somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুমিয়ান

২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১ম পর্বের লিংক, Click This Link


২য় পর্ব,


"আসসালামু আ'লাইকুম.... আমি উমর!"
সুমির কোনো উত্তর নেই!!
গোলাপ ছিটানো বিছানার মাঝখানে বসে আছে সুমি। সে হয়তো কিছু একটা ভাবছে বা ভিতরে ভিতরে খুব টেনশনে আছে! আমি আস্তে আস্তে তার বরাবর আগালাম। কিছু একটা বলবো কিন্তু কি বলবো এটাই মাথায় আসছে না! কি অদ্ভুত ফিলিংস! আবারও বললাম,
"কেমন আছেন?"
তাও কোনো উত্তর পাচ্ছি না!
একটুপর বললাম, "কোনো কারণে কি আপনার মন খারাপ? বা আমার পরিবারের কেউ কি খারাপ কিছু বলেছে আপনাকে?"
এবারও কোনো উত্তর পাচ্ছি না!
আবারও বললাম, "উম আপনি যদি কথা না বলেন তবে কিভাবে আপনাকে বুঝবো আমি?"
সে তবুও কথা বলছে না! ভাবতে লাগলাম বিয়েটা কি ওর অমতে হয় নি তো? সেটা তো হওয়ারই কথা না! আমি তো জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি কাউকে পছন্দ করেন কিনা যার উত্তর না শুনেছি। শিওর হওয়া স্বত্বেও আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা এই বিয়ে কি আপনার অমতে হয়েছে?"
তাও কোনো উত্তর করছে না! কি বিপদে পরলাম। কথা না বলবে কিভাবে বুঝবো কেন সে চুপ করে আছেন?
"জ্বি....! এই বিয়েতে আমার মত ছিল না" এইবার মুখ খুললো সে!
আমি বললাম, "যাক আপনি কথা বললেন শেষ পর্যন্ত, আমি ভেবেছি আপনার কণ্ঠ হয়তো শুনতেই পারবো না!"
"আমি জোক্স করছি না, সিরিয়াসলি বলছি, বিয়েতে আমার মত ছিল না..." বাকি অংশ আমিই বলি, "বাবা মার মান সম্মান রক্ষার্থে আপনি রাজি হয়েছেন, তাই তো?"
"জ্বি..!"
"আচ্ছা আপনার সম্পর্কে কিছু বলেন"
"আমি সিরিয়াসলি বলছি, আপনাকে বিয়ে করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার ছিল না, পরিস্থিতি এমন ছিল যার জন্য আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে!" আমি অবাক হয়ে গেলাম, "এটা কেমন কথা?"
- আমি দুঃখিত আপনার সাথে এমন করার জন্য, আমার সৎসাহস ছিল না যে আপনাকে বা আমার মা বাবা কে জানানোর!
সুমির কথায় আমি মনে মনে অনেক মর্মাহত হলাম, নিজেকে সান্ত্বনা নিজেই দিলাম। ভাবলাম কিছুদিনপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে আপনার ইচ্ছা, এই বাসায় শুধু আমি আর আপনি আছি। আর কেউ আসা যাওয়া করে না শুধু কাজের বুয়া ছাড়া। সে সকালে আসবে। আপনার যেকোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন প্লিজ। কাজের বুয়াকে বলতে যাবেন না, এতে আমাদের নিজেদের মান সম্মান নষ্ট হবে।"
সুমি কোনো উত্তর করলো না। আমি একটা বালিশ নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। বারান্দায় এসে বসলাম, খুব চায়ের নেশা লেগেছে। এই বারান্দায় আসলে এত সুন্দর বাতাস গায়ে লাগে যা আমাকে চায়ের জন্য বাধ্য করে তোলে! হঠাৎ মনে পরলো আরও দুই রুমে আমার এক চাচা আর তাদের ছেলেপেলে আছে! তারা এখানে আমাকে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! তাড়াতাড়ি বালিশ নিয়ে আমার রুমের দিকে আগালাম। দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই পুরোটা খুলে গেল। মনে মনে সস্তি পেলাম বেশি ধাক্কা দিতে হল না। দুই চারটা কাশি দিয়ে রুমে ঢুকলাম, দেখি সুমি এখনও সেখানেই বসে আছে! আমার দিকে তাকিয়ে আবার আগের পজিশনে বসে পরলো সে।
"আসলে বাসায় আরও আত্মীয়স্বজন আছেন, তারা আমাদের এই ব্যাপারটা জেনে যায় তাহলে খুব বদনাম হবে। আমি ফ্লোরেই ঘুমাচ্ছি আপনি ওখানেই থাকেন। ওনারা চলে গেলে আমি অন্য ঘরে ঘুমাবো।"

পরেরদিন সকাল,
"সুমি.. শুনছেন?" দুই তিনবার ডাকার পর চোখ খুললো সে। "জ্বি বলছিলাম, চাচা চাচি সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে মনে হয়। উনাদের জন্য আমরা কিছু সময়ের জন্য একে অপরকে তুমি করে বলি প্লিজ। কারণ আমি চাই না বিন্দু পরিমাণ কোনো সন্দেহ হোক তাদের।"
"জ্বি, ঠিক আছে, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।" সুমির উত্তর। "ধন্যবাদ"
দরজা খোলার আগে আমি দরজায় কান দিয়ে শুনতে চেষ্টা করলাম কে কি বলছে? শুধু কাজিনদের কথা শুনতে পাচ্ছি। যতদুর মনে হল তারা ভাবিকে দেখার আগ্রহে আছে!

