কথা বলার বিষয়ের অভাব নেই, কিন্তু বলার মানুষের বড় অভাব। সুন্দর বক্তা যেমন খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তার চেয়ে বেশি বিপদ ভালো শ্রোতা খুঁজে পাওয়া। যদিও কবি-সাহিত্যিকরা তাদের দর্শক-পাঠকের ব্যাপারে তেমন উদগ্রিব থাকে না। কারণ, তার কাছে সাহিত্যের উপাদানটিই মূখ্য। এমন কবি খুব কম পাওয়া যাবে যিনি, পাঠকদের উদ্দেশ্যে কবিতা লেখেন। আমার মনে হয়, তারা তাদের নিজের মানসিক চাহিদা মেটাতেই সে কাজ করে।
প্রসঙ্গ সেখানে নয়, কিন্তু আমিও যে বলতে চাই। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে হাজারো কথা মাথায় আসে কিন্তু মুখে ফুটে না। একসময় লিখতে গেলে দুচার লাইনের পরে আর কলম চলতো না। সে কারণেই আমার কোন ডায়েরী নেই। এতেও হতাশ নই। কারণ, সময় হলে সকল স্বার্থই হাসিল হয়। যেমনটি করে মৃত্যু হয়।
এখানে পরতে পরতে ব্যবহার করা হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাঙ্গা অংশ। কেউ খুঁজে পাবে কেউ পাবে না। এগুলোকে সূত্র বলা চলে। চলতে-ফিরতে-করতে-গিলতে আবিস্কার হয়েছে সেগুলো। পেতে চাইলে এর সঙ্গে থাকুন। তবে, মনে হয় না সে প্রয়োজন আছে। কবি-সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না, এখনো নেই। আমি চাই ভবিষ্যতেও যেন তা না হয়। কারণ, এদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এরা খুব অলস প্রকৃতির হয়। বলছি না সে কিছু করে না। কিন্তু, যেখানে গাধার মতো খাঁটুনি দরকার সেখানে সাহিত্য কতটা প্রয়োজন তা আমার জানা নেই।
এর চেয়ে বরং কিছু স্বাভাবিক আলাপে আসা যাক। ধরুন, যে লোকটি না খেয়ে থাকে তার কাছে কোন কিছুর মূল্য আছে কি। আছে, সে খেতে চায়। খুধায় কাতর হতে হতে যখন তার ভাগ্যে কোন খাবার জুটে, তা শুধু ভাত হলেও অমৃতের সমান। কিন্তু ভরা পেটে যদি আপনাকে অমৃতও খেতে দেওয়া হয় তবে আপনি তা ভরপুর খেতে পারবেন না। মানুষের অভাব অসীম হলেও কিন্তু চাহিদা সামান্য। সাড়ে তিন হাত মানুষ চাদের অংশীদার হলেও তাকে কোন না কোন উপায়ে মাটিতে মিশতে হবে। সে যাই হোক।
এমনো হতে পারে, কাজের কমতি নেই অথচ কোন অর্থ প্রাপ্তি হচ্ছে না। তাহলে উন্নতি করবেন কিভাবে। এ যে খুব দুরুহ কাজ। যদিও খেটে খাওয়া মানুষগুলো হরহামেশাই এমন বিপদে পরে। দিন যে একরকম থাকে না তা বুদ্ধি-বিবেক থাকলেই জানা যায়। এও যে খুব সহজ সত্য তা মানতেই হবে। সহজবোধ্য জীবটা নিয়ে এতো বিপদের কি আছে। সস্তায়ও পেট ভরে, দামিতেও তাই। কথা ঐ একই। কখনো লাউ কখনো কদু। ঠিক তেমন আমাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। যেমন আপনি, তেমনি আমি। শুধু মিশলেই হয়।
আমি বলতে চাইলে আটকে যাই, শুরু করলে থামি না। বিপদ আসে পদে পদে। বছরঘুরে নতুন করে। হেলা করা কোন সুযোগ নেই। তাই মুখোমুখি হওয়াই উচিত মনে করি। নেহায়েত সখের বশে ভিক্ষা করতে না লোকের সংখ্যা আহামরি নেই। সবাই দুঃখে জন্য ভিক্ষা করে, এরপর ছাড়তে পারে না। কেউ অর্থের জন্য ভিক্ষা করে, অর্থ প্রাপ্তি হলেও আর সেকাজ ছাড়া সম্ভব হয় না। তাই কিছু করার আগে গুরুজনেরা ভাবতে বলে, কাজ একবার শুরু করে, হরদোম তা করে, তা থেকে পরে আর নিস্ক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
ক্ষুদ্র জ্ঞানে ক্ষুদ্র প্রয়াস। ভালো লাগলেও ভালো, না লাগলে তাও ভালো। কার সময় আছে এতো। অনেকে না বুঝলে, না জানলেও একথা কখনো প্রকাশ করা যাবে না। আপনার আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের বিবরনী। অনেক আগে থেকে সে জিনিস জমা করতে শুরু করেছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। যতই জমা রাখছি ততই ঘাটতি হচ্ছে। কি যে বিপদ। রাখার জায়গাটা দিনে দিনে পূর্ণ হয়ে ভরে গেল। কিন্তু, তারপর! এবার যে ভীষণ বিপদ। জমানো সম্পত্তি হারাতে শুরু করেছি। কখনো তা জায়গার অভাবে পরে যাচ্ছে। কখনো কঠোর তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে। কখনো বা এমন বরফ হচ্ছে, যা তাপ দিয়েও গলানে সম্ভব নয়। পাথর যার হৃদয়, ক্ষত তার কাছে অতি তুচ্ছ।
তবুও আমি বলতে চাই, খুঁজে বেড়াই সাদা কাগজ। ঠিক এই রকম, যেখানে বিরক্তি-আসক্তির কোন অংক আসবে না। থাকবে না সমীকরণ। থাকবে শুধু প্রতীক্ষা, কখন আবার সময় হবে? কারণ, আমাকে যে বলতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৪