I AM against torture. Nothing justifies torture. This is a principled stand, there are no ifs and buts.
আ টরচার্ড ইমেজ: রেহনুমা আহমেদ, New Age on 26th June 2008
রেহনুমা আহমেদের ফ্যাসিবাদীতা, ভণ্ডামী ও একটি মিশ্র অনুভূতির থিওরি
রেহনুমা আহমেদের লেখা আমি খুব আগ্রহভরে পড়ি, নৃবিজ্ঞানে আমার আগ্রহ, একই সাথে নারীবাদের গলি ঘুপচিগুলোতে তাঁর স্বর এবং সক্রিয়তাগুলো দৃষ্টি আকর্ষণীয় বলে। গতকাল আমার কাছে একটা মেইল আসে, ওয়ার্ডপ্রেসে শহীদুল ব্লগে প্রকাশিত রেহনুমার একটি লেখার লিঙ্কে ইনভাইট করে, যেটি ২৬ জুন ২০০৮ তারিখে নিউএজ পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় বিভাগে ছাপা হয়। আমি তৎক্ষণাৎ লেখাটি পড়ি, পড়ে, কিছুক্ষণ নির্বোধের মত দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর বসে পড়ার সময় যখন হয়, বিবমিষা জাগে।
রেহনুমা লেখাটি শুরু করেছেন একটি প্রিন্সিপলড স্ট্যাণ্ড ঘোষণা এবং সাথে সাথে সেই প্রিন্সিপলড স্ট্যাণ্ডকে দলিত করেছেন কিছু প্রিজুডিস এবং ফ্যাসিবাদী গোঁড়ামী দিয়ে। লেখাটির সারকথা হলো, টরচার ব্যাপারটা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে রিমাণ্ডে নিয়ে সব হাড়-গোড় গুঁড়ো করে দিলেও এতে তাঁর অনুভূতিতে লাগে না। ''I am against torture. I have always been against torture, and yet I have no sympathy for Tarique Rahman who, in all likelihood, is now a victim of torture."। এই ব্যাপারে তার বরাত হলো, সিএনজি ড্রাইভার, রিকসা ড্রাইভার, তরকারী বিক্রেতা, পাশাপাশী নিজের ভিতরে বিরাজমান ঘৃণা বা আবেগ। এইটারে রেহনুমা মিশ্র অনুভূতি নাম দিয়ে তত্ত্বায়িত করতে চায়।
What concerns me more is our mixed feelings over torture. (প্রাগুক্ত)
আমার বিবমিষার কারণ হলো, তারেক রহমান বিষয়ে একজন আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ নেতাদের ফ্যাসিবাদী গালাগাল আর রেহনুমার মিশ্র অনুভূতি (mixed feelings)র থিওরির ভাষা এক এবং লক্ষ অভিন্ন গন্তব্যে যায়। বাঙালী জাতীয়তাবাদ নামের কিম্ভূত দৈত্যের ভাষা এবং বয়ন, যা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী রূপ ধারণ করেছে, তার সাথে রেহনুমার এই অন্ধ অপ্রগতিশীল আত্মীয়তা, রেহনুমার ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
রেহনুমার বোধ-বুদ্ধিতে কি এটা ধারণ করার ক্ষমতা আছে, যে, সিএনজি ড্রাইভারদের বরাত দিয়ে ক্লাস কনশাসনেস বুঝাতে হলে কিছু না গিলে, স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব না। বহুত মানুষতো ক্রসফায়াররে ভালা এবঙ জরুরী কাম মনে করে, বহুত লোওয়ার ক্লাস। তো এই ফ্যাসিবাদরে কি ক্লাস পলিটিকস বলে জাহির করন সম্ভব? তাই করতে চান রেহনুমা?
একটি কথা মনে পড়ে , রেহনুমার সাথে কোন একদিন দেখা হয়েছিল আমার। চট্টগ্রামে আমার কিছু পরিচিত বন্ধু তারেক মাসুদের মাটির ময়না ছবিটি নিয়ে একটি ঘরোয়া আড্ডার আয়োজন করেছিল, তারেক ছিলেন, হঠাৎ রেহনুমা আসলেন কোত্থেকে খবর পেয়ে। চট্টগ্রাম এসেছিলেন কোন একটা কাজে হয়তো। তো অই অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনা পর্বে রেহনুমা মাটির ময়নার ব্যাপারে যে অভিযোগটি করলেন সেটি হলো, এখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এই সময়ে মাটির ময়না- যেটিতে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং মৌলবাদ বিষয়ে মার্কিন ডিসকোর্সের সমর্থন আছে, তার ফলে সন্দেহ তৈরী হয়। মাটির ময়না বিষয়ে যদিও আমি আরো অন্যভাবে চিন্তা করতে ইচ্ছুক, রেহনুমার এই সুক্ষ্ম বিষয়ে কথা বলার আগ্রহটারে আমার পছন্দ হয়েছিল।
কিন্তু রেহনুমার ইন্টেলেকচুয়াল অরিয়েন্টেশন এবং প্রতিবেশে যে ফ্যাসিবাদ গেড়ে আছে, তার বুদ্ধিজীবীতার আড়ালে যে আওয়ামী দলবাজিতা, তার খবর পাইনি আগে, আর তার প্রকাশ এমন ভালগার দলীয় ও আওয়ামী স্টাইলে ঘটবে, সেটিও ভাবতে পারিনি। একজন বন্ধুর মন্তব্য হলো, এটি হইলো পোস্ট বেঙ্গলি নেশনালিস্ট এক কিম্ভূত রেহনুমা, জাহেলিয়াতে আচ্ছন্ন- যে বোগাস নারীবাদী, যার সমস্ত কাছার কাপড় ঐ এক লেখায় খুলে পড়েছে সবার কাছে।
