এখন পর্যন্ত বইমেলা থেকে একটাই বই কিনেছি। বইয়ের নাম মন্মথের মেলানকোলিয়া। লেখক হাসান মাহবুব। আজ সেটা পড়ে শেষ করলাম। এবং পড়ার পর দুটো শব্দ মাথায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে খেলা করেছে। শব্দদুটো হলো “ইন্টারেস্টিং” এবং প্রেডিক্টেবল”। প্রেডিক্টেবল কারন হাসান ভাইয়ের গল্পের সাথে আমি পরিচিত। তাই তার প্রথম উপন্যাস পড়ে আমি ধাক্কা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এবং যেহেতু প্রস্তুত ছিলাম তাই অবাক হইনি। এবার কিছু পর্যবেক্ষণের কথা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ পড়ার সময় এবং পড়ার পর যা মনে হয়েছে তা সোজাসাপ্টা ভাবে বলে দেওয়া।
১
হাসান ভাইয়ের লেখার সাথে যেহেতু পূর্বপরিচিত তাই ধরেই নিয়েছিলাম এই বই একটানে পড়ে ফেলা যাবেনা। অর্থাৎ মনোযোগ ধরে রাখা যাবেনা। এবং পড়া শুরু করার পর ঘটনা ঠিক তাই ঘটল। কারন একঘেঁয়ে বর্ননা। এবং সেটা অনেকটা নিজের সাথে নিজের কথোপকথন টাইপ। অর্থাৎ লেখক এখানে পাঠককে অপশন দিয়ে দিচ্ছে। পড়বা কি পড়বা না? পড়লে মনোযোগ দাও। আরো গভীরে যাও। মেটাফোর নিয়ে একটু খেলে দেখ! আমি পড়া না থামিয়ে আরো গভীর মনোযোগে মন্মথের মেলানকোলিয়ায় ডুব দিলাম। যদিও ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলনা।
২
উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ন এক চরিত্র হচ্ছে বিট্টু নামক এক কুকুর। বিট্টু তার চারপাশের জগত সম্পর্কে কী ভাবছে বা কী ফিল করছে এসবের বর্ননা আছে। অর্থাৎ একটি কুকুরের চোখ দিয়ে জগতকে দেখার চেষ্টা। কাজটা করার জন্য লেখককে কুকুর নিয়ে বেশ কিছু পড়ালেখা করতে হয়েছে বলে মনে হয়। যার ছাপ এ লেখায় আছে। কিছু কিছু তথ্য লেখক নিজেই সুকৌশলে তার চরিত্রগুলোর মুখ বা ভাবনা দিয়ে বলিয়েছে। যাইহোক বিট্টুকে পড়ার সময় সুনীলের কবিতার বিখ্যাত কিছু লাইন মনে পড়ে যাচ্ছিল। “আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি, মানুষের ভেতরের কুকুরটাকে দেখব বলে”। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিট্টু কি আসলেই কুকুর নাকি একটা ডিভাইস? যে ডিভাইসকে একদল মানুষের মাঝে ফেলে দিয়ে মূলত মানুষকেই ব্যাখা করার চেষ্টা করা হয়। এই ব্যাখ্যার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এবং এই সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে লেখকের পক্ষপাতিত্ব আছে। অবসেশনও হতে পারে।
৩
কাজলী খুব একটা কমপ্লেক্স চরিত্র না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার চরিত্র খুব স্পষ্ট। এবং তার পরিনতিও অনুমান করা যাচ্ছিল। তবে কাজলীকে দিয়ে বা তাকে বিশ্লেষন করে আরো তুলনামূলক কমপ্লেক্স কিছু ব্যাপার বুঝার বা ফিল করার সুযোগ আছে। আরো সহজ করে বললে বলতে হয় অদৃষ্টবাদের সাথে মানুষের অসহায়ত্বের যে সম্পর্ক তার একটা সিম্বল হচ্ছে এই কাজলী চরিত্র।
৪
মেটাফোরের ভালো খেলা আছে। পাজল আছে। সমাধানও আছে। লেখকের অবচেতন মনও আছে। যা চরিত্রগুলোর চেতন মনে ক্রীয়াশীল।
৫
সব মানুষই পশু। কিন্তু সব পশুই মানুষ না।
বাংলা সাহিত্য নিয়ে আমার পড়ালেখা খুব কম। তবে যা পড়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায় হাসান ভাই নিজের মত করেই একটা ইউনিক স্টাইলের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। মনের অন্ধকার অলি গলি এক্সপ্লোর করে তাকে মেটাফোরিক পাজলে রূপান্তর করা খুব সহজ কাজ নয়। তবে একজন পাঠক হিসাবে সেটা দেখা এবং বুঝার চেষ্টাটা আমার কাছে উপভোগ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