ছবি:অন্তর্জাল
মালিকদের কৌশলের কারণে গত তিন দিন যাবৎ আবার পোশাক শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তা দখলে নিয়েছে। সাভার-আশুলিয়া ও ঢাকার প্রায় ৭০টি কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব চিরন্তন সত্য, মালিকরা সবসময় চান শ্রমিকদের দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে ভাতা কম দিতে। ইতিমধ্যে মজুরি বৃদ্ধির অজুহাতে উৎসে কর তিন ভাগের এক ভাগে নামিয়ে এনেছে মালিকপক্ষ। এছাড়াও গত সপ্তাহে পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছর উৎসে কর ছিল দশমিক ৭০ শতাংশ।
নতুন মজুরিকাঠামোতে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা। একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে। সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ। কারণ, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে জন্য ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পুরনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কারখানায় এই তিন গ্রেডেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন। মূল মজুরি কম হারে বাড়ানোর পুরনো কৌশলটি মালিকপক্ষ এবারো নিয়েছে। তার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। ফলে ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না তাদের।
৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদেই বেশি শ্রমিক কাজ করেন। নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া আগের মজুরিকাঠামোতে গ্রেডটির মূল মজুরি ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় এই গ্রেডে কর্মরত পুরোনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে গত বছরই ৪ হাজার ৬১৫ টাকা হয়েছে। এবার নতুন কাঠামোর পরিবর্তে ইনক্রিমেন্ট হলে সেই মজুরি ৪ হাজার ৮৫১ টাকায় দাঁড়াত। তার মানে নতুন কাঠামোতে গ্রেডটিতে থাকা পুরোনো শ্রমিকদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭৯ টাকা। একইভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি বেড়েছে ১৬৪ টাকা। তবে ৩ নম্বর গ্রেডে উল্টো মূল মজুরি কমে গেছে ৪৪ টাকার মতো। সপ্তম গ্রেডে ৫১ শতাংশ মজুরি বেড়েছে, সেই হিসাবে মালিকদের খরচ ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। তবে বেড়েছে ২৫-২৬ শতাংশ। কারণ হচ্ছে, ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে খুব বেশি বাড়েনি।
মালিকেরা ইতিমধ্যে নিম্নোক্ত সুবিধা পাচ্ছেন
* দেশীয় কাপড় ব্যবহারে ৩% নগদ প্রণোদনা
* অপ্রচলিত বাজারে ৩% নগদ প্রণোদনা
* করপোরেট কর কমে হয়েছে ১২%
* উৎসে কর কমিয়ে করা হয়েছে দশমিক ২৫%
* শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি
* বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, ইত্তেফাক, প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