"এই যে আমার ঘরের চাঁদ এসে গেছে!" চাচার কথা। চাচি এসে সুমির হাত ধরে বসিয়ে বললো, "এত সুন্দর মুখখানা আল্লাহ বোধ হয় খুব মনোযোগ সহকারে বানিয়েছেন! মাশাআল্লাহ, এর তারিফ আমার দ্বারা করে শেষ করা সম্ভব না!"
সুমি কিছুই বলছে না। আমি দরজায় দারিয়ে সব দেখছি। সুমি বললো, "আমি মনে হয় খুব লেট করে উঠেছি??" সুমির কথায় চাচি হেসে বললেন, "আরে না পাগলি, কি যে বল না।"
একথা সেকথায় আড্ডা দিতে দিতে সবাই খেয়ে উঠলাম। খাওয়া শেষে সুমির উদ্দেশ্য বললাম, "সুমি, একটু শুনে যাও.."
তারপর বললাম, "আপনার বাসার সবাই কখন আসবে?"
"১২টার পরপরই!"
"আচ্ছা যান, কথাবার্তা বলেন সবার সাথে, আমি একটু আসছি.."
১২টার পর এক এক করে আসতে শুরু করলো সুমির পরিবারের আত্মীয়স্বজন! আমি আমার জীবনে এত আত্মীয়স্বজন সম্বলিত পরিবার দেখি নি! দুনিয়ার সবাই তো আর আমার মত হতভাগা না। যার বাকি আত্মীয়স্বজন পিঠে তরবারি চালিয়ে দেয়ার সুযোগে থাকে। যাক সেসব কথা, আমার খুব ইচ্ছা ছিল বড় এক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের ২য় ধাপ আয়োজন করা কিন্তু সেটা হল না। তাই খাওয়া দাওয়ার আয়োজন বাসায় করেছি। এখান থেকে সোজা শ্বশুরবাড়ি তারপর পরেরদিন আবার বাসায় ফেরত!
একে একে অনেকের সাথেই পরিচিত হলাম। সমস্যা হল যাদের সাথে এইমাত্র পরিচয় হচ্ছে তাদের বাদে প্রথমে যাদের সাথে পরিচয় হয়েছে তাদের মনে রাখতে পারছি না। কি করবো এত এত আত্মীয় তাদের আমার মনে হয় তাদের নিয়ে আলাদা ডেটাবেজ থাকলে ভাল হয়। সুমির আম্মু প্রথমেই এসে সুমিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন তবে সেটা হাউমাউ দিয়ে কান্না নয়। সুমির আব্বার সাথে কুশলাদি বিনিময় হল। তার আত্মীয়স্বজনের ছেলেমেয়েরা আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে! এক সিরিয়ালে একেরপর এক এলোপাথাড়ি প্রশ্ন করে যাচ্ছে সবাই! কেউ দুলাভাই, কেউ ভাইয়া আর বাচ্চারা তো নাম ধরেও ডাকছে!


অতিথি আপ্পায়ন শেষ, সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এসেছে। এক এক করে অনেকেই বিদায় নিচ্ছেন। চাচারা সবাই খুশি, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনও যথেষ্ট খুশি! এসবের ভিড়ে মাঝে মাঝে দেখলাম সুমি তার মনমরা ভাব কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেও পারছে না! কারণ এখানে তাকে তেমন কষ্ট করতে হয় নি কিন্তু যখন বাবার বাড়ি যাবে তখন হয়তো বেসামাল হয়ে উঠবে আমাকে দেখে। নাটক করে যেতে হবে যতদিন এমন মেহমান আত্মীয়স্বজন বা শ্বশুর শ্বাশুরি আসা যাওয়া করবেন।
সুমির বাসায় এসে শাশুড়ি বললেন, "বাবা তুমি অনেক আদর যত্ন করছো আমাদের, এবার রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।" আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, "সুমি কোথায়?" "ওই পিচ্চিপাচ্চার সাথে আছে মনে হয়!" আমি বললাম, "আমি কি যেতে পারি?" "আরে এতে অনুমতির কি আছে? সোজা চলে যাও!"
আমিও গেলাম ড্রয়িং রুমের দিকে। আসলে সুমি একটা উছিলা, সময় কাটছে না বলে পিচ্চিগুলোর কাছে যাওয়া। রুমের দরজা চাপানো ছিল, দরজায় টোকা দিতেই পিচ্চিগুলো আমাকে দেখে এক প্রকার দৌড়ে এল। আমি ফ্লোরে বসলাম, পাশেই সুমির বয়সী একজন মেয়ে, তবুও দেখে মনে হচ্ছে সুমির বড় হবে। আমিই আগে বললাম, "আ.. আপু সরি আসলে আমি আপনার নামটা ভুলে গেছি, আবার যদি বলতেন?" সে তড়িঘড়ি করে বললো, "আরে কি যে বলেন, আমি নূপুর, আর আমাকে আপনি করে বলবেন না প্লিজ কারণ আমি ওর এক বছরের বড় কিন্তু আপনি আমার অনেক সিনিয়র, আমাকে আপনি বললে কেমন একটা অপমানিত বোধ হয় আমার!!"
"আচ্ছা ঠিক আছে আমি তুমি করেই বললাম।" এভাবে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। এরমধ্যে সুমি বললো, "রুমে চল, তোমাকে টায়ার্ড দে.. দে.. দেখাচ্ছে!" এমন ঠেকে যাওয়া কথায় আমার সাথে সাথে নূপুরও সুমির দিকে অবাক হয়ে তাকালো! কেন তাকালো বুঝলাম না। আমিও স্বাভাবিকভাবে বললাম, "হুম চল, অনেক রাত হয়েছে।" অথচ ঘড়িতে বাজে রাত ৯.৪৫!
রুমে ঢুকেই দেখলাম সুমির রুমটা বেশ সাজানো গোছানো! আমি একটু একটু করে ওর রুমের বিভিন্ন শো পিস দেখতে শুরু করি। হঠাৎ একটা ফ্রেম বন্ধি ছবি নজরে পরে যেটায় সুমি আর অন্য এক ছেলের সাথে ছিল। ছবিটা বেশ সুন্দর লাগছে। বিশেষকরে দুইজনের চেহারার চাহনিটা! আমি সুমিকে বললাম, "আচ্ছা উনিও কি আপনার আত্মীয়স্বজনদের কেউ? আগে কখনও দেখি নি!" সুমি ধড়ফড় করে এসে ফ্রেমটা হাত থেকে নিয়ে নিল! ওর এমন কাণ্ডে আমি কিছুটা চমকে গেলাম। সুমি বললো, "পারসোনাল এটা, আপনি কিছু না ভাবলেই হবে। বিছানা রেডি ঘুমিয়ে পরেন।"
কিন্তু ঘুম হচ্ছে না। আমি আজও বুঝতে পারছি না সুমি এমন ব্যবহার কেন করছে আমার সাথে?

