গত ২১শে জুলাই সদ্য সকাল ০১টা ৪০মিঃ এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাই হয়ে নিউইয়র্ক যাত্রার প্রথম পর্বে ঢাকার রাস্তার চিরাচরিত জ্যাম ঠেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ার পোর্টে পৌছালাম। এয়ারপোর্টের পরিবেশ আগের চেয়ে বেশ উন্নত হয়েছে বলে মনে হলো। ১৪ তারিখ থেকে হজ্ব ফ্লাইট শুরু হয়েছে বলে ভীষন অরাজকতায় পড়বো বলে আশঙ্কা করছিলাম কিন্তু দেখলাম হাজীদের জন্য এবং অন্য যাত্রীদের জন্য পৃথক এ্যান্ট্রেন্স এবং অন্য যাত্রীদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও লাগেজ স্ক্যানিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো । এমিরেটসের চেকইন কাউন্টারে তেমন দেরি হলোনা আমাদের অনলাইনে চেক ইন এবং বোর্ডিং কার্ড নেওয়া ছিলো পাসপোর্ট আর বোর্ডিং কার্ডের প্রিন্টআউট দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দেওয়ার সাথে সাথেই ঢাকা টু দুবাই এবং দুবাই টু জেএফকের(জন এফ কেনেডি) দুটো বোর্ডিং কার্ড প্রিন্ট করে দিয়ে দিলেন।
এরপর গেলাম ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তা পাসপোর্টের ছবির সাথে চেহারা মিলিয়ে সীল দিয়ে ছেড়ে দিলেন প্রায় কিছুই জিজ্ঞাসা করলেনা
হাতে সময় ছিলো তাই ডিউটি ফ্রী শপগুলিতে ঘুরে ফিরে অনবোর্ডের জন্য এগিয়ে গেলাম এখানে কেবিন ব্যাগ খুব ভালভাবে চেক করা হলো বেল্ট খুলে মানিব্যাগ এবং বেল্ট ক্যামেরা মোবাইল একটা খালি ট্রেতে দিয়ে স্ক্যান করা হলো তারপর আমাকে আর্চের ভিতর দিয়ে যেতে হলো ওমা! সিগনাল বেজে উঠলো ব্যাস পুলিশরা ভাবলো যাক কাষ্টমার তাহলে একজন পেলাম দুইজন এসে আমাকে আমার সারা শরীরে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করে বললো স্যার আপনার ব্যাক পকেটে কি আছে ? আমি বহু চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না ওখানে আমি স্বর্ণের বারটা কখন রেখেছি!!?? কিন্তু না ওখান থেকে যাদু মন্ত্রের মত একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের হলো মানি ব্যাগ থেকে পিছলে বের হয়ে ওটা পকেটে পড়ে ছিল তাই এই বিড়ম্বনা সরকার কয়েনের সাথে কেন যে আঠা লাগিয়ে দেয়না!!? আর নাহলে পকেটে ছিদ্র করে রাখতে হবে মানি ব্যাগ থেকে কয়েন পড়লে যেন তা আটকে না থাকে । যাইহোক অতি উৎসাহী পুলিশ দ্বয় হতাশ হয়ে বললেন ঠিক আছে স্যার, সরি স্যার, এইযে আপনার মানিব্যাগ ক্যামেরা ল্যাপটপ সব এখানে আছে ব্যাস আমিও অনবোর্ড হওয়ার জন্য লাইনে দাড়ালুম
অনবোর্ড হওয়ার পর গ্যালীতে গেলাম এবং সুন্দরী এয়ার হোষ্টেসদের সাথে পরিচিত হলাম। একজন ফিলিপিনো দুজন আর্জেনটিনিয়ান বললাম হাউ ফানি তোমরা কি জানো আমাদের দেশে আর্জেন্টিনা ফুটবল টীমের কত সাপোর্টার আছে? ওরা খুব খুশী হয়ে বললো হ্যা জানি আমি বললাম আমাদের দেশের মানুষ আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগের রং এ বাড়ী রং করে এবং বিরাট বিরাট পতাকা উড়ায়, ম্যারাডোনার বিরাট সাপোর্ট গ্রুপ মিছিল বের করে। ওরা বলল আমরা সব জানি শুনে খুব খুশী হলাম। (মনে মনে ভাবছিলাম ফিলিপিনো মেয়েরা সৌদিতে আর কাজ করতে যায়না বরঞ্চ বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়ে বিদেশে ভাল ভাল জব করে আর আমরা আমাদের দেশের মেয়েদের চাকরানী হিসেবে সৌদিতে পাঠাই যেখানে বাপ ছেলে আর পুরুষ আত্মীয়রা আমাদের মেয়েদের গনিমতের মাল হিসাবে ব্যবহার করে।)
যাই হোক আলাপচারিতার কারনে ওরা আমার সাথে কমার্শিয়াল ব্যবহার না বেশ করে আন্তরিকভাবেই আমার প্রতি নজর রাখছিলো বার বার এসে খোঁজ খবর রাখছিলো কিছু লাগবে কিনা? ফলে আমার জার্নিটা বেশ আরামদায়কই হয়েছিলো।
দুবাই এয়ারপোর্টে ৪ ঘন্টার বিরতি ছিলো । এখানে ওয়াশআপ ছাড়া কিছু করার ছিলোনা, প্লেনে এত খাবার দেওয়া হয়েছিলো যে আর কোন কিছু খাওয়ার চিন্তা মাথাতেই আসেনি তাই এখানে উইন্ডো শপিং করে বেড়ালাম । এখানে নিউইয়র্কগামী বিমানে বোর্ডিং এর আগে কেবিনব্যাগ চেক করলেও বেশ অনেকগুলি প্রশ্ন করা হয়েছিলো যেমন: আমার ব্যাগ আমিই গুছিয়েছি কিনা? আমাকে অন্য কেউ কোন প্যাকেট দিয়েছে কিনা আমার লেপু আমি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করেছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি ওখান থেকে ছাড়া পেয়ে অনবোর্ড হয়ে আরো সুন্দরী এবং ভীষন নম্র বায়ু আপ্যায়নকারীদের দেখা পেলাম তারপর শুরু হলো দীর্ঘ বিরতিহীন ১৪ঘন্টার বিরক্তিকর যাত্রা ছবি দেখে, হাটাহাটি করে সময় পার করলাম। তারপর স্থানীয় সময় বেলা ২টায় জেএফকের মাটি স্পর্শ করার পর জানে পানি ফিরে পেলাম । এখানে নিজেই নিজের পাসপোর্ট মেশিনে স্ক্যান করে ছবি তুলে প্রিন্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে গিয়ে দাড়ালাম তিনি কিছুই জিজ্ঞাসা না করে শুধু চেহারার সাথে পাসপোর্ট এর ছবি মিলিয়ে এন্ট্রি সীল দিয়ে দিলেন ব্যাস কাজ শেষ তারপর শুধু লাগেজ সংগ্রহ করে বের হয়ে আসা। বেরিয়ে এসে কোথাও এয়ারপোর্টের নাম না দেখে ভাবতে লাগলাম পাইলট ভুল করে আটলান্টিকের কোনো দ্বীপে নেমে পড়লো কিনা!!??
এয়ারপোর্ট থেকে গ্রামের পথে রওনা হলাম
আর বর্ননা নয় বাকী কথা ছবির উপর ছেড়ে দিলাম।
বিমানের গ্যালি
উপরে এবং নীচে দুবাই এয়ারপোর্টের ছবি
এবার অন্য ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাত্রা
জে এফ কে এয়ারপোর্ট তারপর সেখান থেকে যাত্রা
রাস্তার পাশে ট্রাকে করে মোবাইল রেস্তোরায় মেক্সিকান ফুড টেকো খেলাম
ছবির শেষ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০১