তারেক রহমান ও তার মায়ের অপরাধ ও শাস্তি এবং নারী ভাবনার নতুন প্রেক্ষিত

বেশ কিছুদিন আগে, ''ফাহমিদুল হকের বহুলপঠিত একটি পোস্ট এবং ব্লগের লিখিয়েরা: একটি পর্যবেক্ষণ'' শিরোনামের আমার অবজার্বেশনে ব্লগীয় পরিসরে নারী ব্লগারদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণের পরিবর্তে তার নারীত্বের ফেনোমেনাগুলোকে মতামত প্রতিষ্ঠার উপাত্ত হিশেবে ব্যবহার এবঙ তার উপর হামলা করার প্রবণতাটারে ফ্যাসিবাদী বলে উল্লেখ করেছিলাম।
এখন সেই আলোচনাটাই জাতীয় পরিসরে প্রাসংগিক মনে হচ্ছে আবার। যদিও তার রূপ অন্য।
খুলেই বলি।
সাম্প্রতিক সময়ের প্রভাবশালী দার্শনিক মিশেল ফুকো তার ডিসিপ্লিন এণ্ড পানিশ: দ্য বার্থ অব প্রিজন গ্রন্থে দেখিয়েছেন কীভাবে রাষ্ট্র অপরাধী এবং তার শরীরকে ব্যবহার করেছে ক্ষমতা এবঙ বৈধতা নির্মাণের জন্য, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন বন্দীর বিমানবীকীকরন এবঙ তার নির্যাতনের প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্যকে। এইটা একটা প্রশ্ন বটে।
তার সাথে সঙযুক্ত প্রশ্ন হলো, নারীবাদ তারেক রহমানের উপরে এই নির্যাতন প্রক্রিয়াকে কীভাবে দেখবে? এইটা কি কোনভাবে নারীবাদের সাথে সঙস্লিষ্ট?
আমি যে পর্যবেক্ষণটির কথা বলছি, সেটি বলে, তারেক রহমানের উপরে এই নির্যাতনের গুরুতর সংযোগ আছে নারীবাদের সাথে, সেইটা বুঝা খুবই দরকারী বিষয় এখন আমাদের কাছে। জানুয়ারী ২০০৭ এর পর এই নতুন পরিপ্রেক্ষিত তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে, যখন একটি গণবিরোধী সরকারের লেজিটিমেসির প্রশ্ন আসলো। এইটা শুধূ ফুকোর ক্ষমতা ও লেজিটিমেসির প্রশ্ন নয়, নারীবাদের ভিতরের প্রশ্ন।
কীভাবে?
জানুয়ারী ২০০৭ এর পর দৃশ্যমান যে প্রপঞ্চটি আমাদের সামনে হাজির, একটি গণ বিরোধী সরকার তার লেজিটিমেসির জন্য দুই জন নারীর শরীরের উপর যেরকম নির্ভরশীল, আর কোন কিছুর উপর তেমন টি নয়। এটা শুরু হলো, সেই দুজন নারীর শরীরটারে বিদেশে চিকিৎসার অজুহাতে, সীমান্তের ওপারে বাহির করে দিয়ে দেশান্তরী করার চেষ্টার মাধ্যমে, প্রাচীন গ্রীকের মতো। এবঙ তার পরিপ্রেক্ষিতেই নারীবাদের পপুলার ডিসকোর্সগুলোর রূপান্তর শুরু হল নারী এবঙ পুরুষের ইকুয়াল ইমপ্রিজনমেন্ট এবঙ শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে। ইকুয়াল রাইট- রাষ্ট্র যখন তার প্রবক্তা,- শাস্তি এবং নির্যাতনের জেণ্ডারড রূপ এখান থেকেই শুরু।
এখানে, এই জায়গা থেকে বুঝতে পারা সম্ভব, জানুয়ারী ২০০৭ এর পর নারীর উপরে যে নির্যাতন সেটি কতটা জেন্ডারর্ড রূপ পেয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, ভেবে দেখা যাক, খালেদা জিয়ার উপর রাষ্ট্রের নির্যাতনটা কীরকম?
এটা বাস্তবিকপক্ষেই একজন বাঙলাদেশী নারীর জন্য না ভাবাটা এবঙ উপলব্ধি না করাটা কঠিন যে, খালেদা জিয়ার পানিশমেন্টের জেণ্ডারড রূপটা কতটা পাশবিক । প্রত্যেক বাঙলাদেশের নারী জানে, এটা কেমন নিষ্ঠুরতা যে, একটি গণবিরোধী সরকারের লেজিটিমেসি দিতে বাধ্য করার জন্য তার সকল পুত্র-পরিবার গ্রেফতার হয়েছে এমনকি কোনপ্রকারের জামিনের অধিকার ছাড়া। কিন্তু সেটাই সব নয়, আরো আছে। বাঙলাদেশের মায়েরা কীভাবে এই দৃশ্যটি সহ্য করবে যে, একজন রাজনীতিবিদ এবং একটি মা দীর্ঘ সময় অন্তরীন থাকার পর তার মুমূর্ষ সন্তানকে কোর্টে দেখতে পায় এবঙ তার প্রথম সন্তানের স্পাইনাল কর্ড বেঁকে যাওয়ার সংবাদই শুধু শুনে না, চিরপঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনতে হয়। এবং এটার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, ছেলেদের জিম্মি করে, যেটি হল নারীত্বের অনিবার্য অনুভূতি, গণবিরোধী সরকারের লেজিটিমেসি আদায় করা। এটি একজন নারী নেতৃত্বের প্রতি নিষ্ঠুর, চরম এবঙ জেণ্ডারড পানিশম্যাণ্ট।
(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ারা বেগমের ঋণ স্বীকার করে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৭