সুমির ব্যবহার এখনও স্বাভাবিক হয় নি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সুমি ওর বাসায় রেখে যাই কয়েকদিনের জন্য। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সুমিকে রুমে ডাকলাম, "জ্বি আসলে আপনার নাম্বারটা যদি দিতেন তাহলে ভাল হতো।" সুমি জানতে চাইলো, "কেন?"
"আসলে যে কয়েকদিন আপনি এখানে থাকবেন যদি আমি কল না দিই তবে কেমন একটা মনে হবে নিজের কাছে! আপনার/আমার দুইজনের বাসায় কেমন দেখা যাবে যদি খোঁজখবর না নিই? আন্তরিকতার খাতিরে না হয় না দিলেন কিন্তু সম্মানের খাতিরে যদি নাম্বারটা দিতেন..."
সুমি মাথা নারিয়ে বললো, "হুম বুঝেছি! ডায়াল করেন.."
শ্বশুর-শ্বাশুরিকে সালাম জানিয়ে বের হলাম বাসা থেকে এবং জানালাম তিনচার পর আসবো এবং ফোনে তো যোগাযোগ হবেই।
বিয়ের জন্যে যে কয়েকদিন ছুটি নিয়েছিলাম সেটা শেষ। আজ থেকে অফিস শুরু করলাম। অফিসে ঢুকতেই যে সামনে দেখছে সেই জিজ্ঞেস জিজ্ঞেস করছে "কি অবস্থা? টায়ার্ড নাকি ছুটি কাটাতে?" আমার মুখে কোন কথা নাই। চুপচাপ গিয়ে আমার চেয়ারে বসলাম। ডেক্সটপে এ কয়েকদিনে ময়লা পরে গেছে। ময়লা ঝেরে টেবিলের ফাইলপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। আমার চিন্তাভাবনায় সুমি বিরাজ করছে। ওকে যেদিন দেখতে গেলাম সেদিন কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলাম,
"আমার পরিবার আপনাকে খুব পছন্দ করেছে, শুধু আপনাকে নয় আপনার পরিবারটা আমাদের অনেক ভাল লেগেছে.."
সুমি কোনো উত্তর করে নি সেদিন। পরে বললাম, "আমার কিছু প্রশ্ন আছে আপনার জন্য, অনুমতি পেলে করতে পারি।"
- জ্বি, বলেন
সুমি বললো!
- পরিবারের সবাই যদি আমাদের পছন্দ করে বিয়ে ঠিক করে তাহলে কি আপনার দ্বিমত থাকবে?
- সরি?? বুঝলাম না!
- যদি বিয়ে হয় তাহলে কি আপনার দ্বিমত থাকবে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে উত্তর করলো, "না।"
ওর মুখ থেকে না শোনার পর আমার বাকিপ্রশ্ন গুলা আর করার প্রয়োজন হল না, যেমন কাউকে পছন্দ করেন কিনা! যেহেতু না বলেছে তাতেই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। আমিও জিজ্ঞেস করলাম, "আপনার কিছু জানার আছে আমার সম্পর্কে?"
এতেও সে না বলেছে!
আমি জানতে চাইলাম না কেন তবে বলতে ইচ্ছা করছিল কেন জিজ্ঞেস করবেন না! তারপর বললাম, "ঠিক আছে, আমার আর কিছু জানার নাই।"

অনেকক্ষণ হল সুমিকে কল দিই নাই! দুপুরে খেয়ে সাথে সাথে কল দিলাম, অনেকক্ষণপর রিসিভ হল! ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এল না! বললাম,
- জ্বি আমি উমর।
- বুঝেছি, বলুন।
- জ্বি মানে খাওয়া দাওয়া করছেন কিনা জিজ্ঞেস করলাম।
- জ্বি করেছি
- আব্বা আম্মা?
- সকলেই খেয়েছে, আর কিছু বলবেন?
আমার আর কিছু বলার ইচ্ছা হল না। শেষে বললাম, "না, রেস্ট নেন তাহলে।"
এই বলার সাথে সাথে কল কেটে দিল সুমি! এভাবে নাটক চলতে থাকলো আরও কয়েকদিন। এমন না যে এটা শেষ হয়ে গেছে কিন্তু কবে শেষ হবে এটাই চিন্তা আমার। আমি সুমিকে কোনরকম জোরাজুরি করি না এই একসাথে থাকা প্রসঙ্গে। যেদিন ওকে নেয়ার জন্য আসলাম, ফেরার পথে সুমিকে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হল গতদিন গুলোর চেয়ে। আমার বাসায় এখন চাচা চাচি নেই। বড় একটা বাসায় সুমি ভয় না পেলে হয়।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে বারান্দায় দারালাম। কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে এল ঝুম বৃষ্টি! শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি, এমন বৃষ্টি চারদিক ঝাপসা হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া, ঘুমের জন্য পারফেক্ট! সুমি ঘুমিয়েছে কিনা দেখার জন্য ওর দরজার কাছে গেলাম। কয়েকটা টোকা দিলাম দরজায়, কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। বুঝলাম ঘুমিয়ে গেছে। আমিও ঘুমানোর জন্য আমার রুমে চলে গেলাম। মাঝরাতে অনেক ঠাণ্ডা লাগছিল এজন্য ঘুমটাও ভেঙে গেল। চাদর নেয়ার জন্য বাইরে আসলাম এমন সময় চিৎকার এবং কাঁচ ভাঙার আওয়াজ পেলাম! আমি নিশ্চিত এটা সুমির আওয়াজ, দৌড়ে চলে গেলাম সুমির কাছে, দেখলাম সুমি কপালে হাত দিয়ে আছে, ডানে তাকিয়ে দেখি খাটের পাশে কাচের ছোট টেবিলের এক অংশ ভেঙে গেছে। আমি বললাম, "আপনি ঠিক আছেন তো? দেখি কি হয়েছে?"
কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিতেই দেখি রক্ত বের হচ্ছে! "আপনার কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে! দেখি দেখি!" সুমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "এসব কিছু না, আপনি ঘুমাতে যান।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "আপনাকে এভাবে রেখে ঘুমাতে যাবো মানে? দেখি বাসায় স্যাভলন/ডেটল আছে কিনা।" বাসায় যতগুলো ড্রয়ার আছে সবগুলো তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু করলাম। অনেক খোঁজাখুঁজির ডেটল এবং স্যাভলন ক্রিম পেলাম কিন্তু পরিমাণ কম। বারান্দায় তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি মারলাম নিচের ডিসপেনসারি খোলা আছে কিনা কিন্তু দেখলাম বন্ধ! ঘড়ির সময় এখন ৪টা ছুঁই ছুঁই। তারপর তুলা নিয়ে চলে গেলাম সুমির কাছে। আমি ক্ষতটা মুছে দিতে চাইলে সুমি বললো, "আমি করে নিচ্ছি, আমাকে দিন।"
এই বলে হাত থেকে সরঞ্জামগুলো নিয়ে নিল সুমি! তুলায় ডেটল লাগিয়ে অল্প অল্প করে মুছতে শুরু করলো সে। বুঝতে পারলাম আমার সেবা সে পছন্দ করছে না। আমি বললাম, আমাকে করতে দিলেন না কারণ আমাকে আপনার পছন্দ না, অন্তত আপনার প্রতি যে দায়িত্বগুলো রয়েছে সেগুলা তো করতে দিবেন!" সুমি একটু হেসে বললো, "দায়িত্ব? আমি আপনার উপর বোঝা হয়ে আছি।"
"আপনি কতদিন এভাবে অভিনয় করতে থাকবেন?" "যতদিন ক্লান্ত না হচ্ছি বা চোখ বুজে না আসছে, ততদিন। আপনি জানেন, আমি আপনার জন্য দুর্ভাগা? যেদিন থেকে এইঘরে এসছি আপনার দিন খারাপ যাচ্ছে?"
আমি বললাম, "আমি ভাল দিন খারাপ দিন বুঝি না। আমার সবকিছুই ভাল লাগে।"
"ঘুমাতে যান, সকালে অফিস আছে আপনার। এবং ওষুধপত্রের জন্যে ধন্যবাদ।" সুমি বললো।
আমি কাচের টুকরো গুলা পলিথিনে করে আলাদা রাখলাম। সেই সাথে ছোট টেবিলটাও সরিয়ে রাখলাম। সকালে উঠে সুমিকে ডাকলাম,
"ভাল আছেন এখন? ব্যথা করছে কপালে?"
"না, এসব সহ্য করার ধৈর্য্য অনেক আগ থেকেই শিখেছি।" সুমি বললো। "আচ্ছা ঠিক আছে, সাবধানে চলাফেরা করবেন, যাই আমি।" এই বলে অফিসের উদ্দেশ্য বের হলাম। চেয়ারে বসতেই পিয়ন চা নিয়ে আসলো। তাকে বললাম, "কি অবস্থা সুমন মিয়া? আজ এত তাড়াতাড়ি চা দিলেন?" উনি বললেন, "আজ কেউ বাকি নেই আসার স্যার, তাই ঠিক সময়ে চা হাজির!" "আচ্ছা, যান তাহলে, দশ মিনিট পর কাপ নিয়ে যেয়েন।" "জ্বি আচ্ছা স্যার।" চায়ে চুমুক দিয়ে পিসি চালু করলাম। কিছুক্ষণপর চেয়ারম্যান স্যারের পিএ এসে বললেন, "স্যার আপনাকে জরুরি তলব করেছেন।" বললাম, যান, আসছি আমি।" সুমনকে ডেকে কাপ নিতে যেতে বলে চেয়ারম্যান স্যারের রুমে গেলাম।
"উমর, এসো বসো এখানে... এই রিপোর্টটা দেখ এবং আমাকে বিস্তারিত জানাও।"


রাস্তা হাটছি, ভাবছি এমন দিনও এসে গেল! আমি উমর যে কোনদিনও এক পয়সা আত্মসাৎ করি নি, ঘুষের ধারেকাছে যাই নি তাকেই আজ এভাবে লজ্জিত হতে হল অফিসের সবার সামনে! আমাকে সাসপেন্ড করে দিলেন। এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই বছরের চাকরির বয়সে বিভিন্ন ক্ষাতে সর্বমোট চারলক্ষ টাকা ঘুষের অভিযোগ এবং তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ এর কারণে চাকরি চলে গেল! কাকে জানাবো এই ঘটনা, কার কাছেই বা সাহায্য চাইবো। আপন সন্তান না হয়েও চাচা চাচি এতদুর পর্যন্ত আমাকে নিয়ে এসেছেন, এখন এই ঘটনা তাদের বলি কি করে। সুমিকে জানিয়েও লাভ নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না। এখন বাজে দুপুর ৩টা, সকাল থেকে এপর্যন্ত তাকে কল দিই নাই। একটু খোজ নেয়া দরকার। মোবাইল বের করে কল দিলাম, কিছুক্ষণপর রিসিভ করল সে,
- জ্বি আপনার ব্যথা সেরে গেছে?
- হুম
- ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছেন মনে হচ্ছে?
- হুম, আর কিছু বলবেন?
- খেয়েছেন?
- জ্বি
- আচ্ছা রাখি তাহলে।
এই লিমিটেড সংখ্যক কথাই হয় তার সাথে। প্রতিবার আমি আগে কল করি আর সে আগে কেটে দেয়। এটাই চলছে। মানিব্যাগ বের করে দেখলাম হাজার সাতেক টাকা আছে। বাসায় পর্যাপ্ত বাজার আছে, বাকি টাকা দিয়ে এই মাস চলে যাবে। চিন্তা হচ্ছে আগামী মাস নিয়ে। এসবের মধ্যে আমার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। সাহায্যের জন্য কল করলাম আনিস স্যারকে। অফিসে একমাত্র উনিই আমাকে ভাল জানেন। দুইবার কল করলাম, রিসিভ করলেন না! বিপদে পরলে কারও খোজ পাওয়া যায় না। আমি ঠায় বসে আছে। কি করবো ভাবছি। সুমি না থাকলে হয়তো সমস্যা হতো না। তার দায়িত্ব রয়েছে আমার কাছে। আমি না খেয়ে থাকবো তবুও সুমিকে অনাহারে রাখবো না। সে যেমনই হোক, আমার বউ। বাসার দিকে যাওয়ার জন্য উঠতে যাবো এমন সময় একটা মেসেজ এল ফোনে।
"অফিস থেকে বের হয়ে কল দিচ্ছি"
আনিস স্যারের মেসেজ! আমিও ফিরতি রিপ্লাইয়ে আমার লোকেশন পাঠিয়ে দিয়ে দেখা করতে বললাম। উনি উত্তরে লিখলেন, "আসছি"
আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। বসলাম সেখানেই, চা বিক্রেতাদের খুঁজছি, মাথাটা ব্যথা করছে।

আনিস স্যারের সাথে কথাবার্তা শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৮টা বেজে গেছে! বাসায় এসে সুমিকে কিছুই জানালাম না। খুবই স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বললাম। রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাবো কিন্তু ঘুমই আসছে না! চাকরি ছাড়া কিভাবে চলব? ভাবতেই কেমন যেন লাগে! মাথা ব্যথা এখনও কমে নি!
সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। বাস থেকে নেমেই মনে পরলো আমার চাকরিটা বর্তমান নেই। কাজের বশে চলে এসেছি! ঘড়িতে দেখি সময় সকাল ৭.৫৫ মিনিট, অফিস কলিগ অন্যকেউ দেখার আগে এখান থেকে পালাতে হবে, মান সম্মানের বিষয়। এমনি কম মান সম্মান যায় নি। হাটতে হাটতে কোথায় এলাম মনে নেই। দোকানের বোর্ডে তাকিয়ে দেখি লেখা আছে দিঘিরপাড়। বাহ ৬কি.মি হেটে ফেলেছি এরমধ্যে! কেটে গেল ঘন্টা দেড়েক। বাসায় যেতে পারবো না কারণ সুমি সন্দেহ করতে পারে। সেখান থেকে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। দারিয়ে থাকতে থাকতে দেখি একটা বিআরটিসি বাস এলো। ভাবলাম এর লাস্ট পয়েন্ট পর্যন্ত যাই, সময় কেটে যাবে। উঠে পরলাম বাসে। কন্ডাকটর এসে ভাড়া চাইলো। আমি বললাম, "এই বাস শেষ কোন পর্যন্ত যাবে?" সে উত্তরে বললো, "বাইপাইল আর যাত্রী পাইলে চন্দ্রা পর্যন্ত যাইতে পারি!"
আমি বললাম, "আমি চন্দ্রা যাবো, চন্দ্রার ভাড়া রাখো।" আমার কথা শুনে সে একটু অবাক হল! আমি কখনও ওইদিকে যাই নি। আজ যাচ্ছি অকারণে। ১০টায় বাসে উঠে এখন বাজে ৩টা! এত ধীরে ধীরে বাস যায় এমন কোনো স্টপেজ নেই যেখানে থামে না। ঘড়িতে সময় ৫টা, জিরানী এসে বাস আর যাবে না, যাত্রী নেই! কন্ডাকটর এসে বললো, "বড় ভাই আপনে চন্দ্রার ভাড়া দিছেন না?" আমি হ্যা বললাম। "এই নেন আর দশ টাকা ফেরত, এখান থেকে যেকোনো বাসে উইঠা যান, জায়গামতন নামায়া দিব আপনেরে।"
"এই দশ টাকা তুমিই রাখো। আমি এখান থেকেই ফেরত যাচ্ছি।" কন্ডাকটর আবারও অবাক হলেন! "আপনের না চন্দ্রায় কাম আছে? যাইবেন না?" আমি বললাম, "আমি বেকার, দুইদিন হল। চাকরি চলে গেছে।" সে বিশ্বাস করলো না! বললো, "বেকার তা এমনে টাকা খরচ করতেছেন কেন?" আমি বললাম, "তোমার মাসে ইনকাম কত? এই কাজে সংসার চলে?"
"কি যে কন? আজকের ইনকাম থেকে মহাজন, নেতা ফেতা, পুলিশ কতজনরে যে টাকা দেয়া লাগে তার ঠিক নাই। আজ ইনকাম হইছে ৫হাজার। গাড়ির তিনজন আছি, বাকিটাকা ভাগযোগ কইরা কোনরকম চলে আরকি! সবই আল্লাহ ভরসা, যা আসে তাই!"
"আমি কি এই কাজ করতে পারবো?"
আমার এই কথা শোনার পর সে অট্টহাসি দিয়ে বলে, "আপনেরা আপনাদের উপরের গুলার কথাই সহ্য করতে পারেন নাহ, এই বাসের যাত্রীদের কথা কেমনে সহ্য করবেন? এরা বাদই দিলাম, শ্রমিকগুলার গালাগালিই তো সহ্য করতে পারবেন না।"
আমি বাস থেকে নেমে গেলাম। নামার আগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? সে বললো অনার্স পাশ। বুঝে গেছি দেশের অবস্থা। বড় বড় পদস্থ লোকজন কি করে আমার জানা হয়ে গেছে। সেদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বেজে গেল। দরজা খুলেই সুমিকে বললাম, "সরি আজ কাজের চাপ বেশি ছিল তাই আসতে লেট হল।" সুমি বরাবরের মত কিছুই বললো না। এভাবেই চলতে থাকলো সপ্তাহ খানেক। ধীরে ধীরে জমানো টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবার সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে আমার পক্ষে। মনে হয় চাচাকে জানানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় আমার নাই।

আমাদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস, এই তিনমাস সুমি আর আমি নাটক করে যাচ্ছি সংসারের। এরমধ্যে প্রায়ই দেখেছি রাতে সুমির চিৎকার দিয়ে ওঠে! গ্রামীণ ভাষায় যাকে "বোবায় ধরা" বলে। এখনও তাই হয়েছে। সুমির চিৎকার আমি রুমে এসে দেখি সে ফ্লোরে বসে আছে এবং গ্লাসের পানি নিচে পরা! আমি বললাম, "আপনি ঠিক আছেন তো?"
সে উত্তর দিল দুঃস্বপ্ন! আমি বললাম, "আপনি আমাকে সত্য একটা কথা বলবেন?"
সে বললো, "কি জানতে চান? বলে দিন, আজ কোনো কিছু গোপন রাখবো নাহ। আমি ক্লান্ত নিজের কাছে।"
"আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন?"
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললো, "হুম.."
"আমি এই প্রশ্নটা সেদিন করি নি কারণ আপনি বলেছেন বিয়েটা আপনার মতামতেই হয়েছে!"
সুমি বললো, "আমি কিছু বলি নি তার কারণও আপনাকে বিয়ের রাতেই বলেছি। আমার ভিতরে সাহস ছিল না।"
"ছেলেটা কে? নাম কি?"
- নাহিয়ান। আমরা সেম ভার্সিটিতে পড়তাম। এখন জব করছে।
আমি বললাম, "চাকরি করলে আপনার বাবা তাকে পছন্দ করে নি কেন?"
- তখন তার চাকরি ছিল না। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে চাকরি হয়েছে। আপনার মত এত ভাল চাকরি হয়তো পায় নি তবে এখন সে বেকার না।
আমি বললাম, "আপনি এরমধ্যে যোগাযোগ করেছেন?" সে বললো, "না, সে অনেকবার কল করেছে কিন্তু রিসিভ করি নি!" সুমি ওর মোবাইলের কল লিস্ট দেখালো আমাকে। যদি হিসাবে বসি মনে হবে প্রায় হাজারের কাছাকাছি চলে গেছে কলের সংখ্যা গত তিনমাসে! সুমি বললো, "আমার একটা উপকার করেন প্লিজ, আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন!" এইকথা শুনে খুবই কষ্ট পেলাম আমি। আমার ভিতরটা ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে! আমি বুঝতে পারলাম এই তিনমাসে আমি তার মনে এক বিন্দু স্থানও করে নিতে পারি নি! নিছক চিন্তা ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলাম। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সুমি বললো, "আমি জানি না আপনার কেমন লাগছে কিন্তু আমি জানি আপনি জানেন আমার কেমন লাগছে এখানে!" এই বলে সুমি কেঁদে ফেললো! "আমি শুধু বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিয়েতে রাজি হয়েছি। পালিয়ে বিয়ে করার চেয়ে ডিভোর্সটাই হয়তো ভাল হবে।" আমি নিজেও জানি না কোনটা কোনটার চেয়ে ভাল। তবে আমিও নিজের কান্না আটকে রাখতে পারছি না। খুব কষ্টে বললাম, "ঠিক আছে, আপনি যদি এটাই চান তাহলে আপনাকে তাই দেয়া হবে।" এই বলে চলে গেলাম। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে চলে গেলাম বারান্দায়। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করলেও পারছি না। এক পর্যায়ে চেয়ার নিয়ে বসে পরলাম বারান্দায়। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। সকালে ঘুম ভাঙলো সূর্যের তীক্ষ্ণ আলোয়। সেই সাথে মনে করিয়ে দিল আমিও এখন বেকার! আর পারছি না চলতে, জমা টাকা সব শেষ। এখন চাচাকে বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম, সুমির দরজায় টোকা দিলাম। কিছুক্ষণপর ঘুম থেকে দরজা খুললো সে। বললাম, "আজ একটু ঢাকার বাহিরে যাবো, কাজের ওপর নির্ভর করে বাসায় ফিরবো। আপনি খাওয়া দাওয়া করে নিয়েন। সবকিছুই রেডি আছে তারপরও যদি কিছু লাগে অবশ্যই জানাবেন।" এই বলে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলাম। সুমি হয়তো জানে অফিসে যাচ্ছি কিন্তু আমার গন্তব্য চাচার বাসায়। তবে কয়েকটা ঘন্টা এদিক সেদিক কাটানোর পর।

চাচা আমার কাহিনী শুনে প্রথমে ক্ষিপ্ত হলেন! আমি তাদের কেন জানাই নি এই কারণে। আসলে এমন ঘটনা কয়জনই জানায়, আমার জন্য এতদুর তারা আমাকে নিয়ে এসেছে সেটাই তো অনেক! বর্তমান সময়ে এমনটা কে করে? আমি চাচাকে আরও বললাম এ ঘটনা যেন সুমি না জানে। ওয়াদা করালাম যেন উনি কখনই সুমিকে কিছু না জানান। চাচা আমাকে কিছু টাকা দিলেন আর বললেন, "আজ তো শনিবার, ব্যাংক বন্ধ! সমস্যা নাই এখানে কিছু টাকা আছে নিয়ে যা বাকিটা ব্যাংক খোলার পর দিচ্ছি।" আমি একা হলে এই টাকা কখনও নিতাম না বা সুমি আমাকে মেনে নিলেও নিতাম না কিন্তু সুমি যাতে কিছুতেই টের না পায় সেজন্য এসব করা। অন্যসবার কথা জানি না, জানি না যখন কারও চাকরি চলে যায় তারা কি করে তবে আমার ক্ষেত্রে সুমির জন্য এটুকু করা। আশাকরি একদিন সে বুঝবে, কতটা ভালবাসি আমি। হয়তো অচেনা এই ব্যক্তিতে স্বামী বলে মানবে।

আমার সংসার এখন চাচার কারণে চলছে। মাঝে সুমির আব্বা আম্মা এসে ঘুরে গেছে এবং আমরাও আমাদের নাটক চালিয়েছি। আপনি সম্বোধনটা তুমি তে নেমেছিল। রাতে সুমির ঘুম হতো না। আমি বললাম, "কি কারণে আপনার ঘুম হচ্ছে না আমি কি জানতে পারি?"
সুমি বললো, "আমি আপনাকে নিয়েই ভাবছি!"
আমি অবাক হয়ে গেলাম! বললাম, "হঠাৎ আমাকে নিয়ে ভাবা?" সে বললো, "কেমন মানুষ আপনি? এখনও আপন নই অথচ আম্মু আব্বুর যত্ন করে যাচ্ছেন?" আমি কি বলবো এর উত্তর পাচ্ছি না। অনেক ভেবে বললাম, "আপনাকে ভালবাসি বলেই। আমি চাইনা আমার কোনো কাজে আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ আমার দ্বারা বিন্দুমাত্র কষ্ট পাক।" সুমি হালকা হেসে বললো, "ডিভোর্সের পর?"
"আমি শুনেছি বিয়ের পর অন্তত ছয়মাস নাকি সংসার করা লাগে, এর আগে ডিভোর্স সম্ভব না!" "এমন কোন আইন আছে বলে মনে হয় না।" সুমি বলল। এরপর ঘুমানোর জন্য চলে গেলাম, আর কোন কথা বললাম না। দমটা বন্ধ হয়ে যায় যখন সুমি ডিভোর্সের কথা বলে। আমি বুঝতে পেরেছি, আমি তার মনে কোনরকম জায়গা করে নিতে পারি নি।

বাহিরের রৌদ্রতাপে আমার মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। এখন একটাই চিন্তা বাসা পর্যন্ত কোনোরকম যাওয়া লাগবে। অনেকদিন হল অফিসে যাওয়ার নাটক করছি। যখনি মাথার চুল আঁচড়াতে যাই, দেখা যায় চিরুনির সাথে বেশ কয়টা চুলও উঠে গেছে! যতবার মাথায় হাত দিই, চুল উঠে আসে! এসবই সুমিকে সুখে রাখার ফসল। মাথা ব্যথা ধীরে ধীরে বেরে যাচ্ছে। মোবাইল বের করে সুমিকে কল করলাম কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না! চারবারের পর রিসিভ হল! বললাম,
"হ্যালো সুমি, বাসায় আছেন?"
ওপাশ থেকে উত্তর এল, "কোথায় যাবো এছাড়া?"
"শরীরটা খুব খারাপ লাগছে, আমি বাসায় আসছি!"
আর কিছু না বলে কেটে দিলাম। আমার ইচ্ছা ছিল না ওকে বলার কিন্তু নিরুপায় হয়ে বলতে হল। দ্রুত সিএনজি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। শরীরে বল পাচ্ছি না, কেমন যেন একদিকে হেলে পরে যাচ্ছি। বাসার দরজায় কলিং দিতেই সুমি দরজা খুলে দিল। কোনোরকম বিছানায় শুয়ে পরলাম। হালকা হালকা শুনতে পাচ্ছি সুমি বলছে, "উমর! কি হয়েছে আপনার?" ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হচ্ছে, এভাবে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম।

চোখ খুলেই দেখি সুমি পাশে বসা!
"আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন! এত জ্বর নিয়ে অফিসে যাওয়ার কি দরকার ছিল?" সুমি ঝাঁঝালো গলায় বললো! এই প্রথম সুমির কথায় দরদ বুঝতে পারছি। আবেগ কন্ট্রোল করে বললাম, "অফিসে যাওয়ার পর এমন হয়েছে।"
"অনেকক্ষণ হল থার্মোমিটার খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না! কোথায় সেটা?" সুমি বললো।
"আমার নিজেরও মনে নেই কোথায়, বসেন আমি খুঁজে আনছি।" এই বলে উঠতে যাবো কিন্তু উঠতে দিল না! বললো, "শুয়ে থাকেন, রেস্ট নেন আমি আরেকবার সবখানে খুঁজে আসি।"
মনে হচ্ছে অর্ধেক জ্বর হয়তো এখনই নেমে গেছে! কিছুক্ষণপর সুমি থার্মোমিটার নিয়ে এল, "ফ্রিজের ওপরে ছিল! ওখানে কে রেখেছে? আপনি ছাড়া কেউ না.." মনে পরেছে আমিই রাখছিলাম। কেন রাখছিলাম মনে নাই। "কিছু কিছু জিনিস হাতের কাছে রাখতে হয় যাতে প্রয়োজনের সময় বেশি খোজা না লাগে!" সুমি আরেকবার শাসিয়ে দিল আমাকে। কেমন যেন এক শীতল অনুভূতির ছোয়া পেলাম আমি! জ্বর মাপার পর সুমি বললো, "১০৪!!!" যদিও এটা আমার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না।
"নাপা/এইস প্লাস কিছু আছে বাসায়?"
"আপনার রুমে আছে, আইসবক্সে।"
সুমি চলে গেল ট্যাবলেট আনতে। আমার চোখ আবার ঘুমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দুর্বল লাগছে খুব। ঘড়িটা এখনও হাতেই আছে, দেখলাম ৮টা বেজে গেছে! এরমধ্যে সুমি ওষুধ নিয়ে এল। আমি জিজ্ঞেস করলাম খেয়েছেন কিনা। উত্তরে বললো, "আগে ওষুধ খান তারপর রেস্ট নেন। বারতি কথা বন্ধ।"
রাত ১২টা, কি কারণে যেন ঘুমটা ভেঙে গেল। কোনরকম উঠে বসলাম। কিছুক্ষণপর দরজায় টোকা দেয়ার আওয়াজ পেলাম, "জ্বি আসুন।"
"এখন কেমন লাগছে?"
"মাথাটা খুব ভার মনে হচ্ছে। ঘুমাতে পারছি না!"
"আচ্ছা নিন, আদা, লবঙ্গ দিয়ে লেবু চা বানিয়েছি। আপনার মাথা ব্যথা কমে যাবে।" এই বলে চা এগিয়ে দিল সুমি! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না সুমি আমার জন্য চা করে এনেছে! হাতটা কেমন যেন কাঁপছে আমার!
"আচ্ছা, একটু পরে নিয়েন। আপনারা শরীর বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে!" সুমি বললো।
আমি কিছু বললাম না শুধু মাথা নারালাম। কিছুক্ষণপর সুমি বললো, "আপনাকে এতদিন কোনো প্রশ্ন করি নি কিন্তু আজ একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে, করবো?"
আমি কিঞ্চিৎ চিন্তিত সুমি কেমন প্রশ্ন করবে সেটা নিয়ে! তারপরও বললাম, "বলেন কি জানতে চান।"
"আপনার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি, আপনার মা বাবা, ওনারা কোথায়?" সুমি বললো!
আমি অবাক হলাম! কারণ আমি যা ভেবেছিলাম সেটা না সেই সাথে কনফিউজড যে সুমি কি পাল্টাতে শুরু করেছে নাকি বিয়ের সময় আমার ব্যাপারে কারও কাছ থেকে কিছু শুনে নি! পরে বললাম, "আমি আসলেই কিছু জানেন না?" সে জানালো কিছুই জানে না!
"আমার মা বাবা বেঁচে নেই, মৃত্যুর তাও এক যুগ হয়ে গেছে!" সুমি বললো, "কিভাবে? এক্সিডেন্ট? নাকি অসুস্থতা?"
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, "মেজ চাচা আর চাচি।" কথাটা শুনে সুমি কিছুক্ষণের জন্য জমে গেল! ক্ষাণিক পর বললো, "আপনার আপন নাই?" আমি বললাম, "তিনজন ছিল, একজন...." আর বললাম না। সুমি বললো, "আরেকজন কে? সে কি করেছে?"
"সেটা আপনি! আর কিছুদিন পরই আপনি আপনার ডিমান্ড পেয়ে যাবেন।" সুমি কিছু বলছে না। আমিই বললাম, "দেনমোহর, লেনদেন এসব ফেরত দেয়া কঠিন হয়ে যাবে আমার পক্ষে। জানেনই তো আমার অবস্থা? চাচা আর চাচি!"
সে বললো, "আমি আপনার কাছে এসব কিছুই চাই না।"

এভাবে চারদিন কেটে গেল। এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছি। এই কয়েকদিনে রাতে ঘুম আসতো না! তখন সুমির সাথে গল্প করে রাত পার করে দিয়েছি। আমি শুনেছি তার জীবনের গল্প। কিভাবে নাহিয়ান আর সুমির পরিচয় হল, কিভাবে একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করেছে এবং শেষে কিভাবে ভুল করে আমি তার জীবনে অতিথিরূপে এসে পরেছি! সময় এখন তাকে ছেড়ে দেয়ার যেখানে সে যেতে চায়। জানি না চাঁচাকে কি উত্তর দিব! মুখ দেখাতে বা দ্বিতীয়বার কি তাদের সামনে দারাতে পারবো। এখন ডিভোর্স পেপার নিয়ে বাসায় যাচ্ছি, আমি আমার সাইন করে দিয়েছি! সুমিও তার সাইন দিয়ে দিবে। এরপর থেকে সুমি তার ইচ্ছামত নতুন জীবন শুরু করবে। এসব ভাবতে ভাবতে দেখি বাসার সামনে চলে এলাম। বাসায় ঢুকে সুমিকে ডিভোর্সপেপার দিয়ে বললাম, "আমি গোসল সেরে আসি, বাহিরে যা গরম পরেছে!" বাথরুমে ঢুকে সব পানির কল ছেড়ে দিলাম। আয়নায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেঁদে ফেললাম! আমি বুঝলাম আমার প্রতি সুমির কোনো ফিলিংস কাজ করে নি। এসব স্পষ্ট দীপ্তিমান মরিচিকা। আধাঘণ্টা পর বের হলাম। সুমি বললো, "আপনাকে আমি কি বলে যে ধন্যবাদ দিব তার কোনো ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি যে কোন ধরনের মানুষ সেটাও আমার দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আমি কোনোদিনও আপনার মত ভাল মানুষের স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না! এই কানামাছির পর থেকে আমি আপনার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। আপনি আসলেই একজন ভাল মনের মানুষ।" আমি কিছুটা হাসি দিয়ে বললাম, "নাহিয়ান আমার চেয়েও ভাল মানুষ, তাই হয়তো সে আপনাকে পাচ্ছে! যেখানেই থাকুন আশাকরি আপনার বাকি জীবন সুখে শান্তিতে কেটে যাবে। নাহিয়ান স্যার কে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন।"

||সমাপ্ত||


[ কিছু কথা: সুমি আর উমরের ডিভোর্সের পর উমর বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। সাথে নিয়ে যায় অবশিষ্ট কিছু টাকা, পারিবারিক কিছু ছবি এবং রেখে যায় চাচার জন্যে একটি চিঠি! সে লিখে যায় এবং অনুরোধ করে যেন সুমির পরিবারের দিকে প্রশ্ন না যায়। সুমির পরিবারে সুমির এমন ডিসিশনে সমাজের কাছে মান সম্মানে ডুবে যায়। বিষয়টি ধীরে ধীরে জানাজানি হলেও সুমির বাবা এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত না করে মাথা নিচু করে হেটে যান।
.
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং ক্ষমাপ্রার্থী বড় করে লেখার জন্য। সেই সাথে দয়া করে গল্পের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×