে না দেখলে মনে শান্তিই লাগবে না। পিচ্চি কাজিন কে নিয়ে অনেকক্ষন হাঁটাহাটি করার পর একটা সুন্দর জায়গা চোখে পড়ে যায়। একপাশে ধান আরেক পাশে থই থই পানি আর মাঝখানে সরু পথ এবং পথের মাঝে দু'টো নারকেল গাছ। তারপর নারকেল গাছের নিচে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকা, পানিতে পা ভিজানো আর পাখি দের নীড়ে ফেরা দেখা!
রাতে সব কাজিন আর গ্রামের পিচ্চিরা মিলে গভীর মনোযোগে জীন-ভূতের গল্প শোনা। গল্প শুনতে শুনতে ভয়ে কাঁপাকাঁপি করা।
পুকুর ঘাটে বসে সবাই গল্প শুনছিলাম। সবাই কথা বলতে বলতে একটা সময় সবাই চুপ হয়ে যাই আর তখন তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। আকাশ টা সে দিন অনেক সুন্দর ছিলো, তারাদের মেলা বসেছিলো। সেই দিন প্রথম দেখেছিলাম তারা কিভাবে ছোটাছুটি করে। একটা সময় সবাই ঘরে ফিরলাম। ঘরে এসে আবার গল্প শুরু সেই ভূত-জ্বীনের। তখনো গ্রামে কারেন্ট নেই। হারিকেন জ্বলছে মিটমিট করে। সবাই খাটের উপর গোল হয়ে বসেছে। পাশে জানালা,একটু পর পর বাতাস আসছে। প্রত্যেকে গল্প বলতে বলতে এবার আমার বলার পালা আসলো। তাদের কে সত্যি ঘটনা টা শোনালাম।
তখন আমি অনেক ছোট। আমার না কি আলগার সমস্যা আছে। সন্ধ্যা হলে আমার মন খারাপ হয়ে যেতো। আর কান্না করতে থাকতাম কোন কারণ ছাড়াই। আমার মুখের রং না কি পরিবর্তন হতো। কথাগুলো বলতে বলতে আমি হাসছিলাম। তখন এক কাজিন বললো তুমি ফান করছো। আমি তখন 'না' উত্তর দিলাম। তারপর বলতে লাগলাম হুজুরের কাছে আমাকে নেওয়া হয় তাবিজ দেওয়া হয়, হুজুর বলে আমার সমস্যা নাকি বাতাসে! বলতে বলতেই হঠাৎ করে অনেক জোরে বাতাস আসলো আর আমার চুলগুলো একটু উড়লো। এই অবস্থায় আমার চারপাশ থেকে সবাই ওরে বাবারে বলে চিৎকার দিয়ে সরে গেলো। তাদের এমন কান্ড দেখে আমি শব্দ করে হাসতে লাগলাম।
নানু বাড়িতে গেলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুকুর ঘাটে গিয়ে পা ভিজিয়ে বসে থাকতে বেশি ভালো লাগে। তারপর হাঁটাহাঁটি! দাদুর বাড়িতে গেলে পুকুরে পা ভিজানোর সুযোগ থাকে না। তাই ঘুম থেকে উঠে যতদূর চোখ যায় জমির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রেললাইনের কাছে, কখনো বা নদীর পাশে বা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে থেকে নৌকার মাঝিদের মাছ ধরা দেখি। চারপাশে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার আগেই ফিরে আসি।
শেষ যে বার কাজিনদের সাথে নানু বাড়ি যাই। তখন ঝুম বৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু কেউ সেই বৃষ্টিতে ভিজলাম না। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই সবাই উঠান ঘরে গিয়ে বসি। শুধু বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি। চারপাশে শুধু বৃষ্টির শব্দ। আর টিনের চালে শব্দ টা অন্য রকম শোনায়। হঠাৎ করে পিচ্চি কাজিন টা বলে উঠলো আচ্ছা আপু আমাদের তো এভাবে আর কোন দিন দেখা হবে না, তাই না? ওর প্রশ্ন শুনে সবাই তখন বলে উঠি হতেও পারে। সেই বার সব কাজিন মিলে একসাথে ঢাকায় ফেরা হয়। লঞ্চে সবাই মজা করি। যখন লঞ্চ ভিড়লো তখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি দেখে পিচ্চি কাজিন টা কে বললাম আমাদের শেষ টা বৃষ্টি দিয়ে, দারুন না। সবাই বিদায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যে যার গন্তব্যে ফিরলাম।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